somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কবিতার জন্মদাত্রী

১০ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনেকদিন থেকে একটা মানুষের কবিতা পড়ি । ভাল লাগতো তখন থেকেই । ভাল লাগা থেকেই কিছুদিন কথা হয়েছিল । হঠাত একদিন তাকে বললাম "তুমি যে কত অসাধারন কবিতা লিখ এটা জানো"। উত্তরটা এসেছে একদিন পরে "আমি কবিতার জন্মদাত্রী" ।কথাটা শুনে থমকে গিয়েছিলাম , কবিতার জন্মদাত্রী ।
তার সব কবিতা কষ্টের কবিতা , কষ্ট নিয়ে এত ভাল কবিতা সে ছাড়া মনে হয় আর একজন লিখেছেন হেলাল হাফিজ । তাকে একদিন বললাম, এত এত লেখা এই ছোট্ট মানুষটার ভিতরে কিভাবে বসবাস করে আমায় একটু বলবে । সে বললো, "মানুষ যখন অতি কষ্টে অথবা অতি সুখে থাকে তখন যা ইচ্ছে করতে পারে,আমিও তাই" । আমি বললাম ,আচ্ছা তুমি কখনো সুখের কবিতা লিখোনা কেন ? সে বললো ,কষ্টের মরুভূমিতে যার বাস সেখানে সুখের বৃষ্টি হলে সেই জল অতি দ্রুত কষ্টে খা খা করা বালুগুলো শুষে নেয় ,তাই আমার আর সুখের কবিতা লেখা হয়না ।
হঠাত কাকতালীয়ভাবে সেদিন সেই লেখিকার সাথে দেখা হয়ে গিয়েছিল । মন খারাপ ছিল বলে অইদিন বিকেলে রমনার লেকের পাড়ে গিয়ে বসেছিলাম । একটু পরেই নীল শাড়ি,কপালে লালটিপ ,হাতে কাচের চুড়ি পড়া লেখিকাকে হেটে যেতে দেখলাম পাশ থেকে । কেমন যেন বিষন্ন একটা চেহাড়া । আমি ডাক দিতেই থমকে দাড়াল । কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে একটা মুচকি হাসি দিয়ে পাশে এসে বসলো ।
বসার পরে তার প্রথম কথা ছিল, তোমার কাছে লাইটার আছে একটা সিগারেট ধরাবো । লাইটার দেয়ার পরে প্রথম চেষ্টাতেই সিগারেটটা ধরাল ।সিগারেট ধরানোর ভংগি দেখেই বুঝলাম এ মানুষটি দীর্ঘদিন থেকেই সিগারেট খায় ।তার সাথে আমার প্রথম দেখা অথচ তার মধ্যে কোন প্রতিক্রিয়া লক্ষ করলাম না । খুব আয়েশী ভংগিতে সিগারেটটি টানছে । এত সুখ নিয়ে সিগারেট খেতে আমি এর আগে কখনো দেখিনি কোন মানুষকে ।
সিগারেট শেষ করার পরে তার মুখে প্রথম কথা ফুটলো ,আচ্ছা আমাকে একটূ গাজা খাওয়াতে পারবে ? আমি নির্বিকার ভংগিতে লেখিকার দিকে তাকিয়ে থাকলাম । সে বলল, কি এভাবে তাকিয়ে আছো কেন ?এত অবাক হওয়ার কি আছে ?আমি মেয়ে বলে অবাক হচ্ছ ?কষ্টের কি কোন ছেলে মেয়ে আছে ?
আমি বললাম , কি হয়েছে তোমার আমাকে কি বলা যায় ? সে বলল, বলতে পারি এক শর্তে । আমি বললাম, কি শর্ত ? লেখিকা বললো , আমার কোন কাজে বাধা দিবেনা এবং আজকের পর আমার সাথে কোনরুপ যোগাযোগ করার চেষ্টা করবেনা । আমি বললাম, আমি রাজি তুমি বল । সে বলল বিস্তারিত বলতে পারবো না ।আমি বললাম,যতটুকু ইচ্ছে ততটুকুই বল ।
লেখিকা "আমি স্কুল জীবন শেষ করে যখন কলেজে পা রাখলাম তখন জীবনটা অনেক আনন্দের ছিল , সকালে বের হয়ে সারাদিন ক্লাশ, আড্ডা দিয়ে সন্ধ্যায় বাসায় ফিরতাম । কলেজে ভর্তির কিছুদিন পরেই একটা ছেলে নজরে পড়লো । আমার থেকে এক বছরের বড় । মুখে খোচা খোচা দাড়ি ,হাতে সারাক্ষন সিগারেট আর সবসময় পিঠে একটা ব্যাগ । খুব খেয়াল করে দূর থেকে দেখতাম ছেলেটিকে । একদিন পাগলামী করে একটা বড় চিঠি লিখে বন্ধুর মাধ্যমে তাকে পাঠালাম । চিঠিতে ভাললাগার কথাটা উল্লেখ ছিল । সে তার পরদিনই আমার সাথে দেখা করল । আমার ভাললাগায় সায় দিল ,ভাললাগাটা ভালবাসায় পরিনত হয়ে গেল । ভালই চলতে ছিল ।
চার মাস পরে তার জন্মদিন আসলো সে আমাকে অনুরোধ করলো যেভাবে হোক আমি যেন তার জন্মদিনের পার্টিতে থাকি । ভাল যেহেতু বাসি রাখতেই হবে কথা । পার্টির আয়োজন করলো তার এক বন্ধুর বাসায় । বন্ধুরা মজা করে আমাদের দুজনকে এক রুমে আটকে চলে গেল । সে আমাকে চাইল ,আমি না করলাম ,কিন্তু সে শুনলোনা জোর করতে শুরু করলো , আমি আর তেমন ভাবে বাধা দিলাম না । কারন ভালবাসি যে । এরকম বিভিন্ন সময়ে বলা যায় আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধেই চারবার শারীরিক সম্পর্ক হল ।
গত এক বছর ধরে আমি জানতে পারি সে আরেকটা মেয়েকে ভালবাসে । তাকে এই বিষয়টা জিজ্ঞেস করলে এড়িয়ে যায় । দিনের পর দিন তার ফোন ওয়েটিং থাকে । কষ্টের কারনে সিগারেট ধরি । সাত-আট দিন আগে আমার সাথে দেখা হয়েছিল তার ।আমার কাছ থেকে বিদায় নেয়ার পর সে কোথায় যায় সেটা দেখার জন্য আমি তার পিছু নেই । সে একটা জায়গায় গিয়ে দাড়াল ,আমি দূর থেকে তাকে দেখে যাচ্ছি ।কিছুক্ষন পরে একটা মেয়ে আসলো ,তাকে নিয়ে রিক্সায় উঠে চলে গেল ।
সেদিন থেকে আমি তার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেই ।গতকাল আমাকে ফোন দিয়ে অনেক আজেবাজে কথা বলেছে যোগাযোগ করিনা এজন্য । আর বলেছে আমি তার সাথে যোগাযোগ না রাখলে তার কাছে আমার কিছু বাজে ছবি নাকি আছে সেগুলো ফেসবুকে দিয়ে দিবে । আমি বলেছিলাম তোর যা ইচ্ছে তাই কর আমি আর তোর সাথে যোগাযোগ রাখবোনা ।
আমি জানতাম যে আমার কোন বাজে ছবি ওর কাছে নেই কারন আমি অই ধরনের কোন ছবি তুলিনি , কিন্তু আমি জানতাম না ও সেই জন্মদিনের ঘটনাটা আমার অজান্তে ভিডিও করে রেখেছে । গতকাল রাতে ও সেখান থেকে একটা বাজে ছবি নিয়ে ফেসবুকে দিয়েছে । তারপর থেকে যে কত মানুষের কথা শুনতে হয়েছে তা আমি জানি ।আমি বাসা থেকে বের হয়ে এসেছি । কি করবো কোথায় যাব কিছুই জানিনা ।হয়তো মরে যাব ।
তুমি কথা দিয়েছ আমাকে কোন বাধা দিবেনা ,তাই আমাকে কোন জ্ঞান দিতে আসবে না ।আমি গেলাম ।ভাল থেক তুমি ।আর ভুল মানুষকে ভালবেস না" ।
সেদিনের পর আর আমি সেই লেখিকার সাথে কোন যোগাযোগ করিনি । আজ সকালে পত্রিকা খুলতেই তৃতীয় পৃষ্টায় ছবিসহ তার আত্মহত্যার ঘটানাটা চোখে পড়লো । নিজের অজান্তে চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো । কবিতার জন্মদাত্রীর কবিতা আমার আর পড়া হবেনা ।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১:৩৬
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×