somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্মৃতি

১৩ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দীর্ঘদিন পরে আজ অনেকদিনের পুরনো মানিব্যাগটা খুজে পেলাম । তিন বছর আগেই এটা ব্যবহার করা বাদ দিয়েছিলাম । কিছু স্মৃতিবহ বস্তু খুজে পেলাম সেখানে । এক টাকার লাল কয়েন , একটা চাবির রিং , তিনটে চিঠি । সবগুলোই মাধবীর দেয়া । মাধবী আমার একমাত্র ভালবাসার মানুষ ছিল।

এখনও ভালবাসা আছে , মাধবীও আছে শুধু আমরা আর একসাথে নেই । সে এখন আমার থেকে অনেক দূরে । চাইলেও আর যখন তখন কথা বলতে পারিনা , দেখা করতে পারিনা । মাধবী এখন স্বামী আর একমাত্র মেয়েকে নিয়ে জার্মানিতে থাকে । যেখানেই থাকুক আকাশ নামের ছাদটার নিচে দুজনে বেঁচে আছি আর মাধবী ভাল আছে এই অনেক ।

আমাদের সাভারের বাড়িতে মাধবীরা ভাড়া থাকতো । একই স্কুলে পড়তাম । মাধবী আমার থেকে এক ক্লাশ নিচে পড়তো । প্রথম যখন দেখেছিলাম মাধবীকে তখন থেকেই ভাল লাগতো । কিন্তু তখনো ভালবাসা জিনিসটা কি তা বুঝতাম না । আমাকে দেখলেই মাধবী দৌড়ে পালাতো । কয়েকদিন পর মাধবীর মা বলল “বাবা আমরা তো এই এলাকায় নতুন, তেমন কিছুই চিনি না, মাধবী আর তুমি তো একই স্কুলে পড়ো ,তুমি যাওয়ার সময় মাধবীকে সাথে করে স্কুলে নিয়ে যেও” ।

তারপর থেকে দুই বছর একসাথে স্কুলে গিয়েছি । প্রথম প্রথম কেমন যেন একটা লজ্জা কাজ করতো , কেউ কারো সাথে খুব প্রয়োজন না হলে কথা বলতাম না । কিছুদিনের মধ্যেই সব ঠিক হয়ে গেল । খুব ভাল বন্ধু হয়ে গেলাম আমরা । মাধবীর প্রতি আমার ভাললাগাটা আরও বেড়ে গেল । কিন্তু তাকে কিছুই বলতে পারলাম না । পাশাপাশি হাটতে গিয়ে যখন মাঝে মাঝে আমার হাতে মাধবীর হাতের স্পর্শ লাগতো, তখন যে কি এক অদ্ভুত শিহরন খেলে যেত বুকের ভেতরে তা বলে বোঝানো যাবেনা ।

হঠাত একদিন মাধবীরা সপরিবারে গ্রামের বাড়ি বেড়াতে গেল । ফিরে এলো নয়দিন পরে । এই নয়দিন মাধবীকে না দেখে খুব কষ্ট হয়েছিল আর অস্থির লেগেছিল । তখন বুঝেছিলাম আসলে মাধবীকে আমি কতটা ভালবাসি । সবেমাত্র তখন দশম শ্রেনীতে পড়ি আর মাধবী নবম শ্রেনীতে ।

আমার রুমে আমি একাই থাকতাম । বাসার সবাই ঘুমিয়ে পড়লে শেষ রাতের দিকে কাপাকাপা হাতে জীবনের প্রথম প্রেমপত্রটি লিখে ফেললাম । বুকের ভেতর তখন দুরুদুরু অবস্থা । মাধবীকে দেয়ার আগেই যদি কেউ দেখে ফেলে সেই ভয় । কোথায় রাখবো চিঠিটা তা খুজে না পেয়ে অবশেষে পরনের প্যান্টে দুই ভাজ দিয়ে সেই ভাজের মধ্যে লুকিয়ে রাখলাম ।

চিঠি লেখার একদিন পরেই মাধবী ফিরে এলো । ভেবে রেখেছি স্কুলে যাওয়ার সময় চিঠিটা মাধবীর হাতে দিব কিন্তু সেদিন দেয়া হয়নি ।ভয় ছিল মাধবী বিষয়টা কিভাবে নেবে । সে যদি আমাকে ভাল না বাসে । যদি বাবা মায়ের কাছে বলে দেয় ।

পরেরদিন সকল ভয়ভীতি দূর করে দিয়েই ফেললাম চিঠিটা,যা হয় হবে । সেদিন আর মাধবীকে সাথে নিয়ে বাড়ি ফিরিনি । একটা ভয় আর লজ্জা কাজ করেছিল বুকের ভিতরে । বাড়ি ফিরে আর আমার রুম থেকে বের হইনি যদি মাধবীর সাথে দেখা হয়ে যায় । সারারাত একটা উত্তেজনা আমাকে ঘুমাতে দেয়নি ।

পরেরদিন স্কুলে যাওয়ার জন্য বের হইছি ,ভেবেছি মাধবীকে না নিয়েই যাব । বাসার সামনে বের হতেই পেছন থেকে মাধবীর ডাক “অনি ভাই,আমাকে না নিয়েই চলে যাচ্ছ”? এরপর মাধবী আর আমি একসাথেই স্কুলে গেলাম কিন্তু যাওয়ার পথে আমরা একটাও কথা বলিনি । স্কুলে ঢোকার পুর্বমুহুর্তে মাধবী বলল “আমাকে না নিয়ে কিন্তু বাড়ি যেও না” । আমি কোন উত্তর দেইনি । বাড়ি ফেরার পথে মাধবী হঠাত আমার পকেটে একটা কাগজ ঢুকিয়ে বলল “রাতের আগে খুলবেনা বলে দিলাম” ।

বাসার সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়লো তখন আর তর সইলো না । তারাহুরা করে কাগজটা বের করলাম । মাত্র একটা লাইন লেখা “এই কথাটা বলতে তোমার এত দিন লাগল,সেই কবে থেকে এটা শোনার অপেক্ষায় ছিলাম” । সেই রাতটা ছিল আমার জীবনের সেরা রাত । ভাবতেই অবাক লাগছে যে আমি যাকে ভালবাসি সেও আমাকে ভালবাসে । সারারাত অপেক্ষা করেছি কখন সকাল হবে আর কখন মাধবীর দেখা পাবো ।

সকালে স্কুলে যাওয়ার আগের মুহুর্তে মাধবীদের বাসায় খুব চেচামেচি শুনতে পেলাম এবং মনে হল কেউ কান্না করছে । আমার মা ছুটে গেল দেখতে কি হয়েছে । কিছুক্ষন পরে মা ফিরে এসেই আমার গালে সজোড়ে এক চর মারলো ,কিছুই বুঝে উঠতে পারলাম না । শুরু হল মায়ের গালাগালি ।

আমার দেয়া চিঠিটা মাধবীর মা দেখে ফেলেছে । মাধবীর মা মাধবীকে খুব মারধোর করেছে । আমার মাকে অপমান করে অনেক কথা বলেছে । বলেছে সামনের মাসেই বাসা ছেড়ে দিবে । আমি যেন মাধবীর সাথে দেখা করার চেষ্টা না করি ।

মাধবীরা পরের মাসেই বাসা ছেড়ে চলে গেল । স্কুলে প্রতিদিন মাধবীর জন্য অপেক্ষা করতাম । মাধবী আর স্কুলে আসতোনা । অনেকদিন পরে মাধবী স্কুলে গেল পরীক্ষা দিতে । দূর থেকে দেখা হল ,মা সাথে ছিল বলে মাধবী কথা বলতে পারেনি । পরের পরীক্ষার দিন পরীক্ষার খাতা থেকে পেজ ছিড়ে একটা চিঠি লিখে বান্ধবীর মাধ্যমে আমার কাছে পাঠালো । সেখানে লেখা ছিল পরীক্ষার পরেই ওরা সপরিবারে কানাডা চলে যাবে । তবে যেখানেই থাকুক সে আমাকে কখনোই ভুলবেনা কারন সে আমাকে অনেক ভালবাসে ।

আমাদের কারোরই তখন মোবাইল ছিল না ,তাই পরীক্ষার পরে আর মাধবীর কোন খোজ পেলাম না । মাধবীকে খুব ভালবেসেছিলাম তাই আর কোন মেয়েকে জীবনের সাথে জড়াতে পারিনি । দুই বছর আগে হঠাত মাধবীর সাথে দেখা হয়ে গিয়েছিল এয়ারপোর্টে । এক বন্ধুকে বিদায় দিতে এয়ারপোর্টে গিয়েছিলাম । হঠাত মাধবী সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলল “চিনতে পারছ” । আমি শুধু তাকিয়েই থাকলাম । কোলে ফুটফুটে একটা বাচ্চা ।

অনেক কথা হল সেদিন । বুঝলাম সংসার জীবনে খুব সুখে আছে মাধবী । আর এটাও বুঝলাম যে মাধবী আমাকে এখনো ভালবাসে কিন্তু সময় আমাদের আর এক হতে দিবেনা । মাধবীর বাবা মা কানাডা থাকলেও সে স্বামীর সাথে জার্মানিতে থাকে । শ্বশুড় মারা যাওয়াতে দেশে এসেছিল ,আজই চলে যাচ্ছে । মাধবী তার স্বামীর সাথেও পরিচয় করিয়ে দিল । যাওয়ার সময় আমার মোবাইল নম্বর নিয়ে গেল ।

এখন মাঝে মাঝে ফোন দিয়ে কথা বলে । খুব অনুরোধ করে একটা বিয়ে করার জন্য । বিয়ের কথা বললেই আমি ফোন রেখে দেই । ভালবেসেছি একজনকে, সেই আমার মনে গেথে আছে ।অন্য কাউকে আমার জীবনে আমি আনতে পারবোনা ।

মানিব্যাগটা আমার মনটাই খারাপ করে দিল । চিঠি তিনটা আমার বর্তমান মানিব্যাগে রেখে দিলাম । প্রথম এবং একমাত্র প্রেমের স্মৃতি তো আমি ফেলে দিতে পারিনা । অই এক মাধবীকেই তো আমি ভালবাসি ।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১:০৩
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×