somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাস্তবের ফ্রাঙ্কেনষ্টাইন, জামর্ান নাজী জোসেফ মেঙ্গেলে

১৮ ই জুন, ২০০৬ দুপুর ১২:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


অনেক যুদ্ধবিগ্রহ ঘটেছে পৃথিবীতে, যুদ্ধকে কেন্দ্র করে অনেক নিশৃংস ঘটনার বিস্তার ঘটেছে। কিন্তু আমি যার কথা লিখছি, নিশৃংসতার প্রতিযোগিতায় হয়তো তার নাম সবার আগে থাকবে। এর নাম জোসেফ মেঙ্গেলে। জোসেফ মেঙ্গেলে একজন ডাক্তার। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পোল্যান্ডের আউশভিচের ইহুদী ক্যাম্পে ডাক্তার হিসেবে দায়িত্বে নিয়োজিত ছিল সে। সেখানে বন্দীদের চিকিৎসা করার চেয়ে তাদেরকে বিভিন্নভাবে হত্যা করা ও তাদেরকে নিয়ে নানাধরনের ডাক্তারী পরীক্ষা চালনোতেই তার আগ্রহ ছিল বেশী। এমনকি জীবিত বন্দীদের উপরও সে তার পৈশাচিক পরীক্ষা চালিয়ে যেত। তার পৈশাচিকতার ছেবল থেকে শিশুরাও বাদ পড়েনি।

30 শে মে 1943 সালে জোসেফ মেঙ্গেলে পোল্যান্ডের আউশভিচে ডাক্তার হিসেবে যোগ দেয়। সেখানে সে তার ডাক্তরী ও অ্যানথ্রোপলজিক্যাল পরীক্ষা নিরীক্ষা শুরু করে। সে নিজেই তার পরীক্ষার জন্যে প্রয়োজনীয় মানুষ খুজে নিত। মানুষের শারীরিক অঙ্গের অস্বাভাকিতা ও জমজ শিশুদের নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষায় সবচে' বেশী আগ্রহ ছিল তার। সাধারনতঃ সে মানুষদের করুন মৃত্যুর মাঝেই সমাধা হতো তার পরীক্ষা। যারা বাঁচতো, চিরজীবনের জন্যে অর্থব হয়েই বাঁচতে হতো তাদের। ক্যাম্পে নতুন যারা আসতো, অন্যান্য নাজী ডাক্তারদের মতোই জোসেফ মেঙ্গেলে তাদের তাদের ব্যারাকে ঢোকানের আগেই নিজের ল্যাবোরেটারীর জন্যে আলাদা করে নিত। তার পছন্দ অনুযায়ীই যারা কাজের যোগ্য, তাদেরকে আলাদা করা হতো,- শিশু, অসুস্থ ও বৃদ্ধদের আলাদা করে গ্যাস চেম্বারে মৃত্যুর জন্যে পাঠানো হতো।

1944 সালের জুলাই মাসে জিপসী বন্দীদের একটা ক্যাম্প জায়গার অভাবে বন্ধ করে দিতে হয়। বন্দীদের মৃত্যু বা অন্য ক্যম্পে পাঠনোর জন্যে বাছাইয়ের দ্বায়িত্ব জোসেফ মেঙ্গেলের উপর বর্তায়। 3000 বন্দীকে গ্যাস চেম্বারে হত্যা করা হয় তার আদেশে। 1400 বন্দীকে পাঠানো হয় বুখেনওয়াল্ডএর অন্য এক ক্যাম্পে। এর পরই জোসেফ মেঙ্গেলের ক্যম্পের প্রধান ডাক্তার হিসেবে পদোন্নতি ঘটে।

1945 সালের 15ই জানুয়ারী রুশ সৈন্যরা যখন পোলান্ড দখলের মুখোমুখি, জোসেফ মেঙ্গেলে পশ্চিমে পালিয়ে যায়। জুন মাসে আমেরিকান সৈন্যদের হাতে ধরা পরে সে। ধরা পরার পরও ফ্রিটস হলমান পরিচয়ে আগষ্ট মাসে মুক্তি পায় সে। তারপর কয়েক মাস পালিয়ে থাকার পর মিউনিখের কাছাকাছি রোজেনহাইমে একজন চাষীর েেত 1949 সাল অবধি দিনমজুরের কাজ করে । 1949 সালে হেলমুট গ্রেগর নাম নিয়ে রেডক্রসের সাহায্যে একটি পাসপোর্ট জোগাড় করে ইটালী গেনুয়া হয়ে আর্জেন্টিনায় পালিয়ে যায় সে।

মেঙ্গেলে তার আত্মীয় স্বজনদের আর্থিক সাহায্যে রাজধানী বুয়েন্স আয়ার্সে বসবাসের সুযোগ খুঁজে নেয়। 1954 সালে স্ত্রীর সাথে ছাড়াছাড়ি হয় তার। 1956 সালে সে তার ছেলে ও তার ভাইয়ের বিধবা স্ত্রীর সাথে সুইজারল্যান্ডে ছুটি কাটাতে আসে। সেখানে স্বনামে নতুন জার্মান পাসপোর্ট জোগাড় করে তার ভাইয়ের বিধবা স্ত্রীকে সাথে নিয়ে আর্জেনটিনায় ফিরে যায় মেঙ্গেলে। উরুগুয়ের মনটাভিডিওতে এই মহিলাকে বিয়ে করে সে।

1959 তাকে খুজে বের করার জন্যে হুলিয়া প্রদান করা হয়। ইহুদী গোপন সংস্থা মোশাদ তাকে ধরার জন্যে পৃথিবীব্যাপী তৎপরতা শুরু করে। জাসেফ মেঙ্গেলে আর্জেনটিনা ছেড়ে ব্রাজিলের সান পাওলোতে পালাতে বাধ্য হয়। সেখানে খুব দারিদ্রতার মাঝে জীবন কাটাতে হয় তার। সেখানেই 1979 সলে সমুদ্রস্নানের সময় হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যু হয় তার। ভলফগাং গেরহার্ড নামে কবর দিয়ে তার পরিবারের লোকজন তার মৃত্যুকে গোপন রাখতে সমর্থ হয়।

জার্মান সরকার তাকে ধরার জন্যে দশ মিলিয়ন মার্ক পুরস্কার ঘোষনা করে। 1985 সালে মৃত্যুর খবর প্রকাশ হয়ে পড়ে ও কবর খুজে বের করা হয়। ল্যাবোরেটারীতে তার কঙ্কাল পরীক্ষা করে তার পরিচয় নির্ধারণ করা হয়। 1992 সালে ডি এন এ টেষ্টে তার মৃত্যু সম্পর্কিত বাকী সন্দেহও দুর করা হয়।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×