somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অন্য শরীর-১০, মূল: ফ্রান্স কাফকা, জার্মান থেকে অনুবাদ তীরন্দাজ

২২ শে ডিসেম্বর, ২০০৬ রাত ১:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কিছুটা সময় এভাবেই কাটলো। গ্রেগর আচ্ছন্নের মতো পড়ে রইল সেখানে। চারিদিক চুপচাপ, হয়তো ভাল কোন ইঙ্গিত। তখনই কলিং বেলে আওয়াজ শোনা গেল। কাজের মেয়েটি রান্নাঘরে আবদ্ধ, গ্রেটেই দরজা খুলতে ছুটে গেল। বাবা ফিরে এসেছেন। 'কি হয়েছে'? এটাই ছিল তার প্রথম কথা। গ্রেটের চেহারা দেখেই খারাপ কিছু অনুমান করতে পেরেছেন। ভোঁতা স্বরে উত্তর দিলে সে, হয়তো বাবার বুকে মুখ গুজে,'মা অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল, তবে এখন ভালো আছে। গ্রেগর বেরিয়ে গেছে তার ঘর ছেড়ে'। 'আমি অনেকবারই বলেছি, আমার কথা শুনতে চাওনি কেউ' বললেন বাবা। গ্রেগর পরিস্কার বুঝলো, বাবা গ্রেটের কথায় খারাপ কিছু ধারণা করেছেন ও ভেবেছেন, গ্রেগর আক্রমন করে কোন দূর্ঘটনা ঘটিয়েছে। তাঁকে বোঝানোর সময় ও সুযোগ গ্রেগরের নেই, শান্ত করাই সবচেয়ে বেশী জরুরী। তাই সে তার ঘরের দরজার কাছে গিয়ে দরজায় চেপে ধরলো নিজেকে। তার ধারণা, বাবা বারান্দা পেরিয়েই গ্রেগরের সদোদ্দেশ্য দেখতে পাবেন। বুঝতে পারবেন, দরজা খুলে দিলে সে সাথে সাথেই ঘরে ফিরে গিয়ে অদৃশ্য হয়ে যেতে প্রস্তুত।

কিন্তু বাবার পুরো অবস্থার সুক্ষ বিশ্লেষনের মেজাজ ছিল না। 'আহ' বলে যেভাবে শব্দ করে ঘরে ঢুকলেন তিনি, মনে হতে পারে, তিনি একাধারে ক্ষুব্ধ ও সেইসাথে আনন্দিত। গ্রেগর তার মাথা দরজা থেকে তুলে বাবার দিকে তাকালো। বাবা তাকে এভাবে দেখবেন আশা করেন নি। আর গ্রেগর গত ক'দিন তার লাফালাফিতেই ব্যাস্ত থাকায় বাড়ীতে কি ঘটছে, সেদিকে নজন রাখতে পারেনি। পারলে টের পেত যে পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটেছে অনেকখানি। তারপরও তার বিশ্বাস হতে চাচ্ছিল না, এই কি সেই বাবা! এ কি একটি লোক, যাকে গ্রেগর প্রতিবার ট্যুর থেকে ফিরে শোবার পোষাকে ইজিচেয়ারে এলিয়ে থাকতে দেখতো। চেয়ার ছেড়ে ওঠার শক্তিও ছিল না। আনন্দের প্রকাশ শুধুমাত্র হাত তুলে জানাতে পারতেন। মাঝে মাঝে রবিবার ও বিশেষ বিশেষ বেড়াতে বেরুতেন। মা নিজেও ভালো চলতে পারতেন না, তারপরও মা ও গ্রগরের মাঝখানে থেকে নিজেকে ওভারকোটে ঢেকে লাঠিতে ভর দিয়ে একটু একটু এগোতেন। কোন কথা বলতে চাইলে থেমে পড়তেন ও অন্যরাও থামলেই শোনা যেত তার কথা। এখন ওনি দাড়িয়েছেন ঋজু ভঙ্গীতে, ব্যাঙ্কের পাহাদারের মতো সোনালী বোতামের নীল রং এর ইস্ত্রী করা পোষাকে। সার্টের উঁচু কলারের উপর তার শক্তিমদমত্ত দোভাঙ্গা থুতনী। ঘন বাদামী ভ্রুর নীচে চোখের দৃপ্ত ও সতর্ক দৃষ্টি। আগের উস্কোখুস্কো চুল আচড়ে অতি যত্নে সিথি কাটা হয়েছে। তিনি তার সম্ভবতো কোন ব্যাঙ্কের সোনালী মনোগ্রাম আঁকা টুপিটা পুরো ঘর পেরিয়ে বাক্সের উপর ছুড়ে দু্থহাত পকেটে পুরে বিরক্ত মুখে এগিয়ে গেলেন গ্রেগরের দিকে। কি করবেন, তা হয়তো নিজেই জানতেন না, কি একটি পা আস্বাভাবিক উঁচুতে তুললেন। তা জুতোর তলার বিরাট আকৃতি দেখে অবাক হলো গ্রেগর। তার নতুন জীবনের শুরুতেই বুঝতে পেরেছিল গ্রেগর, তার বাবা তার প্রতি কঠিন থাকাই জরুরী মনে করেন। সে বাবার সামনে থেকে দৌড়ে পালালো, বাবা যখন থামলেন, থামলো সে ও, তিনি আবার এগিয়ে এলে সে ও অন্যদিকে সরে গেল। কোন গুরুতর কিছু ঘটার আগে, কয়েকবার চললো ঘরের ভেতরে এই দৌড়াদৌড়ি। একসময় কিছুক্ষনের জন্যে থামলো গ্রেগর। যদি সে দেয়ালে বা কড়িকাঠের উপর ওঠে, বাবা তা বদমাইসী মনে করে আরো বেশী রেগে যেতে পারেন। তাছাড়া সময়ের সাথে সাথে তার ক্লান্তিও বাড়ছিল। বাবা যদি এক পা হাটেন, তাকে এদিক সেদিক নড়াচড়া করে অনেকবার পা ফেলতে হচ্ছিল। নি:শ্বাসে কষ্ট হচ্ছিল খুব, ছোটবেলা থেকে ভোগা ফুসফুসের দুর্বলতা মাথা চাড়া দিলো আবার। সে আরেকবার দৌড়ের জন্যে সমস্ত শক্তি সঞ্চয়ে করলো, ক্লান্তিতে চোখও খুলতে পারছে না, অন্যকোন উপায়ে নিজেকে রক্ষা করার পথও ভাবতে পারছে না। ঠিক সে মূহুর্তে তার অতি কাছেই একটি অপেল মাটিতে পড়ে তার শরীল ঘেসে অন্যদিকে গড়িয়ে গেল। পরমূহুর্তেই আরেকটি এসে পড়লো, গ্রেগর থমকে গেল ভয়ে। দৌড়ে কোন লাভ হবে না বুঝলো, বাবা তাকে আপেলের বোমা মারার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আপেলের একটি থালা ছিল উঁচু খাবার টেবিলের ছোট্ট একটি টেবিলে, সেখান থেকে পকেটে ভরে নিয়েছেন এবং একটা পর একটা পুরো লক্ষস্থির না করে ওর দিকে ছুড়ছেন। ছোট ছোট লাল আপেল বিদ্যুতের মতো একটা সাথে আরেকটির ধাক্কায় ছড়িয়ে পড়ছে সারা মেঝেতে। একটা গ্রেগরের পিঠ পিছলে বেরিয়ে গেল আঘাত না করেই। পরেরটি এসে সরাসরি ওর পিঠে আঘাত করলো। জায়গা থেকে সরেই যেন এই হঠাৎ অবিশ্বাস্য ব্যাথার উপশম হবে ভেবে সরতে চাইলো গ্রেগর। কিন্তু মনে হলো, পেরেকে আটকে আছে মেঝেতে আর ও পুরোপুরি অবিন্যস্ত অন্ধকারে ডুবে। শুধুমাত্র শেষ মূহুর্তে এক পলকে মায়ের পেছনে বোনকে ওর ঘরে থেকে চিৎকার করে বের হতে দেখল। মায়ের পরনে শুধু লম্বা অন্তর্বাস । উপরের পোষাক জ্ঞান হারানোর পর নি:শ্বাসের সুবিধার জন্যে খুলে নিয়েছ বোন। লুটানো ঘাগড়ায় হোঁচট খেতে খেতে ছুটছে মা বাবাকে জড়িয়ে ধরে আকুল হয়ে গ্রেগরের জীবন ভিক্ষা চাইলেন। এরপর কি হলো, তা দেখার মতো দৃষ্টিশক্তি আর গ্রেগরের রইল না।

তিনটি খন্ডের দ্বিতীয় খন্ড সমাপ্ত....
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এমন রাজনীতি কে কবে দেখেছে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২০


জেনজিরা আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের শাসনামল দেখেছে। মোটামুটি বীতশ্রদ্ধ তারা। হওয়াটাও স্বাভাবিক। এক দল আর কত? টানা ১৬ বছর এক জিনিস দেখতে কার ভালো লাগে? ভালো জিনিসও একসময় বিরক্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযুদ্ধের কবিতাঃ আমি বীরাঙ্গনা বলছি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১৫


এখনো রক্তের দাগ লেগে আছে আমার অত্যাচারিত সারা শরীরে।
এখনো চামড়া পোড়া কটু গন্ধের ক্ষতে মাছিরা বসে মাঝে মাঝে।

এখনো চামড়ার বেল্টের বিভৎস কারুকাজ খচিত দাগ
আমার তীব্র কষ্টের দিনগুলোর কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রবাসীর মৃত্যু ও গ্রাম্য মানুষের বুদ্ধি!

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৩০



একজন গ্রামের মানুষের মাথায় ১০০ জন সায়েন্টিস্ট, ৫০ জন ফিলোসফার, ১০ জন রাজনীতিবিদ এবং ৫ জন ব্লগারের সমপরিমাণ জ্ঞানবুদ্ধি থাকে, তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ন এসব লোকজন বাংলাদেশের এক একটি সম্পদ।

বিস্তারিত:... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন নারী শিক্ষিকা কীভাবে কন্যা শিশুর সবচেয়ে অসহায় মুহূর্তের ভিডিও ধারণ করতে পারেন?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:২৩


বাংলাদেশে মাঝে মাঝে এমন সব মানুষ রূপী শয়তানের সন্ধান মেলে যাদের দেখে আসল শয়তানেরও নিজের উপর হতাশ হওয়ার কথা। এমন সব প্রজাতির মানুষ বাংলাদেশে বসবাস করেন যাদের মস্তিষ্ক খুলে দেখার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=মানুষ মানুষকে কীভাবে এত অপদস্ত করে এই ব্লগে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৪

আমি তো কারও সাতেও নাই পাঁচেও নাই। এত সময়ও নাই মানুষকে ঘাঁটার। ব্লগের ব্লগারদের সম্পর্কেও তেমন কিছু জানি না। তবে পোস্ট পড়ে কিছুটা আন্দাজ করা যায় -কে কী রকম। আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×