somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নির্বান্ধব দুই তরুন

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১১ রাত ৮:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


নির্বান্ধব দুই তরুন


মাশরাফি বিন মুর্তজা একবার রাগারাগি করে টিম হোটেল ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। আমি তখন প্রথম আলোতে। সাকিব আল হাসানের কলাম অনুলেখন করছিলাম।
যতোদূর মনে পড়ে, সাকিব দারুন একটা কথা বলেছিলেন, ‘ছোট হোক, বড় হোক দলীয় শৃঙ্খলা কেউ ভঙ্গ করলে তাকে শাস্তি দিতে হয়। নইলে সেটা ওই খেলোয়াড়কে আস্তে আস্তে নিয়ন্ত্রনের বাইরে নিয়ে যায়।’
এর চেয়ে সত্যি কথা আর হয় না। আজ আপনাকে এবং আপনার গুরু শাস্তি পাওয়া দেখে সেটাই মনে হচ্ছে সাকিব: শাস্তি না দিলে মানুষ নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যায়।

কারো কারো লেখা এবং কারো কারো কথা এরকম একটা ভাবমূর্তি তৈরি করেছে যে, সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবালকে জিম্বাবুয়ে সফরের ব্যর্থতার বলি বানিয়ে বরখাস্ত করা হয়েছে।
এর সঙ্গে ‘আদাব-সালাম’-এর একটি প্রসঙ্গও এসেছে। সাকিব বলেছেন, কাউকে আদাব না দিলে কি অসদাচরন হয়? একটি পত্রিকাও লিখেছে, সাংবাদিকরা সাকিবদের কাছ থেকে আগের ক্রিকেটারদের মতো ব্যবহার না পেয়ে চটেছেন।
এগুলো স্রেফ কিছু বিভ্রান্তি ছাড়া আর কিছু তৈরি করছে না। প্রকৃত পক্ষে সাকিব-তামিম বরখাস্ত হয়েছেন দীর্ঘদিনের আচরণগত সমস্যার কারনে। তাদের বরখাস্ত করার পদ্ধতি সঠিক ছিল না। এমনকি তাদের আচরণ সংশোধনেরও কোনো উদ্যোগ বোর্ডের তরফ থেকে নেওয়া হয়নি, বরং আস্কারা দেওয়া হয়েছে। এবার বিনা নোটিশে ছেলে দুটোর চাকরি খেয়ে দেওয়া হয়েছে।
তারপরও সাকিব-তামিমের আচরণকে এই সেন্টিমেন্টের সুযোগে সঠিক বলার কোনো সুযোগ নেই। প্রথম কথা হল, সাকিব কাউকে সালাম দিলেন, কি দিলেন না; তাতে বৃহত্তর অর্থে ক্রিকেট বা ক্রিকেটীয় আচরণের কিচ্ছু যায় আসে না।
আমি মানি, এরা নতুন প্রজন্মের ক্রিকেটার। একটা অস্ট্রেলিয়ান কাঠামোতে (রিচার্ড ম্যাকিন্সের হাতে) বেড়ে উঠেছেন এরা। পরে মহীরুহ হয়েছেন আরেক অস্ট্রেলিয়ান জেমি সিডন্সের আমলে। ফলে অপ্রিয় সত্য কথা বলতে পারেন তারা। লোক দেখানো বিনয় বা ভদ্রতার ধার ধারেন না।
এগুলো ক্রিকেটের জন্য ক্ষতিকর নয়। বরং ক্রিকেটার হিসেবে ব্যক্তিত্বসম্পন্ন হয়ে উঠতে এসব আচরণ সহযোগিতা করে।
কিন্তু দর্শককে তর্জনী দেখানো, সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচকদের দেওয়া দলের ব্যর্থতা মেনে নিতে অস্বীকার করা, বিজনেস ক্লাশের টিকিট না পেয়ে হইচই, সাবেক ক্রিকেটারদের আক্রমন করা, নির্বাচকদের সম্পর্কে মিথ্যাচার করা, সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিককে ব্যক্তিগত আক্রমন করা; এগুলো কোন পেশাদারিত্বের লক্ষন।
লিওনেল মেসি সম্পর্কে আমরা রোমান্টিক নিউজ ছাপি, মেসি প্রত্যাখ্যান করলেন বিজনেস ক্লাশ; কারণ তার সতীর্থরা সবাই সেখানে যেতে পারবে না। আর আমাদের তামিম ইকবাল বিজনেস ক্লাশের টিকিট না পেয়ে টিকিট ছুড়ে দেন কর্মকর্তার মুখের ওপরে।
ক দিন আগে সাকিব বলেছেন, ড্রেসিংরুমের খবর যে বাইরে বলেছে সে কালপ্রিট। কথা সত্যি। গনতন্ত্রের নিয়মই হল, ভেতরে যাই ঘটুক, বাইরে এসে মিটিংয়ের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করতে হবে। ওখানে নিজের মত প্রকাশ করা যাবে না। নইলে পদত্যাগ করে আসতে হবে।
যেদিন সাকিব ‘আমার দল নয়’ বলেছিলেন, সেদিন কোথায় ছিল তার এই নৈতিকতা!
এ ছাড়াও এই সময়ে হয়েছে অনেক কিছু; যার অনেক কিছু লেখাও যাবে না। কিন্তু কোনোটিই সালাম না দেওয়ার মতো নীরিহ অপরাধ নয়।
কিন্তু শেষ কথা হল, এর কোনো ঘটনার জন্য আমি সাকিব-তামিমকে দায় দেই না। সাকিব-তামিম দেশের সেরা খেলোয়াড়। এদের বয়স আসলেই অনেক কম। ঠিকমতো সবকিছু বুঝে ওঠার আগেই তাদের তরুন কাধে এই দেশের ষোলো কোটি মানুষের প্রত্যাশার চাপ চেপে বসেছে।
ফলে কিছু অসংলগ্ন আচরণ তারা করতে পারেন। পৃথিবীর অনেক বড় বড় ক্রিকেটারের ছোটখাটো অসদাচরনের নজির আছে।
পার্থক্য হল, তাদের শুরু থেকে সতর্ক করে দেওয়া হয়। তাদের আচরণ সংশোধনের চেষ্টা করা হয়। এখানে আমরা তা করিনি। আমাদের বোর্ডে এবং সাংবাদিক মহলে পরিস্কার দুটি গ্রুপ তৈরি হয়ে গেছে।
এক পক্ষ সাকিব-তামিম যা করেন তাতেই ‘ভালো ও পেশাদারিত্ব’ দেখতে পান। আরেক পক্ষ সাকিব-তামিম ভালো করলেও তাতে অন্যায় খুজে পান। দু পক্ষই দুরে বসে তামাশা দেখেছেন। কেউ উস্কে দিয়েছেন, কেউ আস্কারা দিয়েছেন। কেউ গিয়ে মাথায় হাত রেখে বলেননি: এভাবে নয়।
এই এক নিষ্ঠুর ব্যবসা ও ক্রিকেট পলিটিকসের মধ্যে পড়ে গিয়েছিলেন সাকিব-তামিম। পত্রিকাগুলো সাকিব-তামিমের পক্ষ-বিপক্ষ করে নিজেদের ‘সত্যি’ প্রমানে ব্যস্ত। আর বোর্ডের কর্মকর্তারা দু পক্ষ করে লড়াই করে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমানে ব্যস্ত।
ভাবতে বিস্ময় লাগে, কেউ ভাবেনি, এই প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে সাকিব-তামিম শেষ হয়ে যাবে। এই প্রতিযোগিতা না করে ছেলে দুটির কাধে হাত রাখি। বলি: এভাবে নয়।
কেউ বলেনি। সবাই পন্য বানিয়েছে, গুটি বানিয়েছে ওদের। আজ যখন জাতীয় দলকে মহাসমুদ্রে ফেলে এই দু জনকে বাজে একটা প্রক্রিয়ায় সরিয়ে দেওয়া হল আবার শুরু হয়েছে সেই খেলা। কেউ বিজয়ের হাসি হাসছেন, কেউ পরাজয়ের আক্রোশে ফুটছেন।
এখনও কেউ ভাবছেন না, এই অবস্থা চলতে থাকলে একসময় ছেলে দুটো পারফরমও করতে পারবে না।

লেখাটি এখন সাকিব বা তামিম কেউ পড়লে, হাসবেন। বলবেন, আমরা রাজনীতির গুটি নই। আমাদের পছন্দের মানুষরাই আমাদের পাশে আছেন।
ভুল সাকিব, দশ বছর পর পারলে এই লেখাটি উল্টে দেখুন। বুঝবেন, এই সময়ে কেউ আপনাদের পক্ষে ছিল না। আপনারা স্রেফ খেলার গুটি ছিলেন।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

×