somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"দারিদ্র" ভিক্টোরিয়ান আমলের লুকানো অধ্যায়

২৯ শে অক্টোবর, ২০২৫ রাত ৮:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

 
 
 

 জানা অজানা বিলাতের গল্পঃ "দারিদ্র"  "এ জগতে হায় সেই বেশি চায় আছে যার ভুরি ভুরি" ,  ভিক্টোরিয়ান আমলের লুকানো অধ্যায়
চার্লস বুথ
 
 "দারিদ্র হচ্ছে  দাহ ,আপনি এটাকে দেখেন না, জানতে হলে আপনাকে যেতে হবে এর ভিতর দিয়ে"  'অদাবয়া' নামে ঘানার একজন লেখক বলে গেছেন ।
 
ধনী দের গল্প উপন্যাসে এদের নিয়ে সে সময় লেখা হত না। চার্লস ডিকিন্স হলেন প্রথম লেখক তার বিখ্যাত উপন্যাস "Oliver Twist" পুঙ্খনাপুঙ্খ ভাবে তুলে ধরেছেন দরিদ্র মানুষের জীবন গাথা । চার্লস বুথ (Charls বুথ) একজন গবেষক তার গবেষণায় তুলে ধরলেন অনেক মানুষ দরিদ্র হয় নিজেদের দোষে নয়। এর পেছনে অনেক পরিস্থিতিতে তারাকে পড়তে হয়। সেই কারনে সরকার কে এগিয়ে আসতে  হবে এর  সমাধান দিতে।
 
তার পরেই ধনী শ্রেণী এবং সরকারের নজর যায় এদের জন্য কিছু করার ।
 
আঠারো শত   শতাব্দীতে ব্রিটেনের দারিদ্র ছিল "High Levels Of institutionalization poor" অর্থাৎ দরিদ্র মানুষ ছিল একেবারেই দরিদ্র বা "হত দরিদ্র" । কারন  তখন এখনকার মত "সোশাল সিকিউরিটি" অর্থাৎ "সামাজিক নিরাপত্তা" ব্যাবস্থা ছিলনা।
 
 
সমাজের শ্রেণী বিভাগঃ
সমাজ ছিল শ্রেণী বিভক্ত । অর্থ আর শিক্ষা দ্বারা এই শ্রেণী বিভাগ হয়।
Daniel Defore ব্রিটেনের সমাজের শ্রেণীকে সাত ভাগে ভাগ  করেছেন এই ভাবেঃ
১) যাদের কল্পনাতীত সম্পদ আছে (The Great" Who live profusely ) 2) ধনী ,যাদের প্রচুর আছে ৩) মধ্য বিত্ত যারা মোটামুটি ভালোই চলে ৪) ওয়ার্কিং ক্লাস ,যাদের ছোটখাটো ব্যাবস্যা আছে এবং শ্রমিক শ্রেণী  ৫) জনসাধারণ এবং কৃষক ৬) দরিদ্র এবং কঠিন জীবন  7) দারিদ্র সীমার নিচে বসবাস কারী শ্রেণী ।
 
Workhouses বা Poor House
অতি দরিদ্র বা হত দরিদ্র শ্রেণী শহরে আসত  গ্রাম থেকে কাজের আশায় । তারাকে থাকার জন্য একই  ছাদের  নিচে পুরুষ ,নারী ,  বৃদ্ধ,  পরিবার বাচ্চা কাচ্চা গাদাগাদি করে বাস করতে দেয়া হত ।  যাকে বলে কোন মতে মাথা গোঁজা ।
শিল্প বিপ্লবের ফলে চারদিকে অনেক কারখানা গোড়ে উঠেছিল । সেই কারখানায় কাজ করার জন্য মানুষ আসতো গ্রাম থেকে । গ্রামেও যে তাদের জমি জমা ছিল তাও নয় ।  সেখানে তারা কাজ করত জমি মালিকদের লেবারার হিসাবে।
 
কলকারখানায় কাজ করতো অল্প মজুরীতে । কারন সে সময় ট্রেড ইউনিয়ন এবং পেনসন  ছিল না,।
 নুন্যতম মজুরী বেঁধে  দেয়ার নিয়ম ছিলনা। যার ফলে শ্রমিকের রক্ত পানি করা  পরিশ্রম চুষে নিয়ে কারখানা মালিক লাভের টাকার পাহার বানাত  । তারা ছিল নির্জাতিত ,শোষিত এবং লাঞ্ছিত ।
কার্ল মার্ক্সের থিওরি অনুযায়ী যাকে বলা হয় 'শ্রম চুরি'।
 
দারিদ্রর কারনঃ
 
১) বৃদ্ধ বয়সে যখন উপার্জন ক্ষমতা থাকেনা ,আবার সবার জন্য  পেনসনের ব্যাবস্থা সে সময় না  থাকা।
২) উপার্জন কারী মানুষটির মৃত্যু হলে পরিবার দারিদ্র্যের কবলে পড়ে বা পঙ্গু বা অসুস্থ হয়ে ইনকাম হারালে
৩) বাচ্চারা অনাথ হয়ে পড়লে
৪) বাবামার ডিভোর্সে বাচ্চারা অসহায় হয়ে যায় ,
৫) সিঙ্গেল মাদার বা স্বামী পরিত্যাক্ত নারী বা বিধবা স্ত্রী
৬) বাইরে থেকে আসা রিফুজি
৭) বেকার
8) অনেক সন্তান সহ পরিবার
৯) সে সময় চিকিৎসা ফ্রী ছিলনা তাই কারো অসুখ হলে চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে গিয়ে পুরো পরিবার দরিদ্র নিঃস্ব হয়ে যেতো
১০) আবার কারর ইনকাম থাকলেও তা এত কম যা দিয়ে পরিবারকে সাপোর্ট  করতে পারতো না ।
১১) জিনিস পত্রের উর্ধগতী যা সাবসিডাইড করা হতোনা নিন্ম আয়ের মানুষের জন্য।
১২) কোনো কারনে শস্য হানী হলে  অনেক কৃষককে না খেয়ে থাকতে হতো  ।
 
সে সময় ৩০ % মানুষ ছিল দরিদ্র । সে সময় ধনীরা থাকত বিলাস বহুল বাড়ীতে চাকর বাকর সহ । সন্তান যেতো দামী স্কুলে । কারর আবার কান্ট্রি সাইডে  থাকত ছুটি কাটানো ভিলা।
 
স্কুল ফ্রী না থাকায় দরিদ্র পরিবারের ছেলেমেয়ে রাস্তায় রাস্তায় খালি পায়ে,ছেড়া কাপড়ে ভুখা নাঙ্গা হয়ে ঘুরতো ।
 
গরীব মানুষের প্রতি সরকার এবং জনসাধারণের ভূমিকাঃ
 
সরকারের কোনও ভূমিকা ছিলনা এসব  সমাধানের ব্যাপারে। কোন খেয়াল করতো না। তাদের আর্থনৈতিক  উন্নতির জন্য যে অর্থের দরকার হবে তা কোথা  থেকে আসবে।  ধনী এবং উচ্চবিত্ত দের ইনকামের উপর ট্যাক্স বসিয়ে ইনকাম করা যায় তা সরকার ভাবে নায় ।
 
ধনীদের ভূমিকা দরিদ্রদের নিয়ে। এটা তাদের ভ্যাগ্য ,এটা তাদের কপালে ছিল । Norman Pear son এর  উক্তি ছিল "Poor people are made of inferior material and cannot be improved" অর্থাৎ "তারাকে পরিবর্তন করা সম্ভব নয় তারা এভাবেই তৈরি " ।
ভাবা হতো তারা অলস, কি ভাবে জীবনের উন্নতি করা যায় তা তারা জানেনা, তারা মদ খেয়ে ড্রাগ নিয়ে মাতাল থাকে আর তাদের কোনো মরালীটি নাই।
চ্যারিটিঃ
কিছু কিছু চ্যারিটি ছিল তা প্রাইভেট এবং অরগানাইজ নয়। যেমন 1) RSPCC  এতিম নিয়ে কাজ ২) Salvation Army  মানুষের কাজের সংস্থান করতো নুতুন স্কিল দিয়ে 3) Octavia Hill  গৃহ হীন  দের গৃহের ব্যাবস্থা 4) Thomas Barnardo এতিম বাচ্চা দের থাকার ব্যাবস্থা । অনেক ধনী মানুষ মনে করতো দরিদ্র কে অর্থ দেয়া বা সেবা করা ধর্মের কাজ।
 
যে ভাবে নজর আসেঃ
দুইজন গবেষক Charles Booth আর Seebohm Rowntree ইতিহাসে বিখ্যাত হয়ে থাকবেন কারন তারা গবেষণা  করেছেন দরিদ্র হওয়ার পেছনে কি কারন। এটা তাদের দোষ নয় এই অবস্থায় পড়ার জন্য। সিচুয়েসান তাকে এই অবস্থায় ফেলে।
ব্রিটেন তখন পৃথিবীর মধ্যে শক্তিশালী দেশ। সরকার এবং রাজনৈতিক দল গুলোর ধারনা হয়েছিল পৃথিবী ব্যাপী তাদের ক্ষমতা ধরে রাখতে একটা শক্তিশালী, স্বাস্থ্য বান এবং শিক্ষিত লোকবল  দরকার।সে সময় লোক নেয়া হচ্ছিল পুলিশ, সোলজার এই সব নিরাপত্তা দেয়া সেক্টরে এবং দেখা যাচ্ছিল মাত্র তিন ভাগের একভাগ ফিট ,বাকি দুইভাগ পুষ্টি হীনতার শিকার । সরকার এই দিকটায় নজর দেয়ার জন্য এবং একটি শিক্ষিত জাতি করার জন্য ফ্রী স্কুল মিল এবং স্কুলের ব্যাবস্থা করে।
 
 
 
 তাছাড়া ১৯০০ সালে লিবারাল পার্টি এই ব্যাপারে পলিসি বানায়। লেবার পার্টি এই শতাব্দীর শেষে দল গঠন করে। তাদেরও একি নীতি ছিল । দুই দলের মধ্যে কমপিটিসান আরম্ভ হয় এই মানুষ দের ভোটে পাওয়ার  জন্য। দরিদ্র মানুষ গ্রুপ বানায় এবং তাদের চাওয়া পাওয়া জানাতে থাকে। মেয়েদের  দাবি ছিল ১) ম্যাটারনিটি কেয়ার ২) চাইল্ড কেয়ার, ৩) ফ্রী স্কুল মিল, ৪) ফ্রী হেলথ কেয়ার, ৫) সবার জন্য  পেনসন ।
 
তারিই পরিপ্রেক্ষিতে একের পর এক আইন পাস হতে থাকে দারিদ্র বিমোচনে ।
১৯০৬ সালে ফ্রী স্কুল মিল, ১৯০৭ সালে প্রত্যেক শিশু জন্মের পরে মেডিক্যাল কেয়ার, ১৯০৮ সালে সবার জন্য পেনসন, ১৯১৯ সালে পুরানো বিল্ডিং ভেঙ্গে স্বাস্থ্য সম্মত আবাসন গৃহহীন দের জন্য। ১৮৯১ সালে ফ্রী প্রাইমারী বাধ্যতা মূলক, ১৯৪৪ সালে সেকেন্ডারি বা হাই স্কুল ব্যাধতামুলক । ১৮ পর্যন্ত ফ্রী মেডিসিন, ফ্রী চিকিৎসা, ১৯৪৮ সালে, বেনিফিট অর্থাৎ টাকা দিয়ে হেল্প অল্প বেতনের মানুষের জন্য। ব্রিটেন হল সবচেয়ে প্রথম দেশ যেখানে ফ্রী চিকিৎসা দেয়া আরম্ভ হয়।
 
এই ভাবেই সরকারের নেয়া পদক্ষেপে প্রথমে ব্রিটেন পরে ইউরোপের অনেক দেশে ওয়েল ফেয়ার সিস্টেম বা সামাজিক নিরাপত্তা গড়ে উঠে।
 
হুসনুন নাহার নার্গিস, নারী ও  শিশু অধিকার কর্মী
 
তথ্য সূত্রঃ
Victorian era History Society Culture ,Britannica
Poor People Queen Victoria Time
Hidden Lives Revealed, Poverty and Families in the Victorian Era
How Poverty affected Britain in the 1888 ,Divided Society BBC Bitesize
Victoria Britain : A Brief History , Historical Association
ছবিঃ উইকিপিডিয়া
 
 
 
 
 
 
 
 
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে অক্টোবর, ২০২৫ রাত ৮:০৫
৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×