somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"হ্যাটসেপসুট" একজন শক্তিশালী মিশরীয় নারী শাসক ফ্যারো কিন্তু মৃত্যুর পর তার নাম মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছিলো ,কেন?

১৯ শে নভেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


'হ্যাটসসেপসুট' একজন শক্তিশালী নারী শাসক ফ্যারো কিন্তু মৃত্যুর পর  তার নাম মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিলো 
 
হ্যাটসেপসুট একজন নারী ফ্যারো । যার  শাসন ক্ষমতা ছিল ( ১৪৭৩-১৪৫৮ B C) প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার সময় পুরুষ শাসিত সমাজ ছিল এবং একজন পুরুষ ফ্যারো হিসেবে ক্ষমতায়  থাকবে এটাই প্রচলিত ছিল।
 
তবে কেউ যদি অল্প বয়স থাকে তবে সে বড়ো না হওয়া পর্যন্ত রাজ পরিবারের কেউ তার স্থানে রাজকার্জ পরিচালনা করতো । অনেক সময় কোনো উপযুক্ত পুরুষ না থাকলে মা বা বোন এই স্থানটি পুরন করে। 
হ্যাটসেপসুট  ফ্যারো টাটমেস  এবং মা আহমেসের কন্যা ছিলেন। হ্যাটসেপসুট নামের অর্থ ‘নোবেল নারী’  তার নেফরুবিটি ( Nefrubity) নামে এক বোন ছিল । 
তার পিতা  একজন ভালো যোদ্ধা হিসেবে নিউবিয়া এবং সিরিয়ায় যুদ্ধ পরিচালনা করে রাজ্যের বিস্তৃতি করেন। 
সৎ ভাই টাটমেস II এর সাথে তার বিয়ে হয় ।তাদের নেফেরুরে নামে এক কন্যা ছিল ।  কিন্তু তার স্বামীর  অকাল মৃত্যু হলে উপযুক্ত উত্তরসূরি না থাকার জন্য মাইনর কুইন এর গর্ভজাত পুত্র টাটমেস III এর কাছে ক্ষমতা যাওয়ার কথা থাকলেও তখন সে শিশু থাকায় হ্যাটসসেপসুট  রাজকার্জ পরিচালনার দায়িত্ব নেন। 
সঠিক কোন কারন জানা যায়না কেন পরে তিনি ক্ষমতা না দিয়ে নিজেই নিজেকে ফ্যারো বলে ঘোষণা দেন এবং ‘ ডেইর এল বাহারি’ এর একটা লেখা এবং ছবি থেকে জানা যাচ্ছে তার পিতা তাকে ক্রাউন পরিয়ে দিয়ে ক্ষমতা হস্তান্তর করছেন এবং দেবতা বলে ঘোষণা দিচ্ছেন ।সে সময় রাজাকেই দেবতা বলা হতো। তিনি দাবি করেন তার মৃত্যুর আগেই তার পিতা তাকে উত্তরসূরি করেন। 
তার শাসন আমলে প্রথিস্টিত থাকার উৎসব  শিরোমণি পালন  বলে দায় তাকে জনসাধারণ ভাল ভাবে মেনে নিয়েছিল এবং একজন নারীও যে ভালো কাজ করতে পারে তা  তারা বুঝে নিয়েছিল । তারা কোন সমস্যা করেনি ।
তিনি যে নারী তার  প্রমাণঃ 
হ্যাটসেপসুট যে একজন নারী তা এতদিন কারর জানা ছিলনা । কারন তিনি পুরুষ ফ্যারর মতোই ফলস দাড়ি  ব্যাবহার করতেন।অনেকে মনে করেন প্রজাকে খুশি করার জন্য হয়তো তিনি দাড়ি ব্যাবহার করতেন।
হ্যাটসেসপসুট যে একজন নারী তা  বোঝা গেল যখন ১৮২২ সালে হাইরগ্ললাফিক ভাষা পড়তে সক্ষম হলেন আর্কেওলজিস্ট রা ।
  তবে বর্তমান যুগের আরকেওলজিসট রা গবেষণা করে দেখছেন তিনি একজন নারী । তা তিনি নিজেই বলে গেছেন বিভিন্ন জায়গায়। 
ক্যাথলিন কেলার,প্রফেসার ইউনিভার্সিটি ক্যালিফর্নিয়া তার গবেষণায় বলে গেছেন ‘তিনি পুরুষ হিসেবে অভিনয় করেননি বা পুরুষের বেস ধারণও করেননি। হ্যাতসসেপসুটের স্ট্যাচুতেই লেখা আছে তার প্রকৃত জেন্ডার সেখানে একটা টাইটেল আছে তা হল ‘ডটার অব রে’ ( Daughter of Re ) , অথবা যে ব্যাক্য দ্বারা বোঝানো হয় একজন নারী না পুরুষ,  যেমন his পুরুষ এবং her নারী ।তার ব্যাক্যে লেখা ছিল ‘হার ম্যেজেসটি’ ।যার দ্বারাই প্রমাণ হয়  তিনি একজন নারী ছিলেন।  
তিনি ‘ম্যাট-কা-রে'  নামে একটা নামও নিয়েছিলেন। অর্থাৎ মিশরীয়দের দেবতার নাম ‘ ম্যাট’, ‘ কা’  অর্থাৎ আত্মা ‘রে’  অর্থাৎ ‘সূর্য দেবতা’  । অর্থাৎ তিনি নিজেকে মিশরীয়দের দেবতা ম্যাট বলে পরিচয় দিতেন এবং যে  কোন  ফ্যারোই নিজেকে দেবতা বলে মনে করতেন এবং তিনিও  তাই করে ছিলেন। সে সময়  মিশরীয়রা ভাবতেন দেবতারাই দেশ শাসন করে । 
 
তার করা  যতো প্রোজেক্ট 
যতো ফ্যারো আছে তার মধ্যে তিনিই সব চেয়ে উচ্চভিলাসি ছিলেন। তার সময়ে করা বহু সংখ্যক  বিল্ডিং  প্রোজেক্ট প্রমাণ করে তিনি একজন উচ্চাকাঙ্ক্ষী ফ্যারো বা শাসক ছিলেন। তিনি যে প্রোজেক্ট করেছিলে তা হল
১) ১০০ ফিট লম্বা অবেলিস্ক যা কিনা কর্নাকের গ্রেট কমপ্লেক্সে প্রথিত আছে। যার ওজন ৪৫০ টন। সেই অবিলিস্বকে লেখা আছে যা আনতে ২৭তি জাহাজের দরকার পড়েছিল, ৮৫০ লেবার লেগেছিল  টেনে আনার জন্য । তিনি অনেক বিল্ডিং প্রজেক্ট হাতে নিয়ে ছিলেন রাস্তার নেট  ওয়ার্ক করেছিলেন ।
২)  ম্যাগনাম টেম্পেল , থিবসের বিখ্যাত টেম্পেল  ,
৩) ডিয়ার -এল-বাহারি  মরচুয়ারী টেম্পেল যা কিনা ২/৩ টি ফুটবল খেলার মাঠের সমান। যার নিচের দিকে ছিল পানির পুল, বাগান এবং রাস্তার দুই ধারে বড়ো বড়ো গাছ দ্বারা  শোভিত।মন্দিরে প্রবেশ করার রাস্তার দুই ধারে সারি  বদ্ধ স্পিংস ছিল এবং যার প্রত্যেকটি মাথা হ্যাতসেপসুটের স্ট্যাচু দ্বারা শোভিত ছিল। যারা কিনা এই মন্দিরকে সুরক্ষা করবে। মন্দিরের প্রত্যেকটি কলাম ছিল তার স্ট্যাচু দ্বারা তৈরি। যার সংখ্যা ছিল ১০০ টি। একেকটি কলাম ১০ ফুট লম্বা,যা বহু  দূর থেকে দেখা যায়। মন্দিরের দেয়াল নানা চিত্র দ্বারা শোভিত ।বেশির ভাগ চিত্রই  তার শাসন আমলের উল্লেখ যোগ্য অবদান এবং অর্জন ।
 যেমন একটি চিত্রে দেখা যাচ্ছে  বাণিজ্য বৃদ্ধির নেট  ওয়ার্ক  যেখানে পানট বর্তমান সময়ের ইরিত্রিয়া থেকে জাহাজ ভর্তি করে নিয়ে আসছেন মূল্যবান সামগ্রী, যেমন গোল্ড, আইভরি, এবোনি , নানা রকমের জন্তু এবং সুগন্ধি গাছ। নিচে  লেখা আছে ‘যে সমস্ত জিনিস আনা হচ্ছে তা শুধু রাজার জন্যই  আনা হয়। 
তার শাসনকাল ছিল শান্তি পুর্ন  
১০০ ফুট অবিলিস্ক ছাড়াও তিনি আরও দুটি অবিলিস্ক স্থাপন করেন যেখানে লেখা ছিল ‘একদিন আমি পৃথিবীতে থাকবো না কিন্তু মানুষ বুঝবে এবং  আমার করা মনুমেন্ট গুলো  বলে দিবে আমি কি কি করেছি।’ 
তার মৃত্যু , আর  নাম মুছে ফেলে  মর্জাদা হানি করে বিকৃত করার চেষ্টাঃ 
হ্যাটসেপসুট কে ফ্যারো হিসেবে সমাহিত করা হয় ভ্যালি অব দি কিং এ । কিন্তু তার রেখে যাওয়া মনুমেন্ট থেকে তার নাম মুছে ফেলা হয় এবং স্ট্যাচু নষ্ট করে তার সন্মান নষ্ট করা হয়েছে। 
তুতেমাস III যদিও তার কো- রুলার ছিল আর হ্যাটসেপসুটের মৃত্যুর পর সেই ফ্যারো হয় কিন্তু কোনো সঠিক কারন জানা যায় না কেন এটা করা হয়েছে। 
কারো মতে তুতেমাস প্রতিশোধ নিয়েছে তাকে ঠিক সময়ে ক্ষমতা দেয়া হয় নি। কারোর মতে হ্যাটসেপসুট একজন দক্ষ শাসক ছিলেন এবং মনুমেন্ট করেছিলেন সেগুলোর ক্রেডিট সেই নিতে চেয়ে ছিলেন। 
তবে সাম্প্রতিককালে একজন স্কলারের মতে তুতেমাস III , প্রমাণ করতে চেয়ে ছিল তার পিতার কাছ থেকে সরাসরি তার কাছে ক্ষমতা এসেছিল এবং মধ্যে কেউ ছিলনা তা  বলার জন্য সে তার নাম মুছে ফেলতে চেয়েছিল। 
তার মমিঃ 
২০০৭ সালে গবেষকরা ঘোষণা দেন KV৬০ তে  পাওয়া তার মমির কাছে  তার নাম লেখা বাক্সে একটা দাঁত সংরক্ষিত ছিল Meredith small নামে একজন anthropologist CT স্ক্যান দ্বারা প্রমাণ করেন যে দাঁত টি হ্যাটসেপসুটের মিসিং দাঁতের গর্তে সুন্দর ভাবে বসে গেছে।অর্থাৎ সেই মিসিং দাঁত থাকা মমি টিই হ্যাটসেপসুটের মমি।  মৃত্যু কালে তার বয়স ছিল ৫০ এবং তার নখে কালচে লাল রঙের নেলপালিশ ছিল। একটা এলবেস্তারের পারফিউম জারেও তার নাম লেখাছিল।
কারতুসে তার নাম লেখা জার পাওয়া গেছে ডেল-এল-বাহারি টেম্পেলে
হ্যাটসেপসুটের ফ্যারো হিসেবে তার নাম লেখা 'কারটুস'  পাওয়া গেছে তার বিখ্যাত মরচুয়ারি টেম্পেল,ডেল-এল-বাহারি' তে একটা চিনামাটির জারে  এবং একটা পাথরে ।
 একজন ফ্যারোর যদি নাম লেখা সিল, জার  বা মূর্তি পাওয়া যায় সেটায় প্রমাণ করে সে একজন ফ্যারো । কারন তারা সব কিছুতে নাম লিখে রাখে 'কারটুসের'  মধ্যে । মিশরীয়দের ধারনা এই নাম লেখা দিয়েই  পরবর্তি জীবনে প্রবেশ করা সহজ হয়। মৃত্যু দেবতা নাম দেখে পরিচয় পেয়ে পরবর্তি জীবনে নিয়ে যায় । 
১৯৯৬ সালে Joyce Tyldesley নামক একজন স্কলার বলেন ‘ হ্যাটসেপসুট একটি 'আইস বার্গের'  মতো,  বাইরে থেকে অনেক কিছু তার সম্পর্কে  দেখা যাচ্ছে কিন্তু অনেক কিছুই আমরা জানিনা।’ 
তিনি আরও বলেন তবে  ‘একজন ভালো নারীকে কেউ নিচু করে রাখতে পারেনা  ,যেমন পারবেনা বর্তমান পৃথিবীতেও’ ।  
তথ্য সূত্রঃ
Hatssapsut, A femail Pharo Joyee Tyldestey
Ancient Egypt , Hatshepsut and Thutmose III
photo wikipedia
লেখক এবং গবেষক ,হুসনুন নাহার নার্গিস ,লন্ডন
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে নভেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:১২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×