somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নবীদের কাহিনী

১৩ ই জানুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৫:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভূমিকা:
আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করে তাকে পৃথিবীতে স্থিতি দান করেছেন। তিনি তাদেরকে অসহায় ও লাগামহীনভাবে ছেড়ে দেননি {মুমিনূন ২৩/১১৫}। বরং ‘প্রথম মানুষ’ আদমকে তাঁর বংশধরগণের হেদায়াতের জন্য ‘প্রথম নবী’ হিসাবে প্রেরণ করেন {বাক্বারাহ ২/৩৮-৩৯}। এভাবে আদম (আলাইহিস সালাম) হ’তে শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) পর্যন্ত ৩১৫ জন রাসূল সহ এক লক্ষ চবিবশ হাযার পয়গম্বর প্রেরিত হন।*১* বহু নবীর নিকটে আল্লাহ পাক ‘ছহীফা’ বা পুস্তিকা প্রদান করেন এবং প্রত্যেক রাসূলকে দেন পৃথক পৃথক শরী‘আত বা জীবন বিধান। তবে চার জন শ্রেষ্ঠ রাসূলের নিকটে আল্লাহ প্রধান চারটি ‘কিতাব’ প্রদান করেন। যথাক্রমে মূসা (আলাইহিস সালাম)-এর উপরে ‘তাওরাত’, দাঊদ (আ.)-এর উপরে ‘যবূর’, ঈসা (আ.)-এর উপরে ‘ইনজীল’ এবং শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)-এর উপরে ‘কুরআন’। প্রথমোক্ত তিনজন ছিলেন বনু ইস্রাঈলের নবী এবং তাদের নিকটে প্রদত্ত তিনটি কিতাব নাযিল হয়েছিল একত্রিত আকারে। কিন্তু শেষনবী প্রেরিত হয়েছিলেন ‘বিশ্বনবী’ হিসাবে বনু ইসমাঈলে এবং শেষ কিতাব ‘কুরআন’ নাযিল হয়েছিল বিশ্বমানবের জন্য সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবীর উপরে দীর্ঘ ২৩ বছরের বিস্তৃত সময় ধরে মানুষের বাস্তব চাহিদার প্রেক্ষিতে খন্ডাকারে। শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)-এর আগমন ও শেষ কিতাব ‘কুরআন’ নাযিলের পর বিগত সকল নবুঅত ও সকল কিতাবের হুকুম রহিত হয়ে গেছে। এখন বিশ্বমানবতার পথপ্রদর্শক গ্রন্থ হিসাবে {বাক্বারাহ ২/২, ১৮৫} কেবলমাত্র শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) আনীত সর্বশেষ এলাহীগ্রন্থ পবিত্র কুরআনই বাকী রয়েছে। নিঃসন্দেহে রাসূলের ছহীহ হাদীছ সমূহ আল্লাহর অহী {নাজম ৫৩/৩-৪} এবং কুরআনের বাস্তব ব্যাখ্যা {ক্বিয়ামাহ ৭৫/১৯} ও জীবন মুকুর বৈ কিছুই নয়। যা মুমিন জীবনের চলার পথে ধ্রুবতারার ন্যায় সর্বদা পথ প্রদর্শন করে থাকে {হাশর ৫৯/৭}।

হাদীছে বর্ণিত উপরোক্ত বিরাট সংখ্যক নবীগণের মধ্যে পবিত্র কুরআনে মাত্র ২৫ জন নবীর নাম এসেছে। তন্মধ্যে একত্রে ১৭ জন নবীর নাম এসেছে সূরা আন‘আম ৮৩ হ’তে ৮৬ আয়াতে। বাকী নাম সমূহ এসেছে কুরআনের বিভিন্ন স্থানে। কেবলমাত্র ইউসুফ (আ.)-এর কাহিনী সূরা ইউসুফে একত্রে বর্ণিত হয়েছে। বাকী নবীগণের কাহিনী কুরআনের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন প্রসঙ্গে এসেছে। যেমন মূসা ও ফেরাঊনের ঘটনা কুরআনের ২৭টি সূরায় ৭৫টি স্থানে বর্ণিত হয়েছে। সেগুলিকে একত্রিত করে কাহিনীর রূপ দেওয়া রীতিমত কষ্টসাধ্য ব্যাপার। আল্লাহ বলেন, ‘আমরা আপনার পূর্বে এমন বহু রাসূল পাঠিয়েছি, যাদের বৃত্তান্ত আপনাকে শুনিয়েছি এবং এমন বহু রাসূল পাঠিয়েছি, যাদের বৃত্তান্ত আপনাকে শুনাইনি...’ {নিসা ৪/১৬৪, মুমিন ৪০/৭৮}।

আমরা বর্তমান আলোচনায় কুরআনের বিভিন্ন স্থানে বর্ণিত ঘটনা ও বক্তব্য সমূহ একত্রিত করে কাহিনীর রূপ দেওয়ার চেষ্টা করেছি। সেই সাথে বিশ্বস্ত তাফসীর, হাদীছ ও ইতিহাস গ্রন্থ সমূহ থেকেও সামান্য কিছু উদ্ধৃত করেছি। চেষ্টা করেছি নবীদের কাহিনীর নামে প্রচলিত কেচ্ছা-কাহিনী ও ইস্রাঈলী উপকথা সমূহ হ’তে বিরত থাকতে। সীমিত পরিসর ও সীমিত সাধ্যের কারণে অনাকাংখিত ত্রুটি সমূহ থেকে আল্লাহর নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।

উল্লেখ্য যে, পৃথিবীতে আগত সকল নবীই মূলতঃ চারটি বংশধারা থেকে এসেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘নিঃসন্দেহে আল্লাহ আদম, নূহ, আলে ইব্রাহীম ও আলে ইমরানকে নির্বাচিত করেছেন। যারা একে অপরের বংশধর ছিল ...’ {আলে ইমরান ৩/৩৩-৩৪}। এখানে আলে ইবরাহীম বলতে ইসমাঈল ও ইসহাক এবং আলে ইমরান বলতে মূসা ও তাঁর বংশধরগণকে বুঝানো হয়েছে। ইবরাহীম-পুত্র ইসহাক তনয় ইয়াকূব-এর অপর নাম ছিল ‘ইস্রাঈল’ (অর্থ ‘আল্লাহর দাস’)। তাঁর পুত্র ‘লাভী’ থেকে ইমরান-পুত্র মূসা, দাঊদ ও ঈসা পর্যন্ত সবাই বনু ইস্রাঈলের নবী ছিলেন {আনকাবূত ২৯/২৭}। ইবরাহীমের জ্যেষ্ঠ পুত্র ইসমাঈলের বংশে জন্মগ্রহণ করেন সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। এজন্য ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম)-কে ‘আবুল আম্বিয়া’ বা নবীগণের পিতা বলা হয়। উল্লেখ্য যে, বিশ্বে মাত্র দু’জন নবীর একাধিক নাম ছিল। তন্মধ্যে ইয়াকূব (আ.)-এর অপর নাম ‘ইস্রাঈল’ এবং সর্বশেষ নবী মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)-এর অপর নাম ছিল ‘আহমাদ’ {ছফ ৬১/৬} এবং আরও কয়েকটি গুণবাচক নাম। আল্লাহ সকল নবীর উপরে শান্তি বর্ষণ করুন- আমীন!!

নবীদের কাহিনী বর্ণনার উদ্দেশ্য:
প্রশ্ন হ’তে পারে, পবিত্র কুরআনে বিগত নবীগণের ও ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতি সমূহের কাহিনী বর্ণনার উদ্দেশ্য কি? এর জবাব আল্লাহ দিয়েছেন, ‘আমরা পয়গম্বরদের এসব কাহিনী আপনার কাছে বর্ণনা করি, যদ্বারা আমরা আপনার অন্তরকে সুদৃঢ় করি। আর এর মধ্যে এসেছে আপনার নিকটে সত্য, উপদেশ ও স্মরণীয় বস্তু সমূহ বিশ্বাসীদের জন্য’ {হূদ ১১/১২০}। অর্থাৎ এর উদ্দেশ্য হ’ল, যাতে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) নবুঅতের গুরু দায়িত্ব বহন করার জন্য যেকোন ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত হয়ে যান এবং তাঁর উম্মত এ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে।

কুরআনে বর্ণিত ২৫ জন নবীর নাম:
আদম, নূহ, ইদরীস, হূদ, ছালেহ, ইবরাহীম, লূত্ব, ইসমাঈল, ইসহাক্ব, ইয়াকূব, ইউসুফ, আইয়ূব, শু‘আয়েব, মূসা, হারূণ, ইউনুস, দাঊদ, সুলায়মান, ইলিয়াস, আল-ইয়াসা‘, যুল-কিফ্‌ল, যাকারিয়া, ইয়াহ্ইয়া, ঈসা (আ.) ও মুহাম্মাদ (ছাঃ)। {ইবনু কাছীর, তাফসীর নিসা ২৬৪} এঁদের মধ্যে ইবরাহীম-পূর্ব সকল নবী আদম ও নূহের বংশধর এবং ইবরাহীম-পরবর্তী সকল নবী ও রাসূল ইবরাহীম (আ.)-এর বংশধর। উল্লেখ্য যে, সূরা তওবা ৩০ আয়াতে ওযায়ের-এর নাম, এলেও তিনি নবী ছিলেন না। বরং একজন সৎকর্মশীল ব্যক্তি ছিলেন। কুরতুবী বলেন, অত্যাচারী খৃষ্টান রাজা বুখতানছরের ভয়ে যখন ফিলিস্তীনের ইহুদীরা সবাই তওরাত মাটিতে পুঁতে ফেলে এবং তওরাত ভুলে যায়, তখন ওযায়ের তওরাত মুখস্ত করে সবাইকে শুনান। তাতে অনেকে এটাকে অলৌকিকভাবে তাকে ‘ইবনুল্লাহ’ বা আল্লাহর বেটা বলতে থাকে। ইবনু কাছীর ও সুদ্দী প্রমুখের বরাতে কাছাকাছি একইরূপ বর্ণনা করেছেন। আগামী পর্ব থেকে ধারাবাহিকভাবে আমরা পরপর তাঁদের জীবনী ও তা থেকে শিক্ষণীয় বিষয়সমূহ তুলে ধরার চেষ্টা পাব ইনশাআল্লাহ।

চলবে ...

রচনাঃ
প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব

*১* আহমাদ, ত্বাবারাণী, মিশকাত হা/৫৭৩৭ ‘ক্বিয়ামতের অবস্থা’ অধ্যায় ‘সৃষ্টির সূচনা ও নবীগণের আলোচনা’ অনুচ্ছেদ; সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৬৬৮।
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×