আগের পর্ব ...
পিতার প্রতি ইবরাহীম (আঃ)-এর দাওয়াত :
‘তুমি এই কিতাবে ইবরাহীমের কথা বর্ণনা কর। নিশ্চয়ই তিনি ছিলেন সত্যবাদী ও নবী’ {১৯/৪১}। ‘যখন তিনি তার পিতাকে বললেন, হে আমার পিতা! তুমি তার পূজা কেন কর, যে শোনে না, দেখে না এবং তোমার কোন উপকারে আসে না? {৪২}। ‘হে আমার পিতা! আমার কাছে এমন জ্ঞান এসেছে, যা তোমার কাছে আসেনি। অতএব তুমি আমার অনুসরণ কর। আমি তোমাকে সরল পথ দেখাব’ {৪৩}। ‘হে আমার পিতা! শয়তানের পূজা করো না। নিশ্চয়ই শয়তান দয়াময়ের অবাধ্য’ {৪৪}। ‘হে আমার পিতা! আমি আশংকা করছি যে, দয়াময়ের একটি আযাব তোমাকে স্পর্শ করবে, অতঃপর তুমি শয়তানের বন্ধু হয়ে যাবে’ {মারিয়াম ১৯/৪১-৪৫}।
অন্যত্র আল্লাহ বলেন, ‘স্মরণ কর, যখন ইবরাহীম তার পিতা আযরকে বললেন, তুমি কি প্রতিমা সমূহকে উপাস্য মনে কর? আমি দেখতে পাচ্ছি যে, তুমি ও তোমার সম্প্রদায় স্পষ্ট বিভ্রান্তির মধ্যে রয়েছ’ {আন‘আম ৬/৭৪}।
কিন্তু ইবরাহীমের এই প্রাণভরা আবেদন পিতা আযরের হৃদয় স্পর্শ করল না। রাষ্ট্রের প্রধান পুরোহিত এবং সম্রাটের মন্ত্রী ও প্রিয়পাত্র হওয়ায় সম্ভবত: বিষয়টি তার প্রেস্টিজ ইস্যু হয়। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘যখন তাকে বলা হয়, আল্লাহকে ভয় কর, তখন তার সম্মান তাকে পাপে স্ফীত করে। অতএব তার জন্য জাহান্নামই যথেষ্ট। আর নিঃসন্দেহে তা হ’ল নিকৃষ্টতম ঠিকানা’ {বাক্বারাহ ২/২০৬}। বস্তুতঃ অহংকারীদের চরিত্র সর্বত্র ও সর্বযুগে প্রায় একই হয়ে থাকে।
পিতার জবাব :
পুত্রের আকুতিপূর্ণ দাওয়াতের উত্তরে পিতা বলল, ‘হে ইবরাহীম! তুমি কি আমার উপাস্যদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছ? যদি তুমি বিরত না হও, তবে আমি অবশ্যই পাথর মেরে তোমার মাথা চূর্ণ করে দেব। তুমি আমার সম্মুখ হ’তে চিরতরের জন্য দূর হয়ে যাও’ {মারিয়াম ১৯/৪৬}।
ইবরাহীমের জবাব:
পিতার এই কঠোর ধমকি শুনে পুত্র ইবরাহীম বললেন,
‘তোমার উপরে শান্তি বর্ষিত হৌক! আমি আমার পালনকর্তার নিকটে তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করব। নিশ্চয়ই তিনি আমার প্রতি মেহেরবান’। ‘আমি পরিত্যাগ করছি তোমাদেরকে এবং আল্লাহ ব্যতীত যাদের তোমরা পূজা কর তাদেরকে। আমি আমার পালনকর্তাকে আহবান করব। আশা করি আমার পালনকর্তাকে আহবান করে আমি বঞ্চিত হব না’ {মারিয়াম ১৯/৪৭-৪৮}।
পিতাকে ও নিজ সম্প্রদায়কে একত্রে দাওয়াত:
আল্লাহ বলেন, ‘আর তাদেরকে ইবরাহীমের বৃত্তান্ত শুনিয়ে দিন’ {শো‘আরা ২৬/৬৯}। ‘যখন সে স্বীয় পিতা ও সম্প্রদায়কে ডেকে বলল, তোমরা কিসের পূজা কর’? {৭০}। তারা বলল, আমরা প্রতিমার পূজা করি এবং সর্বদা এদেরকেই নিষ্ঠার সাথে আঁকড়ে থাকি’ {৭১}। ‘সে বলল, তোমরা যখন আহবান কর, তখন তারা শোনে কি’? {৭২}। ‘অথবা তারা তোমাদের উপকার বা ক্ষতি করতে পারে কি’? {৭৩}। ‘তারা বলল, না। তবে আমরা আমাদের বাপ-দাদাদের পেয়েছি, তারা এরূপই করত’ {৭৪}। ইবরাহীম বলল, তোমরা কি তাদের সম্পর্কে ভেবে দেখেছ, যাদের তোমরা পূজা করে আসছ’? {৭৫}। ‘তোমরা এবং তোমাদের পূর্ববর্তী পিতৃপুরুষেরা’ {৭৬}। ‘তারা সবাই আমার শত্রু, বিশ্ব পালনকর্তা ব্যতীত’ {৭৭}। ‘যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর আমাকে পথ প্রদর্শন করেছেন’ {৭৮}। ‘যিনি আমাকে আহার দেন ও পানীয় দান করেন’ {৭৯}। ‘যখন আমি পীড়িত হই, তখন তিনিই আমাকে আরোগ্য দান করেন’ {৮০}। ‘যিনি আমার মৃত্যু ঘটাবেন, অতঃপর পুনর্জীবন দান করবেন’ {৮১}। ‘আশা করি শেষ বিচারের দিন তিনি আমার ত্রুটি-বিচ্যুতি ক্ষমা করে দিবেন’ {৮২}। ‘হে আমার পালনকর্তা! আমাকে প্রজ্ঞা দান কর এবং আমাকে সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত কর’ {৮৩}। ‘এবং আমাকে পরবর্তীদের মধ্যে সত্যভাষী কর’ {৮৪}। ‘তুমি আমাকে নে‘মতপূর্ণ জান্নাতের উত্তরাধিকারীদের অন্তর্ভুক্ত কর’ {৮৫}। (হে প্রভু) ‘তুমি আমার পিতাকে ক্ষমা কর। তিনি তো পথভ্রষ্টদের অন্তর্ভুক্ত’ {৮৬} (হে আল্লাহ) ‘পুনরুত্থান দিবসে তুমি আমাকে লাঞ্ছিত কর না’ {৮৭}। ‘যে দিনে ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি কোন কাজে আসবে না’ {৮৮} ‘কিন্তু যে ব্যক্তি সরল হৃদয় নিয়ে আল্লাহর কাছে আসবে’ {৮৯}। ‘(ঐ দিন) জান্নাত আল্লাহভীরুদের নিকটবর্তী করা হবে’ {৯০}। ‘এবং জাহান্নাম বিপথগামীদের সামনে উন্মোচিত করা হবে’ {৯১}। ‘(ঐ দিন) তাদেরকে বলা হবে, তারা কোথায় যাদেরকে তোমরা পূজা করতে’? {৯২} ‘আল্লাহর পরিবর্তে। তারা কি (আজ) তোমাদের সাহায্য করতে পারে কিংবা তারা কি কোনরূপ প্রতিশোধ নিতে পারে’? {৯৩}। ‘অতঃপর তাদেরকে এবং (তাদের মাধ্যমে) পথভ্রষ্টদেরকে অধোমুখী করে নিক্ষেপ করা হবে জাহান্নামে’ {৯৪} ‘এবং ইবলীস বাহিনীর সকলকে’ {৯৫}। ‘তারা সেখানে ঝগড়ায় লিপ্ত হয়ে বলবে’ {৯৬} ‘আল্লাহর কসম! আমরা প্রকাশ্য ভ্রান্তিতে ছিলাম’ {৯৭}, ‘যখন আমরা তোমাদেরকে (অর্থাৎ কথিত উপাস্যদেরকে) বিশ্বপালকের সমতুল্য গণ্য করতাম’ {৯৮}। ‘আসলে আমাদেরকে পাপাচারীরাই পথভ্রষ্ট করেছিল’ {৯৯}। ‘ফলে (আজ) আমাদের কোন সুফারিশকারী নেই’ {১০০} ‘এবং কোন সহৃদয় বন্ধুও নেই’ {১০১}। ‘হায়! যদি কোনরূপে আমরা পৃথিবীতে ফিরে যাবার সুযোগ পেতাম, তাহ’লে আমরা ঈমানদারগণের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যেতাম’ {১০২}। ‘নিশ্চয়ই এ ঘটনার মধ্যে নিদর্শন রয়েছে। বস্তুতঃ তাদের অধিকাংশই বিশ্বাসী ছিল না’ {১০৩}। ‘নিশ্চয়ই আপনার পালনকর্তা পরাক্রান্ত ও দয়ালু’ {শো‘আরা ২৬/৬৯-১০৪}।
স্বীয় পিতা ও সম্প্রদায়ের নিকটে ইবরাহীমের দাওয়াত ও তাদের জবাবকে আল্লাহ অন্যত্র নিম্নরূপে বর্ণনা করেন। যেমন-
ইবরাহীম স্বীয় পিতা ও সম্প্রদায়কে বলল, ‘এই মূর্তিগুলি কী যাদের তোমরা পূজারী হয়ে বসে আছ’? {আম্বিয়া ২১/৫২}। ‘তারা বলল, আমরা আমাদের বাপ-দাদাদেরকে এরূপ পূজা করতে দেখেছি’ {৫৩}। ‘সে বলল, তোমরা প্রকাশ্য গুমরাহীতে লিপ্ত আছ এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও’ {৫৪}। ‘তারা বলল, তুমি কি আমাদের কাছে সত্যসহ এসেছ, না কেবল কৌতুক করছ’? {৫৫}। ‘সে বলল, না। তিনিই তোমাদের পালনকর্তা, যিনি নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের পালনকর্তা, যিনি এগুলো সৃষ্টি করেছেন এবং আমি এ বিষয়ে তোমাদের উপর অন্যতম সাক্ষ্যদাতা’ {৫৬}। ‘আল্লাহর কসম! যখন তোমরা ফিরে যাবে, তখন আমি তোমাদের মূর্তিগুলোর ব্যাপারে একটা কিছু করে ফেলব’ {আম্বিয়া ২১/৫২-৫৭}।
ইনশাআল্লাহ চলবে ...
রচনাঃ
প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



