somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আন্তর্জাতিক নারী দিবসঃ সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারী

০৭ ই মার্চ, ২০০৬ রাত ১১:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। এবারের নারী দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে 'সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারী'। এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে সারা বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশেও সরকারি-বেসরকারি, সামাজিক-রাজনৈতিক ক্ষেত্রগুলোতে সিদ্ধান্তগ্রহণকারী পদে নারীদের অবস্থান ও অগ্রগতি মূল্যায়িত হবে।

1857 সালের 8 মার্চ নিউইয়র্ক শহরে সেলাই কারখানার নারী শ্রমিকরা তাদের অমানবিক ও অনিরাপদ কর্মপরিবেশ, দৈনিক 12 ঘণ্টা শ্রম ও স্বল্প মজুরির বিরুদ্ধে একটি শান্তিপূর্ণমিছিল বের করেছিল। তাদের এ শান্তিপূণ মিছিলের ওপর পুলিশ হামলা চালায়। এর 3 বছর পর 1860 সালে নারী শ্রমিকরা সংঘবদ্ধ হয়ে তাদের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে নিজস্ব ইউনিয়ন গঠন করে। নারী আন্দোলনের উত্তরোত্তর বিস্তৃতির ফলে 1871 সালে নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগে প্রথম যুদ্ধবিরোধী নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। 1905 থেকে 1907 সালে রাশিয়ার রাজতন্ত্রবিরোধী সংগ্রামে অসংখ্য নারী সক্রিয় ভূমিকা রাখে। পরে 1908 সালের 8 মার্চ নিউইয়র্কে একটি প্রতিবাদ মিছিলে বস্ত্রশিল্প কারখানার নারী শ্রমিকরাও যোগ দেন। একই সময় পৃথিবীর সর্বত্র নারীর ভোটাধিকারের দাবিতেও বলিষ্ঠ আন্দোলন গড়ে ওঠে।

নারী জাগরণের এই ঘনঘটার মধ্যে এক পর্যায়ে 1910 সালে কোপেন হেগেনে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক নারী সম্মেলনে জার্মান সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের নেত্রী ক্লারা জেটকিনের প্রস্তাব অনুসারে ঐতিহাসিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ তারিখ হিসেবে 8 মার্চকে বিশ্ব নারী দিবস ঘোষণা করা হয়।

বাংলাদেশে বিশেষ করে পোশাক শিল্পে নারী শ্রমিকদের ব্যাপক উপস্থিতি, সেখানে তাদের শ্রমঅধিকার ও যথাযথ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত না থাকা, গার্মেন্টস কারখানাগুলোতে একের পর দুর্ঘটনা এসবের পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক নারী দিবসের যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে।

দুঃখজনক যে, বাংলাদেশে নারী অধিকারের চিত্রটি হতাশাজনক। নারীর ক্ষমতায়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনৈতিক অবস্থান সবদিক দিয়েই নারীরা এখনো অনেকটাই পিছিয়ে। প্রতিদিনই প্রচারমাধ্যমে নারী নির্যাতনের ভয়াবহ চিত্র উঠে আসছে_ ঘরে-বাইরে সব জায়গাতেই নির্যাতিত হচ্ছে নারীরা। তারা বৈষম্যের শিকার হচ্ছে ভাষা, পেশা, ধর্ম ও জাতিসত্তা এবং প্রতিবন্ধী হওয়ার কারণেও। রাজনৈতিকভাবেও নারীরা বৈষম্যমূলক আচরণের শিকার হচ্ছে। নারীর প্রতি রাজনৈতিক দল ও নেতৃত্বের নেতিবাচক মনোভাবের কারণেই সমাজে সর্বত্র নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে না।

জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনে নারী সংগঠনগুলো দীর্ঘদিন ধরে সরাসরি নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসলেও বর্তমান জোট সরকার নির্বাচনের ব্যবস্থা বাদ রেখেই সংরক্ষিত নারী আসন বিল পাস করেছে। এতে সংসদে রাজনৈতিক দলগুলোর আসন প্রাপ্তির ভিত্তিতে নারী আসন বন্টনের যে বিধান রাখা হয়েছে তা নারীর জন্য অত্যনত্দ অমর্যাদাকর। 1995 সালে বেইজিং সম্মেলন এবং পরবতর্ী বেইজিং প্লাস ফাইভ-এ প্রতিটি দেশকে তাদের পার্লামেন্টে অন্তত এক-তৃতীয়াংশ নারী আসন নিশ্চিত করতে বলা হলেও আমাদের দেশের কোনো দলকেই এ দিকে গুরুত্ব দিতে দেখা যাচ্ছে না।

দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকই নারী। এই বিশাল জনগোষ্ঠীর প্রতি বৈষম্য বজায় রেখে কিছুতেই দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। এজন্য নারীর প্রতি সহিংসতা ও বৈষম্য রোধ এবং সামাজিক-রাজনৈতিক সবক্ষেত্রে সিদ্ধান্তগ্রহণসহ সকল কাজে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। নারী দিবসের অঙ্গীকার বাসত্দবায়নে সরকারের সদিচ্ছা ও তৎপরতার পাশাপাশি রাজনৈতিক মহলসহ সমাজের সর্বস্তরের দৃষ্টিভঙ্গিরও ইতিবাচক পরিবর্তন জরুরি।

আজ 2006 সালের 8 মার্চ উদযাপনকালে নিজস্ব সংস্কৃতিবোধে এদেশের নারী আবারও মাথা উঁচু করে দাঁড়াক_ এই প্রত্যাশা রাখছি।

সবাইকে আন্তর্জাতিক নারী দিবসের শূভেচ্ছা।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মার্চ, ২০০৬ রাত ৩:৩৭
৯টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×