somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মিডিয়া-অবতার নির্মিত মানসিক সাম্রাজ্যবাদ : আমাদের প্রতিরোধ

০৭ ই অক্টোবর, ২০০৮ দুপুর ২:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


একসময় যাহা ছিল ইশ্বরের হাতে; তাহা হাত বদলের নিয়তিতে আসিল বণিকের হাতে। বন্ধ্যা ঈশ্বরের অবতার উৎপাদনের দিন অতীত হইলো বটে কিন্তু অতীত হইলো না অবতার উৎপাদনের প্রয়োজনীয়তা। ধলা বণিকের তেলেসমাতি নকল করিয়া বঙ্গদেশে জন্ম নিলো ধলাকালো নানান জাতের বণিকের। তাহার পর বঙ্গদেশের চেহারার ঝলকানি বাড়িতেই থাকিলো। বণিকেরা ছড়িয়া পড়িলেন বিদ্যাবুদ্ধি অর্জনে। ধুতি-পাঞ্জাবী আর মোল্লা টুপিরা দলে দলে রাজনীতির ময়দানে শামিল হইলেন দেশদশের মঙ্গল সাধনায়। তাহার পর ধুতি-পাঞ্জাবী মোল্লাটুপির জরুরত পড়িল বার্তাবাহক নির্মানের। ততদিনে ধলাদের দেশে কাগুজে অবতারের রমরমা কাটতি। সে কাটতির বায়ু ছড়িয়া পরিল বঙ্গদেশের বনিক ঘিলুজীবির মগজে। মগজ হইতে মগজে! বাঙালি অর্জন করিল মিডিয়া নামের ম্যাজিকাল অবতারের। তাহার পর বনিকেরা আরও বনিক। বনিকেরা প্রযুক্তির উদ্ভাবক। বিজ্ঞান আর প্রযুক্তির ঘোড়ায় চড়ে কাগুজে অবতারেরা আরও ঝকমকির সৃষ্টি করিল। ঝকমকি বাড়িতেই থাকিল। চারিদিকে আরও তেলেসমাতি। পশ্চিম হইতে আসিল এক আজব যন্ত্র। যে অবতারের মতো বড় গলায় কথা জানে। যাহার ভেতরে রঙের ছড়াছড়ি; শব্দ আর মানব আকৃতির রঙিন ফানুশের যাতায়াত। প্রথম মিডিয়া যুগ হইতে আমরা প্রবেশ করিলাম দ্বিতীয় মিডিয়া যুগে।

তথ্য দিতে উদগ্রীব এইসব ম্যাজিকাল অবতারেরা তথ্য উৎপাদন ও বিপনন করিতে থাকিল। তথ্যের মহাসড়কে সগৌরবে বাঙালি শুনিল তাহাদের যাত্রার প্রতিধ্বনি। রাজনীতিক প্রভুর মধুময় জবানি বৈদ্যুতিন অবতারের মাধ্যম পেীছাইল জনগনের নিকট। বণিকেরা বিজ্ঞাপন দিয়া দিয়া বাঙালিকে ভাসাইলো ভোগের সাগরে। বাঙালি সে সাগরে ভাসিতে ভাসিতে একশেষ করিয়া ছাড়িল তবু আজও ঘুচিল না ভাসাভাসির সেই আদিম কাহিনি।

মায়ের কোল ছাড়িয়া মিডিয়া যখন নামিল বঙ্গদেশে; তখন বহুত অতিকথন শুনিতে হলো বাঙালিকে। পন্ডিতেরা মিডিয়াকে মাসমিডিয়া ডাকিয়া সম্মানিত করিলেন বোকা জনসাধারনকে। আজও এই সুসভ্য বঙ্গে মিডিয়াকে গণের বলে অবিহিত করা হইয়া থাকে! অতিতে অবতার কখনো সাধারনের জন্য জন্ম নেয় নি; জন্ম নিয়েছিল প্রভুর প্রচারণা আর অস্তিত্বকে ব্চিয়ে রাখার তাগিদে। এই বিশ্বভ্রমান্ডে মিডিয়া অবতারের জন্মও ওই একই তাগিদে। পুঁজিবাদ ঘিলুবাদ নীতিবাদকে কোলে করে বাঁচিয়ে রাখার সুমহান দায়িত্ব কাঁধে বয়ে বেড়াইতেছে আমাদের ম্যাজিক জানা মিডিয়া অবতারেরা।

আলোচনা আর বাহাসে গণের বলিয়া প্রচার পাইলো সাধের মিডিয়া কিন্তু কার্যত ইহা হইয়া রহিল রাজনীতিকের। বনিকের। মৃত পুরোহিতের। প্রাচীন অবতারের। গণমানুষ তথ্যমহাসড়কে হাঁটিল। ভোগবাদিতার চুড়ান্ত করিয়া ছাড়িল। আর সেই আনন্দে বগল বাজাইলো বণিকেরা। গণমানুষের প্রাত্যহিক জীবনের যাবতীয় বাস্তবতা নির্মান করিবার সম্মোহনী ক্ষমতা প্রযুক্তি আর টাকার প্রাচুর্যে নিজের করিয়া নিল মিডিয়া। দখল করিয়া নিল আমাদের মননের সমস্ত মানচিত্র।
আমরা হইয়া উঠিলাম মিডিয়ার গোলাম। মিডিয়া যেভাবে আমাদের হাসতে বলে; আমরা সেভাবেই হাসি। মিডিয়া যেভাবে বোকা বাঙালিকে ভাবতে বলে ; বাঙালি সেইভাবেই ভাবে। আমরা খাই যাহা খাইতে বলে বিজ্ঞ মিডিয়া। মিডিয়ার এই গন্ডি থেকে কাহারওই আর বাহির হইবার গতি নাই। উল্টোভাবে বাঙালি এখন টাকা দিয়া মিডিয়ায় প্রদর্শিত মালমশলা কেনে। তথ্য কেনে। বিনোদন কেনে। ধর্ম কেনে। মাংসল নারী কেনে। যৌনতা কেনে। ওবামা কেনে।

বেচিবার এই ফিকির মিডিয়ার আদিম প্রবনতা । বেচিবার তাগিদেই এই সোনার মিডিয়া খুইলা বইছে বণিকেরা। প্রচলিত বাংলাদেশে যে সকল মিডিয়া অবতার আছে তাহাদের সবাই বড় বেশি বানিজ্যিক। ধলাদের মতই এদের স্বভাব। বাণিজ্য করিতে করিতে হাঁটিয়া যায় লুন্ঠনের পথে। মনোজাগতিক লুন্ঠনে সমাজে নির্মান করে পুঁজিবাদ সমর্থিত ভোক্তা শ্রেণী । চুরি হয়ে যায় আমাদের মানবিক মূল্যবোধ। মূলধারার মিডিয়া যা কিছু উপকার করিবে তা করিবে নিজের টিকে থাকিবার স্বার্থে। উপকারীর কাজে বাঁধা দেয়া কহার ও কাম্য নয়! কিন্তু এই সকল কাগুজে-বৈদ্যুতিন অবতারেরা যখন আমাদের ক্ষতি করিয়া নিজেদের লাভের বোঁচকা বাঁধিবার ধান্দা করিবে; আমাদের এই ছোট্ট গ্রুপ সেখানেই বাঁধা দিবে। ভোক্তা শ্রেনীর মধ্যে জনমত নির্মান করিবে যাতে বণিকেরা গরিবের কথা মনে রাখে । ক্ষতি করিবার পূর্বে সামান্য ভাবিয়া লয়। ভোক্তাদের মধ্যে নির্মান করিবার চেষ্টা করিবে সংগঠিত শক্তি; যাহার মিডিয়াকে ঘাড় ধরিয়া লইয়া যাইবে গনমানুষের কাছে। নিজের লাভালাভির হিসাব কষিবার পাশাপাশি মিডিয়াকে বাধ্য করিবে সংগঠিত ভোক্তা শ্রেণীর কথা ভাবিতে।


গ্রুপ লিংক : "মিডিয়া : পাঠ ও আলোচনা"

http://www.somewhereinblog.net/group/mediapoa
৭টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×