আজ সাইফের ভাগ্নী তিন্নির গায়ে হলুদ। সাইফ আজ রাঙামাটি থেকে চট্টগ্রাম যাবে তিন্নিদের বাসায়, সাথে থাকবে বড় ভাইয়া। ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র সে। ভদ্র আর মেধাবী ছেলে হিসাবে কলেজে বেশ সুনামও আছে তার। চট্টগ্রামেই বেশিরভাগ আত্নীয় তাদের। রাঙামাটিতে তার বাবার ব্যবসা আর পড়ালেখার কারণে কোনো উপলক্ষ ছাড়া চট্টগ্রাম যাওয়া হতনা। তাই আজ সে বেশ খুশি।
দুপুরে রওনা দিয়ে বিকালের মধ্যেই সাইফরা পৌছে গেল তিন্নিদের বাসায়। রঙ বেরঙের আলোয় সাজানো হয়েছে তিন্নিদের বিয়েবাড়ী। আত্নীয়-স্বজন আর পরিচিতরা এসে ভীর করছে তিন্নিদের বাসায় বিভিন্ন উপহার সামগ্রী নিয়ে। সাইফ এদের কাউকে চেনে আবার কাউকে চেনেনা। সাইফ তার সাথে আনা উপহারটা তার বড় আপা অর্থাৎ তিন্নির মাকে দিয়ে ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে পড়ল। সোফায় বসে থাকা অনেকেই তার চেয়ে বয়সে অনেক বড়; সমসাময়িক বিভিন্ন আলোচনায় বেশ মুখর পরিবেশ। সাইফ কিছুটা অস্বস্তি বোধ করায় ঘরের ভেতর ঢুকতে তিন্নিকে দেখতে যাবে ঠিক এমন সময় তিন্নির ছোট বোন মুন্নি তার এক কলেজের বনধুকে নিয়ে এসে হাজির। মুন্নি আনন্দে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে এক ভুবন ভোলানো হাসি দিয়ে বললো - "মামআআ, কেমন আছো?" সাইফ তার স্বভাবসুলভ হাসি হেসে বললো - "ভালো আছিরে, তোর পড়ালেখা কেমন চলছে?"
মুন্নি বলল - "ভালো চলছে, এবার এসেছ বেশ কয়েকদিন থাকতে হবে কিন্তু!"
"নারে, থাকতে পারবনা। সেমেস্টার এক্সাম আছে সামনে।" - সাইফ বলল।
এরপর মুন্নি সাইফকে পরিচয় করিয়ে দেয় তার বনধু রাজীব এর সাথে।
রাজীব অনার্স এর প্রথম বর্ষের ছাত্র। সাইফের প্রায় সমবয়সী সে। খুব অল্প সময়ে তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব হয়ে গেল। এত অল্প সময়ে সাইফ এর আগে কখনো কারো সাথে বন্ধুত্ব করেনি। কথার মাঝে সাইফ জানতে পারে রাজীব এসেছে তার বাবা-মা আর ছোট বোন সামিয়ার সাথে। ইন্টারমিডিয়েট ফাইনাল ইয়ারের ছাত্রী সামিয়া। সাইফ এর আগে কখনো দেখেনি সামিয়াকে, তবে তিন্নির কাছ থেকে শুনেছে ওদের কথা। সাইফ এর মধ্যে রাজীব সম্পর্কে অনেক কিছু জেনে নেয়। সাইফও তার সম্পর্কে রাজীবকে বলে। কথোপকথনের এক পর্যায়ে সাইফ তিন্নিকে দেখতে পায়। খুব সুন্দর লাগছে তিন্নিকে আজ- লাগবেই তো, আজ যে তিন্নির গায়ে হলুদ। তিন্নির সাথে আরো কয়েকজন মেয়ে। সবাই এদিকেই আসছে। তিন্নি তার ছোট মামাকে অনেকদিন পর দেখে খুব খুশি হয়। সাইফের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় সাথে থাকা মেয়েগুলোকে। এরই মাঝে ছিল সামিয়া।
মুখে অদ্ভুত সুন্দর মায়াবী হাসি, চোখ দুটো যেন দুষ্টুমিতে ভরা! অন্য সব মেয়েদের থেকে তাকে আলাদা করা যায় নিমিষেই। তার চোখের চাহনিতেই লুকিয়ে আছে যেন এক অসীম ক্ষমতা যা কোনো ছেলের বুকে জলোচ্ছাস হয়ে আঘাত হানতে পারে পলকেই; অনুভুতির আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত করতে পারে যে কারো হৃদয়। স্বপ্ন দেখিয়ে আবার তা দুস্বপ্নে পরিনত করা যেন তার মুহুর্তের ব্যাপার। সাইফের কেন যেন বারবার দেখতে ইচ্ছে করছে সামিয়াকে, ইচ্ছে করছে ওর চোখে চোখ রাখতে, কিন্তু ওর লজ্জা লাগছে। এভাবে সে কোনো অপরিচিত মেয়ের চোখে চোখ রাখেনি কোনদিন। পরিচিতি পর্ব শেষ করেই সামিয়া হেসে বলে উঠলো - "আমি আপনার কথা অনেক শুনেছি তিন্নির কাছ থেকে।" বিস্ময়ের ঘোর কেটে সাইফ প্রশ্ন করে - "কি শুনেছেন?"
"আপনি অনেক মেধাবী আর সবাই আপনাকে খুব ভালবাসে।" বলল সামিয়া।
সাইফ কিছুটা ইতস্তত হয়ে বলল - "আরে নাহ! ও একটু বাড়িয়ে বলে সবসময়। আমি আপনার নাম শুনেছি, পরিচিত হয়ে খুব ভালো লাগলো।"
এর মধ্যে ওরা মুন্নির গলার আওয়াজ শুনতে পায় "এসো সবাই, রাতের খাবার খাবে।"
গ্রামের বিয়ে। তাই বাড়ির বাইরে বিশাল বারান্দায় স্টেজ সাজানো হয়েছে। স্টেজে গান বাজছে আর তার সাথে ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা নাচছে -আনন্দ করছে যে যার মত। আগে থেকে অর্ডার করে বানিয়ে নেয়া কেকটা নিয়ে আসা হয়েছে, সাথে হরেক রকমের পিঠা আর খাবারের আইটেম। একটু পরেই তিন্নি হলুদ শাড়ি পরে স্টেজে উঠবে। তাকে ওখানে তার আত্নীয়-স্বজন আর বন্ধু-বান্ধবরা মিলে কেক খাওয়াবে। পুরো রাতজুড়ে চলবে অনুষ্ঠান। ক্যামেরাম্যান ব্যস্ত পুরো অনুষ্ঠান ভিডিও করতে। আর সাইফ স্টেজের সামনে রাখা সারি সারি চেয়ারের একটিতে বসে পড়ল অনুষ্ঠান দেখতে। কিছুক্ষণ পরেই তিন্নি উঠে এলো স্টেজে, সাথে মুন্নি আর সামিয়া। তারা দুইজন দুইদিকে বসে তিন্নির দুই হাতে মেহেদী দিচ্ছে। ঠিক এমন একটি মুহুর্তের জন্যই যেন অপেক্ষা করছিল সাইফ। সামিয়া তিন্নির হাত মেহেদি রাঙানোয় ব্যস্ত আর সাইফের অপলক দৃষ্টি সামিয়ার নিষ্পাপ আর মায়াবী মুখের দিকে। এমনভাবে তো সে কোনদিন কারও দিকে কখনো তাকায়নি। সাইফের মনে ভালো লাগার এক অদ্ভুত আনন্দ কাজ করে। সামিয়াও এক পর্যায়ে তাকায় সাইফের দিকে। সাইফ চোখ ফিরিয়ে নেয়। এভাবেই অনেকক্ষণ চলতে থাকে দৃষ্টির আদান-প্রদান। মেহেদী দেয়া শেষ করে সামিয়া চলে যায় বাড়ির ভেতর আর ফিরে আসে আরো অনেক মেয়ের সাথে। পরনে হলুদ শাড়ি। শাড়িতে আরো বেশি সুন্দর দেখাচ্ছে সামিয়াকে। সাইফ এই সৌন্দর্য কিভাবে বর্ণনা করবে সে ভাষা তার জানা নেই। রাত কেটে যায়...অনুষ্ঠান চলতে থাকে।
রাত তিনটায় ঘুমিয়ে সকাল ৮ টায় ঘুম ভাঙ্গলো সাইফের। ফ্রেশ হয়ে নাস্তার টেবিলেই দেখতে পেল সামিয়াকে। সাইফও মনে মনে সামিয়াকেই খুজছিল। সামিয়া আগ বাড়িয়ে সাইফকে প্রস্তাব করলো - "আজ সবাই ক্লাবে যাবে তিন্নির বিয়ের দাওয়াত খেতে, আপনাকে কিন্তু আমাদের গ্রূপের সাথেই যেতে হবে।" এ যেন মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি! সাইফের মন খুশিতে ভরে উঠলো আর বলল - "নিশ্চয়ই যাব।" সামিয়ার মায়াবী চেহারা, তার কথা বলার ধরণ, তার মুখে একটু মিষ্টি হাসি সবকিছুই ভীষনভাবে আকৃষ্ট করে সাইফকে। এরই মধ্যে সাইফ প্রায় বন্ধুত্ব করে ফেলল সামিয়ার সাথে। সাইফ ও সামিয়া একে অপরের সাথে অনেক কথাই শেয়ার করলো। এর মাঝে সাইফ জানতে পারে সামিয়াদের পরিবারের রক্ষনশীল আচরণের কথা। তেমন গুরত্বপূর্ণ না হলে ওকে কোথাও যেতে দেয়না ওর বাবা-মা। তাই এখানে আসতে পেরে ও খুব খুশি। কথা চলতে থাকে তাদের মধ্যে।
বিয়ের পরদিন খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে ওয়াশরুমে যাবে এমন সময় সামিয়া এসে সাইফকে জিগ্যেস করলো -"ব্রাশ করেছেন, মামা?" সাইফ বলল - "না করি নি, করতে যাচ্ছি।"
"তারাতারি আসুন, একসাথে নাশতা করে একটু ঘুরতে বের হব। এই শীতের সকালে গ্রামের পরিবেশ দেখতে খুবই ভালো লাগবে।" সাইফ আর দেরী না করে ফ্রেশ হয়ে নাশতা সেরে নিয়ে বেরিয়ে পড়ল প্রকৃতির রূপ দর্শনে। সাথে আছে সামিয়া, মুন্নি আর সামিয়ার ভাই রাজীব। বেরোনোর আগে সামিয়াকে অনুমতি নিতে হলো তার বাবা-মা'র থেকে কাছে কোথাও যাবার নাম করে।
সাইফরা হেটে চলেছে অনেকদুর। আকাবাকা মেঠোপথ আর কখনো বিলের মাঝখান দিয়ে। কখনো পথের দু পাশে সারি সারি নারিকেল গাছ আবার কখনো বাশঝার। কখনো সামনে পড়ছে পুকুর কখনো দেখা যাচ্ছে কৃষক ছুটে যাচ্ছে তার ক্ষেতে। শীতে জবুথবু হয়ে আছে সবাই তবুও শীতের সকালের এই সৌন্দর্য মুগ্ধ করলো সবাইকে। অনেকদূর হাটার পর তারা চলে এলো বিলের প্রান্তে বয়ে চলা ছোট্ট একটি খালের তীরে। কাশফুলে ছেয়ে আছে খালের এপাড়-ওপাড়। সাইফ হঠাত তাকায় সামিয়ার দিকে আর দেখে কিভাবে প্রকৃতি সামিয়াকে আপন করে নিয়েছে। রোদের হালকা আলো এসে সামিয়ার মুখের ওপর পড়ে। এত মায়া! এ যেন শুধু সামিয়ার মুখেই খেলা করে। এ সৌন্দর্য বর্ণনা করার মত ভাষা সাইফের জানা নেই। এই মুহূর্তটিকে সাইফ যেন কিছুতেই হারাতে চায়না।
অনেক্ষণ বেড়ানোর পর তারা দুপুরের আগেই বাসায় ফিরল। আজ বাদে কালই রাঙামাটির উদ্দেশ্যে রওনা দিতে হবে তাদের। সামনে সাইফের সেমেস্টার এক্সাম তাই তার বাবা-মা দেরি করতে চায়না। বিকালে মুন্নির রুমে বসে সবাই গল্প করছে। সাইফ বসে আছে এক কোনায়। মন যে খারাপ তার। মাত্র কয়েকদিনেই একটি মেয়েকে এত ভালো লাগলো আর এত তারাতারি তাকে ছেড়ে চলে যেতে হবে এ যেন সে কিছুতেই মানতে পারছেনা। সামিয়া কাছে এসে তাকে প্রশ্ন করে -"কি হলো? এত চুপচাপ কেন?" "না কিছু না" সাইফ বলে। "একটা কথা তোমাকে বলা হয়নি, আমরা কাল চলে যাচ্ছি। সামনে পরীক্ষা, তাই চলে যেতে হচ্ছে" - সাইফ আবার বলে উঠলো। সামিয়া কিছু বলতে গিয়ে থেমে গেল। এটার জন্য সে হয়ত প্রস্তুত ছিলনা। স্নিগ্ধতায় ভরা মুখটা যেন মলিন হয়ে উঠলো। তাহলে সামিয়া কি সাইফের চলে যাবার খবর শুনে ব্যথিত? কিছুক্ষণ পরে সামিয়া আবেগী সুরে বলল - "আমরা এখন থেকে একে অপরের বন্ধু, আর বন্ধুকে ভুলে যাবেননা।" সাইফ বলল "হুম"। সাইফের বুকে নেমে আসে এক মরুভূমি হাহাকার। পরেরদিন বিকালবেলা সাইফ সবার থেকে বিদায় নিয়ে তার বাবা মার সাথে রওনা দেয় বাড়ির পথে। আসার সময় দেখা হয় সামিয়ার সাথে। বাইরের দরজায় দাড়ানো ছিল সে। সাইফ হাত বাড়িয়ে দেয় সামিয়ার দিকে হ্যান্ডশেক করার জন্য আর বলল "ভালো থেকো আর খেয়াল রেখো নিজের প্রতি।" সামিয়া বিষন্ন দৃষ্টিতে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখল সাইফের চলে যাওয়া। বাস ছুটে চলেছে সাইফকে নিয়ে রাঙামাটির উদ্দেশ্যে। সাইফ বাসের জানালা দিয়ে দেখতে থাকে রাঙামাটির বিশাল পাহাড়গুলো কিন্তু পাহাড়গুলো ঝাপসা হয়ে ওঠে সাইফের চোখে আর একটু পরপরই তাকায় নিজের হাতের দিকে। সামিয়ার ছোয়া যে লেগে আছে এই হাতে।
দিন যায়, রাত কাটে কিন্তু সামিয়ার সাথে কাটানো সময়গুলো কিছুতেই ভুলতে পারেনা সাইফ। ওকে ছেড়ে আসার পর কিছুই ভালো লাগেনা তার। প্রতি মুহুর্তে ওর সাথে কাটানো স্মৃতিগুলো মনে পরে। বিয়ের অনুষ্ঠানে সামিয়ার কিছু ছবি তুলেছিল ও। কিছুক্ষণ পরপরই মোবাইলের ফটো অ্যালবাম খুলে সামিয়ার ছবিগুলো দেখতে থাকে। খুব কথা বলতে ইচ্ছে করছে সামিয়ার সাথে কিন্তু কল করতে চেয়েও করতে পারলনা। কি বলবে সে সামিয়াকে? সে তাকে মিস করছে? না-কিভাবে একটা বলবে সে? ক্লাসে, পড়ালেখায় কোথাও মন বসেনা তার। তার কলেজের ঘনিষ্ট ফ্রেন্ডরা সাইফের হঠাত এই পরিবর্তন লক্ষ্য করে কিন্তু কাউকে কিছু বলেনা সাইফ। একদিন কম্পিউটার ল্যাবে সবাই ক্লাস করছে এমন সময় সাইফ ল্যাবের বাইরে যাবে হঠাত তার জিন্সের পকেট থেকে ওয়ালেটটা পড়ে গেলো। সাইফের বসে থাকা তার বন্ধু যখন তাকে এটা উঠিয়ে দিতে যাবে তখনি সে দেখল ওয়ালেটের উইন্ডোতে একটা মেয়ের ছবি। সাইফের এই বন্ধুটা এমনিতে দুষ্টু তার উপর সাইফের ওয়ালেটে মেয়ের ছবি দেখে তার দুষ্টুমির মাত্রা আরো বেড়ে গেলো। ক্লাসের সবাইকে সে চেঁচিয়ে বলতে লাগলো - "এই দেখ দেখ, সাইফের গার্লফ্রেন্ডের ছবি।" সাইফ তো বেচারা পুরোই হতবাক। সাইফ তাদেরকে পরে সামিয়া সম্পর্কে বলতে বাধ্য হয়।
এভাবে প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেল। সামিয়ার সাথে দেখা করার অনেক চেষ্টা করে সাইফ। কিন্তু সুযোগ হয়ে ওঠেনা। প্রার্থনা করত সৃষ্টিকর্তার কাছে সামিয়াকে পাওয়ার জন্যে। এদিকে সাইফের বড় ভাইয়ের বিয়ের কথা পাকা হয়ে গেছে। কাল সন্ধ্যায় তার ভাইয়ের গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান। বিয়ের পরেই সাইফ স্কলারশিপ নিয়ে দেশের বাইরে চলে যাবে উচ্চশিক্ষার জন্য। এদিকে আত্নীয়-স্বজন সবাই সাইফের বাড়িতে ভীড় করতে শুরু করেছে। আপা-দুলাভাই, তিন্নি আর মুন্নিও এসেছে একটু আগে।
গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে সবাই যে যার মত আনন্দ করছে। সাইফ বাড়ির ছাদে এককোনে দাড়িয়ে আছে আনমনে। ভাবছে-এক বছর আগে এরকম একটি মেহেদী অনুষ্ঠানের রাতেই তো সামিয়ার সাথে পরিচয় হয়েছিল ওর, তারপর কথা বলা, বন্ধুত্ব করা - ভাবতেই থাকে সাইফ। এমন সময় পেছন থেকে মুন্নির আওআজ ভেসে এলো, "তুমি এখানে? আর আমি তোমাকে সারা বাড়ি খুজছি। নিচে সবাই তোমার জন্য অপেক্ষা করছে। সামিয়াও তোমাকে খুজছিল।" সাইফ যেন নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারলনা। বিস্ময়ের সাথে মুন্নিকে প্রশ্ন করলো - "কখন এসেছে ওরা?" মুন্নি উত্তর দিল - "এইতো কিছুক্ষণ হলো।" সাইফ আর দাড়াতে পারলনা, সোজা চলে গেল নিচে। নিচে নামতেই দেখলো দরজার পাশেই দাড়িয়ে আছে সামিয়া। সাইফকে দেখেই সামিয়া বলে ওঠে- "কোথায় ছিলেন? আমি আপনাকে সব জায়গায় খুজছি।" সাইফ সামিয়ার চোখে চোখ রাখে; তার মনে হয় কত কথাই না জমিয়ে রেখেছে তাকে বলবে বলে! "এইতো ছাদেই ছিলাম" - সাইফের উত্তর। সাইফ তাকে বাড়ির বাইরের বারান্দায় নিয়ে আসে। বারান্দায় রাখা চেয়ারে বসে দুজন, কথা হয় দুজনের মাঝে। সাইফ ভাবে - সে কি বলবে সামিয়াকে সে কতখানি মিস করেছিল গত এক বছরে? সে কি বলবে সে সামিয়াকে মনের অজান্তে ভালোবেসে ফেলেছে? আবার ভাবে, সামিয়া কী মনে করবে? তার পরিবারই বা কী এটা মেনে নেবে? বারান্দায় ছোট ছেলেমেয়েরা আতশবাজি ফোটাচ্ছে। আর সাইফ ভাবে - "এ কেমন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছে সে?"
প্রায় মাঝরাত পর্যন্ত অনুষ্ঠান চলল। সাইফ শুয়ে আছে বিছানায়। ঘুম আসছেনা তার। কিভাবে ঘুম আসবে? সামিয়াকে তার মনের কথা না বলা পর্যন্ত তো সে স্থির থাকতে পারছেনা। কাল সামিয়াকে তার মনের কথা বলতে না পারলে আর কখনোই হয়তো বলা হবেনা। এদিকে সামিয়ারও ঘুম নেই। তারও যে সাইফকে অনেক ভালো লাগে। রাত পেরিয়ে যায় - অবশেষে সাইফ সিদ্ধান্ত নেয়, সে সামিয়াকে তার ভালোলাগার কথা বলবে। পরে যা হওয়ার হবে।
বিয়ের পর্ব শেষ। বিকালের দিকে সামিয়ারা রেডি হচ্ছে চলে যাওয়ার জন্য। সাইফ ছাদে দাড়িয়ে আছে একা। সামিয়া তাকে খুজতে ছাদে চলে এলো। সামিয়া বলল - "আমরা চলে যাচ্ছি।" - "আমিও কাল চলে যাচ্ছি আমেরিকায়" বিষন্ন মুখে বলে চলে সাইফ -"যাওয়ার আগে কিছু জমে থাকা কথা তোমাকে বলতে চাই, যে কথাগুলো এক বছর আগে বলা হয়নি যখন তুমি হলুদ শাড়ি পরে মায়াবী চোখ নিয়ে আমার দিকে প্রথম তাকিয়েছিলে, যে কথাগুলো বলা হয়নি যখন তুমি আমাকে বন্ধু বলেছিলে, যে কথাগুলো বলা হয়নি যখন চলে আসার সময় তোমার হাত ছুয়ে বলতে চেয়েছিলাম। আজ আমাকে বলতে হবে - অনেক ভালবাসি তোমায়।"
সামিয়ার চোখ সাইফের চোখে আর পরক্ষনেই দুহাত বাড়িয়ে সাইফের দুহাত আকড়ে ধরে বলে ওঠে - "এই এক বছর কেন এত কষ্ট দিলে আমায়? আমিও যে তোমাকে ভীষণ ভালবাসি।" সামিয়ার চোখ ঝাপসা হয়ে ওঠে।