কালো আঙ্গুর (গল্প)
নাসরীন খান
একদিন অনাড়ম্বর আয়োজনে শ্রাবণের আকদ এর অনুষ্ঠান হলো।অনাড়ম্বর বলছি সেজন্য কারণ খুব কাছের আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে হচ্ছে । ওর প্রেমিক আসিফ এর সাথে। তাদের প্রেমের বয়স প্রায় সাত বছর।আসিফের জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান পছন্দ নয় তাই সাদামাটা আয়োজন। শ্রাবণের দাদু নেত্রকোনা থেকে এসেছেন। উনার বংশের বড় নাতনির বিয়ে বলে কথা।শ্রাবণের হবু জামাই এর জন্য সে একটা আংটিও কিনেছেন।
আসিফ কে ওর দাদু আগে কখনো দেখেনি।আজই প্রথম দেখবে।ওর দাদু ওদের সম্পর্কের কথাও জানে না।উনি গ্রামের খুব সাধারণ একজন।তার কাছে প্রেম বিষয়টি খুব লজ্জার।
যাক যথাসময়ে বরপক্ষ এলেন। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়ে এবার পরিচয় পর্ব।দাদুকে আসিফের সাথে পরিচয় করে দেয়া হল।দাদুর সাথে কথা বলে আসিফ বাসর ঘরে প্রবেশ করল।ইতিমধ্যেই আসিফের বাড়ীর সকলে বিদায় নিলেন।
পাশের ঘরে বসেই শ্রাবণের দাদু মিষ্টিমুখ করছিলেন।শ্রাবণের রুম থেকে শুনা যাচ্ছিল সব কথা।শ্রাবণের বড় ফুফুর ছেলে দাদুকে জিজ্ঞেস করলেন
- নানু! জামাই কেমন দেখলা
- আর কইসনা! আমার নাতির কালা চুলডি ওর গায়ের উপর পরলে জামাইরে দেহাই যাইত না।আমার ছেরা এমন জামাই পছন্দ করছে আমার দুধের মতন নাতনিডার লাইগ্যা।বিয়ার শাড়ি ডা আনছে হেইডার পাইরডাও কালা, জামাইডার মতন।
শ্রাবণ আর আসিফ দুজনেই শুনতে পেল কথাগুলো। ওরা দুজনেই হাসছে।
পরদিন সকালে আসিফ বাইরে যাবে।শ্রাবণ তাকে গেইটে গিয়ে বিদায় দিয়ে রুমে ঢুকল।খানিকক্ষন পর আসিফ ফিরে আসল।হাতে একটা প্যাকেটে কিছু এনেছ।সাথে পান,সুপুরি ইত্যাদি।আসিফ শ্রাবণকে বল্ল প্যাকেটের জিনিসগুলো বের করো ধুয়ে আনতে।শ্রাবণ খাবার ঘরে ঢুকে ব্যাগ থেকে বের করে দেখল কালো আঙ্গুর রয়েছে।সেগুলো পরিষ্কার করে আসিফের কাছে আনল।আসিফ সেগুলো দাদি শ্বাশুড়ির কাছে নিয়ে গিয়ে বলল,
- দাদু,তোমার জন্য এগুলো এনেছি,খেয়ে বল কেমন লাগে?
দাদু কয়টা তুলে খেলেন।
আসিফ তাকে জিজ্ঞেস করল,
- দাদু,কেমন খেতে?
- অনেক মজা আছে ভাই।
তখন আসিফ বলল,দাদু কালো হলেই তা খারাপ হয় না।
দাদু রীতিমতো জিহ্বায় কামড় দিয়ে বলল,
- আল্লাগো! তুমি আমার কথা হুনছিলা কাইল।আমারে লজ্জা দিলা!
উপস্থিত সকলে হেসে উঠল।
শ্রাবণের দাদু এই ঘটনা এখনো মনে করে লজ্জা পায়।