somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুভি রিভিউঃ The Lunchbox

০৪ ঠা মে, ২০১৪ দুপুর ১:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ইউনিভারসিটিতে চার বছর হই হুল্লোড় করে কাটানোর পর যখন চাকরিতে ঢুকলাম তখন হঠাৎ করেই কেউ যেন আমার চোখ থেকে রঙ্গিন চশমাটা অত্যন্ত নির্দয় ভাবে খুলে নিল। আমার সাধের বাউন্ডুলে জীবনের সেখানেই সমাপ্তি ঘটলো। শুধু তাই না, আমার নির্দোষ মনের গহীনে লুকানো একান্ত যে স্বপ্নগুলো এতদিন পর্যন্ত আমাকে পথ চলতে দিক নির্দেশনা দিয়েছিল – ধীরে ধীরে সেই স্বপ্নের ঘুড়িগুলো কেটে যেতে লাগলো এক এক করে। জীবনটা একটা জেলখানা বলে মনে হতে লাগলো এক সময় আর সেই কয়েদ খানায় আমিই একমাত্র আসামী - বিনা দোষে জেল খাটছি।
কাঠখোট্টা একাউন্ট্যান্ট ফার্নান্দেজ সাহেবের জীবনটাও এভাবেই কাটছিল। দীর্ঘ পঁয়ত্রিশ বছর চাকরি করার পর তিনি আগামী মাস থেকে রিটায়ারমেন্টে যাবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সব কিছু ঠিকঠাক। ব্যাংক ম্যানেজার শ্রফ সাহেব একদিন তাঁর সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন অফিসে নতুন জয়েন করা আসলাম শেখের সাথে। শেখ তাঁর রিটায়ারমেন্টের পর ওই একই পদে দায়িত্ব পালন করবে। সবকিছু চলছিল স্বাভাবিক ভাবেই।
আটপৌরে রুটিন মাফিক জীবনে অভ্যস্ত ফার্নান্ডেজ সাহেবের সাথে হঠাৎ করেই অদ্ভুত একটা ঘটনা ঘটে যায়। স্বামীকে খুশী করার জন্য ইলার রান্না করা স্পেশাল মেন্যুর লাঞ্চ বক্স ভুলক্রমে চলে যায় ফার্নান্ডেস সাহেবের কাছে।
এরপর প্রতিমিনিটে The Lunchbox এর গল্প আপনাকে নিয়ে যাবে মানব মনের সেইসব সূক্ষ্ম অনুভূতির কাছে যার আমেজ আপনার মনকে বিমোহিত করে রাখবে সিনেমার শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত, এমনকি সিনেমা শেষ হওয়ার পরও।
সিনেমার গল্পটা এর চাইতে আর বেশী বলতে ইচ্ছা করছে না। কোন এক ছুটির দিন দুপুরে দেখেছিলাম। অদ্ভুত সুন্দর গল্পের এই সিনেমাটা আমার মনে একটা চমৎকার অনুভুতিতে ভরে দিয়েছিল। আমার মনে হয় সবারই ভালো লাগবে এটা। তাই হাতে যদি সময় থাকে তাহলে আর সময় নষ্ট না করে দেখে ফেলুন The Lunchbox। অনেকেই হয়ত আগে দেখেছেন। আমার মনে হয় আবার দেখতে খারাপ লাগবে না সিনেমাটা।

The Lunchbox সিনেমায় ফার্নান্ডেজের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন সাবলীল অভিনেতা ইরফান খান বলতেই হবে, চমৎকার অভিনয় করেছেন ভদ্রলোক। আসলাম শেখের চরিত্রে ছিলেন নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকি আমার দেখা নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকির প্রথম সিনেমার নাম “Kahaani”। সেখানে তাঁর অভিনয় দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছি। এবারো হলাম। আরো জানতে পারলাম এই সিনেমায় অসাধারণ অভিনয়ের জন্য তিনি Filmfare Award পেয়েছেন “সেরা পার্শ্ব অভিনেতা” হিসেবে। ইলা চরিত্রে রূপদান করেছেন নিমরাত কউর আমার কাছে তাঁর অভিনয়ও অসাধারণ লেগেছে। মন ছুঁয়ে গেছে তাঁর প্রতিটি এক্সপ্রেশন।
চলচ্চিত্রটি সর্বমোট ১১ টি পুরস্কার জিতে নিয়েছে। আর ৯ টি পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিল। যার মধ্য সেরা চলচ্চিত্র হিসেবে এটি জিতে নিয়েছে সম্মান জনক Filmfare Award.
সিনেমাটির লেখক-পরিচালক ছিলেন রিতেশ বাটরা (Ritesh Batra )। চমৎকার কাজ করেছেন বলাই বাহুল্য। আমার অবশ্য পিত্তি জ্বলে গেল। কারণ সিনেমাটা দেখার পর আমার মনে হয়েছে - আমরা কেন এরকম সহজ সরল অথচ দুর্দান্ত স্ক্রিপ্টের সিনেমা বানাতে পারি না?
উইকি থেকে রিতেশ বাটরার সম্পর্কে যা জানতে পারলাম সেটা তুলে ধরলাম –

রিতেশ বাটরা মুম্বাইতে এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটিতে ফিল্ম নিয়ে পড়ালেখা শুরু করেছিলেন, শেষ করতে পারেন নি। ইকোনমিক্সের মতো খটোমটো সাবজেক্টে আন্ডারগ্রেড করে তিন বছর কন্সাল্ট্যান্ট হিসেবে চাকরিও করেছেন। কিন্তু তারপর আবার ফিরে গেছেন ফিল্ম লাইনে। The Lunchbox পরিচালনার আগেও তিনি Care regular Cairo, Gareeb Newaz’s Taxi আর The morning Rituals নামে তিনটি শরত ফিল্ম পরিচালনা করেছেন। তবে The Lunchbox –ই তাঁর এখন পর্যন্ত সেরা কাজ। মধ্যবিত্ত জীবনের সাধারণ গল্পগুলোই তাঁর সিনেমায় ফিটে উঠেছে অসাধারণ স্বকীয়তায়। এর জন্য অবশ্য তিনি যথেষ্ট সুনাম কুড়িয়েছেন। জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে মোটা দাগের ঘটনা আর চিরাচরিত জীবনযাপনের আড়ালে যে অসাধারণত্ব আছে – সেটা তিনি সারথকভাবেই তাঁর সিনেমায় তুলে ধরতে পেরেছেন। আর তাঁর সে কাজে তাঁকে নিশ্চিতভাবে সহায়তা করেছে সিনেমার প্রতি তাঁর অগাধ আর অকৃত্তিম ভালবাসা। And none the less – dedication.
আমার দেশেও এমন জীবনমুখী চলচ্চিত্র তৈরি হোক। আমাদের দেশের চলচ্চিত্রও ছড়িয়ে পরুক দেশে দেশে – সেই আশায় রইলাম।

আর জানতেঃ

IMDB

[yt|https://www.youtube.com/watch?v=Qdn6nVJHyfM


আমার অন্যান্য রিভিউগুলোঃ

১) মুভি রিভিউঃ “π”
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মে, ২০১৪ দুপুর ১:৫৯
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×