রাত ১২ টার পর থেকেই চেষ্টা করছিলাম, কয়েকবার ফ্যানে ওড়না লাগিয়েছিলাম... কিন্তু সুযোগ হচ্ছিল না।... কেন যেন মা বার বার আজ রুমে আসছিল... এইত শেষবার এসে ও দুধের গ্লাসটা দিয়ে তারাতারি ঘুমাতে বলে গেল... মায়ের দিকে অনেক বার তাকাচ্ছিলাম, ভাবছিলাম এই প্রিয় মুখ ছেড়ে কিভাবে চলে যাব... সুযোগ টা হল ফজরের আজানের কিছু আগে। ...সকাল থেকে অনেক বার মা এসে দরজায় নক করেছে... ভেবেছে এখন ও মেয়ে ঘুমাচ্ছে... কিন্তু তাদের মেয়ে যে সেই ফজরের আগেই চলে গেছে দুনিয়া ছেড়ে, এটা মেনে নেবে কেমন করে!!
...
কিন্তু কি করব... ওকে সেদিন বললাম, সাময়িক আনন্দের দরকার নেই।... এসব করা ঠিক হবে না... কিন্তু “ও” শকুনের মত আমার দেহের উপর উঠে আলিংগন করছিল... আমি ও কেন জানি বাধা দিতে পারছিলাম না... মনের কাছে খারাপ লাগলে ও শরীরের কাছে ভাল লাগছিল... একটা বারই তো... কিন্তু সেই একবারই যে আমার কাল হয়ে দাঁড়াবে তা বুঝতে পারিনি...
...
শারীরিক পরিবর্তন দেখেই বুঝছিলাম কি হতে চলেছে... ডাক্তার এর কাছে যেতে চাচ্ছিলাম... কিন্তু কোন মুখে ডাক্তার এর কাছে যাব?... সে বলেছিল ১ মাসে মধ্যই বিয়ে করবে...এ জন্য সেদিন বাধা দেইনি... আমার সাথে ঠিক মত যোগাযোগ করছিল না... তাহলে সে কি শুধু আমার শরীরের জন্যই পাগল ছিল?... আমার শরীর ভোগ এর জন্য মুখিয়েছিল?... অনেকবার কল করেছি।... ফোন ধরে নি... Abortion এর কথা অনেকবার মাথায় এসেছে... আবার ভেবেছি, কেন আমি একটা “নিষ্পাপ” শিশুকে মেরে হত্যাকারী সাজব?... অপরাধ আমার, সে তো কোন দোষ করে নি... পরিবার এর কাছে কি বলতাম?... হয়ত মসজিদে যাওয়ার সময় বাবাকে শুনতে হত, “আপনার মেয়ে অপয়া”।... পাশের প্ল্যাটের আন্টি হয়ত মাকে বলত, “এমন মেয়েকে বিষ দিয়ে মারেন না কেন”...
…
খুব কষ্ট হচ্ছিল... ওড়নাতে ঝোলার সাথে সাথে মনে হচ্ছিল, বুকের উপর এক পাহাড় উঠে বসে আছে... চারিদিক দ্রুত অন্ধকার হয়ে আসছিল... আগে বুঝিনি এত কষ্ট হবে পৃথিবী ছেড়ে যেতে... এই প্রিয় মুখ গুলোকে আর কখন ও দেখব না... বাবা, মা হয়ত বেচে যাবে অপমান থেকে... ছোট ভাই তানিন হয়ত জানবে না, তার বোন কি অপরাধ করেছে... কেন চলে গেছে আদরের ভাইকে ছেড়ে... অনেক কষ্ট লাগছে ভাইটাই জন্য, ওকে বলেছিলাম, সামনের মাসের ৩ তারিখে খাওয়াতে নিয়ে যাব... কষ্ট টা থেকেই গেল...বাবা বলেছিল, “হুটহাট করে ডিসিশন না নিতে”... কেন তাহলে এমন ডিসিশন নিলাম... আমি ও চেয়েছিলাম, পৃথিবীর মায়া, পরিবারের ভালবাসায় জড়িয়ে থাকতে... বাবা , মা ভাইয়ের থেকে মাফ চেয়ে নিতাম... হয়ত তারা আমাকে ক্ষমা করত... সেই ৪ ঘন্টা ধরে ফ্যানের সাথে ঝুলে থাকতে থাকতে এখন গলা প্রায় কেটেই যাচ্ছে... নিথর শক্ত হয়ে আসছে দেহ...
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:৩৯