আমার এ প্রাণ তো
কেবল তোমারি নামটা জপতো
প্রত্যহের সমাপ্তি ও সূচনায় ,
আর তোমাতেই হারিয়ে যেতো
নিতান্ত কিংকর্তব্যবিমূঢ়তায় ।
তখন তোমারকল্পনার প্রবলবেগী সমীরণ রাজ্যে
খানিকটা স্বস্তির শ্বাস মিশে
না হয় একাকার হত,
অথবা আমার কষ্টের অথৈ পাথারে
দুফোঁটা জলই না হয় যোগ হত গর্বভরে ।
কিন্তু তোমার তো কিছুই যায় আসেনি তাতে !
ভালবাসার পবিত্রতার জোরেই
তোমায় দিয়েছিলাম একটা সাদা গোলাপ ,
ভেবেছিলাম গোলাপের সে রিক্ততাভরা শুভ্রতাকে
একফোঁটা ভাললাগার লালিমায় কানায় কানায় পূর্ণ করব ।
আর ত্যাগের নিরঞ্জন সৌরভে উদ্ভাসিত করব-
সে সৌরভ সারা বুক জুড়ে
করবে দাপুটে খেলার প্রদর্শন ,
আর তাতেই হবে মোর আত্মশোধন ...
অথচ তুমি সেই অপার পবিত্রতার কলঙ্করূপী বিষেল কাঁটা হয়ে
কাতর কোমল অন্তর দেয়ালে
নিপুণত্বের চরমত্বে পৌঁছে গিয়ে
এঁকে দিয়েছ
সারল্যের অন্তরালে লুকানো
অচেনা অদেখা পিশাচিনীর চিত্রটা !!
আর তাতে অন্তর গাত্র বেয়ে রক্তের এমনই ফেনিল স্রোতস্বিনী বইছে যে
জগতের সব সাদা গোলাপ
সে স্রোতস্বিনীর স্রোত-স্নাত হতে না পারার নিরব শোক
বিলিয়ে দিচ্ছে নিষ্কলুষ শুভ্রতায় ।
তুমি তো কেবল কুত্সিত চাকচিক্য-চর্চায় মজে রয়েছো,
তাই তো এই স্বচ্ছ অন্তঃকরণ নিয়েও
নিখাদ সাধনায়- তোমার হৃদয়মন্দিরে
প্রেম দেবীরে শোভা দিতে
একটা পূজোর মালাও গাঁথতে পারি নি ।
কি করে পারব ?
কদাকার-চর্মভেদী দৃষ্টি যে বিধাতা তোমায় দেয়নি....!!
অন্তরের আঁতুর ঘরে মহাসমারোহে করেছিলে আশার এক ক্ষুদ্র সতেজ বীজ বপন,
তোমার অবহেলামাখা মেকী যত্নেযা উন্নীত হয়েছিল
এক প্রতাপশালী প্রেম-বৃক্ষে,
যার প্রতিটি পাতার কিনার হতে
তোমার অস্তিত্ব সাড়ম্বরে ধ্বনিত হত ।
যার প্রতিটি প্রশাখ তোমার মোহময়ীকল্পনার প্ররোচনায় নেচে উঠত।
যা তোমা হতেই সুধা শুষে নিয়ে
সগৌরবে মাথা উঁচু করে
স্বপ্নের সপ্তাকাশ ছুঁয়েছিল ।
আর তুমি
অচিন্ত্যনীয় নৃশংসতায় মেতে উঠে
আশার সে মূর্ত প্রতীকটিকে
হত্যা করলে অমানুষিক নির্বিকারত্বেরধারাল কুঠারাঘাতে ...
আর তারপর
অনুভূতির স্পর্শকাতর ঘাসগুলোয়
নির্মম পদাঘাতের চিহ্ন ফেলে রেখে চলেগেলে ,
আমার আমিটাকে
আমিত্বহীন করে দিয়ে ....
এখন প্রায়ই কানে বাজে মৃত্যুদূতের ব্যস্ত পদধ্বনি ,
তাই আর বাঁচব না বলেই ধরে নিয়েছি ।
বেঁচে থাকার সাধ আর সাধ্য
দুটোই তো খুইয়েছি আমি ।
না পাওয়ার যাতাকলে আজ
প্রবল পেষণে নিষ্পেষিত হচ্ছে বাঁচবার সবল স্বপ্নগুলো ।
শরীরে অতৃপ্তির একপিপাসু পিশাচ শুষে নিচ্ছে সমস্ত প্রাণামৃত ।
অথচ আমার সব ধারণার ভুল ভেঙে দিয়ে,
এখনও বেঁচে আছি ...