আমরা একটা অতিমাত্রায় অতিথিপরায়ণ জাতি। অতিথি ঘরে আসলে তাকে সুন্দর মতন বসিয়ে খাতির যত্ন করি,আপ্যায়ন করি জলখাবার দ্বারা ।অতিথির যাতে কোন অসুবিধা না হয় সেই দিকটাতে কড়া নজর রাখি ।এই একটা ক্ষেত্রে আমাদের যথেষ্ট সুনাম রয়েছে ।
কিন্তু আপনার শত্রু বা আপনার অনিষ্টকারী যখন অতিথিরূপে ঘরে আসবে তখন আর আপনি তাকে আপ্যায়ন করবেন না ।যত তাড়াতাড়ি পারা যায় ঘর থেকে বের করতে চাইবেন ।পারলে অর্ধচন্দ্র এবং পশ্চাতদেশে কষে গোটা কয়েক লাথিও লাগাবেন ।
আমাদের টাইগাররা ঠিক এই কাজটিই করেছে ।ভারতকে এদেশ ছাড়তে বাধ্য করেছে এবং তাদেরকে জবাব দিয়েছে জনতার ভাষায় অনেকটা এভাবে -"দ্যাখ শালা..!আমরাও পারি...!!খেল্লাম না তোগো লগে ক্রিকেট ,তোরা আমাগো লগে খেলার যোগ্য না..." ।
এখন পাকিস্তানকে দেখিয়ে দিতে হবে ।'প' এর জায়গায় 'ফ' উচ্চারণ না করে ব্যাটে বলে জবাব দিতে হবে ।প্রথম ম্যাচটা অল্পের জন্য হাতছাড়া হয়েছে ।জয় অসম্ভব কিছু ছিলো না ।কিন্তু টাইগাররা দারুণভাবে পরের ম্যাচগুলোতে কামব্যাক করেছে ।ভারতের সাথে অসাধারণ রান চেইজ ,এরপর শ্রীলংকার সাথে দারুণ এক টিম পারফরম্যান্স !
দরিদ্র একটা দেশে এ যেন দরিদ্র মানুষগুলোর উত্সবের অভাবনীয় উপলক্ষ !এদেশের ক্রিকেট পাগল খেটে খাওয়া মানুষগুলো বহু কষ্টে টাকা জমায় টিকেট কেনার জন্য ।ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থেকে পা ফুলিয়ে ফেলে ।
যারা টিকেট পায় না তারাও হাল ছাড়ে না ।কাজ ফেলে টিভির সামনে বসে থাকে ।একটুখানি আশা ,এবার তো হতেই পারে ।অসম্ভব তো কিছু না !! সারাদিনের আয়ের বিনিময়ে ওরা স্বপ্ন দ্যাখে ,জয়ের স্বপ্ন দ্যাখে ।এই একেকটা স্বপ্নের পেছনে বহু কষ্ট ,বহু কান্না বিজড়িত থাকে ।টাইগাররা এই স্বপ্নের মূল্য দিতে পেরেছে ।এখন সময় এসেছে চূড়ান্ত মূল্য প্রদানের ।
আর কেবলমাত্র একটা ম্যাচ ।কেবলমাত্র কয়েকটা ঘন্টা ।সারাদেশ ওদের দিকে চেয়ে আছে ।ওরা কি করে ১৬ কোটি বুক ভাঙবে ?
আমার এ লেখাটি সাকিব তামিমরা হয়ত পড়বে না ।আমার মত হাজারো শুভাকাঙ্খীদের হাজারো লেখা তাদের পক্ষে পড়া সম্ভবও না ।কিন্তু এই যে জনতার দোয়া ,জনতার ভালবাসা ,এটা সবসময় তাদের সাথে থাকবে ।
তবে এটা ঠিক যে প্রত্যাশার চাপ অনেক সময় টাইগারদের পেয়ে বসে এবং তাতে ভেঙে পড়বার অতীত নজিরও রয়েছে ।তা থাকুক !!বাঘের 'বাচ্চা'রা এখন যথেষ্ট বড় হয়ে গেছে ।
বোলিংএ তারা একক নৈপুণ্যে বিশ্বাসী না ।ব্যাটিংএ আচমকা ধস নামতে শুরু করার আগেই কেউ না কেউ ঠিকই হাল ধরে ,থিতু হয়ে রানটান করে ।আগের মত এখন 'কেবল টপ অর্ডার' কিংবা 'কেবল মিডল অর্ডার' এর উপরই যে স্কোরবোর্ড নির্ভর করবে এমনটা না ।প্রত্যেকের ভেতর রানক্ষুধা দেখা যায় ।ফিল্ডিংএও উল্লেখযোগ্য উন্নতি দেখা গেছে ।সব মিলিয়ে গোটা দলটা এখন একটা খোঁচা খাওয়া ক্ষ্যাপা 'কিশোর' বাঘ।
এই 'কিশোর' বাঘের দলটা জয়ের মধ্যেই রক্তের স্বাদ পেয়ে গেছে ।একটা নেশা ধরে গেছে যেন ।দাপটের সাথে খেলে পরপর দুটো ম্যাচে জয় সেটাই প্রমাণ করে ।এই নেশাটা ধরে রাখতে পারলে এশিয়া কাপটা আমাদেরই হবে !!
সিংহের গর্জনের পরিবর্তে লেজ গুটিয়ে পলায়ন আমরা দেখেছি ।
ভাদাদের মুখে অলরেডি এম্ব্রয়ডারি সেলাই করে দেয়া হয়ে গেছে ।
এখন পাকি ছাগুদের মুখেও এম্ব্রয়ডারি সেলাই এবং সেই সঙ্গে দু'গালে বাঘের মূত্রমাখা স্যান্ডেলের বাড়ি দেবার অপেক্ষায় আছি সবাই ।
কাল মিরপুর হয়ে উঠুক রেসকোর্স ।ব্যাট হয়ে উঠুক আগ্নেয়াস্ত্র .....
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মার্চ, ২০১২ সকাল ১১:২৯