মিস্টার এক্স একজন তরুণ ব্যবসায়ী ।বিরাট এক দালানে তার বসবাস।
সে একজন সফল পেইজ এডমিন ।বিশাল বিশাল বাংলা পেইজের সম্ভার রয়েছে ফেসবুকে ।তার মধ্যে অন্যতম হলো মিস্টার এক্সের ১৮+ পেইজটি ।
মিস্টার এক্স প্রতিদিন গড়ে কমপক্ষে ১০/১২ টি স্ট্যাটাস দেয় ।প্রত্যেকটিতে লাইকের জোয়ার বয়ে যায় । "মাম্মা জোস হইছে" , "কঠিন হইছে" ইত্যাদি ইত্যাদি কমেন্টে ভরে যায় পোস্টগুলো ।
মিস্টার এক্স খুশি হয় । মিটিমিটি হাসে ।
বিশেষ বিশেষ দিনগুলোতে ফেসবুকে হৈচৈ পড়ে যায় ।সবাই বিশেষ বিশেষ স্ট্যাটাস দেয় ।
এমনকি '১৮+' পেইজগুলোও তাদের গণ্ডী থেকে বেরিয়ে আসে !
মা দিবস এসে গেছে ।'বিশেষ' স্ট্যাটাস শেয়ার করতে হবে ! মিস্টার এক্স ভাবতে লাগলো কী করা যায় !কী স্ট্যাটাস দিলে সর্বাধিক লাইক আসতে পারে !
ভাবতে ভাবতে সে গুগলসার্চ করলো ।পেয়ে গেলো তার 'কাঙ্খিত বস্তু' ।
এরপর সেগুলো পাঁচমেশালির মত মিশিয়ে কতগুলো বিখ্যাত উক্তি জোড়াতালি দিয়ে তার পেইজের জন্য একটা দুর্দান্ত স্ট্যাটাস তৈরি করে ফেললো ।শেষে জুড়ে দিলো — "লাইক দিয়ে মায়ের প্রতি ভালবাসা জানান "(!!)
(মিস্টার এক্সের ইগো আবার ভয়ানক উন্নত প্রকৃতির ।সে পাঁচমেশালির রেসিপিটা ভালমতই রপ্ত করেছে ।কিন্তু কখনোই ডায়রেক্ট কপি পেস্ট করে নাই !)
ঠিক বারোটা এক মিনিটে সেই পাঁচমেশালি স্ট্যাটাসটা পোস্ট হলো ।
লাইকাররা লাইক দিতে দিতে হাতের চামড়া ক্ষয় করে ফেললো ।
কমেন্টারদের কমেন্টে কমেন্টে আবেগের রক্ত ঝরলো ।
মিস্টার এক্স বিজয়ের হাসি হাসলেন ।এবারকার স্ট্যাটাসটা যথেষ্ট সমাদৃত হয়েছে ।বোধহয় বিগত লাইকসংখ্যার রেকর্ডটাই ভেঙেই যাবে !
....
...
..
.
পেইজের এডমিন অর্থাত্ মিস্টার এক্স কি তার মাকে খুব ভালবাসে?
মায়ের প্রতি খুব দায়িত্বশীল ?
পুরোটা জেনে নেয়া যাক ।
মিস্টার এক্সের বিধবা মা ।তিনি দেশের বাড়িতে থাকেন ।ছোট্ট একটা দোচালা ঘরে একা একা থাকেন ।
তার ছেলে ব্যবসা নিয়ে পড়ে থাকে ।সচরাচর মায়ের খোঁজ নেয় না ।প্রতিমাসে মাকে ১০০০ টাকা পাঠিয়ে তার 'দায়িত্ব পালন' করে ।তা দিয়ে কোনরকম দিন চলে বিধবা মায়ের ।
ছেলে শহরে বিরাট দালানে ফুর্তি করে আর বিধবা মা'টি মানবেতর জীবন যাপন করে ।
এমন অবস্থায় নীরবে চোখের জল ফেলা ছাড়া কিছু করার থাকে না বিধবা মায়ের ।
এই হলো মিস্টার এক্সের মায়ের প্রতি 'ভালবাসা' আর 'দায়িত্ববোধ' ।
....
সমাজে অনেক মিস্টার এক্স বাস করে ।একটু ভালমত আশেপাশে তাকালে আমরা প্রায়ই এদের দেখতে পাই ।
এরা ফেসবুকে মাদার্স ডে উদযাপন করে । "লাভ ইয়্যু মা ....." পোস্ট দিয়ে সোশ্যাল স্ট্যাটাস রক্ষা করে ।ওদিকে প্যাস্ট্রিজ হ্যাম্পার হবার ভয়ে তাদের 'আনকালচার্ড্' মাকে নিজেদের কাছে এনে রাখতে অস্বীকৃতি জানায় ।
হ্যাঁ ,মানলাম আপনি আপনার মাকে সত্যিকার অর্থেই ভালবাসেন ।এই কথাটা আপনি স্ট্যাটাস দিয়ে প্রকাশ করতেই পারেন ।
আমি আপনার ভালবাসাকে ছোট করে দেখছি না কিংবা এ নিয়ে মোটেও প্রশ্ন তুলছি না ।
কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় ,যারা সচরাচর ফেসবুকে আসেন না ,তারাও এইদিন ফেসবুক ভ্রমণে বের হন, এরপর মাকে নিয়ে একটা স্ট্যাটাস দিয়ে যান ।যেন এটা একটা ট্রেডিশন হয়ে দাঁড়িয়েছে !এখানে অবশ্যই লোক দেখানো একটা মনোভাব রয়েছে ।
আমি স্ট্যাটাস দিয়েছি ,আমিই তো মাকে ভালবাসি ।অমুক ব্যক্তি স্ট্যাটাস দেয়নাই ,তাই সে মাকে কম ভালবাসে কিংবা ভালবাসে না -এমন ভাবাটা অবান্তর ।
মায়ের প্রতি ভালবাসা অনন্ত অসীম ।কোন স্ট্যাটাসের জোরে সেই ভালবাসা মাপা যায় না ।কোন লাইকের বিনিময়েও সেই ভালবাসা প্রকাশ করা যায় না ।স্ট্যাটাস দেয়াটা তাই আবশ্যক হতে পারে না ।
স্ট্যাটাস দেয়া আর দায়িত্ব পালন কখনোই এক জিনিস নয় ।
এই ভালবাসা চিরন্তন ।কোন একটা বিশেষ দিনের জন্যও এটি নয় ।মা দিবস যদি পালন করতেই হয় তাহলে তিনশো পঁয়ষট্টি দিনই পালিত হোক ।
আর সবশেষে বলবো ,সমাজের মিস্টার এক্সরা তাদের তথাকথিত সোশ্যাল স্ট্যাটাস সমেত নিপাত যাক !