একটা কথায় সকলেই একমত। কথাটা হলো আমাদের দেশের একাডেমীক শিক্ষার সিলেবাস কর্মমূখী বা জীবনমূখী নয়।
আমাদের একজন এসএসসি পাশ করা ছাত্র অথবা ডিগ্রি পাশ করা ছাত্রের আইন সম্পর্কে কোনো ধারণাই নাই। ভূমি সংক্রান্ত বিষয়েও তার কোনো ধারণা থাকে না। বেশিরভাগেরই কোনো ধরণের বিশ্লেষণাত্মক জ্ঞান নেই। এমনকি তাদের যথাযথ ধর্মীয় জ্ঞান এবং কোনো ধরণের বিনিয়োগ জ্ঞান থাকেই না।
এখানে যে পাঁচটি বিষয় আমি উল্লেখ করলাম, আইন, ভূমি, ধর্ম, বিনিয়োগ ও বিশ্লেষণী দক্ষতা। স্বাভাবিক জীবন চলার পথে এই বিষয়গুলোর গুরুত্ব বলার অপেক্ষা রাখে না।
এইসব বিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞান না থাকার দরুন একটা মানুষ পদে পদে দূর্ণীতির সম্মুখীন হচ্ছে। সে আপাদমস্তক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।
সঠিক বিনিয়োগ জ্ঞান না থাকার দরুন সে বিভিন্ন স্ক্যামের সম্মুখীন হয়। নিজের পৈতৃক জমিটুকুর দেখভাল করতে গিয়ে তাকে যে পরিমাণ হ্যারাস হতে হয় তা ভুক্তভোগী মাত্রই জানেন।
একটু চিন্তা করেন, সদ্য গ্রাজুয়েট করা একটা ছাত্র আইন বুঝে না, বিনিয়োগ বুঝে না, খতিয়ান বুঝে না, রাজনীতি বুঝে না, প্রপার ধর্ম বুঝে না (ধর্ম সম্পর্কে তার জ্ঞান হলো শুনে শুনে। বেশিরভাগই মূল ধর্মগ্রন্থ পড়ে না), তার কোনো বিশ্লেষণী জ্ঞান নেই। এরকম একটা মানুষ একটা সমাজের কী কাজে আসবে?
এই সব অদক্ষ লোকজন খুব সহজেই দালালের খপ্পরে পড়ে যায়। সমাজ চলে যায় অন্ধকারে! মুক্তি আসে না। মরীচিকার লোভ দেখিয়ে চেরাবালি গ্রাস করে আমাদেরকে।
এখন প্রশ্ন হলো, স্কুল কলেজ আমাদেরকে কী শেখায়?
যা-ই শেখাক না কেনো, তবে উল্লিখিত বিষয় শেখায় না। এসব বিষয়ে কোনো ধরণের ধারণাই দেওয়া হয় না।
তাই আমার প্রস্তাবনা হলো- আমাদের স্কুলের সিলেবাস নতুন করে সাজানো দরকার। সেখানে যে বিষয়গুলো যেভাবে পড়ানো যেতে পারে-
১। বাংলা- ১০০
২। ইংরেজী- ১০০
৩। বিজ্ঞান- ২০০
৪। পৌরনীতি- ১০০
৫। মূল ধর্মগ্রন্থ- ৫০
৬। ফৌজদারী আইন- ১০০
৭। দেওয়ানী আইন- ১০০
৮। গনিত- ১০০
৯। কম্পিউটার- ১০০
১০। বিনিয়োগ শিক্ষা- ১০০
১১। বিশ্ব সাহিত্য- ৫০
১২। গ্রামার (বাংলা+ইংরেজী)- ১০০
১৩। এ্যানালিটিক্স- ৫০
১৪। স্পোর্টস- ৫০
এখানে,
১। বাংলা এবং ইংরেজীতে থাকবে ভাষার ৪ টি দক্ষতা। রিডিং, রাইটিং, স্পিকিং, লিসেনিং।
২। বিজ্ঞান: তাত্তিক জ্ঞান এবং ব্যবহারিক জ্ঞান। ইনোভেশন ইত্যাদি।
৩। পৌরনীতি: ব্যক্তিক আচার আচরণ থেকে শুরু করে নগর, নাগরিক ইত্যাদি।
৪। প্রত্যেকেই নিজ নিজ মূল ধর্মগ্রন্থ পড়বে।
৫। বিনিয়োগ শিক্ষা: সঞ্চয়, বিনিয়োগ, এ্যাকাউন্টিং, ম্যানেজমেন্ট, ব্যবসা ইত্যাদি।
৬। গ্রামার: বাংলা ভাষা এবং ইংরেজীর গ্রামার পড়বে, ৫০ + ৫০। ১০০ করে পড়ানোর দরকার নেই।
৭। এ্যানালিটিক্স- ৫০: বিভিন্ন ধরণের কেস স্টাডি পড়ানো হবে।
৮। স্পোর্টস- ৫০: একটা ইনডোর গেইম এবং একটা আউটডোর গেইম, ১০ করে ২০ মার্কস। বাকী ৩০ হলো- তাত্তিক এবং শারীরিক শিক্ষা।
৯। বিশ্ব সাহিত্য: এখানে যে যার মতো সাহিত্যের বিভিন্ন শাখা পড়বে। যে যেটা পড়ছে সে সেটার উপর লেকচার দিবে।
এই বিষয়গুলো যদি এভাবে পড়ানো হয় তবে আমাদের সমাজ পরিবর্তন হতে সময় লাগবে না। প্রত্যেকেই স্বশিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারবে।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৩:২৯