আমার সীমাহীন একাকীত্ব ঘোচাতে সম্প্রতি বাসায় একটি দেশি জাতের বিড়াল পুষি। তাও প্রায় বেশ কিছুদিন হলো, বিড়ালটিকে এনেছিলাম একদম পিচ্ছি অবস্থায় রাস্তা থেকে কুড়িয়ে। প্রথম প্রথম কয়েকদিন তাকে দুধ কিনে খাওয়াতাম। এর পর ধীরে ধীরে সে সবধরণের খাবার খাওয়ায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। যেহেতু ঢাকা শহরে থাকি, সারাদিন বদ্ধ ঘরে থাকা আর বেড়ালটির পটি করার ব্যবস্থা না থাকায় প্রথম প্রথম কয়েকদিন সে যেখানে সেখানে তার ঐ প্রাকৃতিক কর্মটি করে ফেলত। এই যন্ত্রণার হাত হতে রক্ষা পেতে একটি কাগজের কার্টুনের মধ্যে রাস্তা থেকে বালু/মাটি সংগ্রহ করে নিয়ে ঘরের এক কোনায় রেখে দিয়ে তাকে বলে দিলাম, যখন তার ঐ বিশেষ কর্মটি করার সময় হবে সে যেন পরিবেশ নষ্ট না করে এই বিশেষ যায়গায় কাজটি সমাধা করে। প্রথম প্রথম দুয়েকবার ভুল করে ফেললেও তারপর থেকে আর কখনই তার সে ভুলটি হয়নি। সে নিয়মিত ঐ স্থানে প্রাকৃতিক কর্মটি সমাপ্ত করে আবার সুন্দর করে মাটি দিয়ে ঢেকে রাখে। ঢেকে রাখার প্রক্রিয়াটাও বেশ মজার, একবার ঢাকার পর গন্ধ শুকে নিশ্চিত হয় ঠিকমতো ঢাকা হলো নাকি, না হলে পুনরায় আরও মাটি/বালু দিয়ে একেবারে পুরোপুরি মাটিচাপা দিয়ে তার চারটি পা, শরীর সব চেটেপুটে পরিচ্ছন্ন হয়। আর তার মজার মজার ঘটনাগুলির কথা লিখলে দীর্ঘ একটি উপন্যাস রচিত হয়ে যাবে তাই সংক্ষেপে কিছু উল্লেখযোগ্য হাস্যকর মুহুর্তগুলি কেবল শেয়ার করলাম।
ছবি: গুগল, কিন্তু যখন প্রথম আনি তখন এতটুকুই ছিল আর দেখতেও অনেকটাই এমন।
বিড়ালটি ছোট থাকাবস্থায় সারাদিন পরে যখন আমি বাসায় যাই, যেখানেই থাকুক সে দৌড়ে এসে আমার পা শুকবে এরপর পা বেয়ে গাছে উঠার মত করে কোমর পর্যন্ত উঠে পড়বে, আবার নামবে, আবার উঠবে যতক্ষণ না তাকে নিষেধ করি এই যথেষ্ট হয়েছে এবার থাম, কাপড় পাল্টাই তারপর তোকে আদর করব। আশ্চর্য অমনি সে পা বেয়ে উঠা বন্ধ করে দিয়ে শান্ত হয়ে একস্থানে বসে আমার কাপড় চেঞ্জ করা পর্যন্ত সময় দিত। এরপর যখন কোথাও বসতাম সে দৌড়ে এসে লাফিয়ে কোলের মধ্যে ঢুকে ম্যাও ম্যাও করত, আর মাথাটা আমার হাত/শরীরের সঙ্গে ঘষাঘষি করতে থাকত। তার মাথায় আঙ্গুল চালিয়ে দিতে হত আমার বেশ অনেকটা সময় নিয়ে।
ছবি: গুগল।
এইরকম অম্লমধুর সময় অতিক্রান্তের মাঝে সে বেশ হৃষ্টপুষ্ট একটি পরিপূর্ণ যুবতীতে পরিণত হলো, ওফ্ ওটা যে একটা মেয়ে বেড়াল তাতো বলিনি। যাহোক কিছুদিন পূর্বে তার দুটি বাচ্চা হলো। তো আমি কি করি কি করি ভেবে চিন্তে আমার পুরোনো একটি জ্যাকেট দিয়ে অন্য আরএকটা একটু বড় কার্টনে তার একটি অস্থায়ী আঁতুড়ঘর বানিয়ে দিলাম। সে প্রথমে বাচ্চা নিয়ে আমার লেপের ওপর ওঠার চেষ্টা করছিল কিন্তু আমি তাকে প্রতিহত করে ঐ কার্টনটি দেখিয়ে বলি, যা ওখানে নিয়ে যা, আশ্চর্য সে ওখানে গিয়ে বাচ্চাটাকে নিচে রেখে নিজে প্রথমে উঠে গেল কার্টনটির মধ্যে এরপর বিভিন্নভাবে ঘুরে ফিরে কার্টনটির মধ্যে শুয়ে দেখল যায়গাটি তার মাপমত হচ্ছে কিনা এরপর সন্তষ্ট হয়ে কার্টন থেকে নেমে বাচ্চাটিকে নিয়ে আবার কার্টনের মধ্যে ঢুকে পড়ে।
পোষ্টটি অনেক লম্বা হয়ে যাওয়ায় পরের অংশ অন্য একটি পোষ্টে অন্য কোন দিন শেয়ার করব।