somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মধ্যপ্রাচ্যে নয়া সমীকরণ , বেকায়দায় সৌদি রাজার হেরেম শরীফ!

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে আবার নতুন সমীকরণ শুরু হয়েছে। ইরাক ও সিরিয়ায় সুন্নী বিদ্রোহী গোষ্ঠীর অবিশ্বাস্য উত্থান এবং গাজায় ইসলামপন্থী হামাসের বিজয়ে চরম বেকায়দায় পড়েছে রাজতান্ত্রিক সৌদি সরকার।

এমনিতেই সৌদি রাজতন্ত্র এখন হুমকির মুখে। আরব বসন্ত মধ্যপ্রাচ্যের দেশে দেশে গণতন্ত্রের যে অদম্য আকাঙ্খা সৃষ্টি করেছিল পুরোভাগে থেকে সৌদি সরকার তার মূলে কুঠারাঘাত করলেও এবার ইসলামিক স্টেট নামের দুর্ধর্ষ যোদ্ধারা তাদের ঘুম হারাম করে দিয়েছে।

ইরাক ও সিরিয়ার এক তৃতীয়াংশ এলাকা এখন এই ইসলামিক স্টেটের দখলে। চোখ তাদের সৌদি আরবের দিকেও প্রসারিত। অন্যদিকে নিজ দেশেও তরুণদের একটি বিশাল অংশ এখন সৌদি রাজতন্ত্রের বিরদ্ধে ‘জিহাদে’ মরিয়া।


অথচ ইরাক ও সিরিয়ায় নিজেদের বন্ধু সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য সৌদি আরব কত টাকাই না খরচ করেছে। কিন্তু এসব যেন জলে গেছে।

সাথে যোগ হয়েছে সৌদি রাজতন্ত্রের চক্ষুশূল হামাসের বিজয়। ফলে মিশরের মুসলিম ব্রাদারহুডকে ক্ষমতাচ্যুত করে সৌদি আরব যে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিল তা এখন শুধুই অতীত।

সিরিয়ার সরকার বিরোধী আন্দোলনে ইসলামী যোদ্ধাদের শক্ত অবস্থান এবং তাদের পশ্চিম ইরাকের বিশাল এলাকা দখলে সৌদি আরবের শাসক পরিবার ক্রমবর্ধমান সংকটের মুখে পড়ছে।

অথচ আল-সৌদ পরিবার এতদিন ইরাক ও সিরিয়া সংকটকে মধ্যপ্রাচ্যের ভবিষ্যতের জন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ হিসেবে দেখে এসেছে। আর তাই তারা দেশ দুটোর সুন্নী মুসলিমদেরকে ইরানের মতো একটি বৈপ্লবিক শিয়া রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে দাঁড় করেছে।

কিন্তু সিরিয়া এবং ইরাকে সৌদি রাজতন্ত্রের পছন্দের সুন্নী জোট ইসলামী জঙ্গী গোষ্ঠীর কাছে পরাজিত হয়েছে। আর এভাবে দুটো মূল আরব রাষ্ট্রকে তেহরানের পক্ষে চলে যেতে দেখা রিয়াদের জন্য দুঃস্বপ্নই বলতে হবে।

এ দুটো দেশে আল-সৌদ রাজতন্ত্র যেটা সবচেয়ে বেশি চেয়েছিল সেটা হচ্ছে শক্তিশালী সুন্নী প্রতিনিধিত্বের একটা স্থিতিশীল সরকার প্রতিষ্ঠা, যে সরকার ইরানের সম্প্রসারণবাদ এবং রাজতান্ত্রিক শাসনের বিরুদ্ধে হুমকিস্বরুপ সুন্নী ইসলামী জঙ্গী মতাদর্শের বিরুদ্ধে একটি আত্মরক্ষার উপায় হিসেবে কাজ করবে।


সিরিয়ায় যেখানে সৌদি আরব ধর্মনিরপেক্ষ ফ্রি সিরিয়ান আর্মি এবং ইসলামিক ফ্রন্টসহ বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর মূল পৃষ্ঠপোষকতাকারী ছিল।

কিন্তু প্রতিবেশি দেশ ইরাকে সৌদি আরবের পরীক্ষিত বন্ধু বা সুন্নী গোষ্ঠীগুলোর সাথে দেশটির প্রতিষ্ঠিত কোনো সংযোগ অল্পই রয়েছে। আর সৌদি আরব এটা জানে যে ইরাকের সংখ্যাগরিষ্ঠ শিয়া মুসলিমরাই দেশটির ক্ষমতার রাজনীতিতে প্রাধান্য বিস্তার করে যাবে।

রিয়াদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে এমন একজন ইরাকি নিরাপত্তা বিশ্লেষক মুস্তাফা আলানি বলেন, ‘কৌশলগত খেলার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে কি ঘটে তা দেখার জন্যই সৌদিরা অপেক্ষা করে আছে। সুন্নী আরবদের মধ্যে এমন কোনো গোষ্ঠী নেই যাদের উপর তারা (সৌদি আরব) নির্ভর করতে পারে। ২০০৩ সালের পর থেকে তারা মূলত দেশটিতে অনুপস্থিত এবং এজন্য তাদেরকে বেশ মূল্যও দিতে হয়েছে।’

যদিও ইসলামিক স্টেটের ভূখণ্ড এখনো সৌদি সীমান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত হয়নি এবং সৌদি আরবের জন্য তারা স্পষ্টত কোনো সামরিক হুমকিও নয়, তবু সৌদি রাজতন্ত্রের অনেক নাগরিকই এ গোষ্ঠটির সাথে যোগ দিয়েছে। আর এ কারণেই সৌদিদের মধ্যে ভয় ঢুকে গেছে যে তারা তাদের নিজেদের সরকারের বিরুদ্ধেই অবস্থান নিয়ে রাজতন্ত্রকে উচ্ছেদ করবে।

আল-সৌদ রাজতন্ত্র মনে করে, অধিকাংশ ইসলামী দল তাদের রাজতান্ত্রিক শাসনের বিরুদ্ধে একটি বিপজ্জনক মতাদর্শগত চ্যালেঞ্জ। আর এজন্যই তারা মিশরের মুসলিম ব্রাদারহুডের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক প্রচারণা চালিয়ে আসছে এবং আল-কায়েদাকে মোকাবেলার জন্য ওয়াশিংটনের সহযোগী হয়েছে।

সৌদি আরবের এ শাসক পরিবারটি এতটাই ভয়ে আছে যে গত ফেব্রুয়ারিতে বাদশাহ আবদুল্লাহ নতুন কয়েকটি কঠিন আইন জারি করেছে এবং মৌলবাদের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাতে ইমাম নিয়োগ করেছে।

দৃষ্টান্তস্বরুপ বলা যায়, লন্ডনে নিযুক্ত রিয়াদের রাষ্ট্রদূত যুবরাজ মোহাম্মদ বিন নাওয়াফ এ মাসে এক ব্রিটিশ পত্রিকায় লিখেছিলেন, ‘আমাদের দেশে এ বিপজ্জনক বিষ (ইসলামী মৌলবাদ) যাতে ছড়িয়ে পড়তে না পারে তার জন্য যা কিছু করনীয় তার সবকিছু আমরা করেছি এবং করব।’

১৯৯০ সালে যখন সাদ্দাম হোসেন কুয়েতে আগ্রাসন চালান এবং সৌদি ভূখণ্ডের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ান তখন থেকে ইরাকে কোনো রাষ্ট্রদূত রিয়াদের নেই। এবং দেশটির সাথে ২০০৩ সালের পর থেকে সম্পর্ক আরোও খারাপ হতে থাকে যখন যুক্তরাষ্ট্রের চালানো আগ্রাসনের কারণে সংখ্যাগরিষ্ঠ শিয়ারা অধিক ক্ষমতা পায়, যদিও সৌদি আরব বর্তমানে ইরাকের সর্ববৃহৎ মানবিক সাহায্য দাতা।

উপসাগরীয় এলাকার কতিপয় কূটনীতিকদের একজন এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছে, সৌদি আরব সম্প্রতি জাতিসংঘের মাধ্যমে ইরাককে ৫০০ মিলিয়ন ডলার দান করেছে। সকিন্তু ইরাকের উত্তর সীমান্তের সুন্নী রাজনৈতিক নেতাদেরকে ক্ষমতার ফিরিয়ে আনার সৌদি প্রচেষ্টা বিক্ষিপ্ত এবং অসফলই থেকে গেল।

ইরাক ও সিরিয়ায় সৌদি আরবের এই বিপর্যয়ের সাথে যোগ হয়েছে গাজায় হামাসের বিজয়। অথচ হাসামকে ধ্বংস করার জন্য সৌদি আরব আর তার মিত্র মিশর কত চেষ্টাই না করেছে।


হামাস ধ্বংস হবে এই আশায় তারা গাজায় সাম্প্রতিক ইসরাইলি গণহত্যাকে শুধু সমর্থন দিয়েই দায়িত্ব শেষ করেনি, তলে তলে ইসরাইলকে সহায়তা দিয়েছে বলেও গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে।

তবে শেষ পর্যন্ত হামাস যখন বিজয়ী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে তখন ত্রস্তব্যস্ত হয়ে হামাসের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক কাতারে ছুটে গেছে সৌদি সরকার।

সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও গোয়েন্দা প্রধানসহ উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি প্রতিনিধি দল বুধবার থেকে দুদিন ব্যাপী কাতার সফরে ‘সৌদি লাইন’ অনুসরণ করার জন্য কাতার সরকারকে রাজি করানোর চেষ্টা করে।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×