শিশু আইলান কুর্দির নিথর দেহ সাগরপাড়ে পড়ে থাকার ঘটনায় হৈচৈ শুরু হয়ে গিয়েছিল বিশ্বময়! বিষেশত পশ্চিমা মিডিয়ায় । যুদ্ধের কারনে যে সকল শরনার্থী ইউরোপে ঢুকতে চাইছিল, এবার তাদের অনুমতি দেওয়া হলো। আর আমরা পশ্চিমাদের প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে বাহবা দিতে লাগলাম! হৃদয়বিদারক আয়লানের ছবিতে ছেয়ে গেল আমাদের ফেসবুক, টুইটার সহ সকল সোস্যাল মিডিয়া!
কিন্তু প্রশ্ন জাগে :
১.সিরিয়া, লিবিয়া ও ইরাকের শরর্ণাথীরা এভাবে সমুদ্র পাড়ি দিতে গিয়ে মৃত্যুর মুখে পতিত হয়েছে হাজার হাজার। বহু আয়লান কুর্দি সমুদ্রে ভেসে গেছে, মিডিয়া তখন কেন নিশ্চুপ ছিল? এখন কেন এত হৈচৈ?
২. অনেক শরনার্থীর লাশ এভাবে ভেসে উঠলেও কেন ‘সিরিয়ান কুর্দি সন্তানের লাশ তার্কির” সৈকতে ভেসে উঠলেই এই হৈচৈ? এর কি কোন রাজনৈতিক কারণ আছে??
৩. শুধুমাত্র এ বছর আন্তর্জাতিক অভিবাসী সংস্থার (আইওএম) হিসাব মতে, এপ্রিল পর্যন্ত ভূমধ্যসাগরে ১৭২৭ জন শরনার্থী মারা গেলেও তাদেও নিয়ে কেন মিডিয়া তোলপার করেনি?
৪. কেন রহিঙ্গা ইস্যুতে এসব মিডিয়া সরব হয়নি?
৫. নৌকায় হাতজোর করে বাচঁতে চাওয়া রহিঙ্গাদের আর্তনাদ কেন পশ্চিমাদের বিবেকে সারা দেয় নি?
৬. কেন যে সকল রহিঙ্গা ইতালি হয়ে ইউরোপ কিংবা অষ্ট্রেলিয়া যেতে চাইল তাদের জন্য শরনার্থী দ্বার খুলে দেয়া হয়নি?
৭. কেন সৌদি সহ অনেক মুসলিম দেশে মুসলিম শরনার্থীদের আশ্রয় দিচ্ছে না?
লিংক : শরণার্থী সঙ্কট: কী করছে মধ্যপ্রাচ্যের ধনী দেশগুলো?
৮.শরনার্থী তৈরির কারিগর কে?
কারণ :
আসলে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফায়দা হাসিল করছে পশ্চিমারা।
১.এই ঘটনার মধ্য দিয়ে পশ্চিমারা প্রমান করতে চাইবে দেখ আমরা কত দয়াবান! আমরা তোমাদের আশ্রয় দিয়েছি! অথচ তারাই সারাবিশ্বেও খুনাখুনির সাথে জরিত! .শরনার্থী তৈরির কারিগরও তারা।
২. তারা বুঝাতে চাইবে দেখ আমরা তোমাদের আশ্রয় দিয়েছি কিন্তু মুসলমান দেশগুলি তোমাদেও আশ্রয় দেয় নি।
৩. সুন্নি মুসলিম শরনার্থীদের তারা খৃষ্ট্র ধর্ম গ্রহনের জন্য চাপ প্রয়োগ করবে।
প্রমান : জার্মানিতে খ্রিস্টান বানানো হচ্ছে শরণার্থীদের
৪. যারা ধর্মান্তরিত না হবে তাদের কিছুদিন পরে (মিডিয়ার দৃষ্টি অন্যদিকে গেলেই) দেশ থেকে অবৈধ বলে বের করে দেয়া হবে।
৫. সিরিয়াকে করে দেয়া হবে আইএস এর অভয়ারন্য!
ইসলামপন্থিদেও নয়া সংকট:
১.সিরিয়ান গৃহযুদ্ধেও পূর্বে এরদোগান ও আসাদের সম্পর্ক ভালই ছিল, ফলে তার্কি ও সিরিয়ার মধ্যে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। পাশাপাশি দুটি মুসলিম দেশের সুস্পর্ক ভালভাবে নেয়নি পশ্চিমারা ফলে বাশারের পিছনে লাগিয়ে দেয়া হলো খোদ এরদোগানকেই! আর সিরিয়ার বর্তমান পরিস্থিতির জন্য তার্কিই সবচেয়ে বেশী দায়ী।
২. আরব বসন্তের আবেগে মুসলিম ব্রাদারহুডও অস্ত্র তুলে নিল আসাদেও বিরুদ্ধে। এখন তারা যুদ্ধ থেকে সরে এসেছে, কিন্তু কি লাভ? মুসলিম ব্রাদারহুড আর সিরিয়ায় রাজনীতি করতে পারবে কিনা কিংবা তারা দেশে ফিরতে পারবে কিনা তাই সন্দেহ!
৩. সিভিল ওয়ারের সুযোগে সিরিয়া দখল কওে নিচ্ছে আইএস।
৪. এরদোগান যেখানে সিরিয়ান কুর্দিদেও বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছিলেন সেখানে সেই কুর্দি সন্তান আয়লানের লাশই ভেসে উঠল এরদোগানের সমুদ্র সৈকতে! মানে কুর্দিদেরকে আরও উস্কে দেয়া হলো! ফলে তার্কির আইনশৃংখলা বাহিনীর উপরে বারবার কুর্দিরা হামলা চালাচ্ছে আর তাদের মদদ দিচ্ছে পশ্চিমারা। ফলে সামনের নির্বাচনের জন্য এরদোগান আরও চ্যালেঞ্জের মুখে পতিত হলেন।
৫. আসাদ, তার্কি ও আইএসের ত্রিমুখী খেলার ফায়দা হিসাবে পশ্চিমারা পাল্টে দিবে মধ্যপ্রাচ্যেও মানচিত্র! ‘নিউ আরব প্রজেক্ট’ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে তারা সারা মধ্যপ্রাচ্যের তৈল দখল ও ইসরায়েলের সম্ভাব্য সকল শত্রুকে নির্মূল করতে চায়।
লিংক : মধ্যপ্রাচ্যের নতুন মানচিত্র
৬. মুসলিম বিশ্বেও অন্যতম শরনার্থী আশ্রয়দাতা দেশ ছিল সিরিয়া। ইরাকী ও ফিলিস্তিনি লাখলাখ লোককে আসাদ জায়গা করে দিয়েছিল। সেই সুযোগও শেষ হয়ে গেল।
৭. সিরিয়া ইস্যুতে শিয়া-সুন্নি তর্ক আরও জোরালো করে দেয়া হলো। পাশ্চাত্যের বিভাজন তত্ব আরও কার্যকরী হলো।
৮. আসাদেও শাসনামল ভালই চলছিল, যুদ্ধেও পুর্বে তিনি মানুষ হত্যা করতেন না! আর এখন...! রক্তময় সিরিয়া। জয় হয়েছে পশ্চিমা হলুদ মিডিয়ার!
৯. পশ্চিমারা এখন আসাদেও সাথে সংলাপ চাইবে আর তাতে ক্ষতির মুখে পরবে মুসলিম ব্রাদারহুড, এরদোগান ও বিদ্রোহী যোদ্ধারা আর টিকে যাবে আসাদ!
১০. সিরিয়ার ৭৫% সুন্নি মুসলমান আর দেশ ত্যাগও করছে তারা, ফলে সিরিয়া হবে সুন্নি মুক্ত শিয়া ও খ্রিষ্টান রাষ্ট্র।
১১. পশ্চিমা ফাঁদে পা দিয়ে তার্কি এখন উভয় সংকটে। একদিকে আসাদের টিকে যাওয়া অন্যদিকে হাজার হাজার শরনার্থীকে আশ্রয় দেয়া। তার্কিতে বর্তমানে ১৬ লাখেরও বেশী শরনার্থী রয়েছে।
সুতরং মনে রাখতে হবে,পাশ্চাত্য আমাদেও স্থায়ী শত্রু। আয়লান কিংবা শরনার্থী খেলা পাশ্চাত্যের তৈরিকৃত খেলা।আমরা মিডিয়া সন্ত্রাসের কাছে বারবার আত্মসমর্পন করছি। ইসলামপন্থিরা আজ নয়া ফাঁদে বন্দি! বুঝতে হবে সবকিছু। ভাবতে হবে আরও গভীরভাবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৩১