somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভুল সঠিকের সমীকরণ।

১৫ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১২:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বেশ আগে এসেই হলের টিভি রুম এ এসে বসল মনসুর। খেলা শুরু হতে এখনও প্রায় মিনিট পঞ্চাশের মত বাকি। আজ বাংলাদেশের ফাইনাল ম্যাচ;ভারতের বিপক্ষে। এই ম্যাচকে ঘিরে প্রায় পুরো দেশেই একধরনের উত্তেজনা কাজ করছে। মনসুর একজন ক্রিকেটপ্রেমি হিসেবে নিজেও আজকের ম্যাচ নিয়ে বেশ উত্তেজিত। খুব সাধারণত বাংলাদেশের কোন ক্রিকেট ম্যাচই ও ঠিক বাদ দেয় না অন্য কোন জরুরি কাজ না থাকলে। আর আগেভাগে না আসলে আজকে রুম এ সিট পাওয়া যাবে না নিশ্চিত জেনেই এত আগে আসতে হল ওকে।

সময়টা কিভাবে পার করবে তাওঠিক করেই এসেছে মনসুর। মোবাইল এর চার্জ প্রায় ফুল করে রেখেছে; ১০০ টাকাও মাত্র রিচার্জ করে আনল সে। ইন্টারনেট প্যাক সাবস্ক্রাইব করেই এফবিতে লগইন করল মনসুর। ফেসবুক ইতোমধ্যেই বেশ চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। সিংহভাগ স্ট্যাটাসই আজকের খেলা নিয়ে। “ আজকে শুধুই নাগিন ডান্স হবে!”, “ আজকে ভালতকে হারিয়ে বিশ্বকাপ এর প্রতিশোধ আমরা নিবোই” ; “ মন বলতেছে আজকে ভাল কিছু হবে, আল্লাহই ভরসা” কিংবা “ আজ এক ঢিলে দুই পাখি মারব। হারাব ভারতকে, হারবে ভারত এবং শ্রীলঙ্কা দুইটাই”। খেলা শুরুর আগেই এইসব কাণ্ড দেখলে বাড়াবাড়ি বলেই মনে হয় মনসুর এর কাছে। আরে বাপ! ওয়ানডেতে নাহয় বাংলাদেশের কিছু সাফল্য আছে, আর ওয়ানডেতে আমরা এখন মোটামোটি ধারাবাহিকভাবে ভালই খেলছি কিন্তু টি২০ তে!! এই ফরম্যাট এ তো আমাদের বলার মত কিছুই নেই। এমনকি আজকে যে ভারতের সাথে আমাদের খেলা তাদেরকেও এই ফরম্যাট এ আমাদের হারানোর কোন অভিজ্ঞতা নেই। এতেই আমাদের দর্শকদের যে হামবড়া ভাব, যে অহমিকা তাতে মাঝে মাঝেই বেশ বিরক্ত হয় মনসুর। আমরা কোহলি এর নামের আগে প্রায়ই বেআদব শব্দটি লাগিয়ে দেই, ভারতের দর্শকদের সবচেয়ে নিকৃষ্ট বলে দাবি করি। কোহলি এর মত পারফর্মেন্স এবং বর্তমান ভারতের মত যদি আমাদের দলের পারফর্মেন্স হত তাহলে আমাদের দর্শকরা ভারতকে এই বেআদবির দিক থেকে বহুগুণে ছাড়িয়ে যেত বলেই মনসুরের ধারণা।
ইতোমধ্যে টস ভাগ্য বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গেলো। ভারত টসে জিতে ফিল্ডিং নিল। টিভি রুমটিও প্রায় পূর্ণ হয়ে এসেছে।পুরো রুমটিই এখন ছেলেদের কথায় গমগম করছে। অদূরে বসা কয়েকটা ছেলের মধ্যকার কথোপকথন মনসুরের কানে আসলো। কি স্ট্যাটাস দেওয়া যায় তা নিয়েই আলাপচারিতা চলছে। গ্রুপটির একেক সদস্য একেক আইডিয়া দিচ্ছে।ওদের কথা শুনে মনে মনে হাসলো মনসুর;ভাবল যদি বাংলাদেশ আজকে হারে তাহলে এদের কি অবস্থা হবে। মনসুর বাংলাদেশ এর জেতার সম্ভাবনা তেমন একটা দেখছেনা। এরই মধ্যে মনসুরএর পাশে এসে বসল মনসুর এর ডিপার্টমেন্ট এরই নজরুল। নজরুলকে দেখে এফবি অফ করে মোবাইল পকেটে ঢুকাল মনসুর। নজরুল এর সামনে বসে সেজুতি এর সাথে চ্যাঁট করার কোন মানে হয় না। দেখলেই হাজারটা প্রশ্ন করবে।
“কিরে ব্যাটা, আজকে জিতে ভারতের দাদাদের বুঝিয়ে দিতে হবে আমরা আসলে কি জিনিষ! দাদারা আমাগো লইয়া বহুত মজা করে, ট্রল করে। এগুলি আর সহ্য হইতাছেনা” মুখ খুলল নজরুল।
“আমি তো ভারতকেই ফেভারিট দেখতেছি, তার উপর টসটাও হারলাম। আর আমরা ওদের সাথে ২-৩ টা ম্যাচ জিতেই যে অবস্থা করি!! আমার তো মনে হয় কিছু পোলাপান আসলে খেলা দেখে বিপরীত দলের প্লেয়ার এবং সমর্থকদের গালিগালাজ এবং ওদের নিয়া ট্রল করার জন্য, দলের খেলা দেখার জন্য না!”-খানিকটা শীতল কণ্ঠে বলল মনসুর।এফবি এর স্ট্যাটাসগুলি পড়ে এমনিই বেশ বিরক্ত ছিল মনসুর তার উপর নজরুলের কথা শুনে মেজাজ ধরে রাখতে পারলনা মনসুর।
- “ধুর হালা!তোর লগে কথা কইয়া কোন লাভই নাই, সবসময় খালি উল্টা কথা কস” বিরক্ত হল নজরুল।
এই প্রসঙ্গে মনসুর আর কথা বাড়ালনা। মেজাজ সামান্য চড়ে গেছে মনসুর এর। মনসুর খেলায় মনোযোগ দিল। বাংলাদেশ এর অবস্থা তেমন একটা সুবিধাজনক নয়। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাচ্ছে। ফলে রানের গতির মোমেন্টাম বলতে যা বুঝায় তা ঠিক থাকছেনা। সাব্বিরই এখন ভরসা। একেকজন আউট হওয়া বা বল মিস করার সাথে সাথে রুমের একেকজনের বিশ্লেষণী মন্তব্য কানে আসছে মনসুর এর। কারোরটা ঠিক মনে হচ্ছে কারোরটা নয়। কিন্তু এখানে খেলোয়ারদের নিয়ে করা বাজে মন্তব্য বা কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাদের গালমন্দ করার বিষয়টা ঠিক সহ্য করতে পারেনা মনসুর। খেলার পাশাপাশি নজরুল এর সাথেও টুকটাক কথা চালিয়ে যেতে লাগল মনসুর। মিরাজ এর ঝড়ো ছোট ইনিংস এর কল্যাণে একটা ভাল স্কোর বাংলাদেশ পেয়েছে।
ভারতের ইনিংস এর শুরুটা হল চমৎকার। রুমের কেউ কেউ তখন আলোচনা করছে কত ওভার এর মধ্যে ভারত খেলা শেষ করবে। কেউবা আক্ষেপ করা শুরু করল এই বলে যে নাহ এইবারও ভারতকে ধরা গেলনা। কেউবা বোলিং পরিবর্তন বা দল নির্বাচন ঠিক হয়নি বলে আলোচনা করতে লাগল। এরই মধ্যে গাভাস্কার তার নাগিন ডান্স দিলেন। পুরো রুম জুড়ে তাকে নিয়ে শুরু হয়ে গেল খিস্তি খেউর। “এই জন্যই শালাদেরকে ঠিক দেখতে পারিনা আমি। দেখছস শালায় এইটা কি করল” ঝাঁঝিয়ে উঠল নজরুল। ক্ষোভ মনসুর এর মনে থাকলেও মনসুর তারস্বভাবসুলভ উল্টো কথাই বলল, “বাংলাদেশ না বলে আজকে ভারতের কি না কি কইরা ফালায়, কিছুই তো করতে পারতেছেনা। আর অন্যরে নিয়ে মজা করতে চাইলে অন্যের করা মজাও তো হজম করা চাই।” তবে গাভাস্কারের নাগিন ডান্স দেওয়ার পর থেকেই খেলায় বাংলাদেশ ফেরত আসা শুরু করেছে। উইকেট গেল এবং রান রেটটাও নিয়ন্ত্রনে এসেছে। রুমের আওয়াজ এখন অনেকটাই কমে এসেছে। সবার মনে থাকাআলোচনা,পর্যালোচনা খেলার টানটানউত্তেজনার কাছে ম্লান হয়ে গেল। সবার উন্মুখ দৃষ্টি এখন টিভি পর্দায়। মুস্তাফিজের ওভার এর পরপর যেন পুরো রুম তার বাকশক্তি ফিরে পেল । মুস্তাফিজকে নিয়ে স্তুতিবাক্য রচনায় একেকজন অন্যজনকে হার মানাচ্ছে। মনসুর চুপচাপ খেলা দেখতে লাগল। এর আগেও এরকম অবস্থা থেকে হেরে যাওয়ার অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের আছে, মনে মনে একথা ভাবতে না ভাবতেই ওভার এর প্রথম বলে ছক্কা খেল রুবেল!
খেলার শেষবল। ৫ রান বাকি। মনসুর এর মনে হচ্ছিল ছক্কাই খাবে বাংলাদেশ। কুফা কাটানোর জন্য মুখে কথাটি বলল মনসুর,“আমার মনে হচ্ছে ছক্কা খাবে”। মনসুরের কথাটি জন্য আশির্বাদ হয়ে গেল কার্তিক এঁর ব্যাটে। ছয় !!!! আক্ষেপে ফেটে পড়ল নজরুল, “তুই ব্যাটা কুফা, তুই শালা আজকে বাংলাদেশ ছিলি না ভারত ছিলি আমি বুঝতাছিনা”। পুরো রুম এতক্ষন প্রায় নিস্তব্ধ ছিল। খেলা শেষে সবাই আবার কথা ফিরে পেল। খেলার উত্তেজনায় যারা এতক্ষন রুবেলকে গালি দিতে পারছিলনা তারা এখন শুরু করল।
খেলা শেষ হয়েছে মিনিট পনের এর মত হয়েছে। আলোচনা চলছেই। এটা ঠিক হয়নি ওটা ঠিক হয়নি। চুলচেরা বিশ্লেষণ আর সাথে চলছে কিছু খেলোয়াড় এর চৌদ্দগুষ্ঠি উদ্ধার। আজকে তেমন একটা মন খারাপ হয়নি মনসুর এর।খেলার আগে এবং খেলা চলাকালীন সময়ে অনেকের বক্তব্য মনসুর এর পছন্দ না হওয়াটা কি আজকের খেলা নিয়ে উল্টো কোন প্রতিক্রিয়া মনসুর এর মনে তৈরি করেছিল? হয়ত মনে মনে মনসুর নিজেই চাচ্ছিল যে আজ বাংলাদেশ হেরে যাক! মনসুর ভাবতে লাগলো। ভাত না খাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় যাওয়ার তেমন কোন তাড়া নেই ওর,এখনও টিভি রুমেই আছে ও। পরে রুমে গিয়ে কলা পাউরুটি খেয়ে নিলেই হবে সে। নজরুল চলে গেছে।
এফবিতে এবং টিভি রুমের মানুষজনের প্রতিক্রিয়া দেখে মনে হচ্ছে বাংলাদেশ হেরে যাওয়ার চেয়ে গাভাস্কারকে উচিত শিক্ষা দিতে না পারাটাই তাদের বেশি পোড়াচ্ছে। আচ্ছা এখন যদি মনসুর স্ট্যাটাস লিখে যে ‘সাপুড়ের কাছে সাপের পরাজয় হল’তাহলে কেমন হয়? মানুষজনের তোপের মুখে পরতে হবে ওকে। হয়ত নব্য রাজাকার উপাধিও জুটতে পারে। এই যে একটু আগে নজরুল! সেও কিন্তু একটু আগে সংশয় প্রকাশ করে গেল আসলে মনসুর কোন দলে ছিল তা নিয়ে। ব্যপারটা এমন যে বিপক্ষকে যে যত বেশি ছোট করতে পারবে সেই তত ভাল সাপোর্টার। আর দিন শেষে খেলাটা খেলোয়াড়রাই খেলে। কে কখন কি পারফর্মেন্স করবে তা যদি দর্শক কি চাইছে কি বলছে তার উপর নির্ভর করত তাহলে ভারত ছাড়া আর কোন দলেরই কোন কালে কোন ট্রফি জেতা হত না। রুম এর চারপাশে একবার চোখ বুলাল মনসুর। প্রায় খালি হয়ে গিয়েছে। রুমের পেছনদিকটাতে এখন কেউই নেই। ফেনগুলি ঘুরছে। মনসুর এর সামনের দিকে থাকা ৪-৫ জনের সর্বশেষ গ্রুপটি বাইরের দরজার দিকে পা বাড়াল। খেলোয়াড়দের ঠিক ভুলের হিসেব করতে থাকা সবাই রুম থেকে চলে গেল।
নাহ ঐ স্ট্যাটাস দেওয়াটা উচিত হবে না মনে মনে ভাবল মনসুর। এফবি বন্ধ করে মোবাইলটা পকেটে ঢুকাতে ঢুকাতে নিরলসভাবে চলতে থাকা বাতি আর ফেনগুলির সুইচগুলির দিকে পা বাড়াল মনসুর।বেশ আগে এসেই হলের টিভি রুম এ এসে বসল মনসুর। খেলা শুরু হতে এখনও প্রায় মিনিট পঞ্চাশের মত বাকি। আজ বাংলাদেশের ফাইনাল ম্যাচ;ভারতের বিপক্ষে। এই ম্যাচকে ঘিরে প্রায় পুরো দেশেই একধরনের উত্তেজনা কাজ করছে। মনসুর একজন ক্রিকেটপ্রেমি হিসেবে নিজেও আজকের ম্যাচ নিয়ে বেশ উত্তেজিত। খুব সাধারণত বাংলাদেশের কোন ক্রিকেট ম্যাচই ও ঠিক বাদ দেয় না অন্য কোন জরুরি কাজ না থাকলে। আর আগেভাগে না আসলে আজকে রুম এ সিট পাওয়া যাবে না নিশ্চিত জেনেই এত আগে আসতে হল ওকে।

সময়টা কিভাবে পার করবে তাওঠিক করেই এসেছে মনসুর। মোবাইল এর চার্জ প্রায় ফুল করে রেখেছে; ১০০ টাকাও মাত্র রিচার্জ করে আনল সে। ইন্টারনেট প্যাক সাবস্ক্রাইব করেই এফবিতে লগইন করল মনসুর। ফেসবুক ইতোমধ্যেই বেশ চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। সিংহভাগ স্ট্যাটাসই আজকের খেলা নিয়ে। “ আজকে শুধুই নাগিন ডান্স হবে!”, “ আজকে ভালতকে হারিয়ে বিশ্বকাপ এর প্রতিশোধ আমরা নিবোই” ; “ মন বলতেছে আজকে ভাল কিছু হবে, আল্লাহই ভরসা” কিংবা “ আজ এক ঢিলে দুই পাখি মারব। হারাব ভারতকে, হারবে ভারত এবং শ্রীলঙ্কা দুইটাই”। খেলা শুরুর আগেই এইসব কাণ্ড দেখলে বাড়াবাড়ি বলেই মনে হয় মনসুর এর কাছে। আরে বাপ! ওয়ানডেতে নাহয় বাংলাদেশের কিছু সাফল্য আছে, আর ওয়ানডেতে আমরা এখন মোটামোটি ধারাবাহিকভাবে ভালই খেলছি কিন্তু টি২০ তে!! এই ফরম্যাট এ তো আমাদের বলার মত কিছুই নেই। এমনকি আজকে যে ভারতের সাথে আমাদের খেলা তাদেরকেও এই ফরম্যাট এ আমাদের হারানোর কোন অভিজ্ঞতা নেই। এতেই আমাদের দর্শকদের যে হামবড়া ভাব, যে অহমিকা তাতে মাঝে মাঝেই বেশ বিরক্ত হয় মনসুর। আমরা কোহলি এর নামের আগে প্রায়ই বেআদব শব্দটি লাগিয়ে দেই, ভারতের দর্শকদের সবচেয়ে নিকৃষ্ট বলে দাবি করি। কোহলি এর মত পারফর্মেন্স এবং বর্তমান ভারতের মত যদি আমাদের দলের পারফর্মেন্স হত তাহলে আমাদের দর্শকরা ভারতকে এই বেআদবির দিক থেকে বহুগুণে ছাড়িয়ে যেত বলেই মনসুরের ধারণা।
ইতোমধ্যে টস ভাগ্য বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গেলো। ভারত টসে জিতে ফিল্ডিং নিল। টিভি রুমটিও প্রায় পূর্ণ হয়ে এসেছে।পুরো রুমটিই এখন ছেলেদের কথায় গমগম করছে। অদূরে বসা কয়েকটা ছেলের মধ্যকার কথোপকথন মনসুরের কানে আসলো। কি স্ট্যাটাস দেওয়া যায় তা নিয়েই আলাপচারিতা চলছে। গ্রুপটির একেক সদস্য একেক আইডিয়া দিচ্ছে।ওদের কথা শুনে মনে মনে হাসলো মনসুর;ভাবল যদি বাংলাদেশ আজকে হারে তাহলে এদের কি অবস্থা হবে। মনসুর বাংলাদেশ এর জেতার সম্ভাবনা তেমন একটা দেখছেনা। এরই মধ্যে মনসুরএর পাশে এসে বসল মনসুর এর ডিপার্টমেন্ট এরই নজরুল। নজরুলকে দেখে এফবি অফ করে মোবাইল পকেটে ঢুকাল মনসুর। নজরুল এর সামনে বসে সেজুতি এর সাথে চ্যাঁট করার কোন মানে হয় না। দেখলেই হাজারটা প্রশ্ন করবে।
“কিরে ব্যাটা, আজকে জিতে ভারতের দাদাদের বুঝিয়ে দিতে হবে আমরা আসলে কি জিনিষ! দাদারা আমাগো লইয়া বহুত মজা করে, ট্রল করে। এগুলি আর সহ্য হইতাছেনা” মুখ খুলল নজরুল।
“আমি তো ভারতকেই ফেভারিট দেখতেছি, তার উপর টসটাও হারলাম। আর আমরা ওদের সাথে ২-৩ টা ম্যাচ জিতেই যে অবস্থা করি!! আমার তো মনে হয় কিছু পোলাপান আসলে খেলা দেখে বিপরীত দলের প্লেয়ার এবং সমর্থকদের গালিগালাজ এবং ওদের নিয়া ট্রল করার জন্য, দলের খেলা দেখার জন্য না!”-খানিকটা শীতল কণ্ঠে বলল মনসুর।এফবি এর স্ট্যাটাসগুলি পড়ে এমনিই বেশ বিরক্ত ছিল মনসুর তার উপর নজরুলের কথা শুনে মেজাজ ধরে রাখতে পারলনা মনসুর।
- “ধুর হালা!তোর লগে কথা কইয়া কোন লাভই নাই, সবসময় খালি উল্টা কথা কস” বিরক্ত হল নজরুল।
এই প্রসঙ্গে মনসুর আর কথা বাড়ালনা। মেজাজ সামান্য চড়ে গেছে মনসুর এর। মনসুর খেলায় মনোযোগ দিল। বাংলাদেশ এর অবস্থা তেমন একটা সুবিধাজনক নয়। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাচ্ছে। ফলে রানের গতির মোমেন্টাম বলতে যা বুঝায় তা ঠিক থাকছেনা। সাব্বিরই এখন ভরসা। একেকজন আউট হওয়া বা বল মিস করার সাথে সাথে রুমের একেকজনের বিশ্লেষণী মন্তব্য কানে আসছে মনসুর এর। কারোরটা ঠিক মনে হচ্ছে কারোরটা নয়। কিন্তু এখানে খেলোয়ারদের নিয়ে করা বাজে মন্তব্য বা কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাদের গালমন্দ করার বিষয়টা ঠিক সহ্য করতে পারেনা মনসুর। খেলার পাশাপাশি নজরুল এর সাথেও টুকটাক কথা চালিয়ে যেতে লাগল মনসুর। মিরাজ এর ঝড়ো ছোট ইনিংস এর কল্যাণে একটা ভাল স্কোর বাংলাদেশ পেয়েছে।
ভারতের ইনিংস এর শুরুটা হল চমৎকার। রুমের কেউ কেউ তখন আলোচনা করছে কত ওভার এর মধ্যে ভারত খেলা শেষ করবে। কেউবা আক্ষেপ করা শুরু করল এই বলে যে নাহ এইবারও ভারতকে ধরা গেলনা। কেউবা বোলিং পরিবর্তন বা দল নির্বাচন ঠিক হয়নি বলে আলোচনা করতে লাগল। এরই মধ্যে গাভাস্কার তার নাগিন ডান্স দিলেন। পুরো রুম জুড়ে তাকে নিয়ে শুরু হয়ে গেল খিস্তি খেউর। “এই জন্যই শালাদেরকে ঠিক দেখতে পারিনা আমি। দেখছস শালায় এইটা কি করল” ঝাঁঝিয়ে উঠল নজরুল। ক্ষোভ মনসুর এর মনে থাকলেও মনসুর তারস্বভাবসুলভ উল্টো কথাই বলল, “বাংলাদেশ না বলে আজকে ভারতের কি না কি কইরা ফালায়, কিছুই তো করতে পারতেছেনা। আর অন্যরে নিয়ে মজা করতে চাইলে অন্যের করা মজাও তো হজম করা চাই।” তবে গাভাস্কারের নাগিন ডান্স দেওয়ার পর থেকেই খেলায় বাংলাদেশ ফেরত আসা শুরু করেছে। উইকেট গেল এবং রান রেটটাও নিয়ন্ত্রনে এসেছে। রুমের আওয়াজ এখন অনেকটাই কমে এসেছে। সবার মনে থাকাআলোচনা,পর্যালোচনা খেলার টানটানউত্তেজনার কাছে ম্লান হয়ে গেল। সবার উন্মুখ দৃষ্টি এখন টিভি পর্দায়। মুস্তাফিজের ওভার এর পরপর যেন পুরো রুম তার বাকশক্তি ফিরে পেল । মুস্তাফিজকে নিয়ে স্তুতিবাক্য রচনায় একেকজন অন্যজনকে হার মানাচ্ছে। মনসুরচুপচাপ খেলা দেখতে লাগল। এর আগেও এরকম অবস্থা থেকে হেরে যাওয়ার অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের আছে, মনে মনে একথা ভাবতে না ভাবতেই ওভার এর প্রথম বলে ছক্কা খেল রুবেল!
খেলার শেষবল। ৫ রান বাকি। মনসুর এর মনে হচ্ছিল ছক্কাই খাবে বাংলাদেশ। কুফা কাটানোর জন্য মুখে কথাটি বলল মনসুর,“আমার মনে হচ্ছে ছক্কা খাবে”। মনসুরের কথাটি জন্য আশির্বাদ হয়ে গেল কার্তিক এঁর ব্যাটে। ছয় !!!! আক্ষেপে ফেটে পড়ল নজরুল, “তুই ব্যাটা কুফা, তুই শালা আজকে বাংলাদেশ ছিলি না ভারত ছিলি আমি বুঝতাছিনা”। পুরো রুম এতক্ষন প্রায় নিস্তব্ধ ছিল। খেলা শেষে সবাই আবার কথা ফিরে পেল। খেলার উত্তেজনায় যারা এতক্ষন রুবেলকে গালি দিতে পারছিলনা তারা এখন শুরু করল।
খেলা শেষ হয়েছে মিনিট পনের এর মত হয়েছে। আলোচনা চলছেই। এটা ঠিক হয়নি ওটা ঠিক হয়নি। চুলচেরা বিশ্লেষণ আর সাথে চলছে কিছু খেলোয়াড় এর চৌদ্দগুষ্ঠি উদ্ধার। আজকে তেমন একটা মন খারাপ হয়নি মনসুর এর।খেলার আগে এবং খেলা চলাকালীন সময়ে অনেকের বক্তব্য মনসুর এর পছন্দ না হওয়াটা কি আজকের খেলা নিয়ে উল্টো কোন প্রতিক্রিয়া মনসুর এর মনে তৈরি করেছিল? হয়ত মনে মনে মনসুর নিজেই চাচ্ছিল যে আজ বাংলাদেশ হেরে যাক! মনসুর ভাবতে লাগলো। ভাত না খাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় যাওয়ার তেমন কোন তাড়া নেই ওর,এখনও টিভি রুমেই আছে ও। পরে রুমে গিয়ে কলা পাউরুটি খেয়ে নিলেই হবে সে। নজরুল চলে গেছে।
এফবিতে এবং টিভি রুমের মানুষজনের প্রতিক্রিয়া দেখে মনে হচ্ছে বাংলাদেশ হেরে যাওয়ার চেয়ে গাভাস্কারকে উচিত শিক্ষা দিতে না পারাটাই তাদের বেশি পোড়াচ্ছে। আচ্ছা এখন যদি মনসুর স্ট্যাটাস লিখে যে ‘সাপুড়ের কাছে সাপের পরাজয় হল’তাহলে কেমন হয়? মানুষজনের তোপের মুখে পরতে হবে ওকে। হয়ত নব্য রাজাকার উপাধিও জুটতে পারে। এই যে একটু আগে নজরুল! সেও কিন্তু একটু আগে সংশয় প্রকাশ করে গেল আসলে মনসুর কোন দলে ছিল তা নিয়ে। ব্যপারটা এমন যে বিপক্ষকে যে যত বেশি ছোট করতে পারবে সেই তত ভাল সাপোর্টার। আর দিন শেষে খেলাটা খেলোয়াড়রাই খেলে। কে কখন কি পারফর্মেন্স করবে তা যদি দর্শক কি চাইছে কি বলছে তার উপর নির্ভর করত তাহলে ভারত ছাড়া আর কোন দলেরই কোন কালে কোন ট্রফি জেতা হত না। রুম এর চারপাশে একবার চোখ বুলাল মনসুর। প্রায় খালি হয়ে গিয়েছে। রুমের পেছনদিকটাতে এখন কেউই নেই। ফেনগুলি ঘুরছে। মনসুর এর সামনের দিকে থাকা ৪-৫ জনের সর্বশেষ গ্রুপটি বাইরের দরজার দিকে পা বাড়াল। খেলোয়াড়দের ঠিক ভুলের হিসেব করতে থাকা সবাই রুম থেকে চলে গেল।
নাহ ঐ স্ট্যাটাস দেওয়াটা উচিত হবে না মনে মনে ভাবল মনসুর। এফবি বন্ধ করে মোবাইলটা পকেটে ঢুকাতে ঢুকাতে নিরলসভাবে চলতে থাকা বাতি আর ফেনগুলির সুইচগুলির দিকে পা বাড়াল মনসুর।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১২:২৫
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিনেতা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৫



বলতে, আমি নাকি পাক্কা অভিনেতা ,
অভিনয়ে সেরা,খুব ভালো করবো অভিনয় করলে।
আমিও বলতাম, যেদিন হবো সেদিন তুমি দেখবে তো ?
এক গাল হেসে দিয়ে বলতে, সে সময় হলে দেখা যাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×