somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমি দুখিঃত সম্মানিত প্রাইভেট কার চালক এবং আমার ছোট্ট আপু'মনি.....

১৪ ই মার্চ, ২০১৪ সকাল ১০:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গতকাল আমি আমার একজন অতি কাছের আত্মীয় রোগীর ম্যাডিকেল টেষ্টের রিপোর্ট আনার জন্য বিকেল বেলা পান্থপথে অবস্থিত একটি হাসপাতালে যাচ্ছিলাম। রাস্তায় বের হয়েই দেখি প্রচন্ড রকমের ট্রাফিক জ্যাম। মানুষের কাছে জানতে পারলাম টি২০ বিশ্বকাপের একটি ইভেন্টের জন্য প্রায় অনেক রাস্তায়ই নিরাপত্তা জনিত ব্যারিকেডের কারনে সৃষ্ট জটিলতা থেকে এই ট্রাফিক জ্যাম। অগত্যা কিছু আর করার ছিলনা ম্যাডিকেলে যাওয়া ব্যতীত। তাই বাধ্য হয়েই এই প্রচন্ড জ্যামের মধ্যেই পথ চলতে শুরু করলাম।

১।

আমি তখন গুলিস্তান মাজারের নিকট পৌছালাম। উদ্দেশ্য সেখান থেকে নিউমার্কেটগামী লেগুনাতে উঠে নিউমার্কেট গিয়ে সেখান থেকে ফার্মগেটগামী লেগুনাতে করে পান্থপথে যাওয়া। তো জ্যামের কারনে কোন গাড়ি গুলিস্তান আসতেও পারছিলনা এমনকি যারা এসেছিল তারা যেতেও পারছিলনা। তাই আবারও হাটতে থাকলাম। তখন দেখি একটি ছেলে ২৪/২৫ বছর হবে, একটি বাসের পিছনে পিছনে দৌড়াচ্ছে। আমি সেদিকে খেয়াল না করে হাটতে থাকলাম। কিন্তু বাসটি যখন নগর ভবনের সামনে এসে আবারও জ্যামের কারনে থেকে গেল তখন দেখলাম ছেলেটি বাসের ড্রাইভারের সাথে কথা কাটাকাটি করছে। পথচারীরা সেদিকে তাকিয়েই আবার যার যার পথে চলেযাচ্ছে। আমিও যাচ্ছিলাম। পরে আবার কি যেন ভেবে ঘটনাস্থলে গেলাম।

সেখানে গিয়ে শুনতে পেলাম ছেলেটি এই বাসটি জ্যামের কারনে তাড়াতাড়ি চলতে গিয়ে প্রাইভেট কারের লুকিং গ্লাস এবং গাড়িটির বডির কিছু ক্ষতি করেছে। তো ছেলেটি চাচ্ছিল তার ক্ষতিপুরণ আদায় করতে অন্যথায় তার চাকরী চলে যাবে। কিন্তু বাসের চালক তো ক্ষতিপুরণ দিবেই না বরং সে এবং বাসের ভিতরে বসে থাকা যাত্রী সাধারণ অনেক ক্ষেপে ছিল প্রাইভেট কার এর চালকের উপর। কারণ, সে এই জ্যামের মধ্যেও গাড়ি চলতে বাধার সৃষ্টি করছে। যাই হোক আমি এবং আরো দু/তিন জন পথচারী মিলে বাসের চালকের কাছ থেকে ছেলেটিকে ৫০০ টাকা আদায় করে দিয়েছিলাম। কিন্তু ছেলেটি তাতে সন্তুষ্ট হতে পারেনি। উপরন্তু আমি তার চোখে-মুখে মালিকের বকুনির ভয় এবং চাকুরী চলে যাওয়ার অনিশ্চয়তার ছাপ লক্ষ্য করলাম। আমার হৃদয়ের গভীরে ব্যথা অনুভব করলাম এবং চোখ দুটো বোবা কান্নায় ভরে গেল ছেলেটির এই অসহায়ত্ব দেখে।

২।

চানখার পুল এসে ধামরাইগামী একটি বাসে উঠলাম নিউমার্কেট যাওয়ার জন্য। তো জ্যামের কারনে বাস চলছে তো চলছে না। একটু সামনে এগুতেই দেখলাম অনেকগুলো লোক জোর করে বাসে উঠতে চাচ্ছে তাদের গন্তব্যে যাওয়ার জন্য। কিন্তু হেলপার কোন লোকাল যাত্রী উঠাতে চাচ্ছে না। এরই মধ্যে দেখলাম একটি মেয়ে হেলপারকে টেনে হিচড়ে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিল তাকে উঠতে না দেয়াতে। আমরা তখন যারা বাসে ছিলাম বুঝতে পারিনি মেয়েটি কেন এমন করছে। হেলপার মেয়েটিকে ধাক্কা দিয়ে গাড়িতে উঠে গেল। মেয়েটি আবার দৌড়ে এসে হেলপারকে আবারও টেনে হিচড়ে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিল এবং বাসে উঠানোর জন্য তাকে চিতকার করে বকাবকি করতে লাগলো। পরে আমরা যারা বাসের ভিতরে ছিলাম তারা হেলপারকে বকাবকি করাতে সে মেয়েটিকে উঠতে দিল।

মেয়েটি বাসে উঠতেই এমন করলো কেন জানতে চাইলে সে বলতে লাগলো "" সে একজন ছাত্রী, এখানে প্রতিদিনই আসে টিউশনি করার কারনে। কিন্তু কোন বাসই তাকে উঠাতে চায়না মেয়ে বলে। কারণ বাসের ভিতরে জায়গা নেই। কিন্তু আগামীকাল তার পরীক্ষা তাই তাকে যেতেই হবে তাড়াতাড়ি। কিন্তু রিক্সায়ও যেতে পারছেনা কারণ সে টিউশনি করে খুব সামান্যই বেতন পায়।"" এই কথাগুলো বলার সময় আমি লক্ষ্য করলাম মেয়েটি ভেতর থেকে ডুকরে ডুকরে কেদে ওঠছে কিন্তু প্রকাশ করতে পারছে না। আমার ভিতরটাও কেন জানি কান্নায় ভরে গেল মেয়েটির কথাগুলো শুনতে শুনতে আবার এটাও চিন্তা করে যে, আমারও একটি ছোট্ট বোন আছে এবং সেও রিক্সায় অথবা বাসে করেই কলেজে যাতায়াত করে থাকে প্রতিদিন।

আমি জানি গতকালের এই ঘটনাগুলো আমাদের প্রাত্যাহিক জীবনের ঘটনা এবং প্রতিটি নাগরিকই এই সব দৃশ্যের সাথে খুবই ভালোভাবে পরিচিত।

তারপরেও গতকাল এই দৃশ্যগুলো দেখে আমি এতোটাই কষ্ট পেয়েছি যে, আমার হৃদয়ের রক্তক্ষরণ যেন এখনও থামতেই চাইছে না।

অথচ এই সমস্যগুলো কোন সমস্যাই না যদি কেউ এদিকে একটু খেয়াল করেন। আর এই সমস্যাগুলো কি বাড়তেই থাকবে নাকি এগুলো নরিসনের জন্য প্রশাসন নামক যন্ত্রটি সচল হবে। জানিনা।

আমি আবারও আমার সেই প্রাইভেট কার চালক ভাইটির প্রতি এবং আমার ছোট্ট আপু'মনির প্রতি গভীর আদর আর স্নেহভরা ভালোবাসা জানিয়েই এই ধরনের সমস্যার আশু সমাধান কামনা করছি।

ধন্যবাদ।





২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×