somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বর্ষার প্রথম দিনে

১৫ ই জুন, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

‘কেতকী-কদমে, যূথিকা-কুসুমে, বরষায় গাঁথো মালিকা

পথে অবিরল ছিটাইয়া জল, খেলো চঞ্চলা বালিকা।’

(কাজী নজরুল ইসলাম)

চঞ্চল বালিকার মতোই এভাবে বাংলার ঘরে প্রবেশ করে আষাঢ়। প্রথম মানেই বিশেষ, প্রথম মানেই চাঞ্চল্যকর এক অনুভূতি। আষাঢ়ের প্রথম দিনটিও তেমনি আশা-নিরাশার বার্তা নিয়ে আমাদের দ্বারে সমাগত। সবুজ বনানীতে বৃষ্টির ফোঁটা প্রত্যক্ষ করা মাত্র কানে ঝংকৃত হয়-

‘একি অপরূপ রূপে মা তোমায় হেরিনু পল্লী জননী,

ফুলে ও ফসলে, কাদা-মাটি জলে, ঝলমল করে লাবণী।’

(কাজী নজরুল ইসলাম)

আষাঢ়ের প্রথম দিনটি আমাদের মনরাজ্যে যেমন পরিবর্তনের ছোঁয়া লাগায়, তেমনি কৃষিনির্ভর বাঙালি জননীর মাঠে মাঠে থৈ থৈ পানির নৃত্য, শিহরণ জাগায় ফসলের পাতায় পাতায়। গ্রাম্য বালক-বালিকার বৃষ্টির গান-

‘দেয়ারে তুমি অঝোরে অঝোরে নামো,

দেয়ারে তুমি নিষালে নিষালে নামো,

দেয়ারে তুমি অডিশাল বদনে ঢলিয়া পড়।’ (নক্সীকাঁথার মাঠ)

প্রাপ্তির চূড়ান্তে এসে ধরা দেয় বর্ষার প্রথম বর্ষণে। শ্যামল গ্রামাঞ্চল সজীবতায় হয়ে ওঠে পরিপূর্ণ। শাপলা, শালুকে ভরে ওঠে পল্লীর জলাশয়। মেঘের ঘনঘটা হারানো শৈশবকে করে তোলে জাগরিত। শৈশবের কত খেলা মনে দোলা দিয়ে যায়-

‘মেঘের খেলা দেখে কত খেলা পড়ে মনে,

কত দিনের লুকোচুরি কত ঘরের কোণে!’

(রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)

প্রেমাকুল মন বর্ষার মৃদু মধুর আবহাওয়ায় অনুভব করে প্রিয়ের প্রতি তীব্র আকর্ষণ। রাধার আকুলতায় ফুটে ওঠে তীব্র যাতনার প্রতিচ্ছবি-

‘কুলিশ শতশত পাত মোদিত/ময়ূর নাচত মাতিয়া,

মত্ত দাদুরী, ডাকে ডাহুকী/ফাটি যায়ত ছাতিয়া।’

(বিদ্যাপতির পদ; বৈষ্ণব পদাবলী)

আবার বিচ্ছেদের যাতনা বুকে ধারণ করে বর্ষাস্নাত দিনে হৃদয়ের গভীর থেকে হারানো প্রিয়র জন্য আকুল বেদনা অনুভব করে প্রিয়ার মন বলে- ‘যদিও তখন বাতাস থাকবে বৈরী, কদমগুচ্ছ হাতে নিয়ে আমি তৈরী,/...চলে এসো, তুমি চলে এসো, এক বরষায় যদি মন কাঁদে।’ (হুমায়ূন আহমেদ)

বৃষ্টির অপূর্ব ঝংকার ক্লান্ত মনকেও করে তোলে সজীব, মৃত প্রাণে ছোঁয়ায় অমৃতের সঞ্জীবনী! বন্ধ চার দেয়াল থেকে মন চায় ছুটে যেতে বৃষ্টিভেজা দিগন্তের পানে। অস্থির, চঞ্চল মনকে বেঁধে রাখা হয়ে ওঠে অসাধ্য। গানের সুরে তারই আভাস-

‘আজি ঝরঝর মুখর বাদর দিনে/জানি নে জানি নে, কিছুতে কেন যে মন লাগে না।

এই চঞ্চল সজল পবন বেগে উদ্ভ্রান্ত মেঘে, মন চায়/ ওই বলাকার পথখানি নিতে চিনে।’

(রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)

কখনো আবার, বৃষ্টির সুর মনকে টেনে নিয়ে চলে হারানো-পুরোনো গানের জগতে। জমিয়ে রাখা অভিমানের স্ফুরণে শান্ত হতে চায় অতীতচারী হৃদয়। বহু সাধের অভিমানী কান্নার লক্ষণটুকু মুছে না ফেলার অনুরোধে আবেগি হয়ে ওঠে অভিমানি নারীমন। পুরোনো দিনের গান স্মরণ করিয়ে দেয় তার অভিমানের বেলা-

‘ওগো বৃষ্টি আমার চোখের পাতা ছুঁইও না / আমার এত সাধের কান্নার দাগ ধুইও না।

সে যেন এসে দেখে পথ চেয়ে তার কেমন করে কেঁদেছি।’

বৃষ্টিধারার সঙ্গে কেবল অভিমান নয়, জীবনের গ্লানিকেও মুছে ফেলার প্রত্যাশা ব্যক্ত করে মানবমন। প্রতিদিনের পাপ আর গ্লানিকে ধুয়ে ফেলতে বৃষ্টি তাই প্রত্যাশিত হয়ে ওঠে সবার কাছে, যা কেবল মনকেই নয় পরিশুদ্ধ করে তুলবে গ্লানিময় পঙ্কিল পৃথিবীর দিকদিগন্ত। দিকে দিকে তাই যেন বৃষ্টিকে স্বাগত জানানোর কলরোল ধ্বনিত হয়-

‘একবার বৃষ্টি হোক, অবিরাম বৃষ্টি হোক/ উষর জমিনে,

নিরীহ রক্তের দাগ মুছে নিক জলের প্লাবন,

মুছে নিক পরাজিত ব্যর্থ বাসনার গান, গ্লানির পৃথিবী।’

(রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ)

ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত আমাদের নগর জীবনের একঘেয়েমিকে কাটিয়ে উঠতে আষাঢ়ের বর্ষণের জুড়ি নেই। অতিষ্ঠ একঘেয়ে নগর জীবনে একফোঁটা বৃষ্টি যেন জীবনের দুদণ্ড শান্তি। বৃষ্টিমুখর একটি দিন যেন ক্ষয়ে যাওয়া ব্যস্ত নাগরিক জীবনের অমূল্য প্রাপ্তি। তবে নগরকেন্দ্রিক ব্যবস্থাপনার জটিলতা ও আমাদের উদাসীনতা অপূর্ব বর্ষাকেও করে তোলে দুর্বিষহ। তাই বর্ষার অপূর্ব রূপ উপভোগ করতে ও আষাঢ়ের প্রথম দিনটিকে স্বাগত জানাতে আমরা যেমন তৎপর থাকি, তেমনি তৎপর আমাদের থাকা উচিত বৃষ্টি থেকে সৃষ্ট সমস্যাগুলোর সমাধানের বিষয়েও।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুন, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:১৬
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সকলের দায়িত্ব।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৮



এগুলো আমার একান্ত মতামত। এই ব্লগ কাউকে ছোট করার জন্য লেখি নাই। শুধু আমার মনে জমে থাকা দুঃখ প্রকাশ করলাম। এতে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দায়ী না। এখনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখনো নদীপারে ঝড় বয়ে যায় || নতুন গান

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২০

এ গানের লিরিক আমাকে অনেক যন্ত্রণা দিয়েছে। ২৪ বা ২৫ এপ্রিল ২০২৪-এ সুর ও গানের প্রথম কয়েক লাইন তৈরি হয়ে যায়। এরপর ব্যস্ত হয়ে পড়ি অন্য একটা গান নিয়ে। সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেতনার সময় জামায়াত বদ্ধ ইসলামী আন্দোলন ফরজ নয়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৮



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৩। তোমরা একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর! আর বিচ্ছিন্ন হবে না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর।যখন তোমরা শত্রু ছিলে তখন তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×