সঠিক মনে করতে পারছি না, তবে সম্ভবত ২০১০ সালে এসে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় সংগঠিত মানবতা বিরোধী অপরাধে জড়িত চিহ্নিত ব্যাক্তিদের বিচার প্রকিৃয়া শুরু হয়। এ দেশের আপামর জনাতা সে বিচার প্রকিৃয়াতে সর্মথন জানায়; বিশেষত তরুণরা। কিন্তু জনতার এই অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে ক্ষমতাসীনদের একটা অংশ তাদের যে কোন অপকর্ম আড়াল, বিরোধী মত দমন এবং রাষ্ট্রীয় কিংবা সমাজিক অন্যায়ের বিরুদ্ধে যে কোন যৌক্তিক প্রতিবাদ কিংবা সমালোচনাকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী, রাজাকার কিংবা স্বাধীনতা বিরোধী ইত্যাদি ট্যাগ দিয়ে দমন করতে চেয়েছে। অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধা, ক্ষমতাসীনদের মধ্যকার বিবেকবান অংশ এবং দেশের সচেতন মহল তখন থেকে এই রাজনৈতিক অপকৌশলের সমালোচনা করে আসছেন। তারা বরাবরই বলেছেন, যে কোন ইস্যুকে দমাতে ঢালাও রাজাকার কিংবা স্বাধীনতা বিরোধী ট্যাগ মুক্তিযুদ্ধের মতো গৌরবউজ্বল অধ্যায়কে খাটো করে। কিন্তু সচেতন মহলের এ কথা কানে তোলা হয়নি! এরমধ্যে জল বহুদূর গড়িয়েছে। একটা কথা আছে, 'মানুষের পিঠ যখন দেয়ালে ঠেকে যায়, তখন সে পাল্টা আঘাত করে।' রাজাকার ইস্যুটা ঠিক তেমনই হয়ে গেলো। কোটা সংস্কার আন্দোলনে এসে তারুণ্যের অনেকেই দাবি করে বসলো, "ইয়েস, আমি রাজাকার।" কিন্তু সে দাবির পিছনেও একটা কিন্তু ছিলো; আর সে কিন্তুটা হচ্ছে অন্যায় এবং বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করাতে তুমি যদি আমাকে রাজাকার বলো, তবে আমি রাজাকার। এখন তারুণ্যের দোষটা কোথায়? কিন্তু এতে করে চেতনার ব্যবসা করে আখের গোছানো এক শ্রেণীর লোক প্রচন্ড হতাশ হলো। তাদের এক মোক্ষম অপকৌশল মাঠে মারা গেলো। তাই এখন তারা নতুন মায়াকান্না জুড়ালো, 'তারুণ্য রাজাকারে মতো ঘৃণিত একটা শব্দকে আজ আপন করে নিয়েছে! ছি ছি ছিহহ!' কিন্তু এই চেতনাবাজ শ্রেণী একটা বিষয়কে খুব সচেতন ভাবে এড়িয়ে যাচ্ছে; কারা এমন প্রেক্ষাপট তৈরি করে প্রতিবাদের ভাষা হিসাবে রুপক অর্থে "আমি রাজাকার" কথাটি তারুণ্যকে ব্যবহারে বাদ্ধ করলো? পাশাপাশি এই জ্ঞানপাপীরা কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ইনিয়ে বিনিয়ে জনদুর্ভোগ সৃষ্টিকারী বলে প্রচার করে বিতর্কিত করতে চাইছে। কারন হিসাবে তুলে ধরছে ছাত্রদের সড়ক অবরোধকে! কিন্তু ভুলেও বলছে না, তারুণ্যের প্রানের দাবিকে কেন এখনো পরিপূর্ণ ভাবে মানা হচ্ছে না? ছাত্র সমাজ তো এ দফায় প্রায় চার মাস একরকম নিরীহ কর্মসূচি পালন করে এসেছে। তখন কি নীতিনির্ধাকরা পারতো না তারুণ্যের মনের আকুতি উপলব্ধি করতে? তা না করে বরং এ আন্দোলনে সহিংসতা চালিয়েছে রাষ্ট ও ক্ষমতাসীনরা; শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে ভিজিয়েছে রক্ত স্রোতে! তবু রাস্তা অবরোধ এখন ইস্যু! অথচ এই আন্দোলনের সময় ছাত্ররা কি ভাবে এম্বুলেন্স এবং অসুস্থ রুগীকে হাসপাতালে পৌছাতে সহায়তা করেছে, তার সচিত্র প্রতিবেদন জাতীয় দৈনিকগুলোর মাধ্যমেও মানুষ জেনেছে। কিন্তু জ্ঞানপাপী হিপোক্রেটরা এসব চোখে দেখবে না। কারন দালালী এবং চাটুকারিতার মাধ্যমে নিজের আখের গোছানো এবং জন-আকাঙ্খা বিরোধী এজেন্ডা বাস্তবায়নই এদের কাজ। এ জাতির দুর্ভাগ্য, টগবগে তরুণ হওয়া সত্বেও যারা গর্তের ভিতর লুকিয়ে ছিলো মুক্তি সংগ্রামের পুরোটা সময়; তাদের কাছ থেকে আমাদের আজ মুক্তিযুদ্ধের আবেগী বয়ান শুনতে হয়। আর যারা রনাঙ্গনে শুত্রুর বুলেটের মুখোমুখি দাড়িয়ে জীবন বাজি রেখে লড়েছে; তারা আজ অবহেলিত প্রতিটি ক্ষেত্রে! যুদ্ধের ময়দানের লড়াকু সৈনিকরা আজ জীবন যুদ্ধে পরাজিত; সমাজের প্রতিটি স্তরে কোনঠাসা!
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই মে, ২০১৮ রাত ১১:৩০