১) ইউরোপ আমেরিকা সহ অনেক দেশের মেয়েই বাংলাদেশি ছেলেদের প্রেমে পড়ে কিংবা বিয়ে করার জন্য বাংলাদেশে চলে আসে। এটা আপনার কাছে কৌতুহল কিংবা বিনোদনের খোরাক। কিন্তু আপনি কখনোই যা দেখেন না, তা হলো এটা তাদের ভেঙে পড়া অসুস্থ সমাজ এবং পারিবারিক ব্যবস্থার প্রতি চরম আস্থাহীনতার ফলাফল।
.
২) ক্রিকেটে জিম্বাবুয়ে এবং কেনিয়া একসময় পরাশক্তি হিসাবেই বহিঃপ্রকাশ করেছিলো। এই দুই জাতির ক্রিকেটীয় উন্মাদনাও কোন আংশেই কম ছিলো না। কিন্তু আজ তার আইসিসির সহ সদস্য দেশগুলোর কাছেও হারে! আপনি এর গভীরের যে কারনটি কখনো বোঝার চেষ্টা করেননি, তা হলো তাদের দেশের জাতীয় রাজনীতির চরম অস্থিতিশীলতা এবং জাতীয় অনৈক্য ও বিদ্বেষ।
.
৩) আপনি ইউরোপ কিংবা আমেরিকার সাজানো গোছানো শহর, পথ-ঘাট, অট্টালিকা, জ্ঞান-বিজ্ঞানে ঈর্ষনীয় সফলতা এবং কোর্ট-টাই পড়া র্স্মাট মানুষগুলোকে দেখে তাদের অনুকরন করতে ব্যাস্ত হয়ে উঠেন; তাদের লাইফ স্টাইল ফলো করতে আদাজল খেয়ে লাগেন। কিন্তু যে খোজ কখনো রাখেনি, তা হলো তাদের সমাজের পরতে পরতে ছড়িয়ে পড়া হতাশা, মানসিক যন্ত্রনা এবং মূল্যবোধ বিলুপ্ত এক চরম নষ্ট নরকময় জীবন যাপনের গল্প। আপনি কি জানেন, আমেরিকার বড়ো প্রতিষ্ঠানগুলোর একটা বড়ো অংশ বর্তমানে নন অরজিন আমিরাকান নাগরিকদের উপর নির্ভরশীল। ইউরোপ-আমেরিকান সমাজের বড়ো একটা অংশের মানুষ কোন না কোন মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত? এটা ভেঙে পড়া মূল্যবোধহীন সমাজিক কাঠামোরই বয়ে চলা এক ক্ষত।
.
৪) দেশ উন্নত হচ্ছে। বড়ো বড়ো অবকাঠামো হচ্ছে; পদ্মা ব্রিজ, মেট্রো রেল, ফ্লাইওভার। মহাকাশে স্যাটালাইট যাচ্ছে। সমুদ্র জয় করছি। এসব আমাদের জন্য গৌরবের; একটি জাতির উন্নায়নে প্রয়োজন। কিন্তু মহাসড়কগুলো ধান চাষের জমি হয়ে থাকা, ক্ষুধার তাড়নায় শিশুর খাবার চুরি করে, অভাবী পরিবারের নারী এবং বয়স্ক বৃদ্ধের লাঙল টেনে চলা, ফুটপাত কিংবা রেলস্টেশনে ঘুমানো হাজারো মানুষ, ভঙুর বিচার ও শিক্ষা ব্যবস্থা সহ হাজারো অসঙ্গতি কি উন্নায়নেরই আরেকটি অংশের চিত্র? সমাজের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে মাফিয়া কালচার; স্বাধীন ভাবে মুখ খোলার উপায় আছে কি? প্রতিবেশী রাষ্ট্রের দাদাগীরি এবং আধিপত্য সর্বত্র; সাধারণ জনতা দর্শক! মনে শান্তি না থাকলে উন্নায়নের সরবতে মানুষের প্রাণ কতো দিন ভিজবে? স্বাধীনতা বিপন্ন হলে মহাকাশ কিংবা সমুদ্র জয়ের সার্টিফিকেট কি উপকারে আসবে?
.
৫) পলাশি যুদ্ধে পরাজয়ের একমাত্র কারন মীর জাফরের বিশ্বাস ঘাতকতা এবং নবাবের দুর্বলতা ছিলো না। প্রকৃত কারন ছিলো সাধারণ মানুষের অসচেতনতা, রাজনীতি বিমুখতা, ভীরুতা ও পলায়নপর প্রবৃত্তি। আদার ব্যাপারী, জাহাজের খবর দিয় কি হবে তত্ত্বে আর কতো দিন? রাষ্ট্র এবং সমাজের প্রতি আপনারও কিছু দায়বদ্ধতা আছে। আপনি তা এড়াতে পারেন না উট পাখির মতো বালুতে মুখ গুজে। আপনাকে সত্য জানতে হবে; জানাতে হবে সত্যটা কি। দেশটা রাজনীতিবিদদের একার না; তাদের লক্ষ কোটি টাকা সুইস কিংবা আমেরিকা-ইউরোপের ব্যাংকে আছে; বিদেশে আছে সম্পদের পাহাড়। দেশটার কিছু হলে তারা ঠিকই পালাবে। কিন্তু এই দেশের মাটিতে, এই সমাজে আপনাকে আমাকেই থাকতে হবে।
.
৬) মূল্যবোধহীন সামাজিক, রাজনৈতিক কিংবা রাষ্ট্রীয় কাঠামোর উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠা যে কোন উন্নায়ন শেষ বিচারে ব্যার্থ; যার চূড়ন্ত পরিনতি দুঃখ, হতাশা এবং বিপর্যয়। সত্য সত্যই; সত্যকে আপনি বদলে দিতে পারবেন না। আর সত্যকে যদি আপনি বদলে দিতে চান কিংবা আড়াল করতে চান, তাহলে আপনার অবস্থা সেই পাগলের গল্পের মতোই হবে, যে তার ময়লা দাতের কারনে লোকের হাসাহাসি দেখে পরিহিত লুঙ্গিটি উচু করে দাতগুলো ঢেকেছিলো।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মে, ২০১৮ দুপুর ১২:৫৯