গল্পঃ হেমন্ত এসেছে এ শহরে
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
হেমন্ত এর সাথে কুড়ি বছর পর দেখা হল । গোঁফ-দাঁড়ি সমেত হেমন্তকে দেখে আমি চিনতে পারেনি । আমার কাঁধে হাত চাপড়ে বলেছিল , কিরে এখনো সিগারেট টানছিস ।
আমি অবাক হয়ে যখন তাকালাম , তখন দেখলাম এ আমাদের হেমন্ত । হাতে তার সিগারেট । অথচ এ হেমন্ত কখনো সিগারেট টানেনি । আমার অবাক হওয়া দেখে বললো , একা থাকতে পারলাম না । সিগারেটাকে নিজের সঙ্গী করে নিলাম একেবারে । আমি আর জিজ্ঞেস করলাম না , কবে জেল থেকে ছাড়া পেলি ?
কিন্তু হেমন্ত আমাকে আবারো অবাক করে বললো , গতকাল ছাড়া পেলাম । আমি খুন না করেও খুনি । প্রেমিকার হত্যাকারী । কিন্তু জানিস , তাকে আমি আগেই খুন করেছিলাম যখন তাকে আমি আর পাবোনা জানতাম । সে খুনটা ছিল মনে । রাস্তায় সন্ত্রাসীরা যখন পালানোর সময় তাকে গুলি করে গেলো , সবাই ধরে নিলো আমি তার খুনি । কিন্তু লাবণ্যকে কি আমি খুন করতে পারি বল ? একটা মানুষকে কয়বার খুন করা যায় ? আমিতো তাকে ভালোবাসি , খুন করা কি যায় ভালোবাসার মানুষকে ?
হেমন্ত এর কথা শুনে আমি আর কিছুই বলতে পারিনি । জেলে যাওয়ার বেশ কিছুদিন আমি সেই এলাকা সেই শহর ছেড়ে চলে আসি । হেমন্তের কোন খোঁজ রাখিনি । আজ এ শহরে তাকে দেখে আমার থেকে বড় অবাক আর কেউ হয়নি । হেমন্ত জানেনা লাবণ্যকে আমি ভালোবাসতাম , আর হেমন্তের মত আমি এত ভালো প্রেমিক ছিলাম না । তাই লাবণ্যকে হত্যা করতে চেয়েছিলাম । আমার ভালোবাসাটা এক তরফাই ছিলো লাবণ্যের প্রতি ।
সাংবাদিকতায় হেমন্তের অনেক শত্রু তৈরি হয় , এক ওষুধ তৈরি প্রতিষ্ঠান মৃত মানুষদের দেহ ব্যবহার করে ওষুধ তৈরি করতো । লিফা নামের সেই কোম্পানির রিপোর্টটা করেই তাদের অনেক বড় শুত্রু হয়ে যায় সে ।
আবার হেমন্ত কথা বলে উঠলো , জানিস এত বছর পর প্রমাণিত হল সেই ওষুধ প্রতিষ্ঠানই গুন্ডা পাঠিয়ে খুন টা করেছিল । প্রমাণিত হলো কিছুদিন আগে , আর তাই তোকে দেখতে আসলাম । আমার কিডনিটা ভালো আছেতো ?
মনে পড়ে গেলো হেমন্তের একটা কিডনি নিয়েই আমি বেঁচে আছি । হেমন্ত না থাকলে আমি হয়তো বাঁচতাম না । হেমন্ত লাবণ্যকে পাবেনা বলেই আমি লাবণ্যকে হত্যা করতে লোক পাঠিয়ে ছিলাম । কারণ লাবণ্যের কিছুদিনের মধ্যে বিয়ে হয়ে যাওয়ার কথা ছিল । আর সেই ওষুধ কোম্পানির পাঠানো গুন্ডা আর আমার পাঠানো গুন্ডা একই ছিল । একেই অ্যাসাইনমেন্ট তারা দুইজন থেকে পায় । কিন্তু শেষ মুহূর্তে আমি তাদের মানা করতে ফোন দিয়েও পাইনি । তাই শহর ছেড়েছিলাম ।
হেমন্ত আমাকে এইবার হঠাৎ করে বললো , চলে যাই বন্ধু ।
হেমন্ত চলে যাচ্ছে , আমি তাকিয়ে আছি । দুইজন মানুষের কাছেই যেন কথাটা গোপন ।
ক্লান্ত হেমন্ত হাঁটছে , আর ভাবছে , আমার শরীরের একটা অংশ যার কাছে তাকে চাইলেই কি সহজে হত্যা করা যায় ।
ছবিঃ ইন্টারনেট
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়
অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন
শিব নারায়ণ দাস নামটাতেই কি আমাদের অ্যালার্জি?
অভিমান কতোটা প্রকট হয় দেখেছিলাম শিবনারায়ণ দাসের কাছে গিয়ে।
.
গত বছরের জুন মাসের শুরুর দিকের কথা। এক সকালে হঠাৎ মনে হলো যদি জাতীয় পতাকার নকশাকার শিবনারায়ণ দাসের সঙ্গে দেখা করা সম্ভব... ...বাকিটুকু পড়ুন
ঘুষের ধর্ম নাই
শহীদুল ইসলাম প্রামানিক
মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।
হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।
পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন
প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update
মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-
গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন
ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??
সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন