পৃথিবীর সমস্ত শিশুর অধিকার সুনিশ্চিত করার জন্য শিশু অধিকার সনদ নামে একটি সনদ আছে যা আমাদের অনেকেরই কাছেই পরিচিত।এই শিশু অধিকার সনদটি ১৯৮৯ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে সর্বসন্মতিক্রমে গৃহিত হয় এবং ১৯৯০ সালে এটি আন্তর্জাতিক আইনের একটি অংশে পরিণত হয়। এটি একটি মানবাধিকার চুক্তি। যদিও শিশুদের জন্য।এই সনদের মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে, সনদের মৌলিক ধারাগুলোর সাথে সাধারণ মানুষকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া এবং সচেতন করা। যাতে করে রাষ্ট্র,সমাজ, পরিবার সবাই এতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এই সনদের মোট ৫৪টি ধারা আছে। যাতে শিশু কল্যাণ নিশ্চিত করাসহ সকল প্রকার শোষণ, বৈষম্য, অবহেলা এবং নির্যাতন থেকে শিশুদের রক্ষার বিবরণ আছে।সনদে স্বীকৃত অধিকারের আওতায় স্বাস্থ্য, শিক্ষা, শিশুও মা-বাবার সাথে সম্পর্ক, সাস্কৃতিক কর্মকান্ড, নাগরিক আধিকার, শিশু শোষণ এবং আইনের সাথে বিরোধ জড়িত শিশুসহ অনেক বিষয়ই অন্তর্ভুক্ত আছে। সনেদর প্রথম অনুচ্ছেই বলা হয়েছে যে, ১৮ বছরের নিচে যারা তারা সবাই শিশু। এই সনদে চারটি মূলনীতি আছে যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেমনঃ ১. বৈষম্যহীনতা ২. শিশুর সর্বোত্তম স্বার্থ। ৩. শিশুদের অধিকার সমুন্নত রাখায় পিতা- মাতার দায়িত্ব। ৪. শিশুর মতামতের প্রতি সন্মান প্রদর্শন। আর সনদের আধিকারগুলোকে মোট চারটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেমনঃ ১. বেঁচে থাকার অধিকার। ২. বিকাশের অধিকার। ৩. সুরক্ষার অধিকার। ৪. এবং তার অংশগ্রহণের অধিকার।
আজকের আলোচনা শিশুর বেচেঁ থাকা। যা শিশুর একটি মৈলিক অধিকার। শিশুরা আমাদের সমাজের প্রতিচ্ছবি। জন্মগত একটি শিশুর মুখের দিকে তাকিয়ে আমরা ভবিষ্যৎ স্বপ্নের জাল বুনি, নতুন আগামির সুন্দরের স্বপ্ন দেখি।কিন্তু যদি কোন শিশু ভুমিষ্ট হবার পর পরই, কিংবা উপযুক্ত নাগরিক হয়ে গড়ে উঠার আগেই যদি তাকে কোন প্রতিকূল পরিবেশের জন্য এই সুন্দর পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে হয় তাহলে আমরা কষ্ট পাই, ভেঙ্গে যায় আমাদের স্বপ্ন, আশা ,অনিশ্চিত হয়ে পড়ে দেশ, জাতি, এবং পরিবার।কিন্ত তারপরও প্রতি বছর সারা পৃথিবীতে অসংখ্য শিশু বিভিন্ন কারণে মারা যাচ্ছে। যেমন,নানা প্রকার ব্যাধি,প্রাকৃতিক দূর্যোগ, যুদ্ধ-বিগ্রহ ,খাদ্য অভাব, বিভিন্ন প্রকার নির্যাতন, দারিদ্রতা,অপুষ্টি, পারিবারিক এবং রাষ্ট্রীয় অসেচতনতার কারণে।তাইতো দেখা যাচ্ছে যে, কোন দেশে যুদ্ধ-বিগ্রহ, প্রাকৃতিক দূর্যোগ, কিংবা অন্য যে কোন প্রতিকূল পরিবেশে শিশুরা সবার আগে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। ফলে বেচেঁ থাকাই তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ছে। তারা এই সর্বক্ষেত্রে অশান্তিময় পরিবেশে নিজেদেরকে খাপ খাইয়ে নিয়ে সঠিক ভাবে বেড়ে উঠার পরিবেশ পাচ্ছে না। ফলে অকালে ঝরে যাচ্ছে অনেক শিশুর জীবন।কিন্ত এমটি হবার কথা নয়। শিশুদেরকে প্রতিটি ক্ষেত্রে সর্বাধিকার হিসাবে বিবেচনা করা উচিত। বিশেষ করে আমাদের মত তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিতে দেশে -সমাজে কিংবা পরিবারে শিশুরা এখনও প্রচন্ড অবহেলার শিকার।শিশুদের জন্য সর্বাঙ্গ সুন্দর এবং অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করা এখনও আমাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। আমাদের দেশে শিশুদের বিরাট একটা অংশ এখনও এই বিরুপ পরিবেশের শিকার। এখনও সীমাহীন লাঞ্চনা বঞ্চনা,অবহেলার মধ্যে দিয়ে তারা বেড়ে উঠছে। তাদের জীবন বহুবিধ কারণে প্রতিনিয়তই হুমকির মধ্যে । যদিও শিশু অধিকার সনদে শিশুদের সকল অধিকার নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে, তবুও শিশুরা তাদের মৈলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত।শিশুর জন্য প্রথম অধিকার বেচেঁ থাকাই যেখানে তার জন্য হুমকি স্বরুপ সেখানে অন্য অধিকার নিশ্চিত করা তার জন্য বেশ কঠিন হয়ে পড়ছে।শিশু মৃত্যুর বহুবিদ কারণ আছে। সেই কারণ গুলির মূলে আঘাত হেনে শিশুর বেচেঁ থাকার অধিকার নিশ্চিত করতে পারলে রাষ্ট, সমাজ,পরিবার সবাই উপকৃত হবে।আমরা হয়তো একসাথে সব শিশুর দায়িত্ব নিতে পারবো না তবুও প্রতিটি শিশুর বেচেঁ থাকার অধিকার নিশ্চিত করার জন্য একযোগে সবাইকে যার যার অবস্থান থেকে আমাদেরকে দায়িত্ব নিতে হবে।সবাইকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবেএ ব্যাপারে । সেই সাথে শিশুর অধিকার গুলো যাতে বাস্তবায়িত হয় সে জন্য রাষ্ট্র,সমাজ, পরিবার এবং ব্যক্তিগত পর্যায়ে সবার সচেতনতা বোধ খুবই জুরুরি।আমাদের সবাইকে ভাবতে হবে যে, শিশু সবসময় প্রতিটা ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবে।কারণ শিশুদের ক্ষেত্রে যে কোন অবহেলা, দায়িত্বহীনতা যে কোন সময়ই আমাদের জন্য মহা বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।যার চরম পরিনিতি থেকে কেও নিজেকে রক্ষা করতে পারবে না।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জানুয়ারি, ২০০৯ সকাল ১১:৪১