somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্ল্যাক হোল-৪(মুক্তি বেগ এবং অদৃশ্য তারকারাজি) (collected)

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ২:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজকে ব্ল্যাক হোল নামের যে বস্তুটির সাথে আমরা পরিচিত সেটি নিউটনের মহাকর্ষ সূত্রেরই একটি অবদান।মহকর্ষ নিয়ে গবেষনা করতে গিয়ে নিউটনের পরবর্তী সময়ের অনেক বিজ্ঞানীর মাথায়ই এই প্রশ্ন আসে যে এই আকর্ষন বল উপেক্ষা করা যায় কিভাবে?নিউটনের সূত্রের সাহায্যে দেখা যায় পৃথিবী তার নির্দিষ্ট কক্ষপথে সূর্যের চারদিকে ঘুরে এবং সূর্যের আকর্ষনে কেন সূর্যের দিকে সরে যায় না।কারন হল পৃথিবী সুর্যের কাছ থেকে সেই বেগে ছুটে যাচ্ছে যা ঠিক সূর্যের আকর্ষন বলের সমান।ফলে দুটি বল পরস্পরকে ব্যালেন্স বা সমতা সাধন করছে।কিছু বিজ্ঞানী (ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো টাইপ) চিন্তা করল যদি কোন আকাম কইরা পৃথিবীর স্পিড বাড়িয়ে দেয়া যায় তাইলে কি হইব?যুক্তি দিয়া চিন্তা করলে তখন পৃথিবী সুর্যের আকর্ষন ছিন্ন করবে...অর্থাৎ আকর্ষন থেকে মুক্তি পাবে...

যেই বেগে কোন বস্তু চললে তা অন্য একটা বস্তুর মহাকর্ষ বল থেকে মুক্ত হতে পারে তাকেই বলা হয় মুক্তি বেগ...উদাহরন্স্বরুপ বলা যায় পৃথিবীর মুক্তি বেগ ১১.২ কিমি/সেকেন্ড(প্রায়)।যার মানে হল রকেট বা কোন মহাকাশ যানকে পৃথিবীর আকর্ষন মুক্ত হয়ে মহাশুন্যে যেতে হলে কমপক্ষে এই গতিতে ছুটতে হবে।অন্যদিকে এই বেগের কোন রকেট বৃহস্পতির আকর্ষন থেকে কখনোই মুক্ত হতে পারবে না কারন বৃহস্পতির ভর পৃথিবী থেকে বেশী ফলে মহাকর্ষ বলও।অর্থাৎ ভিন্ন ভিন্ন পৃথিবীর(গ্রহের) জন্য মুক্তি বেগ ভিন্ন হবে।বিখ্যাত কল্পবৈজ্ঞানিক উপন্যাস লেখক আইজ্যাক আজিমভ বলেন,
“পৃথিবী থেকে কম ভরের গ্রহের পৃষ্ঠে মুক্তিবেগ কম আর বেশী ভরের গ্রহে বেশী...কাজেই সৌরজগতে বৃহস্পতির পৃষ্ঠে মুক্তিবেগ বেশি হবে এটাই স্বাভাবিক...প্রকৃতপক্ষে তা পৃথিবীর ৫.৪ গুন...”

অষ্টাদশ শতাব্দীতে কিছু বিজ্ঞানী অধিক ভরের বস্তু যাদের মুক্তিবেগ আরো অনেক বেশি এমন বস্তু নিয়ে চিন্তা করা শুরু করেন।এই বিজ্ঞানীদের মধ্যে একজন হলেন ব্রিটিশ বিজ্ঞানী জন মিচেল(সিসমোলজির বা ভূমিকম্পবিদ্যার জনক,বাইনারি স্টার ধারনার প্রবর্তক),যিনি নক্ষত্রের বৈশিষ্ট্য নিয়ে প্রচুর গবেষণা করেছেন।এটা তখনই পরিষ্কার হয় যে মহাবিশ্বে সূর্যের থেকেও ভারী নক্ষত্র আছে।নক্ষত্রের ভরের কোন উচ্চসীমা আছে কিনা তা মিচেল জানতেন না।কিন্তু তিনি প্রস্তাব করলেন যে,তাত্ত্বিকভাবে বিশাল ভরের নক্ষত্র থাকতে পারে যার মহাকর্ষ বল অত্যন্ত তীব্র।তাছাড়া এই সব দানব নক্ষত্রের মুক্তিবেগও অনেক বেশী হবে।মিচেল চিন্তা করলেন একটি নক্ষত্রের মুক্তি বেগ তাহলে সর্বোচ্চ কত হতে পারে??এই যুক্তির সাহায্যে তিনি চিন্তা করলেন যে যদি কোন নক্ষত্রের মুক্তি বেগ ১৮৬০০০ মাইল/সেকেন্ড এর থেকে বেশী হয় তাহলে কি হবে?এই যুক্তির সাহায্যে তিনি বললেন যে, আলোও এই সব নক্ষত্র থেকে বের হতে পারবে না।১৭৮৪ সালে প্রকাশিত একটি পেপারে তিনি বললেন, “যদি মহাবিশ্বে এমন কোন বস্তু থেকে থাকে যার ব্যাসার্ধ আমাদের সূর্য থেকে ৫০০ গুন বেশি,তাদের প্রবল শক্তিশালী মহাকর্ষ বল থাকবে এবং এই বস্তুর মুক্তিবেগও অনেক বেশী হবে।ফলে এইসব বস্তু থেকে বের হওয়া আলোকরশ্মি এদের মহাকর্ষের টানে ওই বস্তুতেই ফিরে আসবে।আর যেহেতু আলো এই বস্তু থেকে বের হতে পারবে না কাজেই আমরা দৃষ্টিশক্তির সাহায্যে এ ধরনের বস্তুর কোন তথ্য পাব না।অন্যভাবে বলতে গেলে, এই নক্ষত্রগুলো অন্ধকারাচ্ছন্ন হবে...ফলে আমরা চোখ বা টেলিস্কোপের সাহায্যে তাদের দেখতে পাব না।কাজেই মিচেল এই বস্তুগুলোর নাম দেন ‘ডার্ক স্টার’। ”

প্রকৃতপক্ষে তার সময়ে মিচেলই একমাত্র বিজ্ঞানী নন যিনি তীব্র মহাকর্ষ বলের প্রভাব নিয়ে প্রবল্ভাবে আকর্ষিত হয়েছিলেন।১৭৯৫ সালে ফরাসি বিজ্ঞানী পিয়েরে সাইমন ল্যাপলাসও স্বতন্ত্রভাবে একই উপসংহারে আসেন।তিনি লিখেন, “মহাবিশ্বে কোথাও না কোথাও নক্ষত্রের সংখ্যার মত বিশাল সংখ্যায় এমন বস্তু(নক্ষত্রের ন্যায়) থাকতে পারে যার ঘনত্ব হয়তো আমাদের পৃথিবীর ঘনত্বের মতই কিন্তু ব্যাস আমাদের সূর্যের প্রায় আড়াইশ গুন বেশি।এইসব বস্তু তাদের প্রবল আকর্ষন(মহাকর্ষ) বলের কারনে তাদের মধ্য থেকে কোন রশ্মিকেই(আলোক) বের হতে দেয় না।এই কারণেই হয়তবা মহাবিশ্বের সবচাইতে উজ্জ্বলতম এই বস্তুটি আমাদের অদেখাই রয়ে গেছে।”
এই উপসংহারের উপর ভিত্তি করে ল্যাপলাস এই বস্তুগুলোর নাম দেন ‘লেস কর্পস অবসকিউরস’ বা ‘অদৃশ্য বস্তু’

মজার বিষয় হল মিচেল এবং ল্যাপলাস যখন ব্ল্যাক হোল ধারনার প্রবর্তন করেন তখন হাইগেনস এর আলোর তরঙ্গতত্ত্ব সুপ্রতিষ্ঠিত।পরবর্তীকালে অবশ্য প্রমানিত হয়েছে আলো আসলে তাড়িতচৌম্বক তরঙ্গ।আমরা জানি কন বস্তু যার ভর আছে কেবল্মাত্র তাই মহাকর্ষ বল দ্বারা আকৃষ্ট হবে...আমরা এটাও জানি যে তাড়িতচৌম্বক তরঙ্গের(যেমন দৃশ্যমান আলো) কোন ভর নাই।তাহলে কিভাবে আলো মহাকর্ষের দ্বারা আকৃষ্ট হয়।জানতে পড়ুন পরবর্তী পর্ব যাতে থাকছে...
“বেন্ডেবল স্পেস এন্ড গ্রাভিটি ওয়েল”
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×