somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কবিরাজি আজকাল!!

২৩ শে আগস্ট, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছোটো ভাইগুলো বড় নচ্ছার, ছুটি শেষ হতে না হতেই আড্ডা বসিয়ে (বাংলার) খান সাহেব অভিনীত ঈদের ছবি 'ভালোবাসা আজকাল' দেখার সিদ্ধান্ত পাকা করে ফেললো। আমার এদিকে অবস্থা করুন, পকেটে টাকার কুশন ক্ষয়ে গিয়ে পয়সা আর চাবি বাড়ি খায়, আর ঠন ঠন শব্দ করে। খালি পকেট বাজে বেশি। তদুপরি, আরেক ত্যাঁদড় এসে গুজব ছড়ালো, মাহী-কে নাকি দেখতেই হয় (আদপে যে সব শব্দ লাগাইছিলো সেগুলো না বলি); তাই সব মিলিয়ে চিন্তা করলাম যাউগ্গা, বাংলা চলচ্চিত্র শিল্পে বিনিয়োগ করে আসি (বিশাল বড় দ্বায়িত্ব, সমঝদার ছাড়া কারও বোঝার আশা নাই)- তাছাড়া, এটা আমাদের এক্সক্যাভেটর গ্রুপের একটা কর্তব্য!


যাই হোক, সেই মুভির কথা বলতে গিয়ে কেনো কবিরাজি আসলো সেটা একটু আস্তে ধীরে পাঠক জানতে পারবেন। সকাল সকাল জানিয়ে রাখা ভালো, আমি ডাক্তারি পড়ি নাই, আমার বাইলজির জ্ঞানগম্যিও হাতের তালু মুঠ করলে তার মধ্যে ধরে যায়। তাই এতো গভীর কবিরাজির সঠিক বর্ননা আমার দ্বারা দেয়া পুরোপুরি সম্ভব হবে না। কষে ক্ষমা চাওয়া ছাড়া আর কোনও গতি নাই।


আসেন, তাইলে কি দেখে আসলাম সেটার দিকে দৃষ্টি দিই...


আবুল মামুর ধান্ধাবাজি


মুভির পয়লা কারেক্টার আবুল মামু এন্তার ধড়িবাজ পাব্লিক, উনার পেশা হলো এক পোলারে বারবার বিয়ে করিয়ে বাসর রাতে মেয়েকে অজ্ঞান করে তার গয়না গাটি ঘাপিয়ে দিয়ে চম্পট দেয়া। এই লাইনে ভালোই যাচ্ছিলো, কিন্তু মুভির নিতান্ত প্রয়োজনে এক পাত্রী বাসরঘরে একটু বেশি রসকলা করতে গিয়ে পোলারে 'কবিরাজি' মেশানো দুধ না খাইয়ে ছাড়বে না। ঘটনার সময় পাত্রীর ডায়লগ- 'তুমি আরো একটু খাও, না খাইলে বল পাবা না তো!'ঐ কবিরাজি খেয়ে মাইয়া কাত, পোলা সেমি-কাত কিন্তু এই সময় যথারীতি আবুল মামু জানালা দিয়া গয়নাগাটি নিয়া চম্পট দেয়ার তাগাদা দিচ্ছে। পোলা অভিনয় ভুলে কবিরাজির প্রভাব ব্যর্থ প্রমানিত করে সটানে দৌড়ানো শুরু করে দিলো, কিন্তু মিনিট কয়েক দৌড়ানোর পর হঠাৎ কবিরাজি অ্যাটাক করলো। অত:পর, ধরা। আবুল মামু উপায়ান্তর না দেখে পোলারে গনপ্যাদানির মধ্যে ফেলে (নিজেও পোশাক বদলে এসে দু'চার ঘা লাগিয়ে) পগার পার!


আসল পুরুষ (থুক্কু, কবিরাজ)


আবুল মামুর ধান্ধার ঘুটি হারিয়ে নতুন 'মাল' এর খোঁজে ইতি উতি তাকাচ্ছেন এমনই সময়ে গ্রামের রাস্তা দিয়ে আমাদের নায়ক খাঁ (উচ্চারণ: খোয়া) সাহেবকে ঝেড়ে দৌড় দিতে দেখা গেলো। পেছনে গোটা পাঁচেক সোমত্ত যুবতী, তাদের মুখের দিকে তাকিয়ে নিশ্চিতভাবেই দৌড়ানোর কারণটা আমার কাছ থেকে হারিয়ে গেলো(!) তার মানে, খাঁ সাহেবের পেছনে মেয়ের পাল দৌড়াতেই পারে, কিন্তু মেয়েগুলোর মুখ দেখে মনে হলো আসলে পেছনে পাগলা কুত্তা দাবড়ানি দিছে; সামনে আকর্ষনীয় যুবকের লালসায় না। কিন্তু লালসা হোক আর যা-ই হোক, খোয়া সাহেবের দৌড়টা দেখার মতো ছিলো।


এমন 'আই ক্যান্ডি' পাইয়া আবুল মামু আর যায় কোথায়। সরাসরি গিয়া বলে ফেললেন, 'আমি তোমার মামু, তুমি আমারে দেখো নাই জীবনে, আই জাস্ট মেট ইউ, এন্ড দিস ইজ ক্রেজি, সো টেক মি টু ইয়োর মম, মে বি!' এই মামার বাড়ির গল্প আমরা সবাই বুঝতে পারলাম, কিন্তু, যখন খোয়া সাহেবের মায়ের সামনে একই গল্প দেয়া হলো, মা জননী মামার বাড়ির গল্প অবলীলায় গিলে ফেললেন! মামা প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেলেন বাড়িতে।


দেখা গেলো, আসল পুরুষকে নিয়ে বিশাল সমস্যা। না কনডমের অভাবজনিত সমস্যা না, সমস্যাটা হলো তার পিছে নাকি গ্রামের 'দুষ্টু' মেয়েগুলো লেগে থাকে। সেই চিন্তায় মা জননীর ঘুম হয় না। মা-জননী বললেন আবুল মামু যেনো তার পোলাডারে ঢাকায় নিয়া যায়, ছেলের বাপে বিশাল খ্যাতিসম্পন্ন কবিরাজ ছিলো (১ নং খাঁটি চন্দ্রকিরণ তৈল এনার তৈরি কিনা আমার সন্দেহ আছে) ছেলেও যেনো ঢাকায় গিয়ে তার কবিরাজি ফলাতে পারে। (এটা অবশ্য বুয়েট থেকে টেক্সটাইলে পাশ করার চেয়ে সহজে হজম করা যায়)


আবুল মামু চামে কবিরাজপুত্র খোয়া সাহেবকে তার মা-র মাথা ছুঁয়ে প্রতিজ্ঞা করিয়ে নিলেন যে, বলিবা মাত্র আবুল মামুর আজ্ঞা শিরোধার্য করিতে বাধ্য থাকিবে! মাথায় হাত ছোঁয়ানোর সময় নেপথ্য সংগীতে যেনো টিনের চালে ঠাডা পড়লো, আমিসহ অন্যান্য নাদান দর্শক ঠিকই বুঝে গেলো এই ছোঁয়ার মধ্যেও কবিরাজি আছে!


কবিরাজ এখন ঢাকায়


ঢাকায় এসে খোয়া সাহেব, অত্র মুভিতে যার নাম হলো রানা, আবুল মামার সাথে চুটিয়ে চামবাজি শুরু করে দিলেন। সাধারণত বাংলা মুভির নায়ক ত্যাগ, সততার প্রতিভু হয়ে থাকেন, কিন্তু, রানা ভাগিনা দেখাগেলো মায়ের কাছে করা প্রতিজ্ঞার ছায়া তলে আবুল মামার সৎসঙ্গ বেশ উপভোগ করছেন! এমনকি দাঁও-টা কিভাবে বড়সড় করে মারা যায়, তারও একটা ইনিশিয়েটিভ নিয়ে ফেললেন অনায়াসে! হায় ফখরুল, এ আমি কি দেখলাম!


চোট্টা ঘটক এসে খবর দিলো তার কাছে মিছ ছুমি নামের এক প্রবাসী পাত্রীর সন্ধান আছে। যেখান থেকে বেশ যুৎসই দান হাসিল করা যাবে। আটঘাট বেঁধে প্রস্তুতি নেয়া হলো: বাড়ি ভাড়া করা হলো, এক নাদানের কাছ থেকে গাড়ি এবং আইফোন ফাইভও ঘাপিয়ে দেয়া হলো!


...আগে হেলমেট পরে নিও


বিশাল খাটে খাটো পোশাক পরে ঢাউস টেডিবিয়ারের পায়ের ভিতর ঠ্যাং গলিয়ে মিস সুমি ঘুমান। তাকে জাগাতে বাড়ির চাকরানিরা আসেন মোটরবাইকের হেলমেট পরে (হ্যাঁ, আমিও তব্দা খাইছিলাম) পরে দেখলাম, অবেলায়(!) ঘুম থেকে জাগানোর জন্য বিরক্ত হয়ে হাতের পাশে যা পাওয়া যায় তা-ই ছুঁড়ে মারার অভ্যাস আমাদের নায়িকার। কিন্তু তার ইংরেজি ডায়লগের হাত থেকে বাঁচার জন্য আমি কানে কেনো হুড়কো গুজে যাইনি সেজন্য কয়েক সেকেন্ড আফসোস হলো। (না হয়ে পারলো না!)


বাংলাদেশ রকস, বিগটাইম


মিস সুমিকে প্যারিসে ঘোরার লোভ দেখিয়েও তার ড্যাডজান তাকে আটকাতে পারলেন না। পঙ্খি উইড়া তার প্রাণের দেশ, জন্মভূমি দেখতে চলে আসলো। এয়ারপোর্টে এসে নায়িকা সুমি স্যান্ডউইচ গিলতে থাকা আরেক সুমি (এর কাছ থেকেই দাঁও মারার প্লান আমাদের আবুল এন্ড কবিরাজ কোম্পানীর) কে দেখে এসকেপ প্লান ভেঁজে ফেললো... কবিরাজ খোয়া সাহেব তখন নেম-প্লেট হাতে করে 'এবং দণ্ডায়মান' আছেন।এইখানেই দেখা (প্লাস হ্যান্ডশেক) হয়ে গেলো ধনীর দুলালী এবং কবিরাজের।


আইপ্যাড এবং এ-লেভেল (এ ফর অ্যাডাল্ট)


নায়িকা বাঙালী খাবার চাখতে চাখতে মুভির এই পর্বে চোখ আর ঠোঁটের অপ্রতুল ব্যবহারে একটার পর একটা মদন-বান হানতে থাকেন আমাদের রানা ভাইয়ের দিকে, রানা ভাইও কম যান না। অবশ্য আমার সন্দেহ আছে, রানা ভাইয়ের ভঙ্গি যেসব দর্শকের বিনোদন করার কথা, তারা আমাদের দেশে এখনও ক্লজেট থেকে বেরোন নি। আগামী দশ বছরেও বেরোবেন কিনা সন্দেহ আছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাপোর্ট পাওয়া বলে কথা!যাহোক নায়িকার ন্যায়িকামী এবং তার অদমিত স্মৃতি থেকে আঁকা একটা জমিদার বাড়ির ছবি দেখিয়ে নায়কের মনের সফট কর্নারে গভীর দাঁগ একে দেন। মিস সুমিকে খুঁজতে এরই মধ্যে স্যাঙাত নিয়োগ করে পত্রিকায় দশ লাখ টাকার ফাইন্ডার্স ফি ঘোষণা করেছেন ড্যাডজান। ঘরের মধ্যেই 'মাল' আছে টের পেয়ে ধড়িবাজ মামু আবুল আবার আমাদের চির অসূর্যম্পশ্যা সুমিকে আদর যত্ন করে ঘরেই রেখে পুরষ্কারের টাকা বাড়িয়ে নেয়ার একটা সুবর্ণ সুযোগের দেখা পেয়ে গেলেন। ঘটনার ঘনঘটায় ঘটকের গলায় পড়লো দড়ি, স্যান্ডউইচ সুমির ফ্যামিলির হাতে এবং দর্শক জানতে পারলো নায়িকা সুমি তার এ-লেভেলও কম্প্লিট করেছেন ঘরের চার দেয়ালের মধ্যে বসেই, সাধে কি অসূর্যম্পশ্যা বলা!


কবিরাজের চেয়ে বেশি বোঝো?


এরই মধ্যে রিওয়ার্ড বিশলাখে পৌঁছে গেছে, অতএব, দেশের মানুষ এখন 'মালে'র খোঁজে দিশেহারা। রানা ভাই এবং সুমি আপা মাঝের কিছু অন-অফ ঘটনায় রিলেশান পাকা পোক্ত করে ফেলেছেন। তারা এবার ট্রাক চালকের প্রকৃতির ডাকের সুযোগ নিয়ে এক ফাঁকে ট্রাকের পেছনে উঠে আবুল আঙ্কেলের হাত থেকে পালিয়ে গেলেন, অবশ্য মিস সুমি ট্রাকের পেছনের ঢাকনার উপর দু'পা তুলে দিয়ে যে চিক্কুর ছাড়ছিলেন এটা ড্রাইভার ভাইয়ের কানে গেলো না কি করে সেটা বুঝতে পারলাম না! যাহোক, ট্রাক একসময় থামলো, এবং কাপল আবিষ্কৃত হলেন। ট্রাক চালকেরা মাল ধরিয়ে দিয়ে পুরষ্কৃত হওয়ার আগ্রহ দেখালেও সুমি আপুর স্বপ্ন বিষয়ক স্পীচে মেসমেরাইজড হয়ে গেলো পোড়খাওয়া ট্রাকচালকের দল! (ট্যাঙ্গেলড এর 'আই'ভ গট এ ড্রীম গানটা মনে আসতে ছিলো); চান্স পেয়ে নায়কও দুলাইন ঝেড়ে দিলো, তাতে করে উদ্দিপীত মব অকুস্থলে পৌছানো ড্যাডজান এবং তার থাগদের থামিয়ে দিয়ে কাপলকে কোনওমতে পালিয়ে যাওয়ার পথ করে দিলো। সবাই বলেন, মারহাবা!চলতে চলতে নায়কের একটু কাঁটাগাছের উপর দিয়ে হাই জাম্প দিতে ইচ্ছে হলো, নায়িকাও সেই চিহ্ন লক্ষ্য করে জাম্প দিতে গিয়ে কাঁটা ফুটিয়ে নিলো পায়ে। খোয়া সাহেব তেমন গুরুত্ব দিতে চাইলেন না, সামান্য কাঁটা ফোঁটায় কী হবে? নায়িকা বলেন, না! তার রক্তে অনুচক্রিকার পরিমান কম, একবার রক্তপাত শুরু হলে আর বন্ধ হতে চায় না। এই রোগের একটা ডাক্তারি নামও ছিলো ডায়লগের মধ্যে, আমার মনে নেই, কি আর করা! স্যাড ফেস।এই শুনে নায়ক তার কবিরাজ বাপের দোহাই দিয়ে বলে দিলো, 'অনেক রোগী বড় বড় ডাক্তারের কাছ থেকে ফেরত এসে তার বাপের কবিরাজির গুনে ঠিক হয়ে গেছে, এই রোগ তো কোনও ব্যাপারই না!' এই বলে নায়ক রানা ভাই স্ক্রীন থেকে মিনিট খানেকের জন্য উধাও হয়ে গিয়ে কোথা থেকে যেনো অজানা পাতাপুতি নিয়ে হাজির হলেন। চশমার ভেতর দিয়ে চোখ টাঁটিয়ে দেখতে চেষ্টা করলাম এটা কি গাছ, লন্ডনের ডাক্তাররা যে গাছড়ার কাছে ফেল মেরে যায়- তার চেহারাটা অন্তত দেখা দরকার। এক্ষেত্রেও দর্শক ব্যর্থ। কবিরাজ জুনিয়রের অনুরোধে নায়িকা পুরো একমুঠো লতাপাতা তার প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে ফেললো, জাস্ট ইন কেস! তবে সমস্যা হইলো চিপা প্যান্ট, পুরো জঙ্গল তার পকেটের ভিতরে ঢুকে না। কিন্তু একটু পরেই নতুন সিন আসলে পকেটের পাতা উধাও হয়ে গেলো!আমি মনকে বোঝালাম, কবিরাজের চেয়ে বেশি বোঝো?


লাভ ইন বান্দরবান এবং ফ্লুরেসেন্ট জোনাকি


সুমি আপুর ঠাং এ ফুটো, রোমান্টিক নায়ক রানা ভাই তাকে হাঁটতে দেয় কি করে? আমি ভাবছিলাম একটা লাঠি হয়তো জোগাড় করে দেয়া হবে, কিন্তু ভবির চিন্তা অন্যখানে... নায়ক নায়িকাকে কাঁধে তুলে ফেললেন! কাঁধে উঠে নায়িকা জিগায়, 'তোমার কষ্ট হচ্ছে না?' নেতিবাচক উত্তর পেয়ে আবার প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো, 'তাহলে আগে মেয়েদের কাঁধে তোলার অভ্যাস আছে?' নায়কের চটজলদি জবাব, 'ধানের বোঝা বয়ে বয়ে অভ্যাস হয়ে গেছে!' (মাইরি ধানের বোঝা!)মুভিতে গানা অনেকই আছে, গানে গানে সাহারা থেকে শুরু করে টেক্সাস পর্যন্ত নাচানাচির দৃশ্য এবং ক্যামেরার জুম-ইন জুম-আউটও প্রচুর আছে। কিন্তু, এই বান্দরবানের গানের মধ্যে নায়ক নায়িকার ড্যান্সিং এ একবারও ড্রেস বদল হলো না। পরিচালককে একটু হলেও বাহবা দিতে ইচ্ছে হলো।এই ভাবে চলতে চলতে সন্ধ্যে হলো, এইসময় একটা হাটু পানির খালের উপরে বাঁশের সাকোর উপরে নায়িকাকে বসিয়ে নায়ক গেলো জোনাক পোকা ধরতে, মাইরি রোমান্টিক দৃশ্য! কিন্তু জোনাকি ধরার পর সেটা থেকে হলুদ আলোর বদলে পুরো এনার্জি সেভিং লাইটের আলো পড়তে লাগলো দুজনার চোখে মুখে।আবারও মনকে প্রবোধ দিলাম, 'কবিরাজের চেয়ে বেশি বোঝো?' এর পরে একটা জিনিসই বাকি ছিলো, সেটাও আসলো, বৃষ্টি!


ইব্রাহিম লিংকনের কুড়াল এবং পিঠের অদৃশ্য ছ্যাদা


রানা ভাই সুমি আপুকে নিয়ে তার স্বপ্নের বাড়িতে পৌঁছে গেলেন, পুরোনো জমিদার বাড়ি, ভুত প্রেত থাকতে পারে এই কথা বলে রানা ভাই নিজেই একবার ঘুরে দেখে আসতে গেলো। গিয়ে দরজার পিছনে মুখ বাড়িয়ে দিয়ে লুকিয়ে থেকে শুনতে পারলো, নায়িকার আসল বাপ এই বাড়ির মালিক, অর্থাৎ জমিদার, ছোটো বেলায় ছুরির মাথায় করে নায়িকাকে তুলে নিয়ে গিয়েছিলো ভিলেন বাপ। তার আসল উদ্দেশ্য এই জমিদারি এবং সমস্ত সম্পত্তি হাতিয়ে নেয়া! একটা প্রশ্ন আসলো মাথায়, রিসেন্ট টাইমে নায়িকার বয়স যদি আঠারো (দেখতে তেইশের মতো) হয়, তাহলে নব্বইয়ের দশকের শেষদিকে বান্দরবানে আসলে কোথায় যে একটা জমিদারী ছিলো? সে যাইহোক, বেরিয়ে আসার সময় সেকেন্ডারি স্যাঙাতের কাছে ধরা খেয়ে গেলো রানা ভাই, তাকে ধরে, নায়িকার চোখে প্রতারক সাজিয়ে বান্দরবান জেলে ঢুকিয়ে দেয়া হলো।অবস্থা বেগতিক দেখে, আবুল মামু পুর্বোক্ত সম্মোহিত ট্রাক ড্রাইভারদের নিয়ে দশ তারিখের মধ্যে বেতন চাই দিতে হবে দাবি নিয়ে একটা বিক্ষোভ মিছিল করে আদালতগামী প্রিজন ট্রান্সপোর্ট আটকে দিলো পথিমধ্যে। এই সুযোগে ফেরারি রানা পিকআপের ঘের থেকে নাইলনের দড়ির বজ্র আঁটুনি ফসকা গেরো খুলে পালিয়ে গেলেন।ইতিমধ্যে সুমি আপুর অবদমিত স্মৃতি ফিরে এসেছে, জেনে গেছেন, তার আসল বাপ কে! ভিলেন ততক্ষণে আসল মা বাপকে দলিলে সই করার জন্য হুমকি ধামকি দিচ্ছে! এই সময় অকুস্থলে রানা ভাই এসে উপস্থিত, শুরু হলো সাঁই-ভিশমাইক-চুইইই-ফোশ-ফোশ-ফোশ-ফোশ! কিন্তু, ভিলেন এক ফাঁকে তার জমিদারি ছুরিটা রানা ভাইয়ের পিঠে ইঞ্চি চারেক ঢুকিয়ে দিলেন। পাঠক বুঝতেই পারছেন এবার কি হবে, হ্যাঁ, কবিরাজি আজকাল! নায়িকা তার চিপা প্যান্টের পকেট থেকে পাতাপুতি বের করে নায়কের পেটের রক্ত মাখা খাঁজের ভেতর পুরো জঙ্গলটাই ঢুকিয়ে দিলো। ত্রিশ সেকেন্ডও লাগলো না রিজেনারেশান হতে! এবং দেখা গেলো ছুরি পিঠের দিক দিয়ে ঢুকেছে তাতে কি, পিঠে কোনও চিহ্নই নাই কিছুর! সবাই আবার বলেন মারহাবা!নওজোশে রানা ভাই এক ভিলেনে কাছ থেকে কুড়াল কেড়ে নিয়ে যে অ্যাকশান দিতে শুরু করলো, তা দেখে আমার একটু হলেও আব্রাহাম লিংকন ভ্যাম্পায়ার হান্টার এর কথা মনে পড়ে গেলো, সন্দেহ যে সহি সেটার প্রমাণ পেলাম যখন ভুপাতিত ভিলেনকে আটকে দিতে নায়িকা আরএফএল এর শক্ত মজবুত চেয়ার ছুঁড়ে দিলো এবং নায়ক সেটা নিয়েই ভিলেনের বুকের উপর চড়ে বসলো!বাংলা সিনেমার আবহমান কালের রীতি রক্ষা করতে আইনের লম্বা হাত এসে উপস্থিত হলো!


অতপর মুভি শেষ!


জলিল যুগ

মুভি যেরকমই দেখি না কেনো, মিস্টার জলিল যে ছবির পিকচার কোয়ালিটিতে একটা রেভোল্যুশন এনেছেন, সেটা আমি এবং অন্যান্যরা সবাই একবাক্যে স্বীকার করলাম। যাহোক, কিছুটা ভালোর দিকে যাচ্ছে তো। কিছু না হলেও, এই পথটা দেখানোর জন্য অনন্ত জলিলকে ধন্যবাদ জানানো দরকার আছে!
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×