somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প, না গল্প কিংবা অগল্প

০১ লা এপ্রিল, ২০১০ রাত ১১:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এক
-আপনিই তাহসিন আলম ?
-জ্বি স্যার।
-আমাকে স্যার বলার দরকার নেই। যাকে স্যার বললে কাজ হতে পারে তার কাছে নিয়ে যাচ্ছি। পান্ডুলিপিটাতো আপনারই তাই না?
-জ্বি।
-ঠিক আছে চলুন।

দুই
-স্যার আসব?
-হুমম .... আসো।
-স্যার উনার কথাই আপনাকে বলেছিলাম। উনার "আততায়ীর সাথে কথপোকথন" এর পান্ডুলিপিটা স্যার আমি পড়েছি। চমৎকার লিখেছেন।
-শুনো মাসুদ, ভাল লিখে কি খারাপ লিখে এটা দিয়েতো ব্যবসা হয়না। ব্যবসা হয় পরিচিতি দিয়ে। পাঠক চিনে এ ছেলেকে? কিনবে এর বই? কত কপি চলবে? আমিতো
সাহিত্য সেবা করতে বসিনি। আমার দরকার ব্যবসা।
-তাতো ঠিকই স্যার।
-যা বলেছিলাম বলেছো ওকে।
- না স্যার, বলিনি। আপনি যদি বুঝিয়ে বলতেন।
- তুমি যা করো না। শোন ছেলে কি যেন নাম তোমার? তুমি করে বললাম বলে কিছু মনে করো না আবার।
- না স্যার, ঠিকাছে। আমি তাহসিন আলম।
-শোন আলম, আমাদের ৮/৯ ফর্মার একটা বই ছাপাতে ছাপা বাধাই সব মিলিয়ে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়। তার উপর বিজ্ঞাপন বাবদ আরো বিশ থেকে ত্রিশ হাজার টাকার ধাক্কা। অর্থাৎ প্রতি বইতে আমাদের ষাট সত্তর হাজার টাকাতো যায়ই। এখন তুমি বলো তোমার মতো অপরিচিত একটা লেখকের লেখা ছাপিয়ে এতগুলো
টাকা জলে ঢালতে পারি?
-স্যার আপনি যদি পান্ডুলিপিটা একটু দেখতেন।
-ওসব পান্ডুলিপি-টিপি আমি বুঝিনা। আমি বুঝি পাবলিক তোমার বই খাবে কিনা? আমি যা বলি শুনো। ষাট-সত্তর হাজার টাকার মধ্যে তুমি যদি ৫০ হাজার দিতে পারো তবে আমি চেষ্টা করে দেখতে পারি।
- স্যার আমি এখনো ভার্সিটিতে পড়ি, এত টাকা কোথায় পাবো বলুন।
-তাহলে তো ভাই আমি নাই। তুমি অন্য কোথাও দেখো। দুয়েকটা বইটই বের করো। লোকে চেনুক-জানুক তারপর না হয় এসো আমার কাছে।

তিন
-আপনি তাহসিন আলম?
-জ্বি স্যার।
-অন্য কোথাও চেষ্টা করেননি এটা প্রকাশের।
-সত্যি বলতে স্যার করেছিলাম কিন্তু পারিনি।
-শুনেন আপনার পান্ডুলিপিটা আমি পড়েছি। বেশ লেগেছে আমার কাছে।
-অনেক ধন্যবাদ স্যার।
-তবে একটা সমস্যা হলো আপনারতো কোন পরিচিতি নেই। এক্ষেত্রে যা হয় পরিচিতির অভাবে অনেক ভাল লেখাও মার খেয়ে যায়। আপনি হয়তো জানেন আমরা কেবলমাত্র প্রতিষ্ঠিত লেখকদের বই প্রকাশ করি। দেশের শীর্ষস্থানীয় লেখকদের বই বের হয় আমাদের "অন্যধারা" থেকে। এখন আপনার মতো অপরিচিত লেখকদের বই বের করে এটা
বাজারে কাটতি না হলে এর দায়তো আমাদের প্রকাশনীর উপরও বর্তায়। মিজান কি আপনাকে কিছু বলেছে?
- জ্বি স্যার বলেছে। কিন্তু আমার পক্ষেতো অতটাকা দেয়া সম্ভব না। আমি টিউশনি করে আমার পড়ার খরচ চালাই।
-আর কিছু বলেনি?
- না স্যার।
-শুনেন আমি যা বলবো আপনার ভালোর জন্যই বলবো। আগেইতো বলেছি আমাদের এখান থেকে দেশের শীর্ষস্থানীয় লেখকদের বই বের হয়। যেমন ধরেন আহমেদ ইকবাল হক। উনার নামেই বই চলে। যাই লিখেন মেলাইতেই ৭ম-৮ম মুদ্রণ ছাপাতে হয়। কিন্তু ইদানিং উনি বিভিন্ন কাজে এত ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন লেখালেখির সময়ও পান না ঠিকমতো। ফলে দেখা যায় মেলায় আমরা উনার ৩/৪টার বেশী বই বের করতে পারিনা। অথচ উনার ১০/২০টা বই বের হলেও পাঠক কিনবে লাইন দিয়ে।
-জ্বি স্যার আমি নিজেও পড়ি উনার লেখা।
- ভালো, এখন আমরা উদ্যোগ নিয়েছি আপনার মত তরুণ প্রতিশ্রুতিশীল লেখকের লেখা কিছুটা ঘষা মাজা করে উনার নামে প্রকাশ করবো। এতে আমাদের তিন পক্ষেরই লাভ।
- এটা কি বলেন স্যার?
-চমকে উঠলেন কেন? চমকে উঠার মতো কি কিছু বলেছি? গত মেলায় উনার যে ছয়টি বই বের হয়েছে এর মধ্যে কেবলমাত্র দুইটি বই উনার নিজের লেখা। বাকী চারটি অন্যের লেখা কেবল প্রকাশিত হয়েছে উনার নামে। কৈ কেউ কি ধরতে পেরেছে কোনটা উনার নিজের কোনটা অন্যের। আপনি নিজে ধরতে পারবেন? শুনেন এখনকার পাঠক বই এর ভিতরে কি আছে এটা জানতে চায় না তারা জানতে চায় প্রচ্ছদে কার নাম আছে?
- স্যার এটা কি করে সম্ভব? আমার প্রথম রচনা। আমি অনেক কষ্ট করে বইটি লিখেছি। এখন এটা যদি অন্যের নামে প্রকাশিত হয় তাহলে কেমন লাগবে বলুন?
- বেচেঁ থাকলে বহু বই লিখার সুযোগ পাবেন। এখন রাজী থাকলে বলুন। আপনি পাবেন ৫০ হাজার। রাজী থাকলে পান্ডুলিপি রেখে মিজানের কাছ থেকে চেক নিয়ে যান আর এটা যে আপনি লিখেছিলেন এটা ভুলে যান।

চার
- ভাই, আহমেদ ইকবাল হক স্যারের নতুন কি বই এসেছে এবার?
- আততয়ীর সাথে কথপোকথন এবার মেলার বেস্ট সেলার। স্যার স্টলে আছেন অটোগ্রাফসহ দিয়ে দিই।
-দিন অটোগ্রাফসহই দিন।
- কি নাম লিখবেন?
- তাহসিন আলম।
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) পক্ষ নিলে আল্লাহ হেদায়াত প্রদান করেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪২



সূরা: ৩৯ যুমার, ২৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৩। আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম হাদিস, যা সুসমঞ্জস্য, পুন: পুন: আবৃত। এতে যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদের শরির রোমাঞ্চিত হয়।অত:পর তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগটা তো ছ্যাড়াব্যাড়া হয়ে গেলো :(

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৫৭



আমি আমার ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে লেখালেখির মাধ্যমে। ব্লগটির প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কারণ প্রথম আলো ব্লগ আমায় লেখালেখিতে মনোযোগী হতে শিখিয়েছে । সে এক যুগ আগের কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

লুঙ্গিসুট

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



ছোটবেলায় হরেক রঙের খেলা খেলেছি। লাটিম,চেঙ্গু পান্টি, ঘুড়ি,মার্বেল,আরো কত কি। আমার মতো আপনারাও খেলেছেন এগুলো।রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই মানতাম না। আগে খেলা তারপর সব কিছু।
ছোটবেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

একবার শাইখুল হাদিস মুফতি তাকি উসমানী দামাত বারাকাতুহুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, জীবনের সারকথা কী? উত্তরে তিনি এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা

লিখেছেন করুণাধারা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৯



এই ধাঁধার নাম সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা; নিচের লিংকে এটার ভিডিও আছে।

স্বৈরশাসকের বন্দী

এই ধাঁধাটি আমার ভালো লেগেছিল, তাই অনেক আগে আমার একটা পোস্টে এই ধাঁধাটি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই পোস্টে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×