somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন ডঃ ইউনূচ, একজন সাকিব আল হাসান এবং আমাদের হীনমন্যতা

০৭ ই মার্চ, ২০১১ রাত ১০:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথমেই বহুলশ্রুত একটা গল্প স্মরণ করি। বাঙালীরা যে নরকে থাকে সেখানে নাকি কোন পাহারাদার নেই। কারন ? একজন বাঙালী নরক থেকে পালাতে চাইলে অন্য বাঙালীরাই তার পা টেনে ধরে। ঈশ্বরের কি দায় পড়েছে শুধু শুধু একজন পাহারাদারকে সেখানে বসানোর। আমাদের রাজনৈতিক, সামাজিক ও ক্রীড়াক্ষেত্রে গত কয়েকদিনের ঘটনা প্রবাহে গল্পটাকে গল্প বলে মনে হয় না। সত্য বলে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে।

বাংলাদেশে ইদানিং কালের দুজন আলোচিত চরিত্র ডঃ মুহম্মদ ইউনুচ এবং সাকিব আল হাসান। চিন্তা-চেতনায়, বয়সে-মননে দুজনের বিস্তর ব্যবধান থাকলেও একদিক দিয়ে দুজনের দারুণ মিল। বিশ্বব্যাপী তাদের পরিচিতি ও জনপ্রিয়তায়। হালে দুজনেই ভিন্ন ভিন্ন কারনে বির্তকের মধ্যে জড়িয়েছেন কিংবা তাদেঁর জড়ানো হয়েছে। খেলায় দল নিদারুনভাবে পরাজিত হওয়ার অপরাধে একজনের বাড়ীতে জানালার কাচঁ ভাঙ্গা হয় আর সরকারের রোষানলের স্বীকার হয়ে অন্যজনকে সরে যেতে হয় গ্রামীন ব্যাংকের পরিচালকের পদ থেকে।

ডঃ মুহাম্মদ ইউনূচ এবং গ্রামীন ব্যাংককে নিয়ে অনেক বির্তক আছে। গ্রামীন ব্যাংক গ্রারে মানুষকে দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর করছে বলে অভিযোগ আছে। উচ্চসুদে ঋণ প্রদান এবং ঋণ আদায়ের কড়াকড়িতে এ অভিযোগ সর্ব্বৈ মিথ্যাও বলা যায় না। তবে একটা কথা অবিসংবাদিতভাবেই সত্য ডঃ মুহাম্মদ ইউনূচ প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে সর্বোচ্চ সম্মান নোবেল শান্তি পুরস্কার জিতেন। যারা এক সময় ক্ষুধা, দারিদ্র ও বন্যার দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে চিনতো তারা নতুনভাবে এ দেশকে চিনেছে ড: ইউনূচের কল্যানে। এবং এটাই তারঁ কাল হলো। আরে বাবা! আমাদের দেশে এত এত বিখ্যাত রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, বুদ্ধিজীবী থাকতে তুমি কেন ওটা পেতে গেলে। যে সকল বুদ্ধিজীবীরা এক সময় ডঃ ইউনূচের কাছের মানুষ ছিলেন, তারঁ শুভাকাংখী ছিলেন তারাও নোবেল প্রাপ্তির পর তাঁর কাছ থেকে দূরে সরে যেতে থাকে। আমরা আমাদের কাছের মানুষের ব্যর্থতায় যতটা কষ্ট পাই তারচেয়ে অনেক বেশী কষ্ট পাই তাদের অভাবিত কোন সাফল্যে। বাঙালীরা গুর কদর করতে জানে না কিংবা আমরা ঈর্ষা পরায়ন জাতি এ কথাকে সত্য প্রমাণ করতেই যেন এক সময়ের শুভাকাংখীরা ভিতরে বাইরে ডঃ ইউনূচের সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় তাকে প্রধান উপদেষ্টার পদ নেয়ার অনুরোধ করা হলেও তিনি তা সবিনয়ে প্রত্যাখান করেন। এবং জীবনের অন্যতম ভুলটি করেন সক্রিয় রাজনীতিতে আসার ঘোষনা দিয়ে। বাংলাদেশের রাজনীতি সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ধারনা না থাকায় কিংবা অতিউৎসাহী কিছু লোকের পরামর্শে এ ঘোষনা দেয়ার কিছুদিন পরই তিনি তারঁ ভুল বুঝতে পারেন এবং তারঁ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার ঘোষনা দেন। কিন্তু ততদিনে যা হওয়ার হয়ে গেছে। যে রাজনীতিবিদরা নোবেল প্রাপ্তির সংবাদে ডঃ ইউনূচের বাসায় ফুলের তোড়ার শুভেচ্ছা পাঠিয়েছেন তারাই তাকে প্রতিপক্ষ ভেবে নেন। তার বিভিন্ন কর্মকান্ডের সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠেন এবং বিভিন্নভাবে তার চরিত্রে কালিমা লেপনে ব্যস্ত হয়ে উঠেন। এবং সর্বশেষ তিনি তারঁ ভুলের মাশুর দেন গ্রামীন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এম.ডি) পদ থেকে অপসারিত হয়ে। বলছি না যে তাকে আজীবন এ পদে থাকতে হবে কিংবা নোবেল বিজয়ী বলে তিনি আইনের উর্দ্ধে। কিন্তু, যে প্রক্রিয়ায় তাকে অপসারন করা হলো সেটা কোনমতেই শোভনীয় নয়। একজন নোবেল বিজয়ী হিসেবে তিনি কি আর একটু সম্মান পেতে পারতেন না?

এবার আসি ভিন্ন একটা প্রসঙ্গ, খেলার মাঠে। বিশ্বকাপ ক্রিকেটে নিজেদের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজের নিকট ৫৮ রানে অলআউট হয়ে ৯ উইকেটের বিশাল পরাজয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটের গৌরব ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এটা অনস্বীকার্য। বিশাল আশায় বুক বাঁধা সমর্থকরা কষ্ট পেয়েছেন, বিক্ষুব্দ হয়েছেন এটা স্বাভাবিক। কিন্তু অস্বাভাবিক হচ্ছে খেলোয়াড়দের বহনকারী গাড়ীতে ঢিল ছোড়া এবং দলের অধিনায়কের বাড়ীতে পাটকেল মেরে জানালার কাচঁ ভাঙ্গা। আরো বেশী মর্মাহত হয়েছি এক শ্রেণীর তথাকথিত ক্রিকেট বিশ্লেষক এবং কতিপয় সাবেক খেলোয়াড়দের অবিবেচনাপ্রসূত কিছু মন্তব্যে। একটা দলের খারাপ দিন আসতেই পারে। পরাক্রমশালী ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৯০ রানে অলআউট হতে পারে নন টেস্ট প্লেয়িং কেনিয়ার কাছে। ইংল্যান্ডের মতো দলও হারতে পারে পুঁচকে আয়ারল্যান্ডের কাছে। কিন্তু, তাই বলে একটা দলের অধিনায়ককে সবাই মিলে ব্যাক্তি আক্রমন করবে, সমালোচনার বাণে বিদ্ধ করবে এ কেমন কথা। কাকে অপমান করছি আমরা? যে কি না বিগত দুই বছর ধরে বিশ্বের বাঘা বাঘা খেলোয়াড়দের সাথে পাল্লা দিয়ে ১ নম্বর অলরাউন্ডার হিসেবে দেশের মাথাটা উচুঁ করে ধরে আছে। তার একক নৈপুন্যে অনেক অবিশ্বাস্য ম্যাচ জিতেছে দেশ। যার সুফল ভোগ করেছে খেলোয়াড়, কর্মকর্তা সবাই। আর হারলে সব দোষ সাকিব আল হাসানের। তিনি না কি কোন এক দর্শকের দিকে অশ্লীল ইংগিত করেছেন, সাবেক খেলোয়াড়দের সম্পর্কে অশোভন মন্তব্য করেছেন ইত্যাদি, ইত্যাদি। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না সাকিব আল হাসান একজন মানুষ মাত্রই। আমাদের মতোই রক্ত মাংসের মানুষ। আমার তো ভাবতেই বিস্ময় লাগে মাত্র ২৪ বছর বয়সী একটা তরুনের কাঁধে ১৬ কোটি মানুষের প্রত্যাশার চাপ। সে প্রত্যাশার চাপ সবসময়ই যে তরুন অধিনায়ক অতিক্রম করতে পারবেন তা আশা করা বোকামি। তাই বলে দুঃসময়ে আমরা তাকে ছেড়ে যাবো। সমালোচনার কাটাঁ দিয়ে খুচাঁবো নিরন্তর। যুদ্ধ শেষ হওয়ার আগেই সেনাপতিকে অকর্মণ্য, অযোগ্য বলে ঘোষনা করবো। ম্যাচ হেরে গেলে সমর্থকরা যেমন কষ্ট পায় তারচেয়ে অনেক বেশী কষ্ট পায় খেলোয়াড়রা, যারা লড়াই করেন মাঠে। অনেকে ম্যাচ শেষে সাকিবের হাসিমুখে কথা বলাটাকে কটাক্ষ করেছেন। তার দেশপ্রেম নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ। আর আমি এজন্যেই তাকে অভিবাদন জানাবো। একজন পেশাদার খেলোয়াড়ের মতোই তিনি ঐদিন তার সহখেলোয়াড় এবং মিডিয়াকে সমলেছেন। ম্যাচে যে ভাবেই হারুক একজন অধিনায়ককে খেলার পর মাঠে কান্নাকাটি করলে চলে না। তাকে দলের অন্য খেলোয়াড়দের মনোভাব চাঙ্গা রাখা থেকে শুরু করে পরবর্তী ম্যাচের কথাও ভাবতে হয়। এবং একাজটিই করেছেন সাকিব। আসুন দুঃসময় কাটাতে সাকিবের পাশে থাকি। তাকে জানিয়ে দিই ওরা ১৫ জনের পাশে আমরা ১৬ কোটি লোক আছি সবসময়। জিতলেও, হারলেও।

গুণীর কদর করতে হয় নাহলে নাকি গুণী জম্মে না। আমরা গুণী লোকের কদর করতে জানি না বলেই কি এদেশে কালেভদ্রে এঁদের দেখা পাই। একজন ডঃ ইউনূচ কিংবা একজন সাকিব আল হাসান কিন্তু শুধুমাত্র দেশের দুজন নাগরিকই নয় আমাদের সম্মানের প্রতিভূও। তাদেঁর সম্মান দিলে নিজেরাই সম্মানিত হই।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মার্চ, ২০১১ রাত ১০:৫৬
১২টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগটা তো ছ্যাড়াব্যাড়া হয়ে গেলো :(

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৫৭



আমি আমার ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে লেখালেখির মাধ্যমে। ব্লগটির প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কারণ প্রথম আলো ব্লগ আমায় লেখালেখিতে মনোযোগী হতে শিখিয়েছে । সে এক যুগ আগের কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

লুঙ্গিসুট

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



ছোটবেলায় হরেক রঙের খেলা খেলেছি। লাটিম,চেঙ্গু পান্টি, ঘুড়ি,মার্বেল,আরো কত কি। আমার মতো আপনারাও খেলেছেন এগুলো।রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই মানতাম না। আগে খেলা তারপর সব কিছু।
ছোটবেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

একবার শাইখুল হাদিস মুফতি তাকি উসমানী দামাত বারাকাতুহুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, জীবনের সারকথা কী? উত্তরে তিনি এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

=মৃত্যু কাছে, অথবা দূরেও নয়=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



©কাজী ফাতেমা ছবি
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দিয়ে বলি, আমারও সময় হবে যাবার
কি করে চলে যায় মানুষ হুটহাট, না বলে কয়ে,
মৃত্যু কী খুব কাছে নয়, অথবা খুব দূরে!
দূরে তবু ধরে নেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা

লিখেছেন করুণাধারা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৯



এই ধাঁধার নাম সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা; নিচের লিংকে এটার ভিডিও আছে।

স্বৈরশাসকের বন্দী

এই ধাঁধাটি আমার ভালো লেগেছিল, তাই অনেক আগে আমার একটা পোস্টে এই ধাঁধাটি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই পোস্টে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×