somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চিম্বুক, নীলগীরি, বগা লেক

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ রাত ৮:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পায়ের তলায় শর্ষে! সুযোগ পেলেই দেশ দেখতে বেড়িয়ে পড়ি! সেই ইউনির্ভাসিটি জীবনে এরশাদ সরকার জোর করে একবার হল ছাড়া করেছিল... সেই থেকে আমার শুরু। এ এক আজব নেশা!

এই নেশার টানেই গত আগষ্ট মাসে গেছি টাঙ্গুয়ার হাওড়! এবার এই ঈদ পরবর্তী ছুটিতে ঘুরে এলাম বান্দরবান। এর আগেও চারবার গেছি বান্দরবান- শৈলপ্রপাত, চিম্বুক আগেও দেখা হয়েছে, কিন্তু এবার যুক্ত হলো নীলগীরি আর বগা লেক।

চিম্বুক
নাইট কোচে বান্দরবান। বান্দরবান থেকে চাঁদের গাড়ীতে চিম্বুক। সমূদ্র তল থেকে ২০০০ ফুট ঊঁচু চিম্বুক পাহাড়! বান্দরবান শহর থেকে ২৬ কিঃমিঃ পাহাড়ী পথ। খাড়া পাহাড় বেয়ে উঠার সময়েই কানের পর্দায় বায়ুচাপের তারতম্য অনুভব করা যায়। আর্মি-দের টিনশেড রেস্ট হাইজে রাতে থাকার সুবিধে আছে, তবে আগেই তা নিশ্চিত করে যেতে হবে। চিম্বুকের সকালটা খুব সুন্দর! নীচে সাদা মেঘের জমাট মেলা, তার উপরে সকালের সূর্যকিরণ! আপনি এই দৃশ্য দেখবেন মেঘের লেভেলের-ও উপর থেকে! আপনি মুগ্ধ হয়ে দেখবেন সেই সৌন্দর্য!


সকালের সাদা মেঘ- চিম্বুক চুঁড়া থেকে


চিম্বুক রেস্ট হাউজের বারান্দা থেকে তোলা মেঘ-পাহাড়


সাদা মেঘের ভেলা

নীলগীরি
সমূদ্র সমতল থেতে ২২০০ ফুট উপরে মেঘের রাজ্যে নীলগীরি-এর অবস্থান। বান্দরবান শহর থেকে ৪৮ কিঃমিঃ দূরে নীলগীরি। চিম্বুক ছাড়িয়ে থানচী যাবার পথে পড়বে এই নীলগীরি। সকালটা বাদে সারাদিন-ই নীলগীরি থাকে মেঘের ভিতর। এ এক আশ্চর্য অনুভূতি। আপনাকে ঘীরে ঘন মেঘ! মেঘের ভিতর আপনি! বেশ মজা না?! দেখবেন- মেঘের অনেক রং! নীলগীরি-এর বিকাল আর সন্ধেটা খুব উপভোগ্য!


মেঘের রাজ্যে আমরা ক'জন


পাহাড় চুঁড়া যখন মেঘে ঢাকা


মেঘের অনেক রঙ- নীলগীরি-তে সন্ধ্যা

এখানেও একমাত্র থাকার ব্যবস্থা আর্মি-দের চারটি কটেজ। প্রতিটি কটেজে আটজনের থাকার ব্যবস্থা আছে, ভাড়া ৫০০০/- টাকা। তাবুতেও থাকতে পারবেন, ভাড়া ১৫০০/- টাকা। তবে অবশ্যই আপনাকে আগে থেকেই বুকিং দিয়ে যেতে হবে। আর্মি রেফারেন্স থাকলে বুকিং পেতে সুবিধে হবে।

বগা লেক
বান্দরবান শহর থেকে ৩৪ কিঃমিঃ দূরে কঙ্কনছড়া (কইক্ষংঝিরি) ঘাট। চিম্বুক থেকে ৮ কিঃমিঃ আগেই ওয়াই জাংশন থেকে বাম দিকে টার্ন নিতে হবে। কঙ্কনছড়া ঘাট হতে ইঞ্জিন বোটে সাঙ্গু নদী দিয়ে দেড় ঘন্টার পথ (স্রোতের বিপরীতে) রুমা বাজার। আপনি চাইলে অতিরিক্ত আধা ঘন্টা (যাওয়া-আসা অতিরিক্ত এক ঘন্টা) নৌ ভ্রমণ করে অনেক ঊঁচু থেকে পড়া রিঝুক ঝর্ণাটাও এই ফাঁকে দেখে আসতে পারেন। রুমা থেকে ১৬ কিঃমিঃ দূরে পাহাড়ের উপরে আশ্চর্য এক জলাধার- বগালেক! রুমা বাজার থেকে বগা লেক পর্যন্ত দু'ভাবে যাওয়া যায়। ঝর্ণার পথ অনুসরণ করে হেঁটে পাড়ী দিতে পারেন এই পথ, যাকে বলে ঝিরি পথ। অথবা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তায় ১১ কিঃমিঃ চাঁদের গাড়ীতে গিয়ে তারপর আরও ৭ কিঃমিঃ পাহাড়ী পথে হেঁটে যেতে পারেন বগা লেক (এই পথের দূরত্ব ১৮ কিঃমিঃ)। ... শীতকালে চাঁদের গাড়ী নিয়ে সরাসরি বগালেক পর্যন্ত যাওয়া যায়। তবে বছরের অন্য সময়ে যেতে হলে শারীরিক ফিটনেস খুবই জরুরী এখানে, পদব্রজে যাওয়া ছাড়া উপায় নাই।বগা লেকে আসা আদৌ উচিত ছিল, কি ছিলনা- মাঝপথে গিয়ে এমন চিন্তা করার কোন সুযোগ নেই। রুমা বাজার থেকে গাইড পাবেন। আর্মিদের ক্যাম্পে গাইডের নামসহ আপনাদের নাম-ঠিকানা লিপিবদ্ধ করতে হবে। রেজিস্টার্ড গাইড ছাড়া সামনে এগুনো নিষিদ্ধ। গাইড-কে প্রতিদিনের জন্য দিতে হবে ৩০০/- টাকা !

ভূ-তাত্ত্বিকগণের মতে প্রায় দুই হাজার বছর পূর্বে মৃত আগ্নেয়গিরি-এর জ্বালামূখে সৃষ্টি হয়েছে এই বগা লেক। বগা লেকের উচ্চতা ১২৭০ ফিট! এই স্থানটি মূলতঃ কেউক্রাডাং পাহাড়ে ওঠার বেজক্যাম্প। কেউক্রাডাং জয়ের অভিযাত্রীরা এখানেই অবস্থান করে থাকেন। স্থানীয় মারমা-দের পরিচালনায় কাঠ-বাঁশের তৈরী রেস্ট হাউজ পেয়ে যাবেন সহজেই। ভাত (অথবা খিচুরী), চাল কুমড়ার বা শিম এর তরকারী আর ডিম- এই হচ্ছে মোটামুটি প্রতি বেলার ম্যেনু! ধান, সবজী সবকিছুই জুম চাষ থেকে পাওয়া!


সাঙ্গু নদী


পাহাড় চুঁড়ায় নয়নাভিরাম বগালেক

বগা লেক থেকে ৪০ মিনিটের হাঁটা পথ পেড়িয়ে সুন্দর একটা ঝর্ণা (চিংড়ি ঝর্ণা) দেখে আসতে পারেন। আর কেউক্রাডাং চুড়ায় উঠতে হলে বগা লেক হতে আরও ৪-৫ ঘন্টার পাহাড়ী হাঁটা পথ! সে পথও মাড়িয়ে আসতে পারেন। শরীর পারমিট করলে ও মনের জোড় থাকলে বগা লেক থেকে পুরো এক দিনের হাঁটা পথ মাড়িয়ে দেখে আসতে পারেন কাইখ্যাং ঝর্ণা ও পুকুর!

টিপসঃ
১। - চাঁদের গাড়ীর ভাড়া প্রতিদিন ২৫০০/- টাকা। তবে পর্যটন মৌসুমে তা ৪০০০/- থেকে ৫০০০/- টাকা পর্যন্ত হতে পারে। রিজার্ভ গাড়ী ছাড়া লোকাল চাঁদের গাড়ীতে ভ্রমণের চিন্তা না করাই ভাল।

২। বগা লেক যাবার পরিকল্পনা করার আগে রাস্তার অবস্থা এবং নিজের ও সহযাত্রীদের শারীরিক সখ্যমতা সম্পর্কে ভাল ধারণা থাকা প্রয়োজন।যাত্রার প্রাক্কালে ম্যালেরিয়ার প্রিভেনটিভ ওষুধ খেয়ে নেয়া জরুরী। ভাল গ্রীপের কেডস এবং মোটা মোজা পায়ে থাকতে হবে। পাহাড়ী পথে জোক-এর উপদ্রব রয়েছে। অন্ততঃ দুই জোড়া মোজা সাথে নেয়া ভাল। সহযাত্রী সকলের নিতান্তই প্রয়োজনীয় জিনিস-পত্র একটি ব্যাগে ভরে বাকী মালপত্র রুমা বাজারে কোথাও রেখে যাওয়া শ্রেয়ঃ।

৩। চিম্বুক, চিম্বুক, নীলগীরি এবং বগা লেকে রেষ্ট হাউজ রিজার্ভেশন-এর জন্য এই নম্বরগুলিতে কন্টাক্ট করতে পারেন-
ক) চিম্বুকঃ ওয়ারেন্ট অফিসার মিঃ আজিজ/সামাদ - ০১৫৫৬৭৪৪০৩১
খ) নীলগীরিঃ মেজর ফারুক-০১৭১৬৫৯৮২৬৬, ক্যাপ্টেন নাহিদ-০১৮১৯১৮৫০১৫.
গ) বগা লেকঃ লারাম-০১৫৫২৩৭৬৫৫১ (সহসা এই নম্বরটা নেটওয়ার্কে পাওয়া যায়না)





সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:২৬
৬৮টি মন্তব্য ৩৮টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯

মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা বলতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×