somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আকাশে শান্তি, বাতাসে শান্তি

০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ফজলু সাহেব হাতে এখনো রডটা ধরে আছেন। রডের মাথায় রক্ত লেগে আছে। দু-এক ফোঁটা রক্ত তখনো বেয়ে বেয়ে পড়ছে। সামনের দিকে একটু বাঁকাও হয়ে গেছে। তিনটা মাথা ফাটালো মাত্র আর তাতেই রড বাঁকা! কত জোরে বাড়ি দিয়েছেন নিজেও বুঝতে পারছেন না। হয়তো নিজের সব শক্তিই ছিলো কিংবা অশরীরী কিছু তার উপর ভর করেছে। নিজের সামনে নিজের একমাত্র মেয়েকে কেউ ধর্ষণ করলে সম্ভবত যে কারোর উপর অসুরের শক্তি ভর করবে।
ঠিক কতক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলেন জানেন না ফজলু। যখন সম্ভিত ফিরলো, দেখলেন বিকৃত মাথার তিনটা লাশ। মাথা থেকে ছিটকে বের হওয়া রক্ত আর মগজ ফ্লোরে মিলে সব লাল হয়ে গেছে। একটু দূরেই পড়ে আছে তার মেয়ে জবা। মেয়ের কাছে গিয়ে হাঁটু গেঁড়ে বসলেন তিনি। মেয়েটার শরীর নিথর হয়ে পরে আছে। মারা গেছে? কোন সাড়া শব্দ পাওয়া যাচ্ছে না! তাহলে কী মেয়েটা….। নরপশুলো মেয়েটাকে মেরেই ফেললো!
কী করবেন ঠিক বুঝে উঠতে পারছেন না ফজলু সাহেব। ঘর থেকে বাইরে গেলেন। দরজা খুলতেই দরজার গা বেয়ে একটা লাশ তার পায়ের কাছে পড়লো। মেয়েটার গায়ে এখানে সেখানে কামড়ের দাগ। কামড়ের ক্ষতের কারণে চেহারা বিকৃত হলেও ফজলু সাহেব চিনলেন এটা তারই ছোট ভাইয়ের মেয়ে রুপা। মাত্র ক্লাস নাইনের বার্ষিক পরীক্ষা দিলো মেয়েটা। আজকেই তাকে নিয়ে ফুফুর বাসায় বেড়াতে যাওয়ার কথা ছিলো। রুপা বলেছিলো ফুফুর বাসা থেকে বেড়িয়ে এসেই নাক মুখ গুঁজে পড়ালেখা শুরু করবে এসএসসি পরীক্ষার জন্য। ও কী ওর প্রিয় লাল জামাটা পরে রেডিই হয়ে ছিলো! নাকি ওর রক্তে জামাটা লাল হয়ে গেছে?
ফজলু সাহেব লাশটাকে মাড়িয়ে আরেকটু সামনে গেলেন। দুপাশে পাম গাছ লাগানো বাড়িতে প্রবেশের রাস্তা, সখ করে রাস্তার মধ্যেও মোজাইক পাথর লাগিয়েছেন। এই রাস্তার মধ্যেই পড়ে আছে আরো কয়েকটা লাশ। এদের কাউকে তিনি চেনেন কাউকে অল্প চেনেন। সামনেই পড়ে থাকা রফিক ওনার বাড়ি পাহারার কাজ করতো। তার পেছনে হাত বাঁধা, শুয়ারগুলো অনেক মেরেছে তাকে। কোন নড়াচড়া নাই, শুরু চোখের পাতাগুলো একটু নড়ছে। হয়তো দশ সেকেন্ডের মধ্যেই মরে যাবে। একটু দূরেই গায়ের প্রায় সকল কাপড় ছেড়া আরেকটা মেয়ের লাশ। চেনা যাচ্ছে না খুব একটা। দু-গালের মাংসই কামড়ে খাবলে নিয়েছে মেয়েটার। গলার দিকেও কামড়ের একটা বিশাল ক্ষত। মেয়েটা কি রফিকের ছোট মেয়ে। মেয়েটাতো একদম বাচ্চা ছিলো! কত, ১৪ বছর হবে বয়স! এই মেয়েটাকেও? এরা কি মানুষ ছিলো!
একটু সামনে এগোতে গিয়ে পিছলে পড়ে গেলেন ফজলু! কোটি টাকার মোজাইক পাথরের রাস্তায় রক্ত লাগলে যে মানুষ পিছলে পড়ে যায় এটা ফজলুর জানা ছিলো না। তিনি উঠলেন, সাবধানে পা ফেলে এগোতে লাগলেন! কী করবেন উনি! পালাবেন? তার কি পালানো উচিত! পালাবেন কেনো? তিনজন পশুকেতো তিনি মেরেই ফেলেছেন! তারতো আর কোন ঝুকি নেই। বুঝতে পারছেন না ঠিক! তবে এগিয়ে যাচ্ছেন সামনের দিকে। পেছনে রেখে মোজাইক পাথরের রাস্তা, রক্ত, ক্ষত বিক্ষত ধর্ষিত লাশ! এই দৃশ্যগুলো ফজলু সাহেব সহ্য করতে পারছেন না। তার পালানো উচিত। এখনই পালানো উচিত। বাড়ির গেটের বাইরে গিয়ে তিনি আর পা ফেলতে পারছেন না! সামনে শত শত লাশ। শত শত ধর্ষিতা মেয়ে। সবার চেহারাই ক্ষত বিক্ষত।
কিন্তু আশ্চর্য, এখানে অনেককেই তিনি চেনেন, এরা আরো আগেই মরে গিয়েছিলো। এই যে কুসুম! এই মেয়েটা গত বছরই মরেছে। যদিও ধর্ষন করেই মেরে ফেলা হয়েছে তাকে। তার পাশেই পড়ে থাকা বদি আলমের বউ! তাকেওতো তিন বছর আগে রবি, কাদের আর জসিমরা ধর্ষণ করে মেরে ফেলেছে!
রবি, জসিম আর কাদেরকে আবারো শুয়ার, জানোয়ার, নরপশু, নিমখহারাম বলে গালি দিলেন ফজলু সাহেব। এই কুত্তারবাচ্চা গুলোকে কত শত বার ধর্ষণের জন্য খাওয়া মামলার হাত থেকে বাঁচিয়েছেন ফজলু। এই যে বদি আলমের বউ, কুসুম এমন অনেক মেয়েকেই শুয়ারগুলো ধর্ষণ করে মেরেছিলো। ফজলু সাহেবই তাদেরকে সেই সব মামলা থেকে বাঁচিয়েছেন। কিন্তু শুয়রের বাচ্চাগুলো তার মেয়ে আর ভাতিজিকে কেনো এভাবে মেরে ফেললো! এই বিষয়টা কিছুতেই বুঝতে পারছেন না ফজলু সাহেব।
ভাবতে ভাবতেই ফজলু সাহেব হঠাত দেখলেন কুসুম আর বদি আলমের বউ সহ আরো শত শত মেয়ে তার দিকে তেঁড়ে আসছে। সবার হাতে রড। ফজলু সাহেব দৌড়াচ্ছেন। প্রানপণে দৌড়াচ্ছেন। কিন্তু তিনি বুঝতে পারছেন না, এরা সবাই তাকে তাড়া করছে কেনো? সে কী করেছে?
প্রাণপণে কতক্ষণ দৌড়ালেন মনে নেই ফজলুর। ক্লান্ত হয়ে পড়ে গিয়ে সম্ভবত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছেন। জ্ঞান ফেরার পর প্রথমেই তার মাথায় আসলো কুসুম আর বদি আলমের বউ তাকে তাড়া করছে কী না! না, তাড়া করছে না। ফজলু আবার হাঁটা ধরলেন, কিন্তু কোথায় যাচ্ছেন জানেন না। জনমানবহীন মোজাইক পাথরের একটা রাস্তায় তিনি হাটছেন। মাঝে মাঝে রক্তের জন্য পিছলে পড়ে যাচ্ছেন। উঠে আবার হাটছেন।
আর বলছেন-আকাশে শান্তি, বাতাসে শান্তি, পৃথিবীতে শান্তি রক্ষিত হোক! বিশৃঙ্খলাকারীকে ধরিয়ে দিন। আকাশে শান্তি, বাতাসে শান্তি।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:০১
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×