somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বুক রিভিউ-ছহিহ রকেট সায়েন্স শিক্ষা (হাসান মাহবুব)

০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৫:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

“পৃথিবী পৃথিবী পৃথিবী কমলালে কমলালে কমলালে বুর মতো বুর মতো বুর মতো গোল” তুই যদি আমার কথা মনোযোগ দিয়ে না শুনিস তাহলে এইভাবে বকতে বকতে মুখে ফেনা তুলে ফেলবি, কিন্তু ‘পৃথিবী কমলালেবুর মতো গোল’ এই লাইনটা কইতে পারবি না”-আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক লালমোহন বাবু ক্লাসে অমনোযোগী ছাত্রদের উদ্দেশ্যে এই কথাটা বলতেন। এই বিষয়ে পরে আবারো আসছি। আগে হামা ভাইয়ের ছহি রকেট সায়েন্স শিক্ষা ও হামা ভাইয়ের কিছু গুণ গুনগুনিয়ে গাই।
ছহি রকেট সায়েন্স শিক্ষা বইতে কী আছে? আমি এক কথায় বলবো ছহি রকেট সায়েন্স শিক্ষা=তুমিও পারবে, তোমাকে দিয়েও হবে! এক বইয়ে কী রকেট সায়েন্স শেখা পসিবল? হ্যাঁ, এই বই পড়লে পসিবল। কারণ এই বইয়ে রকেট সায়েন্সের কোন থিউরি নাই যে আপনাকে পরিশ্রম করে পড়তে হবে, এইটা মূলত কীভাবে আর্টসে পড়েও তরুন, মেধাবী, সম্ভাবনাময় রকেট সায়েন্টিস্ট হবেন তার একটা দিক-নির্দেশনা। কীভাবে অল্প জেনেও নিজেকে আইনস্টাইনের পর্যায়ে নিয়ে যাবেন তার দিক-নির্দেশনা। এক কথায় নিজেকে জাহির করার সকল কলা কৌশল নিয়েই রকেট সায়েন্স শিক্ষা। রকেট সায়েন্টিস্ট হওয়ার জন্য আছে পর্যাপ্ত মোটিভেশন।
রকেট সায়েন্স শিক্ষা একটা স্যাটায়ারধর্মি উপন্যাস, যেই উপন্যাসের নায়ক তাতিনের সাথে আপনি আপনার আশেপাশের অনেককেই মেলাতে পারবেন, কখনো মিলাতে পারবেন আপনাকেও যদি আপনার “খাজনার চেয়ে বাজনা” বেশি হয়। কিংবা তাতিনের বন্ধু কবিরের সাথেও মিলাতে পারবেন অনেককই। আমার বন্ধু নাজমুল, মেধাবী ছিলো। কিন্তু নিয়মে বাইরে যাইতে ওর মাঝে ব্যপক উৎসাহ ছিলো। স্কুলের সবচেয়ে কড়া শিক্ষকের সামনে বসে নকল করা, লুকিয়ে চটি বই পড়া, পড়ার টেবিলের বইয়ের চেয়ে ম্যাগাজিন বেশি থাকা এমন অদ্ভুত গুণের পাশাপাশি ও অসম্ভব মেধাবী ছিলো! কিন্তু কখনো মেধা নিয়ে জাহির করতো না! আমাদের স্কুলের কিছু স্যার যে আসলে তেমন কিছুই জানে না এ নির্মম সত্যটা আমি নাজমুলের মাধ্যমে জানি। আমরা দুজনে যেই সব স্যারদের অনেক নামও দিয়েছি। শূন্যস্থান স্যার (ইনি শুধু বোর্ডে ফিল ইন দ্যা ব্লাংকস লিখতেন আর আমাদের বলতেন, খাতায় উঠাও), মহাকাশ স্যার(ইনি পড়া বলতে বলে, বাইরের দিকে তাকিয়ে আকাশ দেখতেন অথবা, চোখ বন্ধ করে থাকতেন, ছেলেপেলেরা মাঝে মাঝে পড়ার জায়গায় গান, কবিতা, গালিগালাজ করতেন)। নাজমুলের মাঝে আমি কবিরকে পেয়েছি। এই চরিত্রগুলা অবশ্য কম। কিন্তু তাতিন আমাদের আশেপাশে অনেক। আমারতো কিছু কিছু জায়গায় আমাকেই তাতিন মনে হয়েছে।
সত্যিকার অর্থে শর্টকার্ট আমাদেরকে কোন কিছুর গভীরে যাওয়া থেকে দূরে সরিয়ে নিচ্ছে। সেটা সমস্যা না! নিজের প্রয়োজনে কেউ কোন কিছু শর্টকার্ট শিখতেই পারে। কিন্তু সেই শর্টকার্ট জ্ঞান নিয়ে অন্যকে জ্ঞান দিতে গেলেই সমস্যা। অনেকটা “এক হাতে জ্বলন্ত কয়লা এক হাতে দিপিকার হাত” এটুকু বুঝেই নিজেকে আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতার মাস্টার ভেবে ফেলা লোক কিন্তু আশেপাশে ভুরি ভুরি। এই গল্পের নায়ক মূলত তারা, তারা সফলও! কতটা সফল সেটা জানার জন্য আপনাকে ছহি রকেট সায়েন্স পড়তে হবে।
এবার হামা ভাই! হামা ভাইয়ের স্যাটায়ার আমার কাছে অনেক উচু লেভেলের মনে হয়, স্যাটায়ার দেখলে আমার মুখ দিয়ে আপনা আপনিই বের হয়ে আসে ‘সেরা ভাই সেরা’। হাসান ভাই যদি কোন কিছু নিয়ে স্যাটায়ার করে আর তা যদি আমাদের মূল ধারার কিছু পত্রিকার রিপোর্টাররা দেখে তারা তাকে সিরিয়াস কিছু মনে করে সত্য নিউজ বলে চালিয়ে দিবে। আর যারা হাসান ভাইয়ের স্যাটায়ার বুঝে ফেলবেন, তারা হাসতেই থাকবেন হাসতেই থাকবেন। যেমন ছহি রকেট সায়েন্স শিক্ষাকে কেউ কেউ মোটিভেশনাল বইও ভেবে বসে থাকতে পারে। হাসান ভাই যেমন মোটিভেশনাল স্পিকারদের পার্টটাইম মোটিভেশন দেন, তেমনি স্যাটায়ার প্রেমি, স্যাটায়ার লেখক সবার জন্য ছহিহ রকেট সায়েন্স শিক্ষা পাঠ্য।
এই বইয়ে একটা সুক্ষ্ণ বিষয় আছে। আমাদের সিস্টেম ও আমাদের গতিপথ। একটা ছোট বাচ্চা এলিয়েন, ফ্লাইং সসার, মহাবিশ্ব ইত্যাদি নিয়ে কল্পনা করছেন, কিন্তু আমাদের সিস্টেম খুব সুক্ষ্ণভাবে তাকে সেই পথটা থেকে সরিয়ে নিয়েছে। না হলে গল্পটা আলাদা হতে পারতো। হতে পারতো একজন সফল মহাকাশ বিজ্ঞানীর গল্প। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে আমাদের সিস্টেম তা হতে দেয়নি। এখানে হামা ভাইয়ের দায় নেই। কিন্তু হামা ভাই চাইলে গল্পটার মূল টার্নিং পয়েন্ট থেকে পরের অংশটা আপনার কল্পনার মতো করে আবারো লিখতে পারেন। আমরা একটা অসাধারণ সায়েন্স ফিকশন পেতে পারি সেখান থেকেই। ভেবে দেখবেন।
“পৃথিবী পৃথিবী পৃথিবী কমলালে কমলালে কমলালে বুর মতো বুর মতো বুর মতো গোল” এই লাইনের রহস্যা বইয়ের ভিতরেই আছে।
আর আমার মতো আপনিও যদি রকেট সায়েন্স শিখতে চান, তাহলে ফেব্রুয়ারীর বইমেলা থেকে বই নিতে পারেন। আর রকেট সায়েন্টিস্ট হতে যদি মন আকুপাকু করে, আপনি যদি ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত অপেক্ষা করতে না চান চাইলে হাসান ভাইকে নক দিলেই পেয়ে যাবেন।

সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৫:২৯
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

×