somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এক রাশ ঘৃণা জানিয়ে যাই সে সকল শিক্ষক স্কুল তথা এমন অমানবিক সমাজের মুখে

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



কবির নাম কি লিখছোস?
পেছন থেকে আমার সহপাঠির ফিসফিস কণ্ঠে জানতে চাওয়া।
আমি তখন ক্লাস ফাইভে পড়ি। স্কুলের পরীক্ষা চলছে আমাদের। আমিও চুপচুপ করে বললাম, কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর!
সে কি বুঝলো কে জানে লিখতে গিয়ে লিখলো,
'কবি গরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর'!!

পরে তার এই লেখা ক্লাসের সবাইকে পড়ে শোনানো হলো। ক্লাসে হাসাহাসি। আমাদের রাগী আপা পর্যন্ত হাসছেন।
আমার সহপাঠীকে কানে ধরে বেঞ্চিতে দাঁড় করিয়ে রাখা হলো। শেষে সে জানালো সে আমার খাতা দেখে লিখেছে।
অথচ আমার খাতায় সঠিকটাই লেখা ছিল। নকল নিয়ে এই হচ্ছে আমার শৈশব স্মৃতি।
পরে পুরো বছর সবাই তাকে ক্ষেপাতো
"কবি গরু" বলে!

১৯৮৭ সনে আমি যখন নাইনে পড়ি তখন পরীক্ষার আগের রাতে তানিয়া ফোন করতো, মাসুদ
শোন, তুই কিন্তু আমার সামনের বেঞ্চে বসবি।
ক্যান?
আমি বুঝেও না বোঝার ভান করতাম। সে আমাকে নানাভাবে পটাতে চেষ্টা কিরে যেতো। একসময় আমি রাজী হতাম বসতে।
এই অনুরোধের কারণ ছিল সে যাতে পরীক্ষার সময় আরাম করে আমার খাতা দেখে লিখতে পারে।
এমন ফোন পরীক্ষার আগের রাতে আরো বেশ কয়েকজনই করতো। আমাদের শৈশবে এসবকে পাপ, করাই যাবে না এমন মনে হতো না।
এগুলো শৈশব কৈশোরের সহজাত অভ্যাস মনে হয়েছিল।
আমরা উত্তেজনা নিয়ে এসব করেছি।

ক্লাশ টেনে রূপক খুব আনন্দ নিয়ে বলতো, মাসুদের এমন বাজে হাতের লেখা
অথচ আমি দুই তিন বেঞ্চ পেছন হতে দেখেও ঠিকঠাক বুঝতে পারি।
দূরে বসেও নকল করতে পারে বলে তার সেকি উচ্ছ্বাস!!
এই উচ্ছ্বাস ছিল খুশী আর আনন্দের।
অপাপবিদ্ধ।
(রূপকের কথা অনেকদিন পর লিখলাম। আমার স্কুলের এই বন্ধুটি আমাদের মাঝে নেই।
একটি সড়ক দুর্ঘটনায় দীর্ঘদিন আগেই আমাদের ছেড়ে চলে গেছে।)

এসএসসির সময়
স্যারের চোখ ফাঁকি দিয়ে আমি যাকে কারিগরী অংকন দেখিয়ে দিয়েছিলাম সে লেটার পেয়েছিল
অথচ আমি ৭৮।
খারাপ লাগেনি। বরং আনন্দে মেতেছি।
আমার একটু খানি সহায়তায় যে বন্ধুটি লেটার মারকস পেয়েছিল তাতে আমি অনেক পাপ করে ফেলেছি!!
তার জন্য আমার বা মাকে ডেকে
স্কুল থেকে টিসি দেবে
এমন অপমান করবে
এসব আমাদের সময় কল্পনাতেও আসেনি। আমরা যে খারাপ স্কুলে পড়েছি তাও নয়। তখন সে সময়ে সেই স্কুলগুলো ঢাকার সেরা স্কুলের তালিকায় ছিল। অভিজাত স্কুলই ছিল।
তবু পরিবেশ
পারিপাশ্বিকতা এমন সহজ সাধারণ ছিল।
আমরাও ছিলাম অন্যরকম।
শিক্ষক শিক্ষিকারা ছিলেন আপন।
কাছের জন।

এই যুগে এসে
দেশের তথাকথিত নামী স্কুলের একটির ছাত্রী
মাত্র ১৫ বছরের
অরিত্রির মৃত্যু আমাদের দেখতে হয়।
ছি!

এক রাশ ঘৃণা জানিয়ে যাই সে সকল শিক্ষক
স্কুল
তথা এমন অমানবিক সমাজের মুখে। যেখানে ছোট একটি মেয়ের সামনে বাবা মা কে অপমানিত হতে হয়। লজ্জা ঘৃণা লুকাতে অরিত্রিদের এই পৃথিবী ছেড়ে যেতে হয়!
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২২ রাত ৯:০৭
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×