১।
হাসছি মোরা হাসছি দেখ,
হাসছি মোরা আল্লাদী,
তিন জনেতে জটলা করে
ফোকলা হাসির পাল্লা দি।
হাসতে হাসতে আসছে দাদা ,
আসছি আমি,আসছে ভাই,
হাসছি কেন কেউ জানে না,
পাচ্ছে হাসি হাসছি তাই।।
আমার খুব প্রিয় একটা ছড়া। প্রথম শুনেছিলাম লুতফুন্নেসা ম্যাডামের কাছে। কাজী লুতফুন্নেসা। আমার খুব প্রিয় একজন মানুষ। এই জীবনে এত প্রিয় মানুষ আমার খুব কমই আছে। তাঁর হাত ধরেই আমার সাংস্কৃতিক অঙ্গনে পদচারনা। তাঁর অনুপ্রেরনাতেই আমি একে একে পেয়েছি নতুন কুঁড়ি, জাতীয় শিশু পুরস্কার, ন্যাশনাল চিলড্রেন ফেস্টিভ্যাল , প্রেসিডেন্ট এ্যাওয়ার্ড সহ কত শত পুরস্কার!!পেয়েছি বিটিভিতে একটা অনুষ্ঠান নিয়মিত উপস্থাপনার সুযোগ। সেই ক্লাস টু থেকেই আমি ম্যাডামের সান্নিধ্যে রয়েছি। ম্যাডাম আমাকে হাতে ধরে শিখিয়েছেন কবিতা আবৃত্তি, গল্প বলা, বিতর্ক, বক্তৃতা, অভিনয়, উপস্থাপনা, উচ্চরন, বাচনভঙ্গি... সব কিছু। আমি হয়ত কথা বলতে পারতাম, আর এই মানুষটি আমায় নতুন করে চলতে শিখিয়েছেন, বলতে শিখিয়েছেন। আজকে যে ছড়াগুলো আমি দিলাম, সবগুলোই আমার শৈশবে এই মানুষটির কাছ থেকে শেখা। আমি এখনো ছড়াগুলো পড়ি। আমার যতই মন খারাপ থাকুক, শৈশবের প্রিয় ছড়াগুলো মন ভালো করে দেয়। এখনো ছুটিতে বাড়ি এলে ছুটে যাই ম্যাডামের কাছে, নতুন নতুন কত কিছু শিখি!! আর ৪-৫ বছরের ছানাপোনাগুলোকে গল্প শোনাই। ছানাপোনাগুলো আমাকে হিংসে করে, কারণ ম্যাডাম নাকি ওদের চাইতে আমাকে বেশী ভালোবাসে। আবার ওরা আমাকে অনেক পছন্দও করে—আমি ওদের অনেক মজার মজার ছড়া শেখাই...... ওদের বয়সে যে ছড়াগুলো আমি শিখেছিলাম প্রিয় ম্যাডামের কাছ থেকে......
২।
সিংহ বলে ,হালুম
এত্তগুলো বনের পশু
ক্যামনে একা পালুম?
হচ্ছে না যে মালুম।
বাঘ বলল, হুম
আমিই হলাম বনের রাজা
তোমার কিসের ধুম?
করবো তমায় গুম।
কুকুর বলে, ঘেউ
একটা বনে দুই রাজা, তা
মানবে না তো কেউ
বইবে খুনের ঢেউ।
মোরগ বলে, কুক্কু
তোমরা সবাই থাকলে হয়ে
নিরেট গবেট মুকখু
খেলব না আর থুক্কু।
বেড়াল বলে, ম্যাও
দোহাই লাগে কাইজা ফ্যাসাদ
একটু খ্যামা দ্যাও
নইলে আড়ি ন্যাও।
ইঁদুর বলে , চি চি
মুখের ভিতর দাও ঢুকিয়ে
লাল করলার বিচি
আই এম সরি, ছি-ছি।
কাক রেগে কয়, কা কা
সকাল দুপুর ঝগড়া শুনে
যায় না বনে থাকা
যাচ্ছি চলে ঢাকা!!
(এরপর থেকে দেশের সব কাক শুধু ঢাকাতেই দেখা যায়।)
৩।
একটা কাঁদে নেচে নেচে
একটা কাঁদে গড়িয়ে
একটা কাঁদে ধুলোর উপর
হাত-পা গুলো ছড়িয়ে
একটা কাঁদে গানের মতো
একটা কাঁদে নাকে
আর একটা তো কাঁদার সময়
আকাশে চেয়ে থাকে।
একটা কাঁদে প্যারেড করে
হাত-পা গুলো লাফিয়ে
একটা কাঁদে গলার স্বরে
মহল্লাটা কাঁপিয়ে।
কেউ কাঁদে না সোজাসুজি
একটা কিছু না করে
ওদের সবার কান্না দেখে
আমি থাকি হা করে।
৪।
সেগুণ গাছে বেগুন ধরে, তমাল গাছে তুলো
সিংহ সাহেব মাংস ছেড়ে নিত্য চিোয় মুলো
বাঘা কুকুর দৌড়ে পালায় যেই সে দেখে হুলো
বেঁটে ঝাড়ে হাত বাড়িয়ে নীল আকাশের ধুলো।
লেজ উচিয়ে নাচে ঘুঘু পড়ে যদি ফাঁদে
চিংড়ি ফড়িং লম্ফ মেরে পৌঁছুতে চায় চাঁদে।
রাজার মেয়ে হাঁড়ি হাঁড়ি চুনোপুঁটি রাঁধে
মাকড়সা তার সুতো দিয়ে মস্ত হাতি বাঁধে।।
আজগুবি সব ভাবনা যদি পাকায় গণ্ডগোল
তেল না ঢেলে মাথায় ঢাল বরফ, পানি, ঘোল।।
৫।
কানা খানা গানা ঘানা
পড়তে এলো কুমির ছানা
শিয়াল মামার ইশকুল
নেইকো টেবিল নেইকো টুল
ক্লাসে মামার ডাকে নাক
পড়া এখন বন্ধ থাক
যতই করো গণ্ডগোল
যতই বাজাও ঢাক ও ঢোল
ভাঙবে না তার ঘুমের ঘোর
হই হল্লা চালাও জোর
সারা ক্লাসে নাচানাচি
হাডুডু আর কানামাছি
শিয়াল মামার ভাঙলে ঘুম
বাড়ি ফেরার পড়ল ধুম।।
৬।
(এইটা আমার সব চাইতে প্রিয়)
আমার মতো বাবাটাও নাকি ছোট্ট ছিলরে আগে
ভাবতে কী ভালো লাগে
নীল হাফ প্যান্ট আর সাদা শার্ট পরে যেত ইশকুলে
কান ছিল তুলতুলে।
সেই কান দুটো প্রিয় ছিল খুব ক্লাস টিচারের কাছে
সেটা তো জানাই আছে।
ইশকুলে গিয়ে কপালে জুটত নিয়মিত কান মলা
চোখ বুজে যায় বলা।
বাবাটার বাবা রাগি ছিল খুব, যেমনটি এই বাবা
“গোল্লায় তুমি যাবা”
একথা বলেই পিটুনি লাগাতো, কষে দিত চড়- কিল
আরও ছিল মুশকিল।
আমার মতই খেলতে দিতনা বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে
বুড়ো পাজি ছিলো কী যে!!
আজ বড় হয়ে বাবাটাও দেখ ঠিক দাদুটারই মতো
শাসন করে যে কত!!
আমি বড় হয়ে আমার ছেলেকে একটুও বকবনা
বল্ব-“লক্ষ্মী সোনা
ইশকুলে যেতে হবে না তোমাকে, বৃষ্টিতে খেল গিয়ে”।
বলব কী ভাই, বিপদেই আছি
পাজি বাবাটাকে নিয়ে!!
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা নভেম্বর, ২০১১ রাত ৩:৪২