somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্ট্রেস - বালতির ভিতর যত চিন্তা ও সমাধান!

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ভোর ৬:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

স্ট্রেস বা চাপ, এটা আমরা আমাদের জীবনে কম বেশী অনুভব করি। পরিবারের থেকে বিভিন্ন চাপ, কর্মস্থলে চাপ, সোশ্যাল চাপ ইত্যাদি ইত্যাদি। ধরেই নেওয়া হয়ে যে সব স্ট্রেস আসলে খারাপ। কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে স্ট্রেস বলতেই খারাপ কিছু হতেই হবে এমন না।



লেখার শেষে আমি আপনাকে একটি বালতি দিবো! আশাকরা যায় এই বালতি আপনাকে আপনার স্ট্রেস গুলির কারণ এবং তার সমাধানের কিছু উপায় আপনার থেকেই বের করে আনবে।

ভালো স্ট্রেস বা মোটিভেশন

আসলে ভালো স্ট্রেস গুলিকে আমরা স্ট্রেস বলি না। অধিকাংশ সময় এটাকে মোটিভেশন বলা হয় বা বলা যায়।

ধরেন, আপনি জানেন যে এ মাসের শেষ দিনে আপনাকে একটি রিপোর্ট সাবমিট করতে হবে। কোন পরিস্থিতিতেই আপনি একদিনও দেরী করতে পারবেন না। আপনার মনের মধ্যে একধরনের চাপ কাজ করবে যে আপনি কাজটি সঠিক সময়ে করতে পারবেন কি না। দেখা গেলো আপনি ঐ রিপোর্টের জন্য আগে থেকেই আস্তে আস্তে কাজ করা শুরু করে দিলেন; এবং মাস শেষ হওয়ার অনেক আগেই আপনার রিপোর্ট শেষ হয়ে গেলো।

সাইকোলজিকালী দেখতে গেলে এটাকে মোটিভেশন বলা যায়। কাজ সময় মত শেষ করতে হবে, এই মোটিভেশন নিয়েই আপনি কাজ আগে থেকে শুরু করেছেন, এবং আগেই শেষ করেছেন। তবে অন্য ভাবে দেখলে এটাকে "ভালো স্ট্রেস" বলা চলে। কারণ আসলেই আপনার মধ্যে একটা চাপ অনুভব হয়েছে।

ঘরে বাইরে সবখানেই আমরা কম বেশী এগুলি দ্বারা প্রভাবিত। আমার নিজের একটা উদাহরণ দেই। আমি ওভার ফোন কমিউনিকেশনে প্রচন্ড প্রচন্ড দুর্বল। এমনও সময় গেছে যে একটা ফোন কল না করার কারণে আমাকে বড় বড় সমস্যায় পড়তে হয়েছে। ফোন উঠিয়ে যাষ্ট নম্বরটা চেপে কথা বললেই হয়ে যায়, কিন্তু আমি সেটা পারিনি।

ফলস্বরূপ, আমি একটা সময় আমার বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন থেকে বিচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিলাম বলা চলে। গত কয়েক বছর থেকে সেটা আমি অনেকাংশেই কাটিয়ে উঠেছি। নিয়মিত এর ওর সাথে কথা বলছি; ফোন দিচ্ছি। এই পরিবর্তনটা আসবার আগে আমি সব সময় একটা চাপে থাকতাম। হঠাৎ কারও সাথে দেখা বা কথা হলে প্রথমেই আমাকে শুনতে হবে, "তুমিতো ডুমুরের ফুল" টাইপের কথা।

এক্ষেত্রে এই চাপটি আমাকে আরও বেশী সোশ্যাল হতে সাহায্য করেছে।

কর্মক্ষেত্রেও আমরা এমন সব চাপ অনুভব করি। আর এই চাপ থেকেই আমাদের ভালো কাজটি বেরিয়ে আসে। সময় মত কাজ শেষ করা, নিজের পারফরমেন্স বাড়ানো, ইনোভেটিভ আইডিয়া নিয়ে আসা, ইত্যাদি। আর যেহেতু এই স্ট্রেস গুলি থেকে আমাদের ভালো কিছু হয়, তাই আমরা এটাকে চাপ মনে করি না। ফলে "ভালো স্ট্রেস" বলে যে কিছু আছে, তার অস্তিত্বই মাঝে মধ্যে আমরা টের পাই না। ভালো স্ট্রেস যেমন আমাদের নিজেদের পারফরমেন্স বাড়ায়, এটি স্বাস্থ্যগত দিক থেকেও ভালো। আপনি যখন নিজেকে নিয়ে খুশি থাকবেন, আপনার মন ও শরীর থাকবে ভালো।


খারাপ স্ট্রেস

খারাপ স্ট্রেস বিষয়টি ভালো স্ট্রেস বিষয়ের ঠিক উল্টা। এটি আপনার কর্মক্ষেত্রে আপনার পারফরমেন্স কমায়, আপনার শারীরিক ও মানসিক অবস্থার অবনতি ঘটায়, আপনার সোশ্যাল লাইফেও এফেক্ট করে।

অতিরিক্ত কাজের চাপ, টাকা পয়সার টেনশন, সন্তান সন্তুতির ভবিষ্যৎ, স্বামী বা স্ত্রীর সাথে সম্পর্ক, জমি-জমা ইত্যাদি ইত্যাদি অনেক কারণেই এই খারাপ স্ট্রেস আমাদের পেয়ে বসতে পারে। স্ট্রেসের বড় একটি কারণ হচ্ছে অতিরিক্ত চিন্তা করা!

গত সেপ্টেম্বর মাসে আমি নতুন একটা পজিশনে জয়েন করি। জয়েন করার তৃতীয় দিনের মাথায় একটি মিটিংএ গিয়ে আমার অবস্থা টাইট। ইন্টারনাল অডিটে আমার ডিপার্টমেন্টের করুণ অবস্থা ফুটে উঠেছে। এই অডিটরের সাথে আমার আগে থেকে কাজের যোগাযোগ নাই। ফলে অডিটর আমাকে উল্টা সিধা কিছু কথা বলে দিলো। আমিও ক্ষেপে গিয়ে তার নামে নালিশের সিদ্ধান্ত নিলাম।

ফলাফল, নতুন পজিশনে আসার তৃতীয় দিনেই আমার মনে হতে থাকলো যে এই পজিশনে কাজ করা আমার জন্য প্রায় অসম্ভব হয়ে যাবে। যদিও আমি নিজে জানতাম যে আমার আসলে এই কথাগুলি শোনার কথা নয়, কারণ আমার আগে যে লোক এই পজিশনে ২.৫ বছর কাজ করেছে সেই এই করুন পরিস্থিতির জন্য দায়ী। এবং আমি তিন দিনে কোন ভাবেই গত আড়াই বছরের করুন পরিস্থিতি টেনে তুলতে পারবো না, এই সামান্য সহজ বিষয়টা বোঝার মত চিন্তাশক্তি ঐ অডিটরের নাই।

কিন্তু এই স্ট্রেস আমাকে প্রথম মাসে পুরা অবস্থা খারাপের মধ্যে এনে দিলো। এমনকি আমার লাইন ম্যানেজার, যে আমাকে প্রচন্ড বিশ্বাস করে এই ডিপার্টমেন্টে এনেছিলো, সেও আমার উপর থেকে আস্থা হারাতে শুরু করলো। এবং এর মূলে হচ্ছে, আমার নিজের মধ্যে অমূলক একটা স্ট্রেস।

যাই হোক, লং স্টোরি সর্ট, গত পরশু এক্সটারনাল অডিটে আমার ডিপার্টমেন্ট ৮টি দেশের একটা ক্লাস্টারের মধ্যে সব থেকে ভালো পারফরমেন্সের জন্য প্রসংশিত হয়েছে।

তবে ঐ এক মাসে আমি যতটুকু ওজন হারিয়েছি, মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়েছিলাম এগুলি কিন্তু আমার জন্য আগামী কয়েক মাস বা হয়ত কয়েক বছরের জন্য একটা চলমান চাপ হয়ে থাকবে।

স্ট্রেস বাকেট

নিচে একটি বালতির ছবি দেওয়া হলো। এই বালতির উপরে কিছু মেঘ আছে, এগুলিই ধরুন আপনার স্ট্রেসের কারণ। আর যে বৃষ্টি হচ্ছে, সেটা আপনার স্ট্রেস এর বালতিকে ধীরে ধীরে পূরণ করে।

আর বালতির নিচে যে ট্যাপ বা ফুটা দেখছেন, ওগুলি আপনাকে সাহায্য করে আপনার স্ট্রেস থেকে বের হয়ে আসতে।

এবার প্রথমে আপনার মেঘ গুলি বা স্ট্রেস এর কারণ গুলি নির্ণয় ও নির্ধারণ করুন। সাথে সাথে আরও নির্নয় করুনঃ

১। আপনার বালতি কত বড়।
২। ঠিক এই মুহুর্তে আপনার বালতি কতটুকু পূর্ণ।
৩। ঠিক কি কি কারণে আপনার বালতি আপনার কাছেই অতিরিক্ত ভরাট মনে হবে।
৪। স্ট্রেস থেকে বের হওয়ার জন্য যে ট্যাপ গুলি আছে, সেগুলি কি কি ও সেগুলি সম্পূর্ণ কাজ করছে কি না



আপনার বালতির জন্য উদাহরণ স্বরূপ নিচের বালতিটি দেখতে পারেন।



স্ট্রেস বাকেট সোর্স

শেষ কথা - যদি আপনি ধার্মিক হন

এই কথা গুলি মূলত ধার্মিকদের জন্য, বিশেষত মুসলিমদের জন্য। অন্য ধর্মের লোকেরা হয়ত রিলেট করতে পারবেন।

বিজ্ঞান বলে চাপ গুলি সবই আমাদের মনের ভিতর কাজ করে। মনের প্রশান্তি আমাদেরকে এই চাপ গুলি থেকে বের হতে সাহায্য করে। আর মুসলিম হিসাবে আমরা বিশ্বাস করি যে আমাদের সকল সমস্যার সমাধান আছে আল্লাহর কাছে।

প্রচন্ড চাপে থাকলে কিছু কাজ করতে পারেনঃ
১। প্রচুর দান করা (টাকা পয়সা না থাকলেও যতটুকু সম্ভব করা) - দান আল্লাহর রাগ প্রশমিত করে; আর অন্য কারও কষ্ট দূর করা আপনার মনের মধ্যে একটা আনন্দের আভা এনে দিবে।
২। গভীর রাত্রে আল্লাহর কাছে সালাত (নামাজ) এর মাধ্যমে প্রার্থনা করা - আল্লাহ এ সময়ে বান্দার দুয়া অধিক কবুল করে থাকেন; আর আপনার কষ্টের কথা সর্বশ্রেষ্ট শ্রোতাকে জানাতে পারা একটা মানসিক শান্তির বিষয়।
৩। সালাম বিনিময় করা - এতে সমাজে সুসম্পর্ক তৈরী হওয়ার সুযোগ বাড়ে
৪। প্রচুর কুরআন তিলওয়াত করা (অর্থ সহ) - এটি আপনার মনকে শান্ত করবে। কুরআন তিলওয়াত শুনতেও পারেন


Photo by Tim Goedhart on Unsplash
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ভোর ৬:০৩
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×