somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আপনি কতটা সার্চেবল (searchable)? - ডেভলপমেন্ট ১০১ - পর্ব ০৩

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৪:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কয়েকদিন আগে একটা ইন্টারভিউতে আমাকে ডাকা হয়েছে ইন্টারভিউয়ার হিসাবে। পোষ্টটা ছিলো ডিজিটাল মার্কটিং পোষ্টের বিষয়ে। আমাদের অফিসে একজন মার্কেটিং ম্যানেজার আছেন ঠিকই, তবে তিনি সেকেন্ড ওপেনিয়নের জন্য আমাকে যোগ করেছিলেন; যদিও আমি মার্কেটিং ডিপার্টমেন্টে কাজ করি না।



প্রত্যেক ক্যান্ডিডেটের জন্য আমার একটা প্রশ্ন ছিল, How searchable are you? ১০জন ক্যান্ডিডেটের মধ্যে ৮জন প্রশ্নটা এক দফাতে বুঝতেই পারে নি! বুঝিয়ে দিলেও অধিকাংশই কোন উত্তর করতে পারে নি!

মাত্র ২জন প্রশ্নটা বুঝেছে, একজন সুন্দর উত্তর করতে পেরেছে, এবং সে আসলেই searchable। আমরা তাকে বিনা দ্বিধায় তার এক্সপেক্টেড স্যালারীর থেকে বেশী দিয়ে হায়ার করেছি! দ্বিতীয়জন আসলে তেমন ভাবে ধোপে টিকেনি।

চাকরীর ক্ষেত্রে আপনার সার্চেবল হওয়া একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে বেশী সার্চেবল হলে কিন্তু হিতে বিপরীত হতে পারে। আসছি ধীরে ধীরে।

সার্চেবল হওয়ার গুরুত্বঃ
বর্তমানে প্রায় সকল এম্প্লায়ারই তাদের বর্তমান বা ভবিষ্যৎ কর্মীদের গুগলে ও লিংকডইনে সার্চ করে থাকেন। কর্মীদের বিভিন্ন বিষয় জানতে ও বুঝতে চেষ্টা করেন। একজন ভালো ম্যানেজারারিয়াল পোষ্ট পেতে হতে হলে আপনাকে সার্চেবল হওয়া উচিৎ। আপনার আগে করা বিভিন্ন কাজ, আপনার কাজ রিলেটেড অন্য সব এক্সপেরিয়েন্স এগুলি একটা কম্পানিকে আপনার সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ ও পজেটিভ ম্যাসেজ দেয়।

১. সার্চেবল হওয়াঃ
আমাদের দেশের বেশীরভাগ ভাই-বোনেরাই অনলাইনে একেবারেই সার্চেবল না। হোক সে নতুন, কিংবা চরম এক্সপার্ট কোন লোক। তার কোন নাম নিশানা অনলাইনে পাওয়া যায় না। অনলাইনে খুঁজে পাওয়ার সব থেকে সহজ উপায় হচ্ছে লিংক্ডইন, ইন্টাগ্রাম, ফেসবুক, নিজেস্ব ওয়েবসাইট বা ব্লগ ইত্যাদি ইত্যাদি। আর যারা অনেক উচু পর্যায়ে থাকেন, তাদের তো পত্রিকায় নিউজও সার্চের তালিকায় আসে।

আমাদের ফ্রেস গ্রাজুয়েট ভাই-বোনেরা মনে করেন যে তারা ফ্রেস গ্রাজুয়েট, তাই তাদের কোন কিছু করার নাই সার্চেবল হবার জন্য। কিন্তু কথাটা ভুল। ভার্সিটির বিভিন্ন এসাইনমেন্ট, তার ফাইন্ডিংস, তার করা ভলেন্টিয়ার ওয়ার্ক ইত্যাদি ইত্যাদি দিয়ে কিন্তু লিংকডইন ভরে ফেলা যায়।

অনলাইনে বহু ওয়েব সাইট আছে, যারা ফ্রিতে ব্লগ বা ওয়েব সাইট তৈরী করতে দেয়। সেখানে নিজর নামে একটা ব্লগ/ওয়েব সাইট খুললে কিন্তু মন্দ হয় না। ওখানে নিজের সিভি থাকতে পারে, বিভিন্ন এ্যাক্টিভিটির তথ্য থাকতে পারে।

২. যেখানে সার্চেবল হতে সাবধান থাকা দরকারঃ
যদিও আগের পয়েন্টে উল্যেখ করেছি যে ফেসবুক ও ইন্সটাগ্রামে সার্চেবল হওয়া যায়, তবে আমি বলবো সোশ্যাল মিডিয়ায় সার্চেবল হওয়ার নানান বিপদ আছে।

ফেসবুক, ইন্সট্যাগ্রাম, টুইটার, টিকটক ইত্যাদিতে মানুষ সাধারণত নিজের পারসোনাল তথ্য দিয়ে ভরে রাখে। মাঝে মধ্যে এখানে ওখানে আজিব আজিব মন্তব্যও করে। এটা কিন্তু ব্যাক ফায়ার করতে পারে। যেমন আপনি হয়ত খুব সারকাজম প্রেমী। কোন এক নাইকার খোলামেলা ছবিতে একটা দুর্দান্ত কমেন্ট করলেন, গোটা কয়েকশ লাইকও পেলেন। ওদিকে দেখা গেল আপনার ভবিষ্যৎ (বা বর্তমান) এম্প্লয়ার আপনার ঐ কমেন্ট দেখলো আর খুব রাগ হলো....... আপনার ১২টা বাজতে খুব একটা সময় লাগবে না।

তাই, এসব জায়গায় সাবধানে থাকা খুব ভালো। আমি বলবো মানুষকে বিরক্ত করে হুদাই পোষ্ট/কমেন্ট করতে যাবে না। আর যদি জায়গাটা সামুর মত ফ্রি প্লাটফর্ম হয়, তাহলে আমার মত দ্বিতীয় নিক খুলে নিন! ;)

৩. আউলফাউল সার্চেবল হতে যাবেন না!
আমি ফেসবুকে যখন ক্যারিয়ার রিলেটেড কথাবার্তা লিখি, তখন প্রায়ই জবের জন্য মানুষ আমাকে ম্যাসেজ দেয়। এদের বেশ অধিকাংশের ফেসবুক আইডির নাম দেখুনঃ অচিন পাখি, রকার বয় সুমন, অপরিচিত পৃথীবিতে একা আমি, এন্জেল কারিনা, আরব্য রজনী, আলিফ লায়লা, দুঃখে ভরা মন............ ইত্যাদি ইত্যাদি।

এর উপর এদের প্রাফাইলে ঢুকলে দেখবেন এমন এমন সব কথাবার্তা, ভিডিও এরা শেয়ার করে রেখেছে, মনে হবে যেন ছেলে/মেয়ে এখনই আত্মহত্যা করতে যাচ্ছে।

বিশ্বাস করেন, এদের কেউ চাকরী দিতে চায় না, এমনকি অফিস বয়ের চাকরীও দিতে চায় না। কিন্তু এদের সংখ্যা প্রচুর....।


আমার পাওয়া জব অফার
২০১২ সালে, সবে এমবিএ শেষ করেছি, আমি ও আমার একজন বড় ভাই মিলে একটা প্রতিষ্ঠান শুরু করেছি মাত্র, ওয়েব ডেভলপমেন্টের। আমার তার ৪ বছর আগে থেকেই একটা ওয়েব সাইট ছিলো। তখন শিখছিলাম সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনের কাজ।

মাল্টি ন্যাশনাল কম্পানির একজন তখন তাদের প্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশ পার্টের জন্য ফুলটাইম ওয়েব ডেভলপার খুঁজছিলেন। তিনি আমাকে গুগলের প্রথম পেজেই পেয়ে গেলেন। আমার আগে মাত্র ২টা রেজাল্ট ছিলো, তার দুইটাই দুই কম্পানির। উনি আমাকে সরাসরি জব অফার করে বসলেন। আমি শেষ পর্যন্ত তার সাথে আলোচনা করে রেগুলার পার্টটাইমের একটা অফার হাতিয়ে নেই। দিনে ২-৪ঘন্টা সময় দিতাম, বেতন চরম ভালো ছিলো।

এরপর আমার কাছে অফার আসে একটা ব্যাংক থেকে। আমি ২০০৯ সালে একটা এসাইনমেন্ট করতে গিয়ে একজন ব্যাংক ম্যানেজারের সাথে কথা বলেছিলাম। এসাইনমেন্ট শেষ করে তাকে একটা কপি দিয়েছিলাম (এটা আমি সব সময়ই করতাম)। উনি পদোন্নতি পেয়েছেন ঐ ব্যাংকেই। আগের অফিস ক্লিয়ার করে নতুন অফিসে যাবার সময় তিনি আমার ঐ এসাইনমেন্ট খুঁজে পান। কৌতুহল বসত উনি অনলাইনে ঐ এসাইনমেন্টের একটা অংশ নিয়ে সার্চ দেন আর আমাকে খুঁজে পান।

আমার যেহেতু নিজের ওয়েব সাইট ছিলো, সেখানে তিনি আমার ঐ এসাইনমেন্টের দ্বিতীয় কিস্তিও পেয়ে যান, যেটা আমি পরবর্তি সেমিষ্টারে করেছিলাম। ব্যাস, উনি ফোন উঠিয়ে কল করেন; জিজ্ঞাসা উনার টিমে জয়েন করতে আগ্রহী কি না। আগ্রহী হলে উনি ম্যানেজমেন্টের সাথে কথা বলবেন।

আমার আগের যে চাকরীতে ছিলাম, সেখানে মাঝে ৬মাসের জন্য একটা ক্লাস্টার রোল পেয়েছিলাম। আমাদের অফিসের সোশ্যাল মিডিয়াতে অন্য দেশ থেকে একজন পোষ্ট করেছিলেন যে ৬মাসের একটা প্রোজেক্টের জন্য তার লোক দরকার। এক্সপ্রেশন অফ ইন্টারেষ্ট চেয়েছিলেন। সবচেয়ে ভালো লেগেছিলো তার সিষ্টেম। সে ক্লিয়ার করে লিখেছে যে এই কাজের জন্য ট্রেনিং দেবার যেমন সময় নেই, তেমন বড় একটা এক্সপ্রেশন পড়ারও সময় নেই। তাই তার দরকার এই কাজ জানে এমন কেউ, এবং সর্ট এক্সপ্রেশন অফ ইন্টারেষ্ট দিবে এমন কাউকে।

আমি ওটায় কমেন্ট করেছিলাম, search me!

তিন দিন পর তিনি আমার ম্যানেজারকে মেইল দিলেন যেন আমাকে ৬মাসের জন্য তার টিমে যোগদান করতে পারমিশন দেওয়া হয়।

শেষ কথা
পজেটিভলি সার্চেবল হোন। ক্যারিয়ার গড়তে এটা সাহায্যের হবে আশা করা যায়।

Photo by Nathana Rebouças on Unsplash
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৫:০৭
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×