somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লিপি আপার দর কষাকষি

০২ রা অক্টোবর, ২০২৩ বিকাল ৩:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমরা যখন ছোট ছিলাম, তখন আমাদের এলাকায় এক ধরণের বিক্রেতারা আসতেন। চারকোন একটা পাতলা বক্স, উপরে থাকতো কাঁচের পার্টিশন, যার ভিতর থেকে ভিতরের সব দেখা যেতো। থাকতো মেয়েদের সাজ-সজ্জার জিনিষপত্র।



এনারা যখন আসতেন, উচ্চস্বরে "লেইস ফিতা" বলে চিৎকার করতেন। বাংলা ব্যান্ড শিল্পী জেমসের একটা গান ছিলো এই নামে। ব্লগে একজন আছেন লেইস নামে।

এমন বিক্রেতাদের মত আরও নানান ধরণের বিক্রেতা আসতো। হাড়িপাতিল থেকে শুরু করে ঘর-গৃহস্থলীর বিভিন্ন জিনিষ বিক্রি হতো, ভ্যানে করে।

আমাদের পাশের বাসায় লিপি নামে একজন থাকতেন। আম্মার পরিচয়ের সুত্র ধরে আমরা তাকে লিপি আপা বলে ডাকতাম। উনার বলা ভূতের গল্প গুলি আমাদের মজা লাগতো। উনি যেসব গল্প করতেন, ভূত বলে যদি সত্যিই কিছু থাকতো, তাহলে বোধ হয় তারা আবার মরে যেতো, কিন্তু ভূত আর হতো না। সেগুলি পরে একদিন বলা যাবে। আজকে তার কেনা কাটার গল্প বলি।

আমাদের জানা ছিলো যে লিপি আপা ভালো দরদাম করতে পারেন। কিন্তু একদিন আমরা আমাদের নিজের চোখে সেই দামাদামী দেখার সুযোগ পেলাম। এই ঘটনা মনে পড়লে এখনও আমার হাসি যেমন পায়, কষ্টও পায় বিক্রেতাদের জন্য।

ঐদিন এক বিক্রেতা এসেছেন, তার সাথে মূলত থালা-বাটি, জগ-গ্লাস, কাপ-পিরিচ ইত্যাদি ছিলো। লিপি আপার চোখ আটকালো একটা কাঁচের চায়ের কাপের দিকে। বিক্রেতার দাবি যে এটা সহজে ভাঙ্গবে না। লিপি আপা কাপ নিয়ে এখানে ঘাই দেন, ওখান গুতা দেন, শেষে একটা ইটের কোনায় বাড়ি দিয়ে বসলেন! বহুত কসরত করেও ভাঙ্গতে পারলেন না। এবং দাবী করলেন যে উনি যেহেতু ফেইল মারছেন, তাই ঐটা উনি কিনবেন না!

এরপর তিনি তাকালেন কাঁটা চামুচ এর দিকে। দাম মোটামুটি পছন্দ হলো। গোটা খানে (মনে নাই কতগুলি) এর দাম জিজ্ঞাসা করলেন। বিক্রেতা জানালো ৩০ টাকা। উনি বললেন উনি ২০টাকার এক পয়সাও বেশী দিবেন না। বিক্রেতার সাথে সে কি জোরাজুরি। বিক্রেতা আর কোন ক্রেতার সাথেও কথা বলতে পারেন না!

প্রায় ১০-১৫ মিনিটের ক্যাচাকেচির পর বিক্রিতা একপ্রকার বিরক্ত হয়েই বললেন, ঠিকাছে, আপনি ২০টাকাই দেন। লিপি আপা মাথা নেড়ে বললেন, ২০টাকা কেন দিবো? আমিতো ২০টাকা বলি নাই। বলেছি ২০টাকার বেশী দিবো না। আমিতো মূলত এটা ১৫ টাকায় কেনার চিন্তা করতেছিলাম!

বিক্রেতার মুখের দিকে তাকিয়ে বোঝা গেলো যে সে নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারতেছেন না! তবুও বিক্রেতা শেষ চেষ্টা স্বরূপ বলে দেখলেন ১৫ টাকাই দেন।

লিপি আপা মাথা নেড়ে বললেন, আমিতো ১৫ টাকায় কেনার চিন্তা করতেছিলাম, কিন্তু ভাবেছিলাম দাম বললবো ১০টাকা! আর দামাদামী করে ১০-১৫ টাকার মাঝে কোন কিছু দিবো।

বিক্রেতা এবার ধপ করে মাটিতে বসে পড়লেন। তিনি এদিক ওদিক তাকিয়ে যেন সাহায্য খুঁজলেন। কিন্তু লাভ হলো না। আশপাশ থেকে যারা ঘিরে আছে, সবাই লিপি আপার দামাদামীতে মজা পেয়ে গেছে।

বিক্রেতা এবার কাই-কুই করে অনেক অনুরোধ করলো ১৫টাকা দিতে। তাহলে তার অন্তত কেনা দামটা ওঠে। কিন্তু লিপি আপা এবার শক্ত হলেন ১০টাকায়।

বিক্রেতা বেশ খাবি খেয়ে গেলেন। আর কিছু সময় চেষ্টা করে বিক্রেতা তার হাত থেকে বাঁচতেই তাকে ১০টাকাতে দিতে রাজি হলেন। কিন্তু.... কিন্তু লিপি আপা নিবেন না। বলতেছেন আপনাকে কোন বিশ্বাস নাই। ৩০টাকা দাম বলে ১০টাকায় নামছেন। আমার তো মনে হয় ওটা আপনি ৫টাকাতেই দিতেন!

বিক্রেতা এবার কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঝাপ দিয়ে লিপি আপার পায়ের সামনে পড়ে বললো, আপা মাফ করেন আমারে আপনার যা মনে চায় তাই দেন। কিন্তু আমারে অন্য কাষ্টমার গুলার সাথে কথা বলতে দেন।

লিপি আপা এবার বললেন, ঠিকাছে, আমি ১০টাকাই দিবো, কিন্তু আমাকে ঐ কাপটা দিতে হবে। আমি পরে ওটাকে ভাঙ্গার চেষ্টা করবো। বিক্রেতা কিছু না বলে চামুচ আর কাপ এগিয়ে দিলেন। লিপি আপা তার ব্লাউজের ভিতর থেকে আধা ভেজা একটা নোট বের করলেন, নোটটার এমাথা টু ওমাথা ছেড়া, ক্লিয়ার টেপ দিয়ে জোড়া দেওয়া। কিন্তু বিক্রেতা কিচ্ছু বললেন না।

লিপি আপা চলেই যাচ্ছিলেন, কিন্তু কি মনে করে আবার পিছু ফিরলেন। জিজ্ঞাসা করলেন যে বিক্রেতার কাছে লবনের বাটি হবে কি না। বিক্রেতা বললেন হবে, বলে উঠে দাড়ালেন, এবং যত দ্রুত সম্ভব তার ভ্যান গাড়ি নিয়ে ভেগে গেলেন! লিপি আপা অবাক হয়ে দাড়িয়ে থাকলেন। বললেন, আরে আমি কিনলেই না তোমার ব্যবসা হবে!

এরপর বহু বছর কেটে গেছে। লিপি আপা এখন কোথায় থাকেন জানি না। কিন্তু কোন কিছু নিয়ে কেউ একটু দামাদামি করতে থাকলে তাকে আমি লিপি আপার গল্প বলি।

ছবিঃ লেইস ফিতা by Shariful Arif
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা অক্টোবর, ২০২৩ বিকাল ৩:৫৪
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×