আজকাল অভিনেতা, অভিনেত্রী, শিল্পী, খেলোয়াড় ইত্যাদি পেশার মানুষদের রাজনীতিতে আসার ট্রেন্ড চালু হয়েছে। এটা খারাপ কিছু না। ভিন্ন পেশার বলে যে রাজনীতিতে আসতে পারবে না এমন কোন কথা নেই। স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রে যে কাররই রাজনীতি করা, দেশের দায়ভার গ্রহণ করার অধিকার আছে। কিন্তু প্রশ্ন হল, নতুন রাজনীতিবিদরা রাজনীতিতে আসার আগে কতটা রাজনৈতিক দীক্ষা নিয়ে আসল?
একটা ছোট্ট উদাহরণ দিয়ে শুরু করি। ধরুন, একটা কোম্পানিতে কর্মচারী নিয়োগ দিবে। কিন্তু নিয়োগ তো আর এমনি এমনি দিয়ে দিবেনা। তার কোয়ালিফিকেশান দেখবে, অভিজ্ঞতা দেখবে, ইন্টারভিউ হবে, যোগ্যতা যাচাই হবে, ক্রিমিনাল রেকর্ড চেক হবে, অন্য প্রার্থীদের সাথে তুলনা করে মালিক সন্তুষ্ট হবার পর ওই কর্মচারীর নিয়োগ হবে। কেনো এতসব করতে হচ্ছে? কারণ, ওই কর্মচারীটি ওই কোম্পানির বা কোম্পানির একটা অংশের দায়িত্ব নিতে যাচ্ছে। এখন সে যদি যোগ্য না হয়, তার দ্বারা কোম্পানির আশানুরূপ সাফল্য না আসে তাহলে ক্ষতিটা মূলত কোম্পানিকেই বহন করতে হবে।
তদ্রূপ একটা দেশের দায়িত্ব একটা কোম্পানির দায়িত্ব থেকে অনেক বেশী। এখানে সে লক্ষ কোঠি মানুষের কাছে দায়বদ্ধ। তার একটা বুদ্ধিদীপ্ত সিদ্ধান্ত যেমন দেশকে অনেক উপরে নিয়ে যেতে পারে, তেমনি ভুল সিদ্ধান্ত দেশকে নামিয়ে আনতে পারে তলানিতে।
শুধুমাত্র জন পরিচিতিই রাজনীতির জন্য যথেষ্ট নয়। সে হয়ত তার সেক্টরে (অভিনয়, খেলা, ব্যবসা ইত্যাদি) সফল, তাই বলে দেশ পরিচালনাও যে সফল হবে তার নিশ্চয়তা নাই। আবার অসম্ভব কিছুও না। তবে রাজনীতিতে আসার আগে তাকে রাজনীতি নিয়ে যথেষ্ট পড়াশুনা, অনুশীলন করতে হবে। যখনই যে বুঝবে সে প্রস্তুত, তখন সে দায়িত্ব নেয়ার জন্য দাঁড়াক, তাতে অসুবিধা নাই।
একজন রাজনীতিবিদের বহুমুখী গুনের অধিকারী হতে হয়। তাকে বিচক্ষণ, বুদ্ধিদীপ্ত, সমস্যা সমাধানকারী, প্রোএক্টিভ, ফরওয়ার্ড থিঙ্কার হতে হয়। তার অর্থনীতি, ফাইনান্স, রাজনীতি ও বিশ্ব রাজনীতি, কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স, সোশ্যালিজম, সোশ্যাল ও কূটনৈতিক সম্পর্ক ইত্যাদি সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকার দরকার আছে। দেশপ্রেম, অন্যায়ের সাথে আপোষহীন, সততা, সত্যবাদিতা, শ্রদ্ধা, বিনয়, বন্ধুভাবাপন্ন, নমনীয়তাও একজন আদর্শ নেতার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। কিন্তু এভাবে দীক্ষা নিয়ে কয়জনে রাজনীতিতে আসে?
রাজনীতিও একটা পেশা। এ পেশার দায়ভার অনেক। এ পেশায় আসার আগে প্রত্যেক রাজনীতিবিদকে তার পূর্ববর্তী পেশা সম্পূর্ণ পরিত্যাগ করে আসাটাই বাঞ্ছনীয়। অন্য পেশার দায়বদ্ধতার কারণে তার দেশ পরিচালনায় মনোযোগে বাধাগ্রস্ত হওয়াটাই স্বাভাবিক। কিছু কিছু পেশা নেতৃত্বদানের সাথে সাঙ্ঘর্সিক, যা পার্সোনাল ইন্টারেস্ট থ্রেট তৈরি করে। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশ ও দেশের জনগণ।
আমাদের দেশের রাজনীতিবিদ আর রাজনীতি করার ধরণই আলাদা। এখানে আমার উপরোক্ত কথাগুলোর কানাকড়ি মূল্যই নেই। দেশ নিয়ে ভেবে কেউ রাজনীতি করবে এমন রাজনীতিবিদ কেউই নেই, যারা ভাবে তারা এই রাজনীতির কাছে টিকে থাকতে পারে না। এখানে দেশ থেকে দলই বড়, নিজের স্বার্থই যেখানে মুখ্য। রাজনীতির মূল উদ্দেশ্য হল পরের কল্যাণ সাধন, কিন্তু এ বাণী আজকাল ততাকথিত রাজনীতিবিদ দের কাছে হাস্যকর মনে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ২:১৬