somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইন্ডিয়ার সেল্ফ-হেল্ফ গ্রুপ ও আমাদের সমবায়……

৩০ শে মার্চ, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১.
সেল্ফ হেল্ফ গ্রুপ(এসএইচজি)। ইন্ডিয়ার দরিদ্র মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল। ইন্ডিয়ার সামাজিক অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। আমাদের দেশের নোবেল বিজয়ী প্রফেসর মুহাম্মাদ ইউনুস এর মাইক্রোফিন্যান্স মডেলের আলোকে চলছে ইন্ডিয়ার এসব এসএইচজি। বেশির ভাগই মহিলা এসএইচজি। বলা হচ্ছে এসএইচজি হচ্ছে ইন্ডিয়ার দারিদ্র বিমোচন ও নারীর ক্ষমতায়নের শেষ ঔষধ…
ইন্ডিয়া আসার পর কোর্সের প্রয়োজনে বেশ কয়েকটি মহিলা সেল্ফ হেল্ফ গ্রুপের সাথে সভা করার সুযোগ হয়েছে। সভা করার পর মনে হয়েছে- সমবায় বলতে যা বোঝায়, তা এখানে কাজ করছে। সমবায়ের মূল মন্ত্র এখানে কাজ করছে…..। এখানে সমবায়ই শক্তি, সমবায়ই মুক্তি। সমবায়ের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে এইসব গ্রুপের নারীরা অর্থনৈতিক মুক্তি ঘটাচ্ছে। সামাজিক মুক্তি ঘটাচ্ছে। ইন্ডিয়ার মতো জায়গায় নারীর অবস্থানকে শক্ত ভিত্তির ওপর দাড় করিয়ে দিচ্ছে…। চোখে না দেখলে নারী মুক্তির এই গল্প কখনওই বিশ্বাস হতো না।
অবশ্য এর পেছনে কারন আছে। কারনটা হচ্ছে ইন্ডিয়ান সরকার। রাজ্য সরকার বলেন আর কেন্দ্রীয় সরকার বলেন, আর বেসরকারী কম্পানি অথবা ব্যাংক বলেন, সবাই এসএইচজিতে লোন দেওয়ার জন্যে একপায়ে দাড়িয়ে আছে। রেজিস্ট্রেশন বিহীন একটা গ্রুপকে এই হারে লোন সহযোগিতা দেওয়া পৃথিবীতে বিরল। হাজার-হাজার কোটি টাকা লোন বরাদ্দ হচ্ছে শুধুমাত্র সেল্ফ-হেল্ফ গ্রুপের জন্য। অবাক করা বিষয় হলো লোন গ্রহনকারী এইসব নারীদের সুদে-আসলে লোন ফেরত দেওয়ার হারও প্রায় শতভাগ।
স্থানভেদে সেল্ফ-হেল্ফ গ্রুপের সদস্য সংখ্যা ৮-২০ জন। কেন ৮-২০ জন? ২০ জনের বেশি হলে ইন্ডিয়ার সমবায় আইনে সংগঠনটিকে রেজিস্ট্রেশন নিতে হবে। ইন্ডিয়ার সমবায় আইন আর আমাদের দেশের সমবায় আইন প্রায়ই একই রকম। দু’একটি ধারা ও বিধি এদিক-সেদিক হতে পারে। সদস্য নিয়ে এত কথা বলার কারন হলো, সমবায় অধিদপ্তরে যোগদান করার পরে ধারনা জন্মেছিল, যে সমবায় সমিতিতে সদস্য যত বেশি সে সমবায় সমিতি তত বেশি সফল। ভুল। এই ধারনা ভুল। যে সমবায় সমিতিতে সদস্য সংখ্যা কম কিন্তু গণতান্ত্রিক চর্চা বেশি, সেই সমবায় সমিতি তত সফল। একটি সফল সমবায় সমিতির জন্য ২০ জন সদস্যই যথেষ্ট।
আমাদের দেশে বিগত কয়েকবছরে যা হয়ে গেল। সমগ্র পৃথিবীতে তা বিরল। কিছু টাউট-বাটপার লোক সমবায়ের নাম ভাঙ্গিয়ে রাতারাতি সাধারন মানুষের হাজার-হাজার কোটি নিয়ে উধাও হয়ে গেল… আমরা কিছুই করতে পারলাম না। সমবায় শব্দকে এভাবে কলংকৃত করার ঘটনা পৃথিবীতে আর ঘটেছে কিনা আমার জানা নেই…
২.
গ্রামের নাম নেহেরু কলোনী। চারপাশে পাথরের ছোট-ছোট টিলা। সেই টিলার মাঝখানে একটি গ্রাম। গ্রামটিতে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম গরুর গাড়ী..। গ্রামের মানুষের যে জমি-জমা আছে, তাও বৃষ্টি স্বল্পতা ও সেচ সু্বিধার অভাবে চাষযোগ্য নয়। সামান্য ভূট্রা ও তুলা চাষ ছাড়া অন্য কোন ফসল চাষাবাদ সম্ভব নয়। দু’বেলা খাবার সংগ্রহ করতেই গ্রামের প্রত্যেকটি মানুষের খবর হয়ে যায়। ১৯৯২ সালের কথা বলছি। এত কষ্টের মধ্যেও ১১ জন দিনমজুর নারী শুরু করেছিল শ্রী বিদ্যাবতী সেল্ফ-হেল্ফ গ্রুপ। দিনমজুরের টাকা থেকে সপ্তাহে সবাই ১০ টাকা করে জমা রাখতেন…। আর প্রতি সপ্তাহের একটা নির্দিষ্ট দিনে, সবাই একসাথে বসে ভাবতেন কিভাবে এই অবস্থার উন্নয়ন করা যায়। তাদের সে ভাবনা কাজে লেগেছে। বিদ্যাবতী সেল্ফ-হেল্ফ গ্রুপের দেখাদেখি এই গ্রামে জন্ম হয়েছে আরও ১২ টি সেল্ফ-হেল্ফ গ্রুপ। যার সবাই নারী।
ছোট-ছোট সঞ্চয় জমা করেছে। সেই জমা থেকে নিজেদের মধ্যে লোন বিতরন করেছে। সরকাররে নিকট থেকে লোন নিয়েছে। আবার সে লোন সময়মত ফেরত দিয়েছে। আবার লোন নিয়েছে। এই করতে-করতে এখন গ্রামের চেহারাই পরিবর্তন হয়ে গেছে…
গ্রামে এখন সবার পাকা দালান ঘর। পানির পাম্প। যাতায়াতের জন্য মটর বাইক। চাষাবাদের জন্য ট্রাক্টর। গ্রামের মাঝখানে একটি কেজি স্কুল। দূরে তাকালে দেখা যায় পাথরের টিলার ঢালুত নারিকেল ও সুপারির বাগান। গ্রামের প্রত্যেকটি পরিবার ছেলেমেয়ের লেখা-পড়া নিয়ে সচেতন। এই গ্রামের বেশ কয়েকটি ছেলে-মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্জিয়ারিং পড়ছে… ইত্যাদি...ইত্যাদি….
যার হাত ধরে বিদ্যাবতী সেল্ফ-হেল্ফ গ্রুপের যাত্রা শুরু হয়েছিল সেই মিরা বাই ১৯৯২ সাল থেকে মেইনটেইন করা রেজিষ্টার গুলো ট্রান্ক থেকে নামিয়ে আমাকে দেখালেন। রেজিষ্টারের পাতাগুলো উল্টে-পাল্টে বারবারই ফিরে যাচ্ছিলাম ১৯৯২ সালে। কত স্বপ্ন মিশে আছে মিরা বাইয়ের এই খাতার সাথে। পাশবুক গুলো দেখলাম। অসংখ্য বার ১০, ১০ লেখা….। মিরাবাই উল্লেখ করলেন ১৯৯২ সাল থেকে প্রতি সপ্তাহে তারা নিয়ম করে সভা করেছেন। বড় রকমের কোন দুর্ঘটনা ছাড়া কোন সাপ্তাহিক মিটিং তারা বাদ দেননি। এখনও প্রতি সপ্তাহে তারা নিয়ম করে সভা করেন। খাতা-পত্র মেইনটেইন করেন। নিজেদের সুখ-দু:খের আলাপ-আলোচনা করেন। ১১জন সদস্যের পরিবার যেন একটি পরিবার। বিদ্যাবতী সেল্ফ-হেল্ফ গ্রুপের রত্না বাইয়ের বয়স এখন ৬৯ বছর। কিন্তু দেখলে কে বলবে তার বয়স ৬৯ বছর। এখনও তিনি এই গ্রুপের একজন সক্রিয় সদস্য। নিজের সঞ্চয় দিচ্ছেন। লোন নিচ্ছেন। আবার লোন পরিশোধ করছেন…. এ যেন এক উন্নয়নের খেলা…যেন এক মুক্তির খেলা….
মিরাবাইয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝি…তার জীবনের উপর দিয়ে অনেক ঝড় বয়ে গেছে…কিন্তু সে ঝড় তাকে কাবু করতে পারেনি… কারন তার পাশে ছিল আরও ১০ জন নারী। তাদের বর্তমান হাস্যউজ্জ্বল সেই মুখ গুলোর দিকে তাকিয়ে একটা কথায় বারবার মনে হলো….সমবায়ের থেকে বড় শক্তি পৃথিবীতে আর নাই… সমবায়ই শক্তি, সমবায়ই মুক্তি….



২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×