somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দুনর্ীতি, সন্ত্রাস ও অশ্লীলতার সংকটে বাংলাদেশ

২৬ শে ডিসেম্বর, ২০০৬ সকাল ৮:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দুনর্ীতি, সন্ত্রাস ও অশ্লীলতার সংকটে বাংলাদেশ
- নিজাম উদ্দিন মাহমুদ

আমাদের প্রিয় জন্মভূমিটা গাছ পালা পাহাড় পর্বত নদী নালা ঝর্নাধারা পাখপাখালি ফলে ফুলে সবুজের সমারোহে সুশোভিত সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা এক শান্তির বাগান হলেও রাজনৈতিক অস্থিরতায় এখানের মানুষ গুলো এক চিলতে শান্তির জন্য বারবার আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ছে। ব্রিটিশ থেকে মুক্ত হয়ে শান্তিতে বসবাস করতে ছেয়েও শাসক গোষ্ঠীর বৈরি আচরন আর যুলুমের কারনে আবারও আন্দোলনে যেতে হলো এবং বহু কষ্টের ফলে অর্জিত হলো প্রিয় বাংলাদেশ। স্বাধীন সার্বভৌম দেশে বাস করলে হত্যা, সন্ত্রাস, রাহাজানি, ডাকাতি, লুটপাট, যুলুম, নিযর্াতন, দূর্নীতি থাকবেনা এই সপ্নও শাসক শ্রেণীর একনায়কতান্ত্রিক মনোভাবের কারনে ভেস্তে গেল। এমনি মূহুর্তে জাতিকে শান্তি দিতে এলো সামরিকতন্ত্র যা স্বৈরতন্ত্র হিসাবে বিদায় নিতে বাধ্য হলো। গনতন্ত্রের স্বচ্চতার জন্য সকলের ঐক্যমতের ভিত্তিতে যখন তত্ত্বাবোধায়ক সরকার পদ্ধতি এলো তখন দেশবাসী মনে করল আর হয়ত জাতিকে হরতাল আন্দোলন জ্বালাও পোড়াও সংঘর্ষ ও চরম অস্থিরতায় কাটাতে হবেনা, কিন্তু না তাও সঠিক নয়, যার নিদারুন বাস্তবতা আমরা সকলেই প্রত্য করছি।

তিনটি সমস্যাঃ বর্তমান বাংলাদেশের সমস্যার কথা জিগ্গেস করলে সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবি, মিডিয়া ব্যক্তিত ছাত্র শিক, ব্যবসায়ী এমনকি সাধারণ মানুষও যা বলবে তার সারকথা হলো বাংলাদেশের সবছে বড় তিনটি সমস্যা হলো সন্ত্রাস, দূর্ণীতি ও অশ্লীলতা। কিন্তু বাংলাদেশের এই বড় তিনটি সমস্যা মোকাবিলা করার জন্য সরকারের মন্ত্রী, এমপি, প্রশাসনিক কর্মকর্তা এমনকি সামাজিক দায়িত্বশীলরাও বলা যায় উদাসীন। সবাই সমস্যা সমস্যা বলে চিৎকার দিচ্ছে কিন্তু সমাধানে কেউ এগিয়ে আসছেনা। এ ছাড়া শিক হিসাবে ছাত্রের উপর যে কর্তব্য, পিতা মাতা হিসাবে সন্তানের উপর যে কর্তব্য এবং বন্ধু হিসাবে বন্ধূর উপর যে সামাজিক দায়িত্ব তাও যথাযথ পালন করছে বলে মনে হয়না। এই তিনটি সমস্যাকে মোকাবেলা করে একটি সুন্দর বাংলাদেশ গড়ার ল্যে আমাদেরকে সর্বাত্তক প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। প্রথমে আমরা সমস্যা গুলো চিহ্নিত করে তারপর সমাধানের পথ খুঁজবো।

সমস্যার মুল কারণঃ মানুষ জন্ম গত ভাবে দুটি গুনাবলী নিয়ে জন্ম গ্রহন করে। তার একটি হল ৎবংংরড়হধষরঃু (র্যাশনালিটি) তথা মানবিকতা যাকে আমরা ঐঁসধহরঃু বলে জানি। আরেকটি হল ধহরসধষরঃু (এ্যানিমেলিটি) তথা পাশবিকতা। এখন মানুষের কাজ হল তার মাঝে যে পাশবিক চরিত্র আছে তাকে ধমন করে তার মাঝে লুকায়িত মানবিকতা কে বিকাশ করা। এই পাশবিক শক্তিকে ধমন করে মানবিক চরিত্রকে বিকশীত করার জন্য মানব জীবনে আমাদের কে কয়েকটি পর্যায়ে তা সম্পন্ন করতে হবে। এবং পরিপূর্ন মানবিক চরিত্র অর্জণ করতে হবে। যে সকল মাধ্যমে আমরা পাশবিকতাকে ধমন করে মানবিকতাকে নিজের জীবনে প্রতিষ্ঠা করতে হবে তার কয়েকটি দিক নিন্মরুপ।

এক. আমরা যেখান থেকে আমাদের জীবন গঠনের প্রাথমিক শিা পাই তা হলো আমাদের পিতা মাতা। পিতা মাতা আমাদেরকে এমন ভাবে আচার আচরণ চাল চলন কথা বাতর্া পারষ্পরিক সন্মানবোধ ও নৈতিকতা আদর সোহাগ স্নেহ মমতা ও শাসন দিয়ে শিা দিবেন যাতে আমরা উন্নত চরিত্রবান হিসাবে গড়ে উঠি। কিন্তু আজকের সমাজের পিতা মাতাদের যে চরিত্র তার দ্বারা সন্তানের চরিত্র গঠনতো দুরের কথা পিতা মাতার চরিত্রের প্রভাবে সন্তানের চরিত্র আজ ধ্বংসপ্রায়। পিতা মাতার পারষ্পরিক কলহ, চরিত্রহীন কাজকর্ম, ধুমপান, মাদকসক্তি ইত্যাদি সন্তানকেও অনুরুপ চরিত্র গঠনে প্রভাবিত করে। অথ্যাৎ পিতা মাতা সন্তানের প্রথম শিক হলেও এখন তাদের দ্বারাই সন্তান অপরাধের দিকে ঝুঁকছে।

দুই. আমরা যেখান থেকে চরিত্র গঠনের শিা পাই তার দ্বিতীয় হলো আমাদের বন্ধূ সমাজ। ছোট বেলায় পিতা মাতার স্নেহের কোল থেকে বেরিয়ে মানুষ প্রথম যাদের মাঝে বিচরন করে তারা হলো প্রতিবেশী বন্ধু মহল। আর বন্ধু মহলের উচিত হলো প্রিয় বন্ধুর সাথে এমন চরিত্র উপস্থাপন করা যাতে বন্ধু সেই চরিত্রের মাধ্যমে প্রভাবিত হয় এবং সকল প্রকার সৎ কাজে উৎসাহিত করা এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করা। কিন্তু বর্তমান সমাজের বন্ধুমহল এবং পরিবেশ পারিপাশ্বিকতার অবস্থা এমন যে সে কারনেই মানুষ খারাফ হয়ে যায়। কোন মানুষ প্রথম অসৎ কাজটি শিখে বন্ধুর কাছ থেকে। অশ্লীল সিনেমা, সিগারেট, গাঁজা, মদ, অপরাধ মুলক কাজগুলো বন্ধূদের প্ররোচনায়ই করা শুরু করে। এ সমাজে নামাজের দিকে ডাকার মত বন্ধুর তুলনায় সিনেমা হলের দিকে ডাকার মত বন্ধুর সংখ্যাই বেশি। সুতরাং বন্ধুদের দ্বারা পাশবিক চরিত্র ধমনের ছেয়ে বিকাশই বেশি হয়।

তিন. আমরা যার মাধ্যমে আমাদের চরিত্র গঠন করবো তৃতীয়টি হলো আমাদের শিা প্রতিষ্ঠান। যেখান থেকে আমরা আমাদের মানবীয় চরিত্রের বিকাশের মাধ্যমে সমাজকে আলোকিত করার প্রয়াস পাই। কিন্তু যাদের কারনে আজ বাংলাদেশ দুণর্ীতিতে চ্যাম্পিয়ন তারা আমাদের দেশের কৃষক, শ্রমিক, রিকসাওয়ালা, অশিতি দিন মজুর নয় তারা হলো দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রী অর্জনকারী ব্যক্তিগন। অথ্যাৎ সর্বোচ্চ শিতি লোকেরাই আমাদের দেশের সম্পদ নষ্ট করার জন্য শতভাগ দায়ী। বর্তমান বাংলাদেশের শিা ব্যবস্থার যে ফলাফল আমরা পাচ্ছি তাতে এটিই প্রমানিত হচ্ছে যে আমাদের শিা ব্যবস্থা আমাদেরকে নৈতিক মানসম্পর্ন মানুষ উপহার দিতে পারছেনা। শুধু তাই নয় আজ সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ গুলোতে নৈতিক চরিত্র অবয়ের যে সংবাদ আমরা পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পারছি তাতে সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের একজন ছাত্র হিসাবে পরিচয় দিতে লজ্জায় আমাদের চোখ বন্ধ রাখার অবস্থা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের ছিনতাই,সন্ত্রাস, চাঁদাবাজীর ঘটনা কারই অজানা নয়। শুধূ তাই নয় ছাত্রী হলের বাথরুমে ভিডিও ক্যামেরা সংযোজন করে আপত্তিকর দৃশ্য ধারন করে সিডি করে বাজারজাত করার মত অনৈতিক কাজ করে তারা সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের গায়ে কলঙ্ক এঁটে দিয়েছে। মানুষের মধ্যে একটি পাশবিক চরিত্র লুকায়িত থাকার কারনে মানুষ কম বেশী অপরাধ করে থাকে। কিন্তু ধর্ষন করার পর সে কথা প্রকাশ করে সেঞ্চুরী উৎসব পালন করার মত হীন অপকর্মটিও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রের দ্বারাই ঘটেছে। 2001সালে চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হলথেকে পালিয়ে যাওয়া মেধাবী! ছাত্রদের ক েঅনৈতিক কাজের ভিবিন্ন উপকরন তথা মদ, গাঁজা, হেরোইন, শাড়ী, সেলোয়ার, কামিজ এমনকি কনডমের কার্টুন পর্যন্ত পাওয়া গিয়েছিল। আর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতাদের চাঁদাবাজী টেন্ডারবাজীর মহোৎসবের কথা সকলের জানা। এ জন্যই দেশের প্রধান কবি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ডাকাতদের গ্রাম হিসাবে উল্লেখ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক বলেছেন, কাননবালারা আগে আসতো একটি নিদ্দিষ্ট জায়গা থেকে এখন আসছে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল থেকে। এছাড়া যারা দেশপ্রেম, নৈতিকতা, সততা শিা দিবে সেই শিকদের বিরুদ্ধে সকল বিশ্ববিদ্যালয়েই ছাত্রীদের সাথে অসৌজন্য ও অনৈতিক আচরণের প্রতিবাদে ভিসির নিকট স্বারকলিপি পেশ, প্রতিবাদ বিােভ, র্যালী ও মানববন্ধন করার সংবাদ আমরা প্রায়ই পত্রিকায় দেখতে পাই। তাহলে শিার্থীরা সততা নৈতিকতা শিখবে কার কাছ থেকে। আমাদের দেশে শিতি, মেধাবী, যোগ্য ও দ লোকের অভাব নেই অভাব হলো একটি জিনিসের সেটি হলো সততা। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আমাদেরকে মেধাবী ও শিতি করলেও সৎ হিসাবে গড়ে তুলতে পারছেনা। যে যত বড় শিতি সে তত দতার সাথে দুর্ণীতি করে এবং বুদ্ধি দিয়ে পার পেয়ে যায়।

চার. আমাদের সৎগুনাবলী বিকাশ ও পাশবিক চরিত্র ধমন করার জন্য চতুর্থ বিষয়টি হলো আমাদের সংস্কৃতি। আমাদের আচার, আচরণ, কথা, বার্তা, লেনদেন, উঠাবসা,, চলাফেরা খাওয়া দাওয়া, সম্বোধনের শাব্দিক পরিভাষা, পোশাক পরিচ্ছেদ, বিনোদন ইত্যাদি সবকিছুরই একটা ঐতিহ্য রয়েছে। আমাদের সেই ঐতিহ্য আমাদেরকে মানবসেবা, পরোপকার, হিতাকাংখা, সহিষ্ণুতা, ধৈর্য্য ও লজ্জাশীলতা শিাদেয়। কিন্তু আমরা আব্বা আম্মা, বাবা মা, ভাই বোন, চাচা চাচী, মামা মামী, নানা নানু, দাদা দাদু, ফুফা ফুফু, খালাম্মা খালুজান এই জাতীয় পরিভাষা তথা আমাদের ইতিহাস ঐতিহ্য ভূলেগিয়ে পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রতি এতবেশী আগ্রহী হয়ে ডেড, পাপা, মাম, মাম্মি, আংকেল, আন্টি ইত্যাদি পরিভাষা চর্চার ফলে আমাদের পারিবারিক বন্ধন, আন্তরিকতা, স্নেহ, মায়া মমতা, ত্যাগের মানসিকতা, লাজলজ্জা ক্রমেই উবে যাচ্ছে। ফলে আমাদের আন্তরিক ভালবাসা পরিণত হচ্ছে নিছক কৃত্রিমতায়। আমাদের শালীন পোশাকের পবিত্রতাকে কেড়ে নিচ্ছে বিজাতীয় উলঙ্গপনা যা আমাদেরকে বেহায়াপনার দিকে উস্কে দিচ্ছে। মা বোনদের বোরখা, শাড়ী, ওড়না আর সেলোয়ার কামিজের আবরু হারিয়ে যাচ্ছে জিন্স, স্কাট, গেঞ্জি আর বাহারী ঢংয়ের কাছে। কখনো কখনো পোশাকের সংপ্তিতায় বেহায়াও লজ্জা পায়। পোশাক দেখে এখন পুরুষ মহিলা বুঝা কঠিন। এ সমন্ধে একটা গল্প আছে, একবার একজন ভদ্রলোক বৈকালিক ভ্রমনে বেরিয়ে পার্কে বসে আছে। এমন সময় শার্ট প্যান্ট পরা একলোক সাইকেল চালাতে চালাতে ভদ্রলোকের সাথে সাইকেল এক্সিডেন্ট করে। শার্ট প্যান্ট পরা পাশের অন্য আরেকজন লোককে ভদ্রলোক অনুযোগের সুরে বললেন ভাই দেখেছেন এই ছেলেটি কি বেয়াদব, আমার গায়ে সাইকেল উঠিয়ে দিয়েছে। তখন সে লোক জবাবে বললো, ওতো ছেলে না ও আমার মেয়ে। ভদ্রলোক বললেন তাই নাকি ? আপনি তাহলে এই মেয়ের বাবা। লোকটি জবাব দিলো, না আমি এ মেয়ের মা। অথ্যাৎ মায়ের পোশাকও....। এই হলো আমাদের দেশের পোশাকের অবস্থা। বিশ্বকাপে ইউরোপের দেশগুলোর গ্যালারীতে যে উলঙ্গপনা, উম্মাদনা হয় সে অবস্থা যদি আমাদের দেশের গ্যালারীতেও তা হবে আমাদের জন্য সত্যিই বিপদ জনক। অনেকের ধারনা আমরা পশ্চিমা বিশ্বের যত বেশী অনুকরন করছি ততই উন্নতির দিকে যাচ্ছি। আসলে তা নয় আমরা উন্নতির চেহারায় মুলত ধ্বংসের দিকে যাচ্ছি। একটা গল্প শুনলাম যে, একবার ভারতের এক ডুবুরী সাগরের অনেক গভীরে গিয়ে একটা বিষয় দেখে অবাক হলেন। তিনি দেখলেন এক বাংলাদেশী ডুবুরী আরও গভীরে গিয়েছে এমনকি তার নাকে কোন গ্যাস মাস্কও নেই। ভারতীয় অবাক হচ্ছে আর দ্রুত গভীরে যাচ্ছে বাংলাদেশীকে ধরার জন্য। ভারতীয় যত নিছে যায় বাংলাদেশী আরও গভীরে যায়। অনেক চেষ্টার পর তার নিকটে গিয়ে ভারতীয় জিগ্গেস করলো তুমি কিভাবে গ্যাস মাস্ক ছাড়াই এত নিছে আসলে! এ কিভাবে সম্ভব? তখন বাংলাদেশী উত্তর দিলো, আরে ভাই আমিতো ডুবুরী হয়ে মণি মুক্তা খুঁজছিনা আমি দুর্ঘটনার কারনে পানিতে ডুবে মারা যাচ্ছি। আসলে আমরা পশ্চিমাদের যতই গভীরে যাচ্ছি ততই ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি তাদের কাছ থেকে মণি মুক্তা পাচ্ছিনা।
সংস্কৃতির অন্যতম প্রধান দিক হলো বিনোদন তথা সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড। এর মধ্যে নাটক, ছায়াছবি, টেলিফিল্ম , উপন্যাস, গল্প, কবিতা ইত্যাদি রয়েছে। আমাদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হতে হবে এমন, সিনেমা নাটকের অভিনয় এমন ভাবে উপস্থাপন করা হবে যা দেখে আমাদের চরিত্র দিন দিন উন্নত হবে। যেমন কোন নাটকের কাহিনী যদি এমন হয় যে, স্ত্রী যদি নিজের পিতা মাতার ব্যাপারে অনিহা বা অশালীন আচরন করে বা পিতা মাতাকে সহযোগিতা না করার কথা বলে তখন স্ত্রীর আচরনের তীব্র প্রতিবাদ করে পিতা মাতার প্রতি সংহতি প্রকাশ করলে দর্শকরাও ব্যক্তি জীবনে সেভাবে অনুশীলন করার প্রয়াস পাবে। এছাড়াও সন্ত্রাসী, ছিনতাইকারী, ঘুষখোর এ জাতীয় চরিত্রের লোকদের বিরুদ্ধে চরম ঘৃনা, নিন্দা , অসহযোগিতা ইত্যাদি প্রকাশ করলে সেই চরিত্রের দর্শকদের মাঝে সৎ হওয়ার প্রবনতা দেখা দিবে। অথচ এখনকার নাটক ছায়াছবিতে অপরাধ গুলোকে এমন ভাবে উপস্থাপন করা হয় যা থেকে দর্শক অপরাধ করার পদ্ধতি শিখে যায়। ফলে অপরাধ সমাজে দিন দিন বেড়েই চলেছে। আমাদের নাটকগুলো থেকে আমরা সৎ গুনাবলী বিকাশের উপাদান পাইনা। আর নাটক, উপন্যাস, গল্প, কবিতার মাধ্যমে পাঠককে কোন ম্যাসেজ দিতে চাইলে এবং পাঠকের মানসিক পরিবর্তন কামনা করলে সেেেত্র লেখকের ব্যক্তিচরিত্র সততা ও নীতি নৈতিকতা সম্পন্ন হওয়া উচিৎ। অথচ আমাদের দেশ যারা এসব লেখেন তাদের ব্যক্তি জীবনের অনৈতিক, অসামাজিক কর্মকান্ডের কথা প্রায় আমরা পত্র পত্রিকায় দেখি। তাহলে তাদের গল্প উপন্যাস কবিতা পড়ে পাঠক কিভাবে নিজেদের চরিত্র গঠন করবে? আর উপন্যাস, গল্প, কবিতা, নাটক, সিনেমা যারা লেখেন তাদের অধিকাংশরই (সবাই নয়) ব্যক্তি জীবনের গল্প আরও রোমান্টিক। তারা উপন্যাসে যা বলেন তারছেয়ে বেশী নিজেই করে দেখান। এক জন জনপ্রিয় লেখককে সবাই জানেন যিনি মেয়ের বান্ধবীকে বিয়ে করে 28বছরের দাম্পত্য জীবনের অবসান ঘটিয়েছেন। এর দ্বারা তিনি তার পাঠক দর্শকদের কি শেখালেন।

পাঁচ, এছাড়াও আমাদের চরিত্র বিকাশের েেত্র গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখতে পারে রাজনৈতিক দলের কর্মসূচী। যেহেতু চরিত্র গঠনের উত্তম সময় হলো ছাত্রজীবন সেহেতু ছাত্রসংগঠন গুলোর কার্যক্রম হওয়া উচিৎ চরিত্র বিকাশে সহায়ক। দলীয় গঠনতন্ত্র, কর্মসূচী ও কর্মপদ্ধতি হওয়া উচিৎ পারষ্পরিক সহঅবস্থান, সহনশীলতা, দলের মধ্যে গনতন্ত্রের চর্চা, চরিত্র গঠনের উপযোগী, মা করার মত উদারতা। যেখানে থাকবেনা হত্যা, সন্ত্রাস, নির্যাতন, হানাহানি, হিংস্রতা, দুর্নীতি এবং ব্যক্তিগত অপকর্মকে দলীয় সমর্থন। তাহলে কেউ যদি ব্যক্তিগত ভাবে খারাফ লোকও হয় তবুও দলীয় কর্মসুচীর কারনে সে ধীরে ধীরে ভাল হতে থাকবে অথবা দলীয় ছত্রছায়ায় অপরাধ করতে পারবেনা। কিন্তু আজ আমাদের প্রায় সবগুলো ছাত্রসংগঠনের গঠনতন্ত্র, কর্মর্সূচী ও কর্মতৎপরতায় জাতি হতাশ। ছাত্রনেতাদের খুন, ধর্ষন, নির্যাতন, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজী, টেন্ডারবাজী, মদ, গাঁজা, হেরোইন সহ হেন অপকর্ম নেই যা তারা করে দেখায়নি। তাদের এহেন চরিত্রের কারনে শুধু সাধারন মানুষ আর ছাত্রসমাজই নয় বরং তাদের মুলদলের নেতারাও বিতৃষ্ণ, বিব্রত ও বিরক্ত।

সমাপনীঃ আসলে এসবের কারন হিসাবে একজন দার্শনিক বলেছিলেন যে ঈধৎববৎ রিঃযড়ঁঃ পযধৎধপঃবৎ রং সড়ৎব ফধহমবৎড়ঁং ঃযবহ ধ ষরড়হ অথ্যাৎ চরিত্রহীন যোগ্যতা সিংহের ছেয়েও ভয়ংকর। এর দ্বারা বুঝানো হয়েছে যে একটি সিংহ লোকালয়ের জন্য যেরুপ ভয়ংকর তেমনি একজন অসৎ কর্মকতর্াও সমাজের জন্য তিকর। যার বাস্তব চিত্র হলো আমাদের দেশের পরিস্থিতি। আসলে এই শিতি সমাজে অপকর্ম বেশী হওয়ার কারন হিসাবে স্যার স্ট্যানলে হেল বলেছেন ুওভ ুড়ঁ ঃবধপয ুড়ঁৎ পযরষফৎবহ ঃযৎবব ুজচ্ ৎবধফরহম ৎিরঃরহম ধহফ সধঃযবসধঃরপং ধহফ ষবধাব 4ঃয জ, ঃযধঃ রং ৎবষরমরড়হ, ুড়ঁ রিষষ মবঃ 5ঃয জ , ঃযধঃ রং ৎধংপধষরঃুচ্. অথ্যাৎ তুমি যদি তোমার সন্তানকে তিনটি 'আর' শিা দাও কিন্তু 4র্থ 'আর' রিলেজিয়ন তথা ধর্মকে ত্যাগ কর তাহলে তুমি পাবে পঞ্চম 'আর' রাসক্যালিটি তথা বর্বরতা। অথ্যাৎ হত্যা, ধর্ষন, খুন, নির্যাতন, অশান্তি, অত্যাচার, লুটপাট, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজী, দুণর্ীতি ইত্যাদি। আমাদের সমাজে অপকর্ম গুলো অহরহ হচ্ছে। আর এই অপরাধ গুলো অশিতি লোকের ছেয়ে শিতি লোকেরাই বেশী করে। এতে বুঝা যাচ্ছে আমাদের পাঠ্যপুস্তক অধ্যয়নের ব্যাপারে আমরা খুবই তৎপর কিন্তু ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার ব্যাপারে আমরা উদাসিন। আমাদের প্রচলিত শিা ব্যবস্থা যে লোক তৈরি করছে তারা সুধ ঘুষ দুণর্ীতি উচ্ছেদকারী আর্থসামাজিক কল্যানকামী সৎ মানুষ না হয়ে বরং দেশের সম্পদ লুটকারী দুণর্ীতিবাজ হিসাবে গড়ে উঠছে। অথ্যাৎ তারা দেশের সম্পদ নয় বিপদ। সুতরাং আসুন আমরা আমাদের আগামী প্রজন্মকে সন্ত্রাস দুণর্ীতি ও অশ্লীলতা থেকে মুক্ত করতে একটি সুন্দর শিা ব্যবস্থা, সুস্থ্য সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড এবং সামাজিক সমপ্রীতি গড়ে তুলি। এজন্য প্রয়োজন ধমর্ীয় অনুভুতি সম্পন্ন একটি আদর্শিক পরিকল্পনা। আসুন ধর্মের প্রতি প্রথমে নিজেই অনুগত হয়ে আমাদের আগামীর পথচলা শুরু করি। (23.09.06)



লেখকঃ মানবাধিকার কমর্ী ও
সদস্য সচিব, দুনর্ীতি প্রতিরোধ আন্দোলন।
হবুধসথপঁ@ুধযড়ড়.পড়স









সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজকের ডায়েরী- ১৭১

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:২৬



মানুষ দুনিয়াতে ন্যাংটা আসে।
ধীরে ধীরে বড় হয়। যোগ্যতা দক্ষতা এবং জ্ঞান অর্জন করে। তারপর ইনকাম শুরু করে। সমাজের বহু মানুষ প্রয়োজনের চেয়ে বেশি টাকা ইনকাম করে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

যারা সাহাবা নন তাঁরা রাসূলের (সা.) অনুসরনের জন্য সাহাবার (রা.) অনুসরন না করে আমিরের অনুসরন করলে সঠিক পথে থাকবেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:১৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা (ইতায়াত) আনুগত্য কর আল্লাহর, আর (ইতায়াত) আনুগত্য কর রাসুলের, আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

হকারের পেটে লাথি দাও, নিরাপদে হাঁটার স্বাধীনতা ফেরাও

লিখেছেন মিশু মিলন, ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪১




ঢাকার ফুটপাত আমি থেকে কোনো কিছু কিনি না। এটা আমার এক ধরনের প্রতিবাদ। কারণ, এই হকাররা আমার স্বস্তিতে ও নিরাপদে হাঁটার স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে। আমি হাঁটতে পছন্দ... ...বাকিটুকু পড়ুন

হত্যাকাণ্ড বন্ধে কেন ম্যাজিক জানা জরুরি ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৪৪


জাতি হিসাবে আমরা বড়োই অভাগা। ইতিহাসের মঞ্চে রাজা বদল হয়, কিন্তু চিত্রনাট্য বদল হয় না। এক রাজা যায়, আরেক রাজা আসে; কিন্তু পর্দার পেছনের কলকাঠি নাড়া সেই একই হাত।... ...বাকিটুকু পড়ুন

লন্ডনের ত্রয়োদশ বইমেলা এবং সংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ শেষ পর্ব

লিখেছেন রোকসানা লেইস, ১০ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ২:৪৯



সেপ্টেম্বর চৌদ্দ তারিখ লন্ডনে অনুষ্ঠিত হবে বই মেলা ও সংস্কৃতি উৎসব। অনুষ্ঠিত হবে লন্ডনের ব্রিক লেন অবস্থিত রিপ্লেইনে অবস্থিত ব্র্যান্ডি সেন্টারে।
অনুষ্ঠানের প্রথম দিন শুরু হবে বেলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×