শত বছরের প্রাচীন রূপকথার ইতিহাস ও ঐতিহ্য বহন করছে বিজয় সিংহ দীঘি। তবে এ নিয়ে রয়েছে বিতর্ক। অনেকেই এই দীঘিকে প্রাচীন বাংলার বিখ্যাত সেন বংশের অমর কীর্তি মনে করেন। তাদের মতে, ৫০০-৭০০ বছর আগে সেন বংশের প্রতিষ্ঠাতা বিজয় সেন এটি খনন করেন। আবার অনেকে মনে করেন, দীঘিটি খনন করেন স্থানীয় রাজা বিজয় সিংহ। তার নামানুসারেই এর নামকরণ হয়।
বাংলার বিখ্যাত সেন বংশের প্রতিষ্ঠাতা বিজয় সেনের অমর কীর্তি ঐতিহ্যবাহী বিজয় সিংহ দীঘি (Bijoy Singh Dighi) দেখতে হলে ফেনী শহরের ২ কিলোমিটার পশ্চিমে বিজয় সিংহ গ্রামে যেতে হবে। ফেনী সার্কিট হাউজের সামনে অবস্থিত দৃষ্টিনন্দন এই দীঘির আয়তন প্রায় ৩৭.৫৭ একর। অত্যন্ত মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে অবস্থিত এ দিঘীর চৌপাড় খুব উঁচু ও বৃক্ষ শোভিত । বিজয় সিংহ দিঘী দেখার জন্য বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শনার্থীরা এখানে ঘুরতে আসেন। বেলা বাড়ার সাথে সাথে পর্যটকের পদচারনায় বিজয় সিংহ দিঘীর চারপাশ মুখরিত হয়ে উঠে। বিকেল বেলায় শান্ত সুন্দর প্রকৃতির সান্নিধ্য পেতে চাইলে কিছুটা সময় কাটিয়ে আসতে পারেন বিশুদ্ধ জল ও বাতাসের এই মিলনস্থলে। । ফেনীর ঐতিহ্যবাহী দিঘীর মধ্যে বিজয় সিংহ দীঘি অন্যতম । এ দিঘী দেখার জন্য জেলার এবং দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিনিয়ত দর্শনার্থীরা আসে । যারা এক বেলার জন্য প্রকৃতির কাছে যেতে চান কিংবা সময়টা কাটাতে চান শুদ্ধ জল ও বাতাসের সাথে তাদের জন্য এটি একটি আদর্শ স্থান।
কথিত আছে, মাকে খুশি করার জন্য এই সুদীর্ঘ দীঘিটি খনন করেন রাজা বিজয় সিংহ। এতে একসময় সোনা ও রূপার থালা ভেসে উঠতো! একদিন এক ভিখারিনী একটি থালা চুরি করে। তারপর থেকে আর থালা ভেসে ওঠে না। আরও জনশ্রুতি আছে, দীঘিতে অনেক বড় বড় মাছ পাওয়া যেতো, সেগুলোর একেকটির ওজন ৮০-১০০ কেজি পর্যন্ত হতো।
ফেনীর কৃতি সন্তান প্রখ্যাত ঔপন্যাসিক জহির রায়হান ‘হাজার বছর ধরে’ উপন্যাসে কমলা সুন্দরীকে জিন দীঘিতে নামিয়ে ফেলার কথা উল্লেখ করেন। অনেকে মনে করেন, এই দীঘির কথাই রয়েছে উপন্যাসটিতে। আশ্চর্যের বিষয় হলো, এখন পর্যন্ত দীঘিটি পুরোপুরিভাবে সেচ করা সম্ভব হয়নি।
১৯৯৫ সালে ফেনীর প্রাক্তন জেলা প্রশাসক জনাব এ,এইচ,এম নূরুল ইসলাম প্রচুর বৃক্ষ চারা রোপন করে বর্তমান এ পরিবেশের সৃষ্টি করেন । কয়েক বছর আগে পাড়ের ভিতরদিকে পানি থেকে কয়েক ফুট উঁচু করে পাকা রাস্তা নির্মাণ করা হয়। ফলে পাড় ধরে হেঁটে পুকুরের সৌন্দর্য উপভোগ করার সুবিধা পেয়েছে পর্যটকরা। পুকুরে পানকৌড়ি ও মাছরাঙা পাখি দেখাও যায়। আর স্বচ্ছ জলে মাছগুলো দেখলে ধরতে ইচ্ছে হবে।
দীঘির জলে সারা দিনের ক্লান্তি মুছে স্নান করে শ্রমজীবী মানুষ।রাতে স্ট্রিট লাইটের আলোয় মায়াজালে আচ্ছন্ন হয় দিঘীর চারপাশ। দেখে মনে হবে বিশ্বের নামিদামি কোনো টুরিস্ট স্পট।
■ কিভাবে যাওয়া যায়:
১) ট্রাংক রোড জিরো পয়েন্ট কিংম্বা রেলওয়ে স্টেশন থেকে সিএনজি যোগে যাওয়া যায়
২) রিক্সা যোগে মহিপাল ট্রাফিক পয়েন্ট হয়ে দক্ষিণ- পশ্চিম দিকে সার্কিট হাউজ রোড দিয়ে যেতে হবে
■ কোথায় থাকবেন
‘বিজয় সিংহ দীঘির অত্যন্ত কাছে ফেনী সার্কিট হাউস গড়ে তোলা হয়েছে। আর দীঘি হতে মাত্র ৩ কিলোমিটার দূরে মিজান রোডে ফেনী জেলা পরিষদ ডাক বাংলোর অবস্থান। এছাড়া চাইলে এলজিইডি রেস্ট হাউস, পানি উন্নয়ন বোর্ডের রেস্ট হাউস এবং পল্লী বিদ্যু সমিতির রেস্ট হাউসে রাত্রিযাপন করতে পারবেন।
অথবা ফেনী শহরে রাত্রি যাপনের জন্য আবাসিক হোটেলের মধ্যে বেছে নিতে পারেন-
হোটেল মিড নাইট (0331-62223, 01733-585956)
কিংবা
হোটেল গাজী ইন্টরন্যাশনাল (0331-62415, 01711-123545, 01714-267305)।
■ কোথায় খাবেন
ফেনীর মহিপালে ভালো মানের বেশকিছু রেস্তোরাঁ আছে। এগুলোতে স্বল্পমূল্যে খাওয়া যায়। যেমন ফাইভ স্টার হোটেল, শাহিন হোটেল, ফুড পার্ক রেস্তোরাঁ, আলমাস হোটেল ইত্যাদি।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ সকাল ৮:৫৭