somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প: ভয় -০৬

২৬ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ৯:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



১ম পর্ব- Click This Link

৫ম পর্ব - Click This Link

থর থর করে কাঁপতে লাগলো ওর সমস্ত শরীর। ঠিক তখনই দরজা ধাক্কানোর শব্দ ভেদ করে কানে এলো আসলাম খানের কণ্ঠস্বর। উনি জোরে জোরে চিৎকার করে বীথিকে ডাকছেন। বীথি চারদিকে তাকিয়ে বুঝলো সকাল হয়ে গেছে। যেন প্রাণটা ফিরে পেলো ও। তারপর তাড়াতাড়ি উঠে গিয়ে দরজাটা খুলে দিলো।  উদ্বিগ্ন আসলাম খান দাঁড়িয়ে রয়েছেন দরজায়। বীথিকে দেখতে পেয়ে উদ্বিগ্ন কণ্ঠে  বললেন,

---- তুমি ঠিক আছ তো? সেই কখন থেকে দরজাতে ধাক্কাচ্ছি। কিন্তু কোন সাড়া নেই তোমার। আর একটু হলে তো দরজাটা ভেঙেই ফেলতাম। ভীষণ ভয় পাইয়ে দিয়েছিলে।

আসলাম খানকে সামনে দেখে বীথির সব ভয় নিমেষে উড়ে গেল। ও লজ্জিত কণ্ঠে বলল,
----আমি ঠিক আছি।
----কিন্তু তোমার চেহারা দেখে তো ঠিক মনে হচ্ছে না। মনে হচ্ছে এক রাতে কোন ঝড় বয়ে গেছে তোমার উপর দিয়ে। কী হয়েছে ঠিক করে বলো তো। ভয় পেয়েছিলে?

বীথি ভাবলো কিছুতেই নিজের ভয়ের কথা আসলাম খানকে বলা যাবে না। ওর দূর্বলতা টের পেলে উনি ওকে আরো বাচ্চা ভাববেন। ও তাই রাতের ঘটনা গোপণ করে বলল,

----কিছু হয়নি। হঠাৎ করে বাড়ি থেকে অনেক দূরে এসেছি তো। ঠিক মত রাতে তাই ঘুম হয়নি।

----আচ্ছা, ঠিক আছে। ফ্রেশ হয়ে আসো। নাশতা খাবে।

নাশতার টেবিলে বীথি লক্ষ্য করলো আসলাম খান আবার সেই গাম্ভির্যের চাদরে নিজেকে ঢেকে ফেলেছেন। চুপচাপ নাশতা খেয়ে চলেছেন। ও নাশতা খেলো কি খেলো না চেয়েও দেখলেন না। এই গাম্ভির্যের চাদরে মোড়া  লোকটা বড় অপরিচিত ওর কাছে। ইনি যেন অনেক দূরের মানুষ। সেই স্নেহময়, বন্ধুসুলভ মানুষটা ইনি নন। ইনি অন্য কেউ।

আসলাম খান বীথির কলেজে ভর্তির ব্যাপারে কিছুই বলছেন না। উনি কি তবে নিজের প্রতিশ্রুতি ভুলে গেলেন? বীথি একবার ভাবলো ভর্তির ব্যাপারে  জিজ্ঞেস করবে। কিন্তু আসলাম খানের চেহারা দেখে ভয়ে কিছু জিজ্ঞেস করতে পারলো না। আসলাম খানের হঠাৎ করেই এই রঙ পরিবর্তন ভীষণ ভাবনায় ফেলে দেয় ওকে।

আসলাম খান নাশতা শেষ করে উঠে চলে যান। বীথির দিকে ফিরেও তাকান না। বীথি অসহায়ের মত বসে থাকে। ওর খুব অভিমান হয়। বুকের ভেতর একটা কান্না দলা পাকিয়ে ওঠে। কান্নাটাকে কোন রকমে আটকে রাখে ও। কেউ দেখে ফেললে সর্বনাশ হয়ে যাবে। ভীষণ লজ্জার ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে সেটা ওর জন্য।

কোনরকমে নাশতা শেষ করে উঠে আসে বীথি। মনে পড়ে গতকালের বিকেলটার কথা। কী মধুর সময়ই না ও কাটিয়েছিল আসলাম খানের সাথে। কত হাসিখুশি প্রাণচ্ছল লাগছিল আসলাম খানকে। আর আজ? একটা মানুষ রাতারাতি একরাতে এতটা পাল্টে যায় কী করে? অদ্ভুত মানুষ এই লোকটা।

    রাতের ব্যাপারটা ভুলে যেতে চাইলো ও। এসব কেবলই ওর মনের কল্পনা। এমনিতে বীথি খুব সাহসী মেয়ে। সামান্য অলিক ভয় ওকে গ্রাস করে নেবে তা কি হয়? সব কিছুর একটা যৌক্তিক ব্যাখ্যা দাঁড় করানোর চেষ্টা করলো ও। হঠাৎ করে জনমানবশূন্য এত বড় একটা বাড়িতে একা একটি ঘরে থাকায় ওকে ভয় গ্রাস করেছিল। আর ভয় থেকেই জন্ম নিয়েছিল সব অলিক কল্পনা। এরকম একটা যুক্তি দাঁড় করাতে পেরে ভাল লাগলো। মন থেকে ভয় অনেকটাই কেটে গেলো।

এ  বাড়ির পরিবেশের সাথে নিজেকে  মানিয়ে নিতে হবে যে করেই হোক। এছাড়া তো আর কোন উপায়ও নেই। যদিও এই বিশাল প্রাসাদ আর আভিজাত্যের সাথে  মানিয়ে নেয়াটা ওর মত এক গ্রামের মেয়ের জন্য খুবই দুরূহ ব্যাপার, তবু ও মনে প্রাণে চেষ্টা করতে লাগলো মানিয়ে নেয়ার। কাজের লোকদের সাথে কথা বললো। পরিচিত হওয়ার চেষ্টা করলো।

এক সময় অনেকটা স্বভাবিক হয়ে এলো বীথি। আড়ষ্টতা অনেকটা কমে গেলো। প্রাসাদটাকে আরো ভাল করে ঘুরে ঘুরে দেখলো। বাগানে হাঁটলো। আসলাম খান সেই সকালে কোথাও বেরিয়ে গিয়েছিলেন। বীথিকে কিছুই বলে যাননি। তেমন কোন কথাই হলো না আজ আসলাম খানের সাথে। মনটা তাই কিছুটা বিষণ্ন হয়ে রইল। বিষণ্নতার সাথে জোট বাঁধলো এসে এক রাশ অভিমান।

লাইব্রেরিতে সময় কাটানোর চেষ্টা করলো। ডেল কার্নেগির একটা বই খুঁজে বের করলো। গ্রামের কলেজের একজন শিক্ষক উনার কথা খুব বলতেন। উনার বই পড়লে নাকি আত্মিক উন্নয়ন ঘটে। উনার বাণী মনে সাহস যোগায়। নিজেকে চেনার পথ তৈরি করে দেয়। বইটা খুলে মগ্ন হয়ে  পড়তে লাগলো ও। কী সুন্দর সুন্দর কথা বলে গেছেন ডেল কার্নেগি।

"সাফল্য হল আপনি যা চান তা হাসিল করা। আনন্দ হল আপনি যা চান তা পাওয়া।"

"যদি ভালোভাবে বাঁচতে চান তা হলে মনে রাখবেন- সমস্যাকে তুচ্ছজ্ঞান করতে হবে।
কর্মহীন জীবন হতাশার কাফনে জড়ানো একটি জীবন্ত লাশ।"

"অনুকরণ নয়, অনুসরণ নয়- নিজেকে খুঁজুন, নিজেকে জানুন, নিজের পথে চলুন।
আপনি কে বা আপনার কী আছে তার ওপর আপনার সুখ নির্ভর করে না, সুখ নির্ভর করে আপনি কেমন চিন্তা করেন তার ওপর।"

"যা আপনাকে পীড়া দেয়, এমন বিষয় নিয়ে এক মিনিটের বেশি ভাববেন না।
মানুষের গুণ নিয়ে প্রতিযোগিতা করুন, দোষ নিয়ে নয়।"

বিক্ষিপ্ত মন অনেকটাই শান্ত হয়ে গেলো বাণীগুলো পড়তে পড়তে। বিষণ্নতাও কেটে গেলো অনেকটাই।  বাগানে গিয়ে টুকটাক কাজ করতে লাগলো বীথি। আগাছা ছেটে দিলো। কীটনাশক স্প্রে করলো। মালি ওকে দেখিয়ে দিলো কী করে কী করতে হয়।  মালির সাথে অনেক কথা হলো।

অনেক বিদেশী ফুলের গাছ আছে বাগানে। শুধু দশ বারো জাতের গোলাপই আছে বাগান জোড়ে। লাল টুকটুকে চায়না গোলাপগুলো শির উঁচিয়ে যেন তাকিয়ে আছে বীথির দিকে। মালি জানালো গোলাপগুলো সব সুরভীর লাগানো। সুরভী বাগানটাকে বড় ভালবাসতো। বেশি ভালবাসতো গোলাপ। নিজের হাতে ফুলগাছগুলোর যত্ন করতো ও। সুরভীর কথা বলতে বলতে মালির চোখে জল এলো।

মালি আরো বলল,
---বড় ভাল মানুষ ছিলেন ম্যাডাম। মনটা অনেক নরম ছিল। কাজের লোকদের খোঁজখবর নিতেন সব সময়। কারো কোন অসুখ বিসুখ হলে একেবারে  ঘরে গিয়ে খবর নিতেন। চিকিৎসার ব্যবস্থা করতেন। টাকার প্রয়োজন হলে দ্বিতীয়বার ভাবতেন না। সাথে সাথে দিয়ে দিতেন। এত মিশুক ছিলেন যে মনেই হত না এত বড় বাড়ির বউ তিনি।

বীথি এতক্ষণ সুরভীর রূপেই মুগ্ধ ছিল। এখন  সুরভীর জন্য শ্রদ্ধাটাও জায়গা করে নিলো মনে। প্রধান বাবুর্চি বদরুলের কাছে শুনেছে, সুরভীর রান্নার হাতও নাকি দারুণ ছিল। প্রায়ই নতুন নতুন রেসিপি শিখে আসলাম খানের জন্য রান্না করতো ও। শুধু আসলাম খান না সব কাজের লোককেও ও নিজের হাতে রান্না করে খাওয়াতো। এমন কি মাঝে মাঝে অসহায় এতিম বাচ্চাদেরও জড়ো করে নিজের হাতে রান্না করে  খাওয়াতো সুরভী।

সুরভী ছবিও আঁকতে পারতো। ওর আঁকা দারুণ দারুণ সব ছবি এ বাড়ির দেয়ালে দেয়ালে ঝুলে আছে। একটা ছবির দৃশ্য এমন, আসলাম খান আর সুরভী হাতে হাত ধরে বসে, গভীর ভালবাসা দুচোখে নিয়ে তাকিয়ে আছেন একে অপরের দিকে। নিজের ছবি নিজেই এঁকেছে সুরভী। দুচোখে লুকিয়ে থাকা গভীর ভালবাসাটা কী সুন্দর করে ও ফুটিয়ে তুলেছে ক্যানভাসে।

বীথি অনেকক্ষণ ছবিটা থেকে চোখ ফেরাতে পারেনি। এতটাই জীবন্ত ছবিটা। ছবিটার দিকে তাকালে ভুলে যেতে হয় ঐ ছবির একজন মানুষ আর এই পৃথিবীতে নেই।  একটা মানুষ একই সাথে এত গুণের অধিকারি কী করে হতে পারে ভেবে পায় না বীথি। এ বাড়ির একাকিত্বকে পাশ কাটিয়ে ও কী সুন্দর নিজের একটা আলাদা জগৎ তৈরি করে নিয়েছিল। বীথি মালিকে জিজ্ঞেস করলো,

----আচ্ছা মালি ভাই, উনি মারা গেলেন কীভাবে? কোন বড় অসুখ করেছিল বুঝি?

বিষাদের ছায়া নেমে আসে মালির মুখে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে সে উত্তর দেয়,
----কী করে যে মারা গেলো কেউ বলতে পারে না ম্যাডাম। ভাল হাসিখুশি মানুষটা হঠাৎ করেই লাশ হয়ে ফিরে এলো।

----লাশ হয়ে ফিরে এলো মানে? উনি কি তখন এই বাড়িতে ছিলেন না?

----না ম্যাডাম। উনি তখন উনার বাবার বাসায় ছিলেন। কদিন ওখানে থাকবেন বলে গিয়েছিলেন। উনি প্রায়ই যেতেন ওখানে। থাকতেনও। উনার বাবার বাসা বেশি দূরে না। গাড়িতে করে গেলে এখান থেকে দশ মিনিটের পথ হবে।

----ওহ। তারপর কী হলো?

----উনি ওখানে যাওয়ার দুদিন পর ভোরবেলা স্যারের কাছে ফোন এলো।
ফোন পেয়ে স্যার পাগলের মতো বেরিয়ে গেলেন। স্যার তো ভীষণ ভালোবাসতেন ম্যাডামকে। দুজনই দুজনের জন্য পাগল ছিলেন। এমন ভালবাসা আজকাল দেখা যায় না ম্যাডাম। কিন্তু ভাল মানুষেরা বেশিদিন এই পৃথিবীতে থাকে না। এইটাই হল নিয়ম। ম্যাডামও তাই এতো তাড়াতাড়ি চলে গেলেন আমাদেরকে ছেড়ে।

---কিন্তু উনার কী হয়েছিল তা তো বললেন না।
---কী যে হয়েছিল কে জানে? সবাই বলে ম্যাডাম নাকি আত্মহত্যা করেছেন। কিন্তু আমার বিশ্বাস হয় না। এমন হাসিখুশি মানুষ কেন আত্মহত্যা করবে বলেন? স্যারের সাথেও তো কোন বেবনতি ছিল না। হলে নিশ্চয়ই আমরা জানতে পারতাম।

সুরভী আত্মহত্যা করেছে শুনে বীথির বুকের ভেতরটা ধ্বক করে উঠলো। ওর ভাবতেই কষ্ট হলো এত সুন্দর একটা মেয়ে আত্মহত্যা করেছে।

---কীভাবে মারা গেলেন উনি?
---ম্যাডামদের বাসার সামনে একটা লেক আছে। ঐ লেকে ডুবেই মারা গেছেন ম্যাডাম। ভোরবেলা লেকের পানিতে উনার লাশ ভেসে থাকতে দেখা যায়। কীভাবে মরলেন সেটা কেউ বলতে পারে না। বাড়ির লোকেরা রাতের বেলা যখন ঘুমিয়ে ছিল তখন নাকি উনি বেরিয়ে এসেছিলেন ঘর থেকে। কেউ টের পায় নি। এতটুকুই শুনেছি আমি। বাকিটা আল্লাহ জানেন ম্যাডাম।

সব শুনে বীথির শরীর শিউরে উঠলো। সুরভী আত্মহত্যা করেছে এটা ওর জানা ছিল না। আর আসলাম খানের হঠাৎ করে মেজাজের এই পরিবর্তনের কারণটাও ও এখন ধরতে পারছে কিছুটা। ভালবাসার মানুষের এমন প্রস্থান কেইবা সইতে পারে। হয়তো সুরভীর এমন করে চলে যাওয়ার কষ্ট এখনও আসলাম খানকে নীরবে পীড়া দেয়।

কিন্তু সুরভী আত্মহত্যা করলো কেন? কী এমন কষ্ট ওর বুকে লুকিয়ে ছিল যা ওকে আত্মঘাতী করে তুলল? এ বাড়িতে সবার সাথে কথা বলে বীথি যেটুকু জেনেছে তা হলো, সুরভী আর আসলাম খান একে অপরকে পাগলের মত ভালবাসতেন। ওদের মধ্যে কখনোই কোন ঝগড়াঝাটি হতো না। কোন অশান্তি ছিল না ওদের জীবনে। তবে? বীথির মনে ঘোরপাক খেতে থাকে এই একই প্রশ্ন।

----

         সন্ধ্যায় বাড়িতে ফিরে এলেন আসলাম খান। হাতে অনেক গুলো শপিং ব্যাগ। বীথির দিকে ব্যাগগুলো বাড়িয়ে দিয়ে হাসিমুখে বললেন, দেখো তো পছন্দ হয় কি না?

আসলাম খানের হাসিমুখ দেখে বীথির মন থেকে নিমেষেই সব অভিমান দূর হয়ে গেলো। বীথি দ্বিধা নিয়ে ব্যাগগুলো হাতে নিয়ে বলল,
---এগুলো কী?
---তোমার জন্য কিছু কাপড়চোপড় ও দরকারি জিনিস।
বীথি বিস্মিত ও লজ্জিত হয়ে বলল,
---এগুলো কেন আনতে গেলেন? আর এত্ত!
আসলাম খান হেসে বললেন।
---বেশি কিছু তো না।

তারপর  ওরা এক সাথে চা নাশতা খেলো। এবার আর গাম্ভির্যের চাদরে মোড়া নন আসলাম খান। সেই প্রাণচ্ছল মানুষটা আবার ফিরে এসেছে। চা খেতে খেতে আসলাম খান  বললেন একটা কলেজের প্রিন্সিপালের সাথে কথা বলেছেন বীথির ভর্তির ব্যাপারে। কদিনের মধ্যেই বীথি কলেজ যেতে পারবে। খুশিতে নেচে উঠলো বীথির মনটা। আসলাম খান তাহলে ওর পড়াশুনার ব্যাপারটা ভুলে যাননি। কৃতজ্ঞতায় ওর চোখে জল এলো।

রাতে যথারীতি খাওয়াদাওয়া শেষে এক ভাল লাগা আবেশ মনে নিয়ে নিজের রুমে গেলো বীথি। আসলাম খান চলে গেলেন উনার ঘরে। আসলাম খান চলে যেতেই আগের রাতের ভয়ের কথা মনে পড়লো ওর। আজ যদি আবার সেই একই অবস্থা হয়! তারপর নিজেই নিজেকে অভয় দিলো ও।

গ্রাম থেকে নিজের বইপত্র সব সাথে করেই নিয়ে এসেছে। সেগুলো বের করে একটু পড়ার চেষ্টা করলো। বই পড়তে পড়তে কখন যে  ঘুমিয়ে পড়েছিলো টেরও পায়নি। হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেলো। দেখলো সারা বাড়ি নিঝুম হয়ে গেছে ততক্ষণে। ঘড়িতে তাকিয়ে দেখলো রাত একটা বাজে। ভয়টা এসে গ্রাস করার আগেই ও নিজেকে সাহস যোগালো, আজ কিছুতেই ভয় পাওয়া চলবে না।

রাত্রির নিরবতা ভেঙ্গে রাতের কোন পাখি ডেকে উঠলো আবার। গায়ে কাঁটা দিলো বীথির। একটু একটু ভয় পেতে শুরু করলো ও এবার। বলা যায় ভয়ের সাথে যুদ্ধ শুরু হল। ভয়কে ডিঙিয়ে নিজের বিছানায় এলো। মনকে অন্যদিকে ঘোরানোর চেষ্টা করলো। চোখ দুটো বন্ধ করে একশ থেকে উল্টোদিকে গুণতে শুরু করলো।

এভাবে এক সময় চোখের পাতা ঢুলুঢুলু হয়ে এলো। ঘুম মাত্র আসি আসি করছে এমন সময়  সেই গুঙিয়ে গুঙিয়ে কান্নার আওয়াজটা কানে এলো। ভীষণ ভয় পেলো বীথি এবার। তবে গত রাতের মত ভয়ে হিম হলো না আজ। ভয়ে ভয়েই ব্যাপারটা বুঝার চেষ্টা করলো। নিজের মনের অলিক কল্পনা হবে হয়তো।

এক সময় কান্নাটা থেমে এলো। বীথি ভাবলো এটা ওর মনের ভুলই হবে। কান্নাটা থামতেই ও আবার ঘুমানোর চেষ্টা করলো। এক সময় ঘুম চলেও এলো। কিন্তু আবার সেই কান্নার শব্দে ঘুমটা ভেঙে গেলো। বুকের ভেতরটা ভয়ে ঢিপ ঢিপ করতে লাগলো। রাতটা তখন আরও নিঝুম হয়ে গেছে। কান্নাটাকে আরও ভয়ঙ্কর মনে হচ্ছে।

গলাটা শুকিয়ে গেলো। মনে সাহস যুগিয়ে এবার বিছানা থেকে নেমে এলো ও। ঢক ঢক করে গ্লাসে রাখা পানিটা এক নিঃশ্বাসে পুরোটাই খেয়ে ফেলল। নাহ, কান্নার উৎসটা খুঁজে বের করতেই হবে যে করেই হোক। নয়তো এই ভয় ওকে শান্তিতে থাকতে দেবে না। তাছাড়া এমন বিদঘুটে আওয়াজে কে কাঁদে এ বাড়িতে খুঁজে বের করা দরকার। দরজাটা খুলে পা টিপে টিপে বের হলো বীথি। ওর হাত পা  ঠাণ্ডা হয়ে এসেছে ভয়ে। শরীর কাঁপছে। দাঁতে দাঁতে ঘর্ষণ হচ্ছে। কিন্তু তবু থামলো না ও। এগিয়ে গেলো করিডোর ধরে।

চলবে
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ৯:৪১
১০টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×