somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জীবাশ্ম বা ফসিল আসলে কি?

২৯ শে মে, ২০১৭ দুপুর ১:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জীবাশ্ম= জীব+ অশ্ম। জীব কথাটার মানে আমাদের সবারই জানা। অর্থ্যাত জীবন আছে যার, তাই হল জীব। আর অশ্ম মানে হল পাথর বা পাথুরে জাতীয় কিছু। জীবের যে অংশ নষ্ট না হয়ে শক্ত, প্রস্থরীভূত হয়ে হাজার হাজার, এমনকি লক্ষ বা কোটি বছর পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে সেই অংশটাই হল জীবাশ্ম। কিন্তু প্রশ্ন হল, জীবদেহের কোন অংশ পচে না? আর কিভাবেই বা সেই অংশটি পাথুরে ও কঠিন রূপ লাভ করে?
সব প্রাণীরই কিন্তু শরীরে নরম ও কঠিন অংশ আছে এটা আমরা সবাই জানি। যেমন- মানবদেহের হাড়, মাথার খুলি, করোটি কিংবা দেহের পুরো কংকালটি কিন্তু শক্ত অংশ। আর আমাদের দেহের মাংস, চামড়া, মস্তিষ্ক- এইসব অংশগুলো কিন্তু সহজেই পচনশীল। ঠিক একই বিষয় অন্য প্রাণীদের বেলায়ও সত্য। যেমন- মাছ, গরু, ছাগল, বাঘ, কিংবা লুপ্ত হয়ে যাওয়া প্রাগৌতিহাসিক ডাইনোসর ইত্যাদি।
ধরুন, কোনও একটি সামুদ্রিক মাছের মৃত্যু হল পানিতেই। সেই মাছের মৃতদেহ পানির নীচে একসময় তলিয়ে গেল। আস্তে আস্তে তার নরম অংশগুলো পচে গেল কিংবা অন্যান্য মাছেরা তা ঠুকরে ঠুকরে খেয়ে সাবাড় করে দিল। একসময় পড়ে থাকল হাড়। ধরুন, এবার সেই হাড়ের উপর ধীরে ধীরে পলিমাটি জমতে শুরু করল কিংবা বৃহৎ কোনও ঘটনায় হটাত করে বেশ কিছু পরিমাণ পলির অংশ তার উপর এসে পড়ল। এভাবে ধীরে ধীরে হাড়ের উপর পাতলা পাতলা করে জমতে থাকা পলি একসময় হাড়ের সাথে মিশে গিয়ে সেটাকে একসময় পাথুরে, কঠিন একটা আবয়ব দিয়ে দেবে। শুধু তাই নয়। ওই অঞ্চলে যদি পানির উপর থেকে এভাবে ক্রমশঃ পলির স্তর এসে জমতে থাকে তাহলে সেই শিলাখন্ডটি আস্তে আস্তে বৃহৎ রূপ লাভ করবে ও ক্রমশ তার উচ্চতা বাড়তে থাকবে। সেই সাথে উঁচু হতে থাকা স্তরের উপর আরও মৃত মাছের হাড় জমতে জমতে তারাও একসময় প্রস্তরীভূত হয়ে যাবে। হাজার হাজার বা লক্ষ লক্ষ বছর পরে সমুদ্রের নীচের সেই বিশাল প্রস্তরখন্ড যদি কোনও একদিন মাথা চাড়া দিয়ে একসময় পানির উপর ভেসে উঠে কিংবা ধরুন কোনও ভূমিকম্পের ফলে যদি সেটি দ্বীপ হিসেবে কিংবা পাশে থাকা কোনও দ্বীপের একটি অংশ হিসেবে পানির উপর ভেসে উঠে, তখন সেই দ্বীপ বা দ্বীপাংশে কিন্তু ওই পাথুরে জীবের অংশগুলো পাওয়া যাবে। কালের পরিক্রমায় কোনও পর্যটক বা গবেষকের চোখে যদি অকস্মাৎ ধরা পড়ে সেই প্রাচীন জীবের পাথুরে রূপরেখা, তখন তিনি হয়তো বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সেটাকে অত্যন্ত সতর্ক কায়দায় আলাদা করে বের করে এনে সেই প্রাণীর আকৃতি দেখে এবং রেডিও কার্বন ডেটিং পদ্ধতিতে তার বয়স বের করে মোটামুটি তার সময়কাল, তার প্রজাতি ও বৈশিষ্ট্য ইত্যাদি সব প্রয়োজনীয় তথ্য বের করে ফেলতে পারবেন। যেমন- ডাইনোসরের ক্ষেত্রে অনেক ফসিল বা জীবাশ্ম পাওয়া গিয়েছিল বিধায়ই আমরা আজ তাদের অস্তিত্ব, বয়স, সময়কাল, তাদের বৈশিষ্ট্য এবং তাদের বিলুপ্ত হয়ে যাবার ইতিহাস বের করে ফেলেছি। তবে সব ফসিল যে পানির তলায়ই জমে গিয়ে সৃষ্টি হয়, এমন না। যেমন- পাথরের গুহার নীচে চাপা পড়া কোনও মৃত প্রাণীর হাড়গোড়ের উপর পলির স্তর জমে গিয়ে সেটা পাথুরে রূপ লাভ করে সংরক্ষিত অবস্থায় থাকতে পারে। তাছাড়া সমুদ্রের পাড়ে মৃত কোনও প্রাণীর উপরও ঢেউয়ের সাথে আসা পলি জমে গিয়ে আস্তে আস্তে সেটা পাথর খন্ডে রুপান্তরিত হয়ে টিকে যেতে পারে। সুতরাং এটা নিশ্চয়ই বুঝা গেছে যে, সব প্রাণীরই ফসিল সৃষ্টি হয় না। কারণ, ফসিল সৃষ্টি হওয়ার কিছু শর্ত থাকে। ঘটনাক্রমে এসব শর্ত পূরণ হয়ে গিয়ে বরং ফসিল সৃষ্টি হওয়াটাই দৈব ঘটনা। আর সেই ফসিল বা জীবাশ্মগুলোকে খুঁজে পাওয়াটাও আরও একটা দৈব ঘটনা কিংবা ভাগ্যের ব্যাপার। সুতরাং ফসিল রাস্তায় ঝরে পড়ে থাকা কোনও গাছের শুকনো পাতার মত সস্তা কোনও জিনিষ নয় যে চাইলেই খুঁজে বের করা যাবে কিংবা এনে দেওয়া যাবে। অবশ্য আজ পর্যন্ত যে পরিমাণ জীবাশ্ম বা ফসিল বিজ্ঞানীরা উদ্ধার করেছেন, তা যথেষ্টের চেয়েও বেশী। প্রাণীজগতের পুরো একটা ইতিহাসই বিজ্ঞানীরা আজ বের করে ফেলতে সক্ষম হয়েছেন। অবশ্য আধুনিক যুগে জিনেটিক্স বিভাগের অভূতপূর্ব সাফল্য ও দ্রুত অগ্রগতির কারণে ফসিলের প্রয়োজনও ক্রমেই ফুরিয়ে আসছে। কারণ, সমস্ত প্রাণীদের দেহের ডিএনএ-এর ভেতরেই লুকিয়ে আছে সেই প্রজাতির লক্ষ কিংবা কোটি বছরের জীবন সংগ্রামের ইতিহাস। প্রত্যেক প্রাণীর ডিএনএ নকশার জটিল বইয়ের পৃষ্ঠাগুলো তারা যত ক্রমে ক্রমে ওল্টাচ্ছেন, ততই বেরিয়ে আসছে সকল প্রানীর সুপ্ত ইতিহাসের প্রতিটি অজানা ও বিস্ময়কর অধ্যায়! আর সেই সাথে জীবাশ্ম বা ফসিলের প্রয়োজনীয়তাও ধীরে ধীরে ফুরিয়ে আসছে।

সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মে, ২০১৭ দুপুর ১:০৩
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×