somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাঁকা সময়

০৭ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মুহিব বসে আছে একটা খাবার দোকানে । তার চুল উস্কুখুস্কু। জামা কাপড়েও চরম অযত্নের ছাপ। পা ধুলোয় মাখামাখি । তবু দোকানদার তাকে ভিক্ষুক ভেবে বের করে দিচ্ছে না কারন এত সব কিছুর পরেও তাকে ভদ্রলোক বলেই মনে হচ্ছে । তবে বোঝা যাচ্ছে ভদ্রলোক দারুন কোন সমস্যা নিয়ে দিনাতিপাত করছে। বের করে দেওয়ার বদলে দোকানদার বরং তার প্রতি সহানুভূতিশীল । কোন খদ্দেরই ঘন্টার পর ঘন্টা আনমনা হয়ে এভাবে বসে থাকে না।আবার তাও আজ নয় শুধু ।অনেক দিন ধরেই এরকম অবস্থা চলছে। ভদ্রলোকের প্রতি দোকানদারের মায়া জন্মে গেছে। নাহলে নিজের ব্যবসার ক্ষতি করে কাউকে এভাবে বসে থাকতে দেওয়ার লোক নয় সে। ঘটনা জানান জন্য তার মন উৎকীর্ন হয়ে আছে কিন্তু নিজেকে সে সামলেছে।শেষ পর্যন্ত কি হয় দেখার জন্য তার অপেক্ষা ।
মুহিব বসে আছে যে দোকানে সেটা অনুর বড় ভাইয়ের বাসার কাছাকাছি ।অনুর বড় ভাইয়ের বাসায় যাবে কিনা বুঝতে পারছে না। এরকমই হচ্ছে প্রতিদিন। সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে বের হয়ে পড়ে অনুর বড় ভাইয়ের বাসা লক্ষ্য করে আর ঠিক এই দোকানের সামনে এসে বুঝতে পারে না আর সামনে এগোনো উচিত কিনা। তখন দোকানে ঢুকে পড়ে । এভাবে সারাদিন বসে থেকে তারপর এক সময় ফিরে যায় বাসায়।বাসায় তার একদম ভালো লাগে না। মনে হয় যেন মৃত্যপুরী। অথচ অনু যখন ছিল তখন কেমন প্রাণবন্ত । আগে কখনো বাসাটাকে খুটিয়ে দেখা হয় নি। বাসায় ঢোকার পর তার প্রধান আগ্রহের বস্তু ছিল অনু। এখন বাসাটা খুঁটিয়ে লক্ষ্য করে চারদিকে অনুর অস্তিত্ব টের পায়। চারদিকে তার যত্নের ছাপ। আহা , কি রকম ভালবেসেই না সে ঘরটা গুছিয়েছে। এখান থেকেই অনুর মননের একটা ধারণা পাওয়া যায় । তখন মুহিবের বুকটা ব্যাথায় টনটন করে উঠে। তার মনে হয় সে বুঝি আর বাঁচবে না। অনুকে ছাড়া বাচার কথা কল্পনাও করা যায় না। চার দিক থেকে নিঃসঙ্গতা তাকে ঘিরে ধরে। নিঃসঙ্গতা এড়ানোর জন্য সে তাড়াতাড়ি আলো জ্বালিয়ে ঘরের প্রতিটি রুম আলোকিত করে দেয়। তবুও কাটেনা তার ভয়। উচ্চ শব্দে চালিয়ে দেয় কোন পপ মিউজিক। কোলাহলে তার ভিতরের অস্থিরতা কিছুটা কমে আসে। খাবার কথা সে ভুলে যায় ।অবসাদে ক্লান্তিতে এক সময় নেতিয়ে পড়ে ঢুলুঢলু চোখে ঘুমের ঘোরে। তারপর সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে বেরিয়ে পড়ে অনুর ভাইয়ের বাসা লক্ষ্য করে এবং ঠিক এই হোটেলটার সামনে এসে থমকে দাড়ায়। আর এগোনোর মত মানসিক শক্তি আর খুজে পায় না। মনটা গ্লানি আর হতাশায় ভরে যায়। কয়েকদিন অনুর সাথে সে দেখা করার চেষ্টা করেছে। বাসার বেল বাজার পর কাজের মেয়ে ভেতর থেকে প্রশ্ন করে , কে ? মুহিব তখন কি বলবে ভেবে পায় না। কারন সে জানে ভেতরে যে আছে সে ইতিমধ্যে ডোর ভিউ দিয়ে তাকে দেখতে পেয়েছে। তারপরও যখন প্রশ্ন করছে তার মানে দরজা খুলবে না। এই বাসার কাজের মেয়ে তাকে ভালভাবেই চেনে কারন সে হচ্ছে এই বাসার মালকিনের ছোট বোনের জামাই। গত দুই বছর ধরে তার যাতায়াত এই বাসায়। আপ্যায়নে ত্রুটি করে নি। সেই তার আজ এই অবস্থা । কি করবে বুঝতে না পেরে মৃদু কন্ঠে নিজের নামটা উচ্চারণ করে। এবং সাথে সাথে ভেতর থেকে কাজের মেয়েটা বলে , বাসায় কেউ নেই। এত তাড়াতাড়ি বলে যেন এই কথাটি বলার জন্য অপেক্ষা করতে করতে সে বিরক্ত।
আশ্চর্য ! অনু , বড় আপা ,দুলাভাই বা তাদের ছেলে-মেয়ে রা কখনও আসেনি। সে কি এতই অচ্ছুত হয়ে গেছে। মানুষ মাত্রই ভুল করে , কে না জানে ? সেও একটা ভূল করেছে । হ্যাঁ ,হয়তো বড় ভূল। কিন্তু আর কি সে করতে পারত ? ওরকম তিনটে গুন্ডাদের সাথে সে মোটেও পেরে উঠত না। একজন তীক্ষ্ ফলার ছুরি গলার কাছে , প্রায় ত্বকের সাথে লাগিয়ে রেখে অন্য হাত দিয়ে পেছনের কলার ধরে হিসহিস করে বলেছিল , চান্দু , বীরত্ব দেখানোর চেষ্টা করো না , শূধু একটা টান দিব।রিকশাওয়ালা তখন এক পাশে দাড়িয়ে ভীত মুখে তাকিয়ে ছিল। বাকি দুজন তার মানিব্যাগ, হাতঘড়ি , মোবাইল নিয়ে অনুর ভ্যানিটি ব্যাগ , গলার হার , চুড়ি ,কানের দুল খুলে নিয়ে তার গায়ে হাত দিল ! ক্রোধে লজ্জায় মুহিব চোখ বন্ধ করে ফেলল। অনেকক্ষণ চোখ বন্ধ রেখে যখন খুলল তখন অনু পিচ ঢালা পথে পা ছড়িয়ে স্তম্ভিতের মত বসে আছে। মুহিব বোকার মত সেদিকে চেয়ে পাশে দাঁড়ানো রিকশাওয়ালার দিকে তাকাল। জোয়ান রিকশাওয়ালা ও কুন্ঠিত। হাল্কা কুয়াশা ঢাকা ল্যাম্পোষ্টের আলো। মুহিব তার এক আত্মীয়ের বিয়ে শেষে অনু সহ ফিরছিল।শীতকাল বলে এগারোটা বাজতেই রাস্তা ফাঁকা ।
সম্ভিত ফিরে পেয়ে মুহিত অনুর পাশে গিয়ে তার কাধ ছু'ল। অনুর মুখের ভাবে কোন পরিবর্তন হল না। সেটা কঠোর । মুহিবের দিকে ফিরেও তাকাল না। মুহিব ধীরে অনুকে দাড় করিয়ে রিকশায় তুলে দিয়ে নিজে উঠতে যাবে এমন সময় অনু বলল , তুমি উঠবে না। মুহিব বিস্মিত হয়ে বলল , মানে ? অনু তার কথার উত্তর না দিয়ে রিকশাওয়ালাকে বলল, আপনি চালান। রিকশায় প্যাডেল দিতে পেরে রিকশাওয়ালা পরম স্বস্হিতে অনুকে উড়িয়ে নিয়ে গেল। পেছনে মুহিব একা দাড়িয়ে অনুর চলে যাওয়া দেখল। বাসায় ফিরে দরজার তালা খুলতে খুলতে সে ভাবতে লাগল অনু কোথায় যেতে পারে। অনুর যাওয়ার দুইটা জায়গা আছে। তাদের একটি অনুর বাবা মায়ের বাসায় অন্যটি তার বড় আপা। অনেক ভাবনা চিন্তা করে মুহিব বুঝতে পারল অনু বাবা-মায়ের কাছে ঐ অবস্থায় যাবে না বরং বড় আপার বাসায় যাওয়া সুবিধার। নিশ্চিত হওয়ার জন্য ফোন করা যায় । কিন্তু ঐ রাত্রে ফোন করার চিন্তা সে বাদ দিল।সারারাত না ঘুমিয়ে পরদিন ভোরবেলা বড় আপার বাসায় এসে বেল চাপল। অনেক পাখি ডেকে উঠল একসাথে। ভোর বেলার পাখির কিছির মিছির শব্দ ।কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে আবার বেল চাপল।আবার পাখি ডেকে উঠল। মুহিবের মনে হচ্ছে কেউ একজন ডোর ভিউ দিয়ে তাকে দেখল। মুহিব অপেক্ষা করতে লাগল। আবার বেল চাপল। ভেতর থেকে কাজের মেয়ে তীক্ষ্ন কন্ঠে চেচিয়ে উঠল , কে ?
মুহিব উত্তর দিল , আমি মুহিব , অনুর হাজব্যান্ড।
ভেতর থেকে উত্তর এল , বাসায় কেউ নেই , বাইরে গেছে, দরজা খুলতে নিষেধ আছে। মুহিবের মাথায় যেন বজ্রাঘাত হল। সত্যি সে এটার জন্যে প্রস্তুত ছিল না।
ঐদিন আরও একবার গেল। পরদিন গেল , তৃর পরের দিন গেল । সেই একই উত্তর । তারপর থেকে এরকম চলছে।
মুহিব দুই কনুই টেবিলে রেখে অলস ভ্ঙ্গীতে বসে আছে। তার চোখে কোন ভাষা নেই যেখান থেকে কেউ পড়ে বলতে পারবে মুহিব এখন কি ভাবছে বা করবে। শুধুই বসে থাকা।
হাতের সিগারেটের আগুনের ছ্যাকা খেয়ে তার ঘোর ভাঙল। কখন সে সিগারেট ধরিয়েছিল মনে করতে পারল না। তবে সে যে সিগারেটে টান দেয়নি সিগারেটের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারল। সে উঠে দাড়ায়। কয়েক কাপ চা এর বিল দিয়ে বেরিয়ে পড়ল। সূর্য মধ্যে গগনে। তার ছায়াটি খুব ছোট । বাসায় যেতে ইচ্ছে করছে না। বাস দেখে একটাতে উঠে পড়ে একটু হোঁচট খেল। বাসের ড্রাইভারের পেছনের সীটে খুব সুন্দরী একটা মেয়ে বসেছে। লোকজন মেয়েটাকে এড়িয়ে পেছনের সীটে গিয়ে বসছে।সে মেয়েটির পাশে বসে পড়ল।
আচ্ছা সে যদি সেদিন গুন্ডা তিনটার সঙ্গে রুখে দাড়াত তাহলে কি হত ? একটা ছুরি বের করেছিল।অন্য দুইটির কোমরের কাছে শার্ট ফোলা ছিল। মনে হয় আগ্নেয়াস্ত্র কোমরে গুঁজে নিয়েছে।হয়ত তারা হয়ত তাকে মেরে ফেলত। অনু কি এটা আশা করে ? তাতে তার লাভ কি ? সে তখন গর্বের সাথে সবার সামনে গিয়ে দাড়াত। হ্যাঁ , সে হেলা ফেলা না হয়ে মর্যাদার পাত্রী হত। আর এখন ? সে একজন পরীক্ষিত কাপুরুষের সাথে জীবন কাটাবে ! অনুশোচনা লজ্জায় সে কুঁকড়ে গেল। প্রতিক্রিয়ায় সে তার আশে পাশের লোকগুলোর মুখের দিকে তাকাতে লাগল। তার মনে হতে লাগল সবাই বুঝি তার অন্তরের ভেতরটা দেখতে পাচ্ছে। সে ত্বরিত উঠে দাড়াল।পরের স্টপেজবাস থামার সাথে সাথেই সে লাফিয়ে নামে ফুটপাথ ধরে মাথা নিচু করে এলোমেলো হাঁটতে লাগল। বুঝিবা এই পৃথিবীতে তার মত অসহায় কেউ নেই। কেবলই মনে হচ্ছে ঐ রাতে সে কেন সঠিক সিদ্ধান্তটা নিতে পারে নি। তার তো প্রথমে ইচ্ছে হয়েছিল রুখে দাঁড়াবার , যা হয় হবে । কিন্তু আবার কেন পিছু হঠে। কে জীবন টার জন্য এমন মায়া বোধ হল। তার জীবনটাকে ত্যিই সে বড় ভালবাসে , একাকী স্বার্থপর ভালবাসা !
সে দ্বন্দ্বে পড়ে যায় । দ্বিধান্বিত পদক্ষেপে এলোমেলো ভাবনার মধ্যে দিয়ে যখন সে পথ চলছে তখন তাকে হঠাৎ থামতে হল। তাকিয়ে দেখল একটা জীর্ণ হাত তার ডান হাতের কনুই ধরে আছে।আশি কিংবা নব্ই যে কোন বয়স হতে পারে। দুটি অসহায় চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে। সে চোখে কুন্ঠা সে দেখতে পেল। হাত পাততে অভ্যস্ত নয় এমন কোন লোককে হাত পাততে হলে যা হয় আর কি। সে লোকটির পা থেকে মাথা পর্যন্ত খুটিয়ে দেখল। আশ্চর্য অন্যদিন হলে সে লোকটার দিকে ফিরেও তাকাত না। হ্যাঁচকা টানে নিজের কনুই ছাড়িয়ে নিয়ে হয়ত একটা ধমক দিয়ে সে নিজের পথে চলত। কিন্তু আজ সে নিজে অসহায় বলে হয়ত আরেকজন অসহায়ের প্রতি তার সহানুভূতি জেগে উঠল ! বৃদ্ধের ঠোট অল্প অল্প কাঁপছে । সেখান থেকে কোন কথা উদ্ধার করা যায় না। মুহিব নিজ থেকে বলল , পথ হারিয়ে ফেলেছেন ? মুহিব আপাতদৃষ্টিতে এই গেঁয়ো লোকটাকে আপনি করে বলছে , সেও ভাবনার বিষয়। তার বলা উচিত ছিল , কি চাচা মিয়াঁ , তুমি এই ধরনের শব্দ।
মুহিবের প্রশ্নের জবাবে বৃদ্ধ এবার মাথা নেড়ে সায় জানাল। কোথায় যাবেন ? বৃদ্ধ অস্ফুট স্বরে কি বলল বোঝা গেল না। মুহিব তার মাথাটা এগিয়ে নিয়ে কান টা বৃদ্ধের মুখের কাছে ধরল। বৃদ্ধ আবার বলল। এবার সে বুঝতে পারল। বৃদ্ধ বলল , ছেলের কাছে। বৃদ্ধের গলার জোরও একটুখানি বেড়েছে। মনে হয় একটু ভরসা পেতে শুরু করেছে এবং তাই স্বাভাবিকতা ফিরে আসছে। মুহিব বলল , ছেলে কোথায় থাকে ? জানি না। ফোন নাম্বার আছে ? আছে। কোথায় ? ছেলের কাছে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন লোক কৌতুহল নিয়ে দাড়িয়ে গিয়ে ছিল। তারা শব্দ করে হেসে উঠল। মুহিবও একটু হাসল। বৃদ্ধের প্রতি তার মায়া জন্মাল।সে ভাবল এই বৃদ্ধকে বাড়ি পৌছানোর ব্যাবস্থা করতে হবে।
বলল , আপনার বাড়ি কোথায় ? চন্দ্র নগর। ভিড়ের থেকে একজন বলে উঠল সে তো মেলা দূর। মুহিব বলল , কিভাবে যেতে হবে ? লোকটি বলল , টার্মিনাল থেকে চন্দ্র নগরের বাস ছাড়ে। টার্মিনালে গিয়ে বাসে তুলে দিলেই যেতে পারবে। মুহিব বলল , এখন বাস পাওয়া যাবে ? হ্যাঁ , এক ঘন্টা অন্তর বাস ছাড়ে। মুহিব ভিড়ের মাঝে কয়েক জনের চোখের দৃষ্টি দেখে অস্বস্তি বোধ করল। তাদের দৃষ্টি দেখে মনে হচ্ছে সে যেন অন্য কোন গ্রহের জীব। এতক্ষণ পর উপলব্ধি করব সে যেন একটি মঞ্চ নাটকে অভিনয় করে চলেছে যেখানে তার ভূমিকা দ্য়াল বাবু। হঠাৎ লজ্জা এসে ভীড় করতে চাইল তার ভিতর কিন্তু সে সেটিকে কাটিতে লোকটিকে ধন্যবাদ জানিয়ে একটা রিকশি বা টেক্সির অপেক্ষা করতে করতে বৃদ্ধের সাথে কথা বলায় আগ্রহী হব। ভীড় হালকা হয়ে গেল। কেবল মাত্র কথা বলা লোকটা রইল। মহিব ভাবল এখনও কিছু পরোপকারী লোক তাহলে আছে ! লোক বোধহয় আরো কিছু সাহায্য করতে চায়।মুহিব বৃদ্ধকে বলল , রাগ করে চলে এসেছেন ? বৃদ্ধ নিরুত্তর। বউয়ের সাথে ঝগড়া করেছেন ? না। বউ বেঁচে আছে তো ? হ্যাঁ । ছেলের বউ বকা দিয়েছে ? হ্যাঁ ।কেন , বসে বসে শুধু ভাত খান , এই জন্যে ? হ্যাঁ । আপনার বউ কিছু বলে নি ? বৃদ্ধ ফ্যাল ফ্যাল চোখে তাকিয়ে রইল। মুহিব বুঝল বৃদ্ধার অবস্থা ও বেশি সুবিধার নয়।
বাসে বৃদ্ধকে সিটে বসিয়ে দিয়ে মুহিব যখন ফিরতে যাবে তখন সে তার বা হাতটা বৃদ্ধের জীর্ণ দুটি হাতের ভিতর আবিষ্কার করল। সেদিকে তাকিয়ে বৃদ্ধের দিকে চোখ ফেরাতেই বৃদ্ধ বিড়বিড় করে বলল ,তুই বাবা ফেরেস্থা। মুহিব কি বলবে ভেবে না পেয়ে আলতো ভাবে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে এসে সিগারেট ধরাতে ধরাতে বাসের হেলপারকে বলল , ভাই একটু জায়গা মত নামিয়ে দিয়ো। সে হেল্পারকে বিশটা টাকা গুঁজে দিতে চাইলে হেলপার নিল না। লাগবে না ভাই।
মুহিব ঝুপড়ি মত একটা দোকানে বসে চা খেতে খেতে গাড়িটির চলে যাওয়া দেখল। হঠতই তার মন বলল , সামান্য একটু সহযোগিতার জন্যে সে ফেরেস্থা বনে গেল ! আশ্চর্য এই সমাজ। তার মনে পড়লো ভিড়ের মধ্যে লোকগুলোর দৃষ্টিতে তার লজ্জা অনুভব করার কথা। কেন ? আনমনা হয়ে সে ভাবতে লাগল। তার মনে পড়ল সেই ছোটবেলায় একদিন মায়া বশত এক ভিক্ষুককে এক সের চাল দিতে গিয়ে মায়ের হাতে ধরা পড়ে যাওয়ার কথা।মা রেগে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেওয়ার কথা। চিৎকার করে বলেছিলেন , তুই হাজী মোহাম্মদ মহসীন হয়ে ছিস ?ঔ ঘটনার রেশ থেকে গিয়ে ছিল আরও কিছুদিন । সবাই সময়ে অসময়ে তাকে হাজী মোহাম্মদ মহসিন বলে ক্ষেপাত আর নিজে সে ভাবত কি কুক্ষনে যে কাজটি করতে গেলাম।একসময় হঠাৎ তার মন এতদিনের এই যে হীনম্মন্যতা , হতাশা তার থেকে মুক্তি পেয়ে শান্ত হয়ে এল। একটা কাগজ আর কলম নিল দোকানির কাছ থেকে। লিখল--------
প্রিয় অনু,
আমার জঘন্য কর্মকান্ডের জন্য ক্ষমা চাইতে আমার লজ্জাবোধ করছে। তবু দুটি কথা বলতে চাই। তুমি তো জানো খুব সাধারণ একটা পরিবিরে আমার জন্ম ও বেড়ে উঠা। যেখানে শেখানো হয়েছে , কি রকম ভাবে স্বার্থপর হওয়া যায় এবং নিজের স্বার্থটা কিভাবে কড়াই গন্ডায় আদায় করে নিতে হয়। আমি অসাধারণ কোন মানুষ নই। আমার কাছ থেকে তুমি ঐ রাত্রে কিভাবে ভিন্ন আচরণ আশা করছিলে। তোমার কি মনে পড়ে , অফিসে বসের অকারন অপ্রিয় কথা শুনে মন খারাপ ভাবটা কাটাতে না পেরে যখন বাসায় ফিরি তুমি শান্তনা দিয়ে বলতে , আহা ,তুমি শুধু মন খারাপ করছ , অফিসে ওরকম একটু আধটু হয়েই থাকে। তুমি কি বুঝতে পারছ যে কোন গ্লানি হজম করার কথা আমার সে কবে জন্মে গেছে !
তুমি ফিরে এসো। তুমি ফিরে আসবে আমার জন্য নয় , আমাদের অনাগত সন্তানের জন্যে । তুমি তাদের মানুষের মত মানুষ তৈরি করবে আমার মত খোলসের মানুষ নয়। কথা দিচ্ছি সারাজীবন তোমাদের পাশে থাকব।
ইতি
মুহিব।
চিঠি শেষ করে মুহিব দোকান থেকে বের হল। ষ্টেশনারি দোকান থেকে খাম কিনে তাতে চিঠিটা ভরে মুখ আটকে হাজির হল বড় দুলাভাইয়ের অফিসে। তিনি মুহিবকে দেখে হাসতে হাসতে বললেন , দুই একটা দিন অপেক্ষা কর সব ঠিক হয়ে যাবে। তারপর খুব মজা করার ভঙ্গিতে বললেন , তোমার জায়গায় আমি হলে কি করতাম জানো ? ঠিক তুমি যা করেছিলে তাই। বলে হাসতে লাগলেন। মুহিব যখন চিঠিটা তার হাতে দিল তিনি বললেন , কি লিখেছ খুব পড়ার ইচ্ছে হচ্ছে ।কিন্তু থাক এ তোমাদের ব্যাক্তিগত ব্যাপার । দুলাভাইয়ে চা কফি অগ্রাহ্য করে সে রাস্তায় নামল। সবকিছু কেমন নতুন মনে হচ্ছে । তার চেনা পৃথিবীতে যেন বড় ধরনের এক পরিবর্তন হয়ে গেছে।
। **********



সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১:২৩
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কোরআন কী পোড়ানো যায়!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৮

আমি বেশ কয়েকজন আরবীভাষী সহপাঠি পেয়েছি । তাদের মধ্যে দু'এক জন আবার নাস্তিক। একজনের সাথে কোরআন নিয়ে কথা হয়েছিল। সে আমাকে জানালো, কোরআনে অনেক ভুল আছে। তাকে বললাম, দেখাও কোথায় কোথায় ভুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেঞ্চুরী’তম

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


লাকী দার ৫০তম জন্মদিনের লাল গোপালের শুভেচ্ছা

দক্ষিণা জানালাটা খুলে গেছে আজ
৫০তম বছর উকি ঝুকি, যাকে বলে
হাফ সেঞ্চুরি-হাফ সেঞ্চুরি;
রোজ বট ছায়া তলে বসে থাকতাম
আর ভিন্ন বাতাসের গন্ধ
নাকের এক স্বাদে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভণ্ড মুসলমান

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:২৬

ওরে মুসলিম ধর্ম তোমার টুপি পাঞ্জাবী মাথার মুকুট,
মনের ভেতর শয়তানি এক নিজের স্বার্থে চলে খুটখাট।
সবই যখন খোদার হুকুম শয়তানি করে কে?
খোদার উপর চাপিয়ে দিতেই খোদা কি-বলছে?

মানুষ ঠকিয়ে খোদার হুকুম শয়তানি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসবে তুমি কবে ?

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪২



আজি আমার আঙিনায়
তোমার দেখা নাই,
কোথায় তোমায় পাই?
বিশ্ব বিবেকের কাছে
প্রশ্ন রেখে যাই।
তুমি থাকো যে দূরে
আমার স্পর্শের বাহিরে,
আমি থাকিগো অপেক্ষায়।
আসবে যে তুমি কবে ?
কবে হবেগো ঠাঁই আমার ?
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×