গাজীপুরের পিরুজালী গ্রামে বড় ছেলে নুহাশের নামে কয়েকশ’ প্রজাতির বৃক্ষের এক বাগান গড়ে গেছেন জনপ্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদ, যেখানে জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত কাটাতে চাইলেও সমাহিত হতে চাননি তিনি।
গত ১২ মে সকালে নুহাশ পল্লীতে বসে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে হুমায়ূন আহমেদ বলেন, “আমি চাচ্ছিলাম, আমার মৃত্যুর পর কবরটা এখানে হোক। পরে দেখলাম, এটা কবরস্থান হয়ে যাবে। এটা কবরস্থান হওয়ার স্থান নয়। এটা তখন গুলিস্থানে পরিণত হবে। এখানে দুনিয়ার লোক আসবে। ২১ শে ফেব্রুয়ারি ফুল দেওয়ার জন্য, ১৩ নভেম্বর ফুল দেওয়ার জন্য আসবে। এটা হয়ে যাবে একটা কবরস্থান। এটা কবরস্থান বানানো যাবে না।”
তিনি বলেন, “এই নুহাশ পল্লী আমার অনেক প্রিয় স্থান। এই মাটির প্রতিটি ইঞ্চির সাথে আমার স্বপ্ন জড়িত। এটা যাতে বিক্রি না হয়।”
“এটাকে বিক্রি করা মানে আমার স্বপ্নটাকে বিক্রি করা। নুহাশ পল্লী যাতে আমার ছেলে-মেয়েদের টানা-টানি, ভাগাভাগির শিকার না হয়”, বলেন হুমায়ূন।
লেখকের মৃত্যুর পর শুক্রবার সকালে তার ছোট ভাই কার্টুনিস্ট আহসান হাবিব গণমাধ্যমকে জানান, গাজীপুরের নুহাশ পল্লীতেই হুমায়ূনকে দাফন করা হতে পারে।
তবে নিউ ইয়র্কে অবস্থানরত তাদের আরেক ভাই লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, এ ব্যাপারে হুমায়ূন আহমেদের অন্তিম ইচ্ছাকেই গুরুত্ব দেওয়া হবে। আর যদি কোনো অন্তিম ইচ্ছা না পাওয়া যায়, তাহলে সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে হুমায়ূন ইংগিত দিয়েছিলেন, প্রয়োজনে রাজধানীর আজিমপুর বা অন্য কোথাও তাকে সমাহিত করা যেতে পারে।
“আমাদের আজিমপুর গোরোস্থান আছে না, ওখানে (কবর দিলে) এক বছর পর চলে যাব আমি তলে। আমি একটা প্রোপোজাল দিয়েছিলাম, আমরা যদি খাড়াভাবে কবর দিতাম তাহলে জায়গাটা অনেক কম লাগতো।”
নিজের হাতে গড়া নুহাশ পল্লীর বাগানটি সেদিন ঘুরে ঘুরে দেখান তিনি। বিরল প্রজাতির ভেষজ উদ্ভিদসহ নানা রকমের দেশি-বিদেশি গাছের সঙ্গে তার ‘আত্মীয়তার’ কথা বলেন।
হুমায়ূনের ছোট বোন সুফিয়া হায়দার বলেন, “আমার ভাই মানুষের কষ্ট, হাসপাতালে থাকা আর না খেয়ে থাকার কষ্ট সহ্য করতে পারতেন না। অথচ এসব অপছন্দনীয় বিষয়গুলোই তার ভাগ্যে জুটেছে। তিনি মানুষকে অসম্ভব রকম ভালবাসেন। মানুষও তাকে ভালবাসেন।”
নুহাশ পল্লীর ব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম বুলবুল জানান, ৪০ বিঘার এই বাগান ফলজ, বনজ ও ভেষজ গাছ ছাড়াও হাঁস, রাজহাঁস, গরু, কবুতরসহ বিভিন্ন প্রাণীর বিচরণ ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। বসানো হয়েছে কিছু ভাস্কর্যও। এ কারণে প্রায়ই হুমায়ূনভক্তরা এখানে বেড়াতে আসেন।
“জনপ্রিয়তায় শরৎচন্দ্রকেও ছাড়িয়ে গেছে হুমায়ূন। আমি খুবই শকড্ হয়েছি। হুমায়ুনকে আমি খুবই ভালবাসতাম। বড্ডই কষ্ট হচ্ছে যে হুমায়ুন আর নেই”......... বলেন পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
গ্রন্থনাঃ বিডি নিউজ ২৪ থেকে