11ই জানুয়ারি:
আজ ও আমাকে একটি চিঠি দিল। বলল বাসায় গিয়ে পড়তে। দুষ্টুমী করতে গিয়ে চিঠিটা ওর সামনেই খুলতে গেলাম। সাথে সাথে আমার হাত থেকে চিঠিটি নিয়ে গিয়ে ছিড়ে ফেলল। তারপর রাগ করে কথা বললনা। অনেক কষ্টে অভিমান ভাঙ্গালাম, তারপরও একটু হাসেনি ও। খুব খারাপ লাগছে। প্রিয়তমার কাছ থেকে পাওয়া প্রথম চিঠিটি পড়তে পারলাম না।
22শে জানুয়ারি:
সোনামনি, কাল তোমার জন্মদিন, আর আজ কিনা তুমি ঢাকায় গেলে। কিছুই ভালো লাগছেনা আজ। তোমাকে খুব দেখতে ইচেছ করছে। তাড়াতাড়ি চলে এসো। তোমার প্রতিায় রইলাম।
23 শে জানুয়ারি :
শুভ জন্মদিন সোনামনি। এক মহাবিশ্ব শুভেচছা রইল তোমার জন্য।
28শে জানুয়ারি:
আজ ও ফিরল। আমায় জড়িয়ে ধরে বলল আমাকে খুব মিস করেছে। সারান বকবক করেই গেল, আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে। বিদায় নেবার সময় দিল ভালোবাসার সিক্ত পরশ। আজ চিৎকার করে বলতে ইচেছ করছে, "ভালোবাসা তোমায় ধন্যবাদ। আমায় তুমি করেছ মহান।"
2রা ফেবু্রয়ারী:
আজ আমাদের পরিচয়ের এক বছর প র্ণ হলো। কথাটি ও আগে বলল। কত তাড়াতাড়ি একটি বছর কেটে গেল। চাওয়া পাওয়ার হিসেব মিলাতে গেলে কোন অপ র্নতা খুঁজে পাওয়া যাবেনা। আমি দিয়েছি কতটুকু জানিনা, কিন্তু ওর কাছ থেকে পেয়েছি সবটুকুই। ওর ভালোবাসায় নিজেকে আমি সমপ র্ন হারিয়েছি। ওকে আমি ভালোবাসি আমার সবটুকু দিয়ে। ভয় হয়, একদিন যদি ও আমায় ছেড়ে চলে যায় তাহলে আমি কিভাবে থাকবো। অনেক কথাই মনে পড়ছে আজ। প্রায় দুই ঘন্টা ধরে আমরা আমাদের এক বছরের স্মৃতি গুলো রোমান্থন করলাম। ও আজ খুব চুপচাপ ছিল। কারনটা জানতে চাইলাম, কিন্তু বললনা। মনে হল ও আমাকে কিছু বলতে চায়। আজ আরেকটি ফুল দিল। ওর গাছের সবচেয়ে সুন্দর ফুলটি। জানতে চাইলো আগেরটি কবে ফেলে দিয়েছি। বললাম ,"এখনও আমার কাছে আছে, আর থাকবেও সারাজীবন, ঠিক তোমার মতন।" তখন ও আমাকে বলল যে ও একটা কথা বলতে চায় যদি আমি রাগ না করি। ওর মাথা ছুয়ে বলতে হলো যে রাগ করবোনা। তখন ও আমাকে বলল, " আজ আমি তোমার কাছে একটা জিনিস চাইবো। তোমাকে তা দিতে হবে। তুমি নিজে থেকে আমাকে কখনও সপর্শ করনি, তাই শুধু আজকের দিনের জন্য হলেও আমি চাই তুমি আমাকে ছুয়ে একটু আদর কর। প্লিজ রাগ করোনা।.. .. .. ..।" তাই ওকে খুশি করার জন্য বুকে টেনে নিয়েছি আজ, আর ওর কপালে দিলাম আমার আমার সমস ভালোবাসা দিয়ে সিক্ত করা ছোট্ট একটি সপর্শ। কেমন জানি কেঁপে উঠলো ও। কারনটি ঠান্ডা না অন্য কিছু বুঝলামনা। আমায় শক্ত করে আঁকড়ে ধরেছিল ও। ছাড়ার পর দেখি ওর চোখে জল। বলল একটুকুই ওর প্রয়োজন ছিল। তারপর মুখখানি এত সুন্দর হাসিতে ভরে গেল যা আমার সারাজীবন মনে থাকবে। ওর হাসি ছুয়েছিল ওর চোখ। নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলামনা। এবার চুমু খেলাম ওর চোখ দুটোয়। অধর ছোয়ার সাহস হয়নি। ও হাসতে হাসতে আমায় বলল লোভী পাজি। সে হাসি হৃদয় ছুয়ে গেল। ও আমায় বলল এভাবে যেন আগলে রাখি সারাজীবন। বললাম রাখব। ফেরার সময় বলল আজ ও ঘুমাতে পারবেনা। সোনামনি আজ আমারও ঘুম আসছেনা। আজ আমদের ভালোবাসার প্রথম জন্মদিনে আমার লাল রাজকুমারীর জন্য আমার তরফ থেকে রইল এক মহাবিশ্ব সমান ভালোবাসা। আজ শুধু বলব,"ভালোবাসি,ভালোবাসি এবং ভালোবাসি।"
8ই ফেবু্রয়ারী:
আজ প্রথম একটি চিঠি দিলাম ওকে। বিশাল এটি কাগজে লিখলাম চিঠিটি। চিঠি পেয়ে খুব খুশী হলো। তারপর আমাকে রাগানোর জন্য খুলতে গেল। আমি কিছুই বললাম না দেখে খুব অবাক হল। তারপর হি হি করে হাসতে হাসতে খুলল চিঠিটি। তারপর আমাকে মারতে তেড়ে এল। চিঠিতে সোনামনি নাম দিয়ে শুরু করেছি, তারপর পুরো ফাঁকা রেখে শেষে লিখেছি' ইতি, তোমার আমি।' বললাম যা ইচেছ হয় তাই বসিয়ে নিও ফাঁকা জায়গায়। বেশ বুঝতে পারছি এর শোধ ও খুব শীঘ্রই নেবে।
28শে মার্চ :
আজ একসাথে সাইকেল চালাতে গিয়ে অ্যাঙ্সিডেন্ট করলাম। ওকে বাঁচাতে গিয়ে পড়লাম রাস ার উপর। হাত সামান্য কেটে গেল, আর তাতেই ও একদম অস্থির হয়ে গেল। বাসায় নিয়ে গিয়ে নিজ হাতে ব্যান্ডেজ করে দিল। আর পুরষ্কার স্বরূপ পেলাম ওর সিক্ত ছোঁয়া। বললাম এই আদর টুকুর জন্য একশোবার অ্যাঙ্সিডেন্ট করতে আমি রাজি। এবার পেলাম ওর নরম হাতের শক্ত মার। বললাম আমি এতেও রাজী। এবার অবশ্য আর কিছু করেনি। বাসায় ফিরলাম আজ ওর সাইকেল নিয়ে। আমাদের সাইকেল দুটো হুবহু একই রকম। কাল এটা নিয়েই স্কুলে যাব।
15ই এপ্রিল:
আজ ও আমার সাথে রাগ করে কথা বলেনি। অনেক চেষ্টা করেও ওর রাগ ভাঙ্গাতে পারিনি। খুব কষ্ট হচেছ। ভালোবাসা মানুষকে এত কষ্ট দেয় কেন?
18ই এপ্রিল:
আজ প্রচন্ড ঝড় হলো। ঝড়ের মধ্যে বন্ধুদের সাথে খেললাম ও আম চুরি করলাম গাছ থেকে। মাঠে বসে সবাই মিলে আম খাচিছ তখন দেখি ও ছাদে দাঁড়িয়ে আছে। আম নিয়ে তাড়াতাড়ি ছুটলাম ওর কাছে। বললাম, "তোমার জন্য এনেছি "। তারপরও ও কোন কথা বললনা। তখন বললাম, " এত কষ্ট করে চুরি করলাম তোমার জন্য! " , শুনে হেসে ফেলল ও। আহ! কতদিন পর অনিন্দ্য সুন্দর মুখটিতে হাসি দেখলাম। আমাকে অনেকন জড়িয়ে ধরেছিল ও। আজ প্রথম নিজের ইচছায় ছুলাম ওকে। ওকে বললাম, কেন ও আমাকে এত কষ্ট দেয়। শুনে ও বলল," ইচছা করে তাই। আমি দেখতে চাই তুমি আমাকে কত ভালোবাস"। আমি বললাম, কি মনে হয় তোমার, তোমাকে কতটুকু ভালোবাসি আমি? " ও বলল," যতটুকুই বাসনা কেন আমি তোমাকে তারচেয়ে অনেক অনেক বেশী ভালোবাসি।" আজ অনেক কথা বললাম। ওকে ছেড়ে যেতে ইচছা করছিলনা। কিন্তু কি আর করবো, বাস ব বড় বেশী রূঢ়। তারপরও আজ নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ মনে হচেছ।
13ই জুলাই:
আজ ওকে একটি লাল টকটকে গোলাপ দিলাম। ওকে দেয়া আমার প্রথম ফুল এটি। আমার প্রিয় লাল রাজকুমারীর জন্য আমার সমস ভালোবাসা দিয়ে সিক্ত করা ফুল এটি। খুব খুশি হলো ও ফুল পেয়ে। আর দিলাম ভালোবাসা দিয়ে লেখা একটি চিঠি। আমায় জড়িয়ে ধরে বারবার ধন্যবাদ দিল চিঠির জন্য। বলল খুব শীঘ্রই চিঠির উত্তর দেবে। ইদানিং মনে হচেছ খুব লোভী হয়ে গেছি ওর ভালোবাসা পেতে পেতে।
29শে জুলাই:
আজ ওকে খুব দেখতে ইচেছ করছিল। কিন্তু দেখা হলোনা। খুব খারাপ লাগছে।
24শে আগস্ট:
আজ প্রচন্ড বৃষ্টি হচেছ। তাই আর বাইরে বের হইনি। ওর সাথে 4দিন ধরে দেখা হয়নি। মনে হচেছ খুব রেগে আছে। আজ তোমাকে খুব মনে পড়ছে সোনামনি। ভালো থেকো তুমি সারাণ। আর আমাকে ভেবে রাত জেগে থেকোনা, প্লিজ। তোমার শরীর খারাপ করবে। আমি সারান তোমার পাশে আছি তোমার ছায়া হয়ে, আর থাকবও সারাজীবন। তোমাকে ছাড়া যে আমার জীবন অর্থহীন। তুমি কি তা বুঝতে পার? আজ আমার চোখে ঘুম আসছেনা। . . . . . . . . . . .
----------------------------------------------------------
পরিশিষ্ট
এই ছিল ওকে নিয়ে লেখা আমার শেষ ডায়রী। সময়গুলো কিভাবে যে কেটে গেল টেরই পাইনি। ওর সাথে আমার শেষ কথা হয় অক্টোবর মাসে। তারিখটা ঠিক মনে নেই। তারপর অনেক ঘটনা অঘটনার মধ্যে দিয়ে হারিয়ে গেল ও। আমি পড়ে রইলাম ঠিক সেইখানে, যেখানে ও আমাকে রেখে গেছে। নতুন করে আর শুরু করতে পারিনি। কষ্টগুলোকে বুকে চেপে রেখে সুখ স্মৃতিগুলো রোমান্থন করে দিন কেটে যায় আমার। ওকে কখনও খুঁজিনি। হয়ত ওর উপর অভিমান হয়েছিল খুব। তবে অনেক দিন পর্যন অপো করেছি ওর জন্য। ফেরেনি সে। শুধু একটি প্রশ্ন করতে চেয়েছিলাম ওকে, কেন আমায় একা ফেলে চলে গেল ও? উত্তর আর মেলেনি।এভাবে পথ চলতে চলতে সাত বছর পর তার সাথে দেখা হয় আমার, ঢাকায়। অনেক বদলে গেছে সে। আসলে সবকিছুই বদলে গেছে, শুধু বদলায়নি আমার মধ্যে বাস করা সেই ছোট্ট অভিমানী হাসান। এই নামটা ওর দেয়া। হাসানকে আমি হৃদয়ে আগলে রেখেছি পরম মমতায়। আমার সকল সুখ দুঃখের একমাত্র সাথী সে। যাহোক ও আমাকে দেখে ঠিকই চিনেছিল এবং ডেকেছিল নাম ধরে। না শোনার ভান করে চলে এসেছিলাম সেদিন। এর কদিন পর ওর সাথে আবার দেখা হলো। অনেক কথা হলো। শুধু জানা হয়নি আমার সেই প্রশ্নের উত্তর। আবার ফিরে আসতে চেয়েছিল ও আমার কাছে। কিন্তু আমি সেদিন ফিরিয়ে দিয়েছিলাম তাকে। আমি আমার ভেতরে বাস করা হাসানকে অপমান করতে চাইনি। ওকে আবার গ্রহন করলে আমার জীবনের এত কষ্ট গুলো, অশু্র গুলো, নির্ঘুম রাতগুলো, একা একা রাস ায় হেঁটে বেড়ানো, সাত বছর ধরে লেখা চিঠিগুলো, আকাশের প্রিয় তারাটি, কান্নাভেজা জোৎস্নাগুলো, আমার বিসর্জিত সুখগুলো, এসবই অর্থহীন হয়ে যাবে। আমি নতুন করে ওকে ফিরে পেতে চাইনি। নতুন করে শুরু করলে আমি আর কখনও আমার সেই চিরচেনা সোনামনিকে ফিরে পাবনা। এরকম অনেক কথা ভেবে আমি ফিরিয়ে দিয়েছিলাম আমার সেই প্রিয় মানুষটিকে। অনেকের বিরূপ মন ব্য আমাকে শুনতে হয়েছে, তারপরও আমি মনে করি আমি সেদিন যা করেছি তা ছিল সঠিক। তাই আজও আমি তাকে বুকের ভেতরে আগলে রেখেছি। সে আমার কাছে এক স্বপ্নের রাজকুমারী হয়ে থাকবে সারাজীবন। আমি সারাজীবন জানবো এক লাল রাজকুমারী এসেছিল স্বপ্ন হয়ে আমার জীবনে, আর হৃদয়টা ভালোবাসা দিয়ে প র্ণ করে সে চলে গেল। রেখে গেছে তার অনেক স্মৃতি, সপর্ষ, হাসি, কান্না আর আমাকে। এইসব স্মৃতিগুলো রোমান্থন করে কেটে যায় আমার দিন। সে আছে আমার জীবনে চিরন ন শিখার মত। তাই নতুন কোন সঙ্গিনীর অভাব অনুভব করিনি কখনও। যখনই আমার মন খারাপ হয় তখন আমি চোখ বন্ধ করে ওর কথা ভাবি, কল্পনায় কথা বলি। সে আছে আমার সমস অস িত্ব জুড়ে। অপরূপা সে আমায় পরম আদরে আগলে রেখেছে। তবে মাঝে মাঝে মনটা বড্ডো বেয়ারা হয়ে যায়। তখন বাধ্য হয়ে অশ্রু ঝরাতে হয়। তারপরও আজ আমি একজন গর্বিত মানুষ। কারন আমার ভালোবাসার কখনও পরাজয় হয়নি। আমি জীবনে যে কষ্ট পেয়েছি তার তুলনায় আমার ভালোবাসার ম ল্য অনেক বেশী। আজ লেখাটি শেষ করে মনে এক অন্যরকম তৃপ্তি অনুভব করছি। সব না হোক, অন ত কিছু স্মৃতিকে রেখে দিতে পেরেছি আমার লেখার পাতায়। আমি জানি আমার এই স্মৃতিগুলো একদিন আনন্দধারা হয়ে ফিরে আসবে আমার কাছে। তাই সকল আশা আকাংখাকে সময় ও অসময়ের পাল্লায় তুলে দিয়ে আজ থেকে আমি রইলাম সেই ণটির জন্য অধীর অপোয়। ভালো থেকো সোনামনি . . . . সারান।
কোন বিষাদী রাতে আকাশ যদি আর্তনাদ করে কেঁদে ওঠে, বুঝবে শুধু তুমি ঠিক এই রাতে আমি পুড়ে চলেছি বিষাদে। আকাশকে যদি কখনও কালো মেঘগুলো চুপচাপ ঢেকে দেয়, তুমি নীরবে বুঝে নিও আমার যত ব্যথা আজ আকাশে জমেছে।
রাত যায় বিষন্ন বিরহে
নেই ঘুম দুচোখে
একাকী ন, শান বিকেলের কবিতা,
সেই স্মৃতিগুলো ভাসে দুচোখে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



